আপনি মনে করতে পারেন প্রতিটি দেশেরই একটি রাজধানী আছে। আর সেই রাজধানী হচ্ছে সে দেশের প্রাণকেন্দ্র। আপনার এ ধারণা সব সময় সঠিক হবে না। কোনো কোনো দেশে একাধিক রাজধানীও আছে। ধরুন, দক্ষিণ আফ্রিকার কথা। এখানে আছে তিনটি রাজধানী- প্রিটোরিয়া, কেপটাউন ও ব্লোয়িমফনটিন। আবার বলিভিয়াতে আছে দুটি রাজধানী লা-পাজ ও সুক্রে।
পৃথিবীর ২৩২টি দেশের মধ্যে রাজধানীবিহীন দেশও রয়েছে। ওসেনিয়া মহাদেশের দেশ নাউরুতে কোনো রাজধানী নেই। নাউরুর রাষ্ট্রীয় নাম 'নাউরু প্রজাতন্ত্র'। ভ্যাটিক্যান সিটির পর নাউরুই হচ্ছে বিশ্বের ক্ষুদ্রতম রাষ্ট্র। অর্থাৎ নাউরু হচ্ছে পৃথিবীর দ্বিতীয় ক্ষুদ্রতম রাষ্ট্র।
পাপুয়া নিউগিনির উত্তর-পূর্ব দিকে প্রশান্ত মহাসাগরের একটি দ্বীপ নাউরু। জার্মানি ঊনবিংশ শতাব্দীর শেষ দিকে দ্বীপটি দখল করে নেয়। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় জাপান এটিকে দখল করে। ১৯৬৮ সালের ৩১ জানুয়ারি দেশটি জাপানের কাছ থেকে পূর্ণ স্বাধীনতা লাভ করে। ছোট্ট এই দেশটির জনসংখ্যা প্রায় ১৩ হাজার। এর আয়তন মাত্র ২১ বর্গকিলোমিটার। মুদ্রার নাম অস্ট্রেলীয় ডলার। বেশির ভাগ মানুষ খ্রিস্ট ধর্মাবলম্বী। শিক্ষার হার ৯৯ শতাংশ। কেউ কেউ দাবি করেন নাউরুর রাজধানী 'ইয়েরেন'। এটি দাবি করার যুক্তি হচ্ছে, দেশটির বেশির ভাগ গুরুত্বপূর্ণ অট্টালিকা, পার্লামেন্ট ভবন, দূতাবাস ইত্যাদি এই ইয়েরেন জেলায় অবস্থিত।
প্রকৃতপক্ষে দেশটিতে আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষিত ও স্বীকৃত কোনো রাজধানী নেই। এখানকার আদি বাসিন্দারা মাইক্রোনেশীয় ও পলিনেশীয় জাতির মানুষ। নাউরু ফসফেট খনিজসমৃদ্ধ দেশ। সামুদ্রিক পাখির মল থেকে উদ্ভূত খনিজ তাদের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখে। ১৯০৭ সাল থেকে অর্থনীতির প্রধান আয় আসে ফসফেট খনিজ আকরিকের মাধ্যমে, যা বর্তমানে শেষ হয়ে এসেছে। ফলে সেখানে দেখা দিয়েছে পরিবেশ বিপর্যয়।
দ্বীপের সম্পদ রক্ষার্থে গঠিত তহবিল অব্যবস্থাপনার জন্য সেখানে অর্থনৈতিক ধস নামে। নব্বইয়ের দশকে নাউরু কালো টাকা সাদা করার আখড়াতে পরিণত হয়।
দেশটি ২০০১ সাল থেকে অস্ট্রেলিয়া সরকারের কাছ থেকে অনুদান গ্রহণ করছে। বিনিময়ে অস্ট্রেলিয়ায় রাজনৈতিক আশ্রয়প্রার্থীদের কারাগার হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে নাউরু।
দেশটি স্বাধীনতা অর্জনের সময় পৃথিবীর অন্যতম ধনী দেশ ছিল। কিন্তু বর্তমানে নাউরুতে বেকারত্ব বেড়ে গেছে, অর্থনৈতিক অবস্থা যথেষ্ট নাজুক।
- সজিব তৌহিদ
Click This Link
সর্বশেষ এডিট : ২৩ শে এপ্রিল, ২০১৪ দুপুর ১:২৬