জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে জাতিসংঘের উদ্যোগে গঠিত শিল্পোন্নত দেশগুলো গ্রিনহাউস গ্যাসের নির্গমন বাধ্যতামূলকভাবে হ্রাসকরণের আন্তর্জাতিক চুক্তি হচ্ছে কিয়োটো প্রটোকল। ভয়ংকর পরিবেশ বিপর্যয় প্রতিরোধ ও মোকাবিলা করার জন্য ১৯৯৭ সালের ১১ ডিসেম্বর জাপানের প্রাচীন রাজধানী কিয়োটোতে অনুষ্ঠিত এক সম্মেলনে এই চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। চুক্তি স্বাক্ষরের সাত বছর পর ২০০৫ সালের ১৬ ফেব্রুয়ারি বাস্তবায়নের কাজ শুরু হয়। জাতিসংঘের তথ্য মতে, ১৫০ বছরেরও বেশি সময় ধরে শিল্প কল-কারখানাবিষয়ক কার্যক্রমে পরিবেশদূষণের জন্য মূলত দায়ী উন্নত দেশগুলো।
ওই সম্মেলনে ইউরোপিয়ান ইউনিয়নসহ ১৯২টি দেশের মধ্যে কানাডা, দক্ষিণ সুদান ও যুক্তরাষ্ট্র ছাড়া জাতিসংঘের অন্তর্ভুক্ত ১৯১টি দেশ উপস্থিত ছিল। কিয়োটো চুক্তির ভিত্তিতে গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গমন ২০১২ সালের মধ্যে ৫.২ শতাংশ কমানোর বিষয় অন্তর্ভুক্ত করা হয়। চুক্তি বাস্তবায়নের শর্ত অনুযায়ী বিশ্বের মোট গ্রিনহাউস গ্যাসের ৫৫ শতাংশ উৎপাদনকারী দেশগুলোর স্বাক্ষরের প্রয়োজন ছিল। প্রাথমিক পর্যায়ে নিজ নিজ দেশে উৎপন্ন গ্রিনহাউস গ্যাসের পরিমাণ কমানোর লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল।
চুক্তিভুক্ত দেশগুলো যে ছয়টি গ্যাস নিঃসরণ কমানোর উদ্যোগ নেয় সেগুলো হলো কার্বন ডাই-অক্সাইড, মিথেন, নাইট্রাস অক্সাইড, হাইড্রোফ্লোরোকার্বন, পারফ্লোরোকার্বন ও সালফার। চুক্তিমতে, যুক্তরাষ্ট্র ৭ শতাংশ, ইউরোপীয় দেশগুলো ৮ শতাংশ, জাপান ৬ শতাংশ, কানাডা ৬ শতাংশ গ্রিনহাউস গ্যাস নিঃসরণ করবে বলে অঙ্গীকারবদ্ধ ছিল। কিন্তু বাস্তবে খুব বেশি ভূমিকা পালন করেনি। বরং সবচেয়ে বেশি গ্যাস নির্গমনকারী দুটি দেশ যুক্তরাষ্ট্র ও অস্ট্রেলিয়া কিয়োটো প্রটোকলের বিরোধিতা করেছে। যুক্তরাষ্ট্র প্রথমে সেই চুক্তিতে স্বাক্ষর করলেও প্রেসিডেন্ট ডাব্লিউ বুশ ২০০১ সালে অর্থনৈতিক কারণ দেখিয়ে চুক্তি থেকে সরে আসে। যুক্তরাষ্ট্র সরে আসার কারণে চীন ও ভারত চুক্তিতে স্বাক্ষর করা থেকে বিরত ছিল।
কিয়োটো প্রটোকলের অংশ হিসেবে অনেক উন্নত দেশ গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গমন হ্রাসকরণের জন্য নৈতিকভাবে দুটি পর্যায়ে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হয়। প্রথম প্রতিশ্রুতির সময় ২০০৮-২০১২ এবং দ্বিতীয়টি ২০১৩-২০২০ সাল পর্যন্ত। প্রথম চুক্তির মেয়াদ ২০১২ সালে শেষ হলে দ্বিতীয় দফায় সেই চুক্তি সংশোধন করে ২০২০ সাল নাগাদ বর্ধিত করা হলেও এখন পর্যন্ত তা বাস্তবায়ন কাজ শুরু হয়নি।
ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের ২৮টি দেশসহ অস্ট্রেলিয়া, বেলারুশ, কাজাখস্তান, লিচেনস্টাইন, নরওয়ে, সুইজারল্যান্ড, ইউক্রেনসহ ৩৭টি দেশ দ্বিতীয় চুক্তিতে চুক্তিবদ্ধ হয়েছে। সংশোধিত দ্বিতীয় চুক্তির লক্ষ্যমাত্রা থেকে সম্ভবত বেলারুশ, কাজাখস্তান ও ইউক্রেন তাদের নাম প্রত্যাহার করে নেবে। প্রথম কিয়োটো চুক্তিতে জাপান, নিউজিল্যান্ড ও রাশিয়া অন্তর্ভুক্ত থাকলেও দ্বিতীয় মেয়াদের চুক্তিতে তারা অংশগ্রহণ করেনি।
বাংলাদেশ কিয়োটো প্রটোকল চুক্তির অন্তর্ভুক্ত হয় ২০০১ সালের ২২ অক্টোবর এবং কার্যকর হয় ২০০৫ সালের ১৬ ফেব্রুয়ারি। সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশের বায়ুমণ্ডলের তাপমাত্রা সর্বোচ্চ ৪২.৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস হয়ে বিগত ৫৪ বছরের রেকর্ড ভঙ্গ করেছে। প্রচণ্ড দাবদাহে মানুষ হাঁপিয়ে উঠেছে। আবার বর্ষা মৌসুমে অতিবৃষ্টির কারণে মানুষের জীবন দুর্বিষহ হয়ে ওঠে। আবহাওয়া, পরিবেশে ও জলবায়ুর এই ভারসাম্যহীন আচরণের কারণ হিসেবে উন্নত দেশগুলোর কিয়োটো প্রটোকল চুক্তি ভঙ্গকেই দায়ী করা হয়ে থাকে।
- সজিব তৌহিদ
- See more at: Click This Link