সংস্কৃত শব্দ 'সাগর' থেকে 'হাওর' শব্দের উৎপত্তি হয়েছে বলে ধারণা করা হয়। কালক্রমে হাওর শব্দের উৎপত্তি হয়েছে এভাবে সাগর-সাওর-হাওর। সিলেট বিভাগ হাওর অঞ্চল হিসেবে খ্যাত। এখানে টাঙ্গুয়ার হাওরসহ ছোট-বড় বেশ কিছু হাওর-বাঁওড় রয়েছে। এশিয়ার বৃহত্তম ও বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় হাকালুকি হাওর। এটি মৌলভীবাজার ও সিলেট জেলায় অবস্থিত।
মৌলভীবাজারের জুড়ী, কুলাউড়া, বড়লেখা এবং সিলেটের ফেঞ্চুগঞ্জ, গোলাপগঞ্জ ও বিয়ানীবাজার উপজেলায় ১,১১৫ হেক্টর জমিতে হাকালুকি হাওরের বিস্তৃতি। হাওরে প্রায় ২৪০টি বিল আছে। কিছু কিছু বিলে প্রায় সারা বছর পানি থাকে। জুড়ী ও পানাই নদী হাওরে জলরাশির মূল চালিকাশক্তি। বর্ষা মৌসুমে হাকালুকি পানিতে টইটম্বুর থাকে।
বিস্তীর্ণ এলাকাজুড়ে দৃষ্টিশক্তির শেষ সীমানা পর্যন্ত পানি আর পানিই শুধু চোখে পড়ে। সেই পানিতে ঝকঝকে সূর্য ও চাঁদের প্রতিচ্ছবি অপরূপ দৃশ্যে পরিণত হয়। ভোর, বিকেল এবং সূর্যাস্তের প্রাকৃতিক দৃশ্য মানুষকে বিমুগ্ধ করে। রানী, রাঁচি, বাতাসি, গলদা চিংড়ি, বাঘমাছ, চিতল, পাবদা, কালবাউশ, কোকিলাসহ প্রায় ৭০ প্রজাতির মাছ এখানে পাওয়া যায়। বছরে প্রায় ২৫০০ টন মাছ হাকালুকি হাওরে উৎপাদিত হয়। হাওর এলাকায় মোট ইউনিয়নের সংখ্যা প্রায় ১১টি, গ্রাম রয়েছে ২৫২। হাওরকে কেন্দ্র করে চার লক্ষাধিক মানুষ প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে জীবিকা নির্বাহ করে বেঁচে আছে। হাওরে বিরল জলজ প্রজাতির উদ্ভিদ রয়েছে। আড়ং, বরুণ, করচ, হিজল এবং মাখনা অন্যতম।
শীত মৌসুমে প্রায় ৪৮ প্রজাতির লক্ষাধিক অতিথি পাখির আগমন ঘটে এখানে। অতিথি পাখির মধ্যে গুটি ঈগল, কুড়া ঈগল, রাজসরালি, পান ভুলানি, কাস্তেচড়া, পানকৌড়ি, বেগুনি কালিম, মেটেমাথা টিটি, গিরিয়া হাঁস, ল্যাঞ্জা হাঁস, বালিহাঁস, ভূতিহাঁস ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য।
এ ছাড়া রয়েছে ১২ প্রজাতির উভচর প্রাণী, ৭০ প্রজাতির সরীসৃপ প্রাণী, ৬৯ প্রজাতির স্তন্যপায়ী প্রাণী। শুষ্ক মৌসুমে হাওরটি গবাদিপশুর অবাধ বিচরণ কেন্দ্রে পরিণত হয়। হাওর উপকূলবর্তী অঞ্চলের লোকজন খরা মৌসুমে তাদের গরু, মহিষ, ছাগল, ভেড়া ইত্যাদি কয়েক মাসের জন্য হাওরে বসবাসরত এক শ্রেণির মানুষের কাছে পাঠিয়ে দেন। যারা গবাদিপশু দেখাশোনার বিনিময়ে দুধ সংগ্রহ করে বিক্রির মাধ্যমে প্রচুর অর্থ উপার্জন করে। বর্ষা মৌসুম চলে এলে গবাদিপশুর মালিকরা তা ফিরিয়ে নেন। এই প্রক্রিয়াকে বলা হয় 'বাথান'।
ফলে এই এলাকা স্থানীয়ভাবে দুধ ও দইয়ের জন্য বিখ্যাত। বর্ধিত জনসংখ্যার চাহিদা পূরণের জন্য বাসস্থান নির্মাণ, অপরিকল্পিত মৎস্য আহরণ, কৃষিজমিতে মাত্রাতিরিক্ত রাসায়নিক সার ও কীটনাশক প্রয়োগ; সর্বোপরি স্বার্থান্বেষী মহলের কর্মকাণ্ডে হাকালুকি হাওরের অস্তিত্ব, সম্পদ, উদ্ভিদ, জীববৈচিত্র্য এবং সৌন্দর্য প্রতিনিয়তই বিলুপ্ত হচ্ছে।
-সজিব তৌহিদ
Click This Link
সর্বশেষ এডিট : ২৭ শে মে, ২০১৪ সন্ধ্যা ৬:১৮