ডিসকভারি চ্যানেলে প্রায়ই যাকে দুঃসাহসিক অভিযান পরিচালনা করতে দেখা যায়। জীবন-মরণের সন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়ে অভিযানকে যিনি পাগলের মত ভালোবাসেন। অভিযানে অস্থিস্ত্ব টিকেয়ে রাখার জন্য সাপ-ব্যাঙ-কেঁচোসহ বিভিন্ন কীটপতঙ্গ দ্বিধাহীন চিত্তে কাচা কিংবা সিদ্ধ খেতে যিনি ওস্তাদ । তিনি হলেন বিখ্যাত অভিযাত্রিক, লেখক, পর্যটক ও উপস্থাপক অ্যাডওয়ার্ড মাইকেল বিয়ার গ্রিলস।
তিনি ১৯৭৪ সালের ৭ জুন যুক্তরাজ্যে জন্মগ্রহণ করেন। কনজারভেটিভ পার্টির রাজনীতিক স্যার মাইকেল গ্রিলস ও লেডি সারা গ্রিলসের সন্তান বিয়ার গ্রিলস। বড় বোন টেনিস কোচ লারা ফউসেট গ্রিলসের যখন এক সপ্তাহ বয়স তখন তাঁর ডাক নাম দেন ‘বিয়ার’।
গ্রিলস পড়ালেখা করেন এটন হাউসের লুডগ্রুভ স্কুল ও এটন কলেজে। ইউনিভার্সিটি অব লন্ডন থেকে গ্র্যাজুয়েশন শেষ করেন। ছোটবেলায় তিনি তার বাবার কাছে পর্বতারোহণ ও নৌকা চালনা শেখেন। আট বছর বয়সে তিনি কাব স্কাউটের সদস্য হন। তিনি ইংরেজি, স্প্যানিশ ও ফ্রেঞ্চ ভাষা জানেন। বিশ্বাসই তাঁর জীবনের ‘মূলস্তম্ভ’ বলে তিনি বর্ণনা করেন।
তিনি ২৬ বছর বয়সে ২০০০ সালে শারা ক্যানিংস নাইটকে বিয়ে করেন। এখন তিনি তিন ছেলের বাবা। ১৯৯৬ সালে সেনাবাহিনীতে স্পেশাল ফোর্স রিজার্ভে কাজ করার সময় জাম্বিয়াতে প্যারাসুট দুর্ঘটনায় ১৬ হাজার ফুট ওপর থেকে মাটিতে পড়ে যান। মেরুদণ্ডের তিনটি হাঁড় ভেঙে গুরুতর আহত হয়ে তিনি পক্ষাঘাতগ্রস্ত হন।
চিকিৎসক ভেবেছিলেন, গ্রিলস আর হাঁটতে পারবেন না। গ্রিলস খুবই হতাশ হন। তার ছোটবেলার স্বপ্ন মাউন্ট এভারেস্ট জয় করা তাহলে হবে না! কিন্তু ১২ মাসের মাথায় অবিশ্বাস্যভাবে গ্রিলস সম্পূর্ণ সুস্থ হন এবং ১৯৯৭ সালে তিনি সেনাবাহিনীতে যোগ দেন।
১৯৯৮ সালের ১৬ মে বিয়ার গ্রিলস ২৩ বছর বয়সে মাউন্ট এভারেস্ট জয় করে ‘গিনেস বুক অব ওয়ার্ল্ড রেকর্ডস’-এ সর্বকনিষ্ঠ ব্রিটিশ এভারেস্টজয়ী হিসেবে নাম লিখিয়ে তার ছোটবেলার লালিত স্বপ্ন পূরণ করেন। মানবসেবায় অবদান রাখার জন্য ২০০৪ সালে গ্রিলস রয়েল নাভাল রিজার্ভে সম্মানসূচক লেফটেন্যান্ট কমান্ডার হিসেবে পদোন্নতি লাভ করেন। রয়েল ম্যারিন রিজার্ভে ২০১৩ সালে বিয়ার গ্রিলস তাঁর নেতৃত্বে চার বন্ধুর সঙ্গে ১১ মিটার লম্বা একটি উন্মুক্ত নৌকা নিয়ে উত্তর আটলান্টিক মহাসাগর পাড়ি দেন।
২০০৯ সালের জুন মাসে ৩৫ বছর বয়সে তিনি সর্বকনিষ্ঠ স্কাউটপ্রধান হিসেবে নিযুক্ত হন। গ্রিলস টেলিভিশন জগতে আসেন একটি বিজ্ঞাপনচিত্রে অংশগ্রহণের মাধ্যমে। এর পর বিভিন্ন টক শো- ফ্রাইডে নাইট উইথ জোনাথন রোজ, অপরাহ উইনফ্রে শো, দ্য টু নাইট উইথ যে লোনা ইত্যাদি টেলিভিশন প্রোগ্রামে তিনি অংশ নেন। তার রচিত প্রথম বই ‘ফেসিং আপ’ যুক্তরাজ্যে সবচেয়ে বেশি বিক্রীত বইয়ের তালিকায় স্থান পায়।
এভারেস্টের অভিজ্ঞতা নিয়ে দ্বিতীয় বই ‘ফেসিং দ্য ফ্রোজেন অশেন’। তৃতীয় বই ‘বার্ন সারভাইভর’ সানডে টাইমসের সেরা দশ বিক্রীত বইয়ের স্থান দখল করে। এ ছাড়া তিনি দুর্গম স্থানে টিকে থাকার কৌশলের ওপর শিশু-কিশোরদের জন্য লিখেছেন ‘মিশন সারভাইভর’, ‘গোল্ড অব দ্য গডস’, ট্যাক্স অব দ্য টাইগারসহ অসংখ্য বই।
http://bangla.newsnextbd.com/article121147.nnbd/