জাতীয় পরিচয়পত্র খুব গুরুত্বপূর্ণ। বিভিন্ন কাজে এটি অপরিহার্য। তবে ৬০% জাতীয় পরিচয়পত্রে নানা ধরণের ভুল আছে। অতীতে জাতীয় পরিচয়পত্রের ভুল সংশোধনে ব্যাপক ভোগান্তিতে পড়তে হত। কারণ ঢাকার আগারগাঁও এর ইসলামিক ফাউন্ডেশন ভবনের নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন অনুবিভাগ অফিসে যেতে হত, যা ঢাকার বাইরের লোকজনের জন্য ছিল ব্যাপক ভোগান্তির। কিন্তু এখন খুব সহজেই নিজ নিজ উপজেলা নির্বাচন কমিশন কার্যালয় থেকে তা করা যাচ্ছে। যদিও ঢাকায় করালে সময় লাগে সাতদিন, আর তিন মাস লাগে উপজেলায়; তারপরও ঢাকায় বার বার যাওয়া-আসার ঝক্কি থেকে বাঁচা যায়। এজন্য নির্দিষ্ট ফরম ডাউনলোড করে তা পূরণ করতে হয়। এরপর এই পূরণকৃত ফরম প্রয়োজনীয় কাগজপত্র ও নিজের মূল জাতীয় পরিচয়পত্রসহ উপজেলা নির্বাচন কমিশন কার্যালয়েজমা দিতে হয়। জমা দেয়ার পর একটি প্রাপ্তি স্বীকারপত্র দেয়া হয়, যাতে তিন মাস পরে যোগাযোগের একটি তারিখ দেয়া হয়। এই তারিখের সাত দিনের মধ্যে সংশোধিত পরিচয়পত্র তোলা যায়।
সংশোধনের প্রক্রিয়াঃ
নামের বানান সংশোধনের জন্যঃ
কারও পরিচয়পত্রে নিজের/পিতার/মাতার/স্বামী/অভিভাবকের নামের বানান সংশোধনের জন্য ফরমের সাথে এসএসসি/সমমান পরীক্ষা সনদের সত্যায়িত ফটোকপি (এসএসসি/সমমান পাস না হলে দেয়া লাগে না), জাতীয়তা/নাগরিকত্ব সনদের সত্যায়িত ফটোকপি, জন্ম সনদের সত্যায়িত ফটোকপি, চাকুরীর প্রমাণপত্র (চাকুরীজীবী হলে), ড্রাইভিং লাইসেন্সের সত্যায়িত ফটোকপি (থাকলে), পাসপোর্টের সত্যায়িত ফটোকপি (থাকলে), নিকাহ/কাবিননামার সত্যায়িত ফটোকপি (বিবাহিত হলে),যার নাম ভুল আছে (পিতা/মাতা/স্বামী/অভিভাবক) তাঁর জাতীয় পরিচয়পত্রের ফটোকপি, ১ম শ্রেণীর গেজেটেড কর্মকর্তা/মেয়র/চেয়ারম্যান/কাউন্সিলর/কমিশনারের প্রত্যয়ন পত্র (প্রয়োজনে) ইত্যাদি জমা দিতে হয়।
নিজের নাম আমূল পরিবর্তন/ডাক নাম যুক্ত করার জন্যঃ
নিজের নাম আমূল পরিবর্তন/ডাক নাম যুক্ত করার জন্য ফরমের সাথে এসএসসি/সমমান পরীক্ষা সনদের সত্যায়িত ফটোকপি (এসএসসি/সমমান পাস না হলে দেয়া লাগে না), স্বামী/স্ত্রীর জাতীয় পরিচয়পত্রের সত্যায়িত ফটোকপি (বিবাহিত হলে), ম্যাজিস্ট্রেট কোর্টে সম্পাদিত এফিডেভিট, এ সংক্রান্ত জাতীয় পত্রিকায় প্রকাশিত বিজ্ঞাপনের সত্যায়িত কপি জমা দিতে হয়। প্রয়োজনে জাতীয়তা/নাগরিকত্ব সনদের সত্যায়িত ফটোকপি, নিকাহ/কাবিননামার সত্যায়িত ফটোকপি (বিবাহিত হলে), জন্ম সনদের সত্যায়িত ফটোকপি, পাসপোর্টের সত্যায়িত ফটোকপি (থাকলে) দেয়া যেতে পারে।
পিতা/মাতা/স্বামী/অভিভাবকের নাম আমূল পরিবর্তন/ডাক নাম সংযোজনের জন্যঃ
পিতা/মাতা/স্বামী/অভিভাবকের নাম আমূল পরিবর্তন/ডাক নাম সংযোজনের জন্য ফরমের সাথে এসএসসি/সমমান পরীক্ষা সনদের সত্যায়িত ফটোকপি (এসএসসি/সমমান পাস না হলে দেয়া লাগে না), পিতা/মাতা/স্বামী/অভিভাবকের জাতীয় পরিচয়পত্রের সত্যায়িত ফটোকপি, পিতা/মাতার মৃত হলে ভাই/বোনের জাতীয় পরিচয়পত্রের সত্যায়িত ফটোকপি, নিকাহ/কাবিননামার সত্যায়িত ফটোকপি (প্রযোজ্য ক্ষেত্রে), ১ম শ্রেণীর গেজেটেড কর্মকর্তা/মেয়র/চেয়ারম্যান/কাউন্সিলর/কমিশনারের প্রত্যয়ন পত্র (প্রয়োজনে) জমা দিতে হয়।
বিবাহ/বিবাহ বিচ্ছেদের কারণে সংশোধনঃ
বিবাহের কারণে স্বামীর নাম অন্তর্ভূক্ত করতে চাইলে স্বামীর জাতীয় পরিচয়পত্রের সত্যায়িত ফটোকপি ও কাবিন/নিকাহনামার সত্যায়িত ফটোকপি ফরমের সাথে জমা দিতে হবে। আবার বিবাহের কারণে স্বামীর নামের বদলে পিতার নাম দিতে চাইলে পিতার জাতীয় পরিচয়পত্রের সত্যায়িত ফটোকপি ও তালাকনামার সত্যায়িত ফটোকপি ফরমের সাথে জমা দিতে হবে। পিতা মৃত হলে মাতা/ অন্য ভাই/বোনের জাতীয় পরিচয় পত্রের সত্যায়িত ফটোকপি, এসএসসি/সমমান পরীক্ষা সনদের সত্যায়িত ফটোকপি (এসএসসি/সমমান পাস না হলে দেয়া লাগে না), জাতীয়তা/নাগরিকত্ব সনদের সত্যায়িত ফটোকপি, জন্ম সনদের সত্যায়িত ফটোকপি, পাসপোর্টের সত্যায়িত ফটোকপি (থাকলে) দেয়া যেতে পারে।
জন্মতারিখ সংশোধনঃ
জন্মতারিখ সংশোধনের জন্য ফরমের সাথে এসএসসি/সমমান পরীক্ষা সনদের সত্যায়িত ফটোকপি (এসএসসি/সমমান পাস হলে অবশ্যই দিতে হবে) অথবা এসএসসি/সমমান পাস হলে না হলে জাতীয়তা/নাগরিকত্ব সনদের সত্যায়িত ফটোকপি, জন্ম সনদের সত্যায়িত ফটোকপি, পাসপোর্টের সত্যায়িত ফটোকপি (থাকলে),চাকুরীর প্রমাণপত্র (চাকুরীজীবী হলে), ড্রাইভিং লাইসেন্সের সত্যায়িত ফটোকপি (থাকলে), পাসপোর্টের সত্যায়িত ফটোকপি (থাকলে), নিকাহ/কাবিননামার সত্যায়িত ফটোকপি (বিবাহিত হলে) ইত্যাদি দেয়া লাগে।
রক্তের গ্রুপ সংশোধনঃ
রক্তের গ্রুপ সংশোধনের জন্য ফরমের সাথে এ সংক্রান্ত মেডিকেল রিপোর্টের কপি জমা দিতে হয়।
ঠিকানার বানান/ছোট-খাট ভুল সংশোধনঃ
বর্তমান ঠিকানায় অনেক সময় বানান বা ছোট-খাট ভুল হয়। এ ধরনের ভুল সংশোধনের জন্য ফরমের সাথে সঠিক বর্তমান ঠিকানার একজন পরিবারের সদস্যের জাতীয় পরিচয়পত্রের সত্যায়িত ফটোকপি, বিদ্যুৎ, গ্যাস বা টেলিফোন বিলের সত্যায়িত ফটোকপি, (অথবা বাড়িভাড়া/ঠিকানা সম্বলিত করের রশিদের সত্যায়িত ফটোকপি অথবা ১ম শ্রেণীর গেজেটেড কর্মকর্তা/মেয়র/চেয়ারম্যান/কাউন্সিলর/কমিশনারের প্রত্যয়ন পত্র) জমা দিতে হয়।
বিবিধ সংশোধনঃ
জাতীয় পরিচয়পত্রে নামের আগে কোন ধরণের পদবী, উপাধি, খেতাব ইত্যাদি লাগানো যায় না। কেউ ভুলবশত পিতা/মাতা/স্বামী/অভিভাবককে মৃত দেখিয়ে ফেললে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি (যাকে মৃত দেখানো হয়েছে) তাঁর জাতীয় পরিচয়পত্রের সত্যায়িত ফটোকপি বা না থাকলে অন্য গ্রহণযোগ্য কাগজপত্রের সত্যায়িত ফটোকপি ফরমের সাথে জমা দেয়া লাগবে। পিতা/মাতা/স্বামী/অভিভাবককে মৃত দেখাতে হলে অবশ্যই তাঁর মৃত্যু সনদের সত্যায়িত ফটোকপি ফরমের সাথে জমা দিতে হবে।
ভোটার এলাকা পরিবর্তনের জন্যঃ
ভোটার এলাকা পরিবর্তনের জন্য উপজেলা নির্বাচন কমিশন কার্যালয়ের জন্য ফরম-১৩ অথবা জেলা নির্বাচন কমিশন কার্যালয়ের জন্য ফরম-১৪ ডাউনলোড করে এবং পূরণ করে ফরমের সাথে নিজের জাতীয় পরিচয়পত্রের সত্যায়িত ফটোকপি, বিদ্যুৎ, গ্যাস বা টেলিফোন বিলের সত্যায়িত ফটোকপি, (অথবা বাড়িভাড়া/ঠিকানা সম্বলিত করের রশিদের সত্যায়িত ফটোকপি অথবা ১ম শ্রেণীর গেজেটেড কর্মকর্তা/মেয়র/চেয়ারম্যান/কাউন্সিলর/কমিশনারের প্রত্যয়ন পত্র) জমা দিতে হয়।
প্রয়োজনীয় ফরম ডাউনলোড লিঙ্কঃ
উপজেলা নির্বাচন কমিশনে সংশোধনের আবেদন ফরমঃ Click This Link
ভোটার এলাকা পরিবর্তন ফরম-১৩: Click This Link
ভোটার এলাকা পরিবর্তন ফরম-১৪: Click This Link
বিঃ দ্রঃ উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা প্রয়োজনীয় ক্ষেত্রে (তথ্য ও প্রমাণের ব্যাপক তারতম্য হলে) সাক্ষাৎকার গ্রহণ করতে পারেন, সন্দেহ হলে সকল কাগজপত্রের মূলকপিও দেখতে পারেন...
জাতীয় পরিচয়পত্র হারিয়ে গেলে সংশ্লিষ্ট থানায় আইডি নম্বর উল্লেখ করে জিডি করতে হবে, জিডির মূলকপিসহ ডাউনলোডকৃত ফরম পূরণ করে উপজেলা নির্বাচন কমিশন কার্যালয়ে জমা দিতে হবে, ডাউনলোড লিঙ্কঃ Click This Link
সেখানে প্রাপ্তি স্বীকার পত্র দেবে...সেখানে কবে দেবে তার তারিখ দেয়া থাকবে
আশাকরি সবার এ তথ্যগুলো কাজে লাগবে...............
সর্বশেষ এডিট : ০৫ ই আগস্ট, ২০১৩ রাত ৮:৪৫