somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

সাকিব শাহরিয়ার
বিবর্ন স্বপ্নাবলী নিয়ে অর্ধ জীবন্ত এক অস্তিত্ব আমি। খুব সতর্ক পায়ে হেটে চলি এই ভূমন্ডলে ও স্থির দৃষ্টিতে চেয়ে থাকি শূন্য পানে নিজের অস্তিত্বের ব্যাখ্যা খুঁজতে।

দেবতা ও শয়তান

২৬ শে আগস্ট, ২০১৬ রাত ৯:৩৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

মাইকেল এনঞ্জ্যালো বিখ্যাত ইতালিয়ান পেইন্টার একবার চিন্তা করলো এনঞ্জ্যাল মানে দেবতার ছবি আকবেন। যেই চিন্তা সেই কাজ। দেবতার ছবি তাকে আকতেই হবে। একাকী নিভৃতে বসে অনেকক্ষণ ভাবলেন কিভাবে একটা এনঞ্জ্যালের ছবি আকবেন?? কিন্তু ভেবে ভেবে কোনো কূল কিনারা করতে পারছিলোনা কিভাবে আকবে একটা দেবতার ছবি?? দেবতারা দেখতে কেমন হয়?? কিভাবে আকলে মানুষ সত্যিই একটা ছবিকে দেবতা বলে বিশ্বাস করে নেবে?? দেবতারা কি লম্বা হয় না খর্ব হয়; কালো হয় না ফর্সা হয়?? এইসব হাজারো প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছিলো তার মাথায়। তবু দেবতার ছবি তাকে আকতেই হবে এই ব্রত নিয়ে সে বেরিয়ে গেলো বিশ্ব ভ্রমনে। দেবতাকে তার খুজে বের করতেই হবে। ঘুরতে ঘুরতে ক্লান্ত এনঞ্জ্যালো একদিন পেয়ে গেলো দেবতা সদৃশ কিছু একটা। ফাটাফাটি, এনঞ্জ্যালো কনভিন্সিড। এটাকে দেবতা হিসেবে আকলে সবাই বিশ্বাস করবেই যে সে দেবতা। সেটা ছিলো মায়ের কুলে শুয়ে দুগ্ধ পানরত ফুটফুটে সুন্দর একটি ছোট্ট শিশু। মাইকেল এনঞ্জ্যালো শিশুটির মাকে তার আইডিয়া খুলে বলল। মা এক মুহূর্তেই রাজি হয়ে গেলেন!! নিজের সন্তানকে দেবতা বানাতে কোন মা'ই বা চাইবে না! এভাবেই আকা হয়ে গেলো দেবতার ছবি। সমস্ত পৃথিবীজোড়া রব পরে গেলো মাইকেলের দেবতার ছবি। রেকর্ড পরিমাণ বিক্রি হলো তার ছবি। পৃথিবীময় নাম ছড়িয়ে পড়ল তার।

অনেক বছর পর। আবার এক খেয়াল চেপে বসলো মাইকেলের মাথায়। সে এবার ডেমন মানে শয়তানে ছবি আকবে। কিন্তু এইকাজটা তার কাছে খুবই চ্যালেঞ্জিং মনে হচ্ছিলো কারন কোনো মানুষকে পৃথিবীময় শয়তানের মডেল বানানো হবে এটা কেউ মেনে নিতে চাইবে না। কারন সবাই নিজেকে আপন মনে হিরোই মনে করে ভিলেন কেউ হতে চায় না। কিন্তু মাইকেল ও নাছোড়বান্দা শয়তানের ছবি তাকে আকতেই হবে। আবার সে বেরিয়ে পড়লো পৃথিবী ভ্রমণে। খুজতে খুজতে সদ্য নিষিদ্ধ পল্লী থেকে বের হওয়া প্রচন্ড রকমের বদক্ষত চেহারার এক মাতালকে তার ভালো লেগে গেলো। শয়তানের মডেল হিসেবে একদম পারফেক্ট ম্যাচ। কিন্তু মাইকেল ইতোস্তত করছেন কিভাবে তাকে শয়তানের মডেল হওয়ার জন্য অফার করবেন? তাই মাইকেল সংকোচ পদে ঘুরছেন তার পিছু পিছু। লোকটা বুঝতে পেরে তাকে জিজ্ঞেস করলো:

আমায় কিছু বলবেন স্যার?
হুম।
তো বলেন পিছে পিছে ঘুরছেন কেন?
তোমার জন্য আমার একটা প্রোপজাল আছে, যত টাকা চাও পাবে।
কি প্রোপজাল?
ইয়ে মানে….
ইতোস্তত করতে হবে না আমি জানি স্যার।
কি জানো?
শয়তানের মডেল হিসেবে আমাকে আপনার পছন্দ হয়েছে, তাই না স্যার?
হুম কিন্তু তুমি বুঝলে কিভাবে?
শুনলাম দেবতার ছবি আকা পর নাকি আপনার শয়তানে ছবি আকার খেয়াল চেপেছে!
তুমি আমকে চিনো?
হ্যা, স্যার।
কিন্তু কিভাবে?
সেইসব গল্প নাহয় পরে হবে? টাকা লাগবে না আমি এমনিতেই মডেল হতে রাজি আছি। কাজ কখন শুরু করবেন স্যার?
এখনি শুরু করি চলো।

তারপর কিছুদিন চেষ্টা করে মাইকেল এনঞ্জ্যালো সফলভাবে একটা শয়তানের ছবি আকা শেষ করল। মাইকেলকে প্রচন্ড প্রফুল্ল দেখাচ্ছিল। বাজারে ছবিটা ছাড়লে তার যে খ্যাতি ও পয়সা উপার্জন হবে সেটা ভেবে তার চোখ চকচক করছিলো। ফিনিশিং এ সে এতটাই প্রফুল্ল ছিলো যে সে তার মডেলে দিকে ভালো করে তাকানই নাই। তিনি একটা শয়তান তৈরির কাজে নিজেকে পুরু মাত্রায় মনোনিবেশ করেন। এবার তার চোখ পড়লো মডেলে দিকে। অবাক দৃষ্টিতে চেয়ে দেখলেন তার দু'চোখ দিয়ে গড়িয়ে পানি পড়ছে। মাইকেল বলল:
কি ব্যাপার কাদছো কেন? আমি তোমাক আগেই বলেছি তুমি শয়তানের মডেল।
না স্যার এজন্য কাদছি না।
তাহলে কাদছো কেন?
(পকেট থেকে পুরানো ভাজ করা একটা ছবি বের করে মাইকেলের হাতে দিয়ে বলল) স্যার ছবিটা চিনতে পারছেন?
(মাইকেলের মুখে এক চিলতে হাসি) চিনতে পারব না কেন, এটাতো আমারই আকা দেবতার ছবি।
স্যার ছবিটাকে চিনতে পারলেন আর ছবির মানুষটাকে চিনতে পারলেন না?
মানে?
মানে খুব সহজ স্যার। বিশ বছর আগে এই চেয়ারে বসিয়ে যাকে দেবতা বানিয়ে ছবি একেছিলেন। আজ বিশ বছরপর সেই একই ব্যাক্তিকে একই চেয়ারে বসিয়ে শয়তান বানিয়ে ছবি আকলেন স্যার। আমি হলফ করে বলতে পারি স্যার, আপনার আজকের আকা শয়তানের ছবিটার বাজার কাটতি কোনো অংশেই বিশ বছর আগে আকা দেবতার ছবির বাজার কাটতি থেকে কম হবে না। জানেন স্যার, আপনার দেয়া এই সৌজন্য কপিটা আমি আজ অবদি বুক পকেটে নিয়ে ঘুমাই আর ভাবি আমি একদিন সত্যি সত্যি দেবতা হব। পুন্য নদীতে স্নান করে মুছে ফেলবো জীবনের সমস্ত পাপ। কিন্তু আজ মনে হচ্ছে না স্যার, আমাদের মত কিছু শয়তানের সমাজে থাকা উচিত নয়ত কাদের ছবি একে আপনারা ব্যাবসা করবেন? কারা আপনাদের আকাশ ছুয়া খ্যাতি দিবে? এই ছবিটা রেখে দেন স্যার; এটার আমার আর কোনো প্রয়োজন হবে না। শয়তানের ছবিটার একটা সৌজন্য কপি পাঠিয়ে দেবেন স্যার, আগামীকাল থেকে সেটাই বুক পকেটে নিয়ে ঘুমাব। আসলে কি জানেন স্যার, আপনাদের পয়সা - খ্যাতি কোনো কিছুতেই কোনো ঘাটতি থাকে না, ঘাটতি থেকে যায় শুধু আমাদের দেখা স্বপ্নগুলোতে। (একটি সত্য ঘটনার আমার এডাপটেশন)




সর্বশেষ এডিট : ২৬ শে আগস্ট, ২০১৬ রাত ৯:৩৬
১টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। মুক্তিযোদ্ধা

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:২১



মুক্তিযুদ্ধের সঠিক তালিকা প্রণয়ন ও ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা প্রসঙ্গে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক বলেছেন, ‘দেশের প্রতিটি উপজেলা পর্যায়ে মুক্তিযোদ্ধা যাচাই বাছাই কমিটি রয়েছে। তারা স্থানীয়ভাবে যাচাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতীয় রাজাকাররা বাংলাদেশর উৎসব গুলোকে সনাতানাইজেশনের চেষ্টা করছে কেন?

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:৪৯



সম্প্রতি প্রতিবছর ঈদ, ১লা বৈশাখ, স্বাধীনতা দিবস, বিজয় দিবস, শহীদ দিবস এলে জঙ্গি রাজাকাররা হাউকাউ করে কেন? শিরোনামে মোহাম্মদ গোফরানের একটি লেখা চোখে পড়েছে, যে পোস্টে তিনি... ...বাকিটুকু পড়ুন

চুরি করাটা প্রফেসরদেরই ভালো মানায়

লিখেছেন হাসান মাহবুব, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৫৩


অত্র অঞ্চলে প্রতিটা সিভিতে আপনারা একটা কথা লেখা দেখবেন, যে আবেদনকারী ব্যক্তির বিশেষ গুণ হলো “সততা ও কঠোর পরিশ্রম”। এর মানে তারা বুঝাতে চায় যে তারা টাকা পয়সা চুরি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঘুষের ধর্ম নাই

লিখেছেন প্রামানিক, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:৫৫


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

মুসলমানে শুকর খায় না
হিন্দু খায় না গাই
সবাই মিলেই সুদ, ঘুষ খায়
সেথায় বিভেদ নাই।

হিন্দু বলে জয় শ্র্রীরাম
মুসলিম আল্লাহ রসুল
হারাম খেয়েই ধর্ম করে
অন্যের ধরে ভুল।

পানি বললে জাত থাকে না
ঘুষ... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইরান-ইজরায়েল দ্বৈরথঃ পানি কতোদূর গড়াবে??

লিখেছেন ভুয়া মফিজ, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:২৬



সারা বিশ্বের খবরাখবর যারা রাখে, তাদের সবাই মোটামুটি জানে যে গত পহেলা এপ্রিল ইজরায়েল ইরানকে ''এপ্রিল ফুল'' দিবসের উপহার দেয়ার নিমিত্তে সিরিয়ায় অবস্থিত ইরানের কনস্যুলেট ভবনে বিমান হামলা চালায়।... ...বাকিটুকু পড়ুন

×