somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ডুব: যেন ফারুকীর হ্যামলেট

৩১ শে অক্টোবর, ২০১৭ রাত ৯:৪৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :




নানা তর্ক-বিতর্ক, আর বাক-বিতন্ডার পথ মাড়িয়ে সেন্সর বোর্ডে প্রায় সাড়ে তিন মিনিট কর্তনের পর অবশেষে গত ২৭ অক্টোবর মুক্তি পায় ডুব। বাংলাদেশের পাশাপাশি অস্ট্রেলিয়া ও ভারতে মুক্তি পায় মোস্তফা সরয়ার ফারুকী পরিচালিত যৌথ প্রযোজনার এই চলচ্চিত্রটি। ১২ কোটি টাকা নির্মাণ ব্যায়ের এই চলচ্চিত্রটি শুরু থেকেই বিভিন্ন কারনে আলোচনা সমালোবনার কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়। যেমন হলিউড ও বলিউড স্টার ইরফান খানের বাংলাদেশে অভিষেক; এটি নন্দিত কথা সাহিত্যিক হুমায়ূন আহমেদ এর জীবন অবল্মনে চিত্রায়িত ভারতের আনন্দ বাজার পত্রিকার এমন দাবি; চলচ্চিত্রটি মুক্তিতে হুমায়ূন পত্নী শাওনের আপত্তি; অত:পর সেন্সরবোর্ড কর্তৃক প্রায় সাড়ে তিন মিনিট কর্তন সাথে বাহুবলী ফিল্ম এসোসিয়েশন থেকে বাহুবলীর তলোয়ার স্বীকৃতি পাওয়ার গুজব ইত্যাদি ইত্যাদি।

যাইহোক, প্রচন্ড মাত্রায় স্লো সিনেমাটির যতই ভিতরে ঢুকছিলাম ততই শেক্সপিয়রের হ্যামলেট নাটকটির কথা মনে পড়ছিলো। ফারুকী যেন হ্যামলেট এর ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছেন। গারট্রুড বা ক্লডিয়াস কে সেটা দর্শকদের বিচার্য। তবে আনন্দ বাজার পত্রিকা যখন ডুবকে হূমায়ুন আহমেদ এর জীবনী অবলম্বনে চিত্রিত বলে দাবি করে তখন হূমায়ুন পরিবারের শীলা আহমেদ ফারুকীর পক্ষে আর শাওন বিপক্ষে অবস্থান করেন। এতেই সিনেমার কাহিনী আচ করা যায় এবং কাহিনী শেষ পর্যন্ত সেদিকেই গড়ায়। কাহিনী বুঝা যাচ্ছিলো তাই সিনেমাটা বোরিং লাগছিলো। সাথে গল্প বলার স্টাইল দেখে মনে হচ্ছিল যেন অন্যের স্ক্রীপ্টে ফারুকীর নাম ব্যাবহার করা হয়েছে। কারন ফারুকীর স্ক্রীপ্ট আরো অনেক প্রানবন্ত হয়। এটাই বোধহয় ফারুকীর সবচেয়ে নিষ্প্রাণ স্ক্রীপ্ট।

Silence is the strongest language in film - এই বাক্যটা যেসব ফিল্ম স্টুডেন্টরা ভালো বুঝেন না তাদের জন্য ডুব মাস্ট রিড ফিল্ম। বিশেষ করে তিশার সাথে অনেকদিন পর ইরফান খানের নীরব ফোন আলাপ, ইরফান খানের সাথে তার ছোট ছেলের অনেকদিন পর দেখার অংশটা, ইরফান খানের মৃত্যুতে রোকেয়া প্রাচীর নির্লিপ্ততা, ইরফান খানের পার্নো মিত্রকে বিয়ে করার আগের বৃষ্টির দৃশ্য ইত্যাদি ইত্যাদি। তাই বলব ফিল্ম লেঙ্গুয়েজে নি:শব্দের শব্দকে প্রচন্ড নান্দনিক ভাবে স্যালুলয়েডে বন্দি করেছেন ফারুকী।

দুর্দান্ত ফ্রেমিং চলচ্চিত্রটায় অন্যরকম একটা মাত্রা দিয়েছে। যেমন শুরুর দিকের জানালার ফাক দিয়ে নদীর ফ্রেম, দ্বীতল অডিটোরিয়াম এর উপরের তলায় তিশা ও পার্নো মিত্রকে বসিয়ে পিছন থেকে নেয়া লং শটটার ফ্রেমিং, বিড়ালটার পা জড়িয়ে ধরার ফ্রেমিং, বৃষ্টির ফ্রেমিং, রিসোর্টাতে যাওয়ার সময় এরিয়াল ভিউতে নেয়া পাহাড়ের ফ্রেমিং- বলা চলে পুরো সিনেমাটাই একটা ফটোগ্রাফির ক্লাস ছিলো। তবে কিছু জায়গার গোঁজামিলও দেয়া হয়েছে। যেমন ইরফান খান মারা যাওয়ার পর তাকে শেষ বারের মত দেখার জন্য মানুষের যে ঢল নামে তার কোনো মাস্টার শট নেয়া হয়নি। অথচ এই জায়গাটায় কয়েকটা বার্ডস আই ভিউ শট খুব দরকার ছিলো। হয়ত পরিচালক এতটা ক্রাউড ম্যানেজ করতে পারবেন না তাই এড়িয়ে গেছেন। মিডিয়া কর্মীদের কিছু ক্লোজ শট আর জানাজার কিছু মিড লং শট দিয়ে ফ্রেম ভর্তি মানুষ দেখিয়ে ইরফান খান অনেক জনপ্রিয় একজন চলচ্চিত্রকার ছিলেন সেটা প্রতিষ্ঠা করার যে চেষ্টা হয়েছে তা অনেকটাই আলগা আলগা মনে হয়েছে।

এবার সিনেমার কাহিনী বিন্যাস, চরিত্রায়ন ও অভিনয় প্রসঙ্গে আসা যাক। কাহিনী নিষ্প্রাণ গতিতে শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত আগাচ্ছিল। সবাই তাদের নিজ নিজ চরিত্রে কাপিয়ে অভিনয় করেছেন শুধু রোকেয়া প্রাচীর বাবার চরিত্রে অভিনয় করা ব্যাক্তিটা ছাড়া। কিছু কিছু চরিত্র ও দৃশ্যের কোনা আগা-মাথা খুজে পাচ্ছিলাম না। যেমন হঠাৎ করে ইরফান খান কেন লাইভ প্রশ্ন উত্তর পর্বে বসলেন? গল্পে কোথা থেকে হঠাৎ এক শিক্ষা নবীশ চলচ্চিত্রকারের উদয় হলো যে কিনা ইরফান খানের তোপের মুখে পড়ে বিদায় নিলো! ইরফান খান জনপ্রিয় চলচ্চিত্রকার অথচ তাকে পুরো সিনেমা জুড়ে কোনো সিনেমার শুটিং বা তার ইউনিট নিয়ে কাজ করতে দেখা যায় নি তাই গল্পে ডিটেইলিং এর ঘাটতি ছিলো।

“To be or not to be : that is the question”- হ্যামলেট নাটকের অসম্ভব জনপ্রিয় একটা ডায়লগ এটি। জাভেদ হাসান কি সত্যিই জাভেদ হাসান নাকি জাভেদ হাসানের মোড়কে হুমায়ূন আহমেদ? ফারুকী যতই বলুক দর্শক কিন্তু তা বিশ্বাস করতে নারাজ। কারন ইরফান খান পর্দায় আসলেই দর্শক ফিসফিসিয়ে বলতে থাকে হুমায়ূন আহমেদ, তিশাকে শিলা আহমেদ, পার্নো মিত্রকে শাওন আর রোকেয়া প্রাচীকে গুলকেতিন। মধুমিতা সিনেমা হলের C22 সিটটা যেন টাইম মেশিন হয়ে ১৬০২ সালে ফিরে গেছে। আমি ক্লডিয়াসের নিরীহ প্রজা, ফারুকী যেন স্বয়ং হ্যামলেট, যে দাবি করছে যে তার রচিত নাটকের সবগুলো চরিত্র কাল্পনিক কিন্তু দর্শক মিটিমিটি হাসছে বাস্তব চরিত্রগুলোর কাল্পনিক এডাপটেশন দেখে। আর হ্যামলেট এর রচিত কাল্পনিক নাটক দেখে ক্লডিয়াস ও গারট্রুড এর যেমন জ্বালা পোড়া শুরু হয় ডুব দেখে কিছু মানুষের তেমনি জ্বলে।

“Frailty, thy name is woman” - সিনেমার ফিনিশিং দেখে হ্যামলেট এর এই ডায়লগটাই খুব বেশি মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছিলো। সিনেমা শুরু থেকে দুজন ভদ্র মহিলার দ্বন্দ দিয়ে এগিয়ে গিয়েছে চূড়ান্ত পরিণতির দিকে যেখানে দুজনেই দুজনের প্রতি নমনীয় হয় কিন্তু দ্বন্দের বিষয়বস্তুর মৃত্যুর পর।

“Listen to many, speak to a few”- ইরফান খান পুরু সিনেমা জুড়েই হ্যামলেট এর এই ডায়লগটাকে বেদ বাক্যের মত পালন করেছেন। আর মোস্তফা সারোয়ার ফারুকী মনে হয় হ্যামলেট এর এই ডায়লগটা “Brevity is the soul of wit ” টেবিলের উপর রেখেই স্ক্রীপ্টটা লিখেছেন। কারন গল্পে কোথাও কোন বাহুল্য ছিলো না। আর পুরু সিনেমা দেখে আমার অনুভূতি ব্যাখ্যা করতে গেলে হ্যামলেট এর আর একটা ডায়লগ লিখতে হবে - “There is nothing about good or bad, but thinking makes it so,” তাই এক কথায় বলতে চাই ডুব যেন ফারুকীর হ্যামলেট।

পরিশেষে, ডুব যদি নিছক জাবেদ হাসানের গল্পই হয়ে থাকে তাহলে আনন্দ বাজার পত্রিকার রিপোর্ট একটা বিজনেস স্ট্র‍্যাটেজি ছিলো যাতে সিনেমার প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান হয়ত প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ ভাবে জড়িত ছিলো। আর ডুব যদি সত্যিই হুমায়ূন আহমেদ এর জীবনী অবলম্বনে হয়ে থাকে তো ফারুকী অনেক বড় একটা সম্ভাবনার অপচয় করেছেন। সত্যটা যাইহোক, দর্শকদের দেখে মনে হচ্ছিলো তারা ডুব দেখতে যায় নি গিয়েছেন প্রয়াত নন্দিত নায়ক হুমায়ূন আহমেদকে দেখতে, তার কোন অজানা অধ্যায় এখানে উঠে এসেছে কিনা তা দেখতে কিংবা ইরফান খান কতটা হুমায়ূন আহমেদ হতে পেরেছেন, তিশা কতটা শিলা আর পার্নো মিত্র কতটা শাওন হতে পেরেছে তা মাপতে। গুলকেতিন এর কষ্ট রোকেয়া প্রাচী কতটা চিত্রিত করতে পেরেছেন তা বুঝতে। তাই ডুব সিনেমার হল ভর্তি মানুষ দেখে যদি কেউ মনে করেন বাংলাদেশে স্লো সিনেমার মার্কেট তৈরি হয়ে গেছে তাহলে ভুল করছেন। ডুব ব্যাবসা করছে বির্তক সৃষ্টি করে এই স্ট্র‍্যাটেজিটা ফারুকী প্রায় সব চলচ্চিত্রেই ব্যাবহার করেছেন যেমন ব্যাচেলর, থার্ড পারসন সিঙ্গুলার নাম্বার, মেড ইন বাংলাদেশ, টেলিভিশন ইত্যাদি ইত্যাদি।
নানা তর্ক-বিতর্ক, আর বাক-বিতন্ডার পথ মাড়িয়ে সেন্সর বোর্ডে প্রায় সাড়ে তিন মিনিট কর্তনের পর অবশেষে গত ২৭ অক্টোবর মুক্তি পায় ডুব। বাংলাদেশের পাশাপাশি অস্ট্রেলিয়া ও ভারতে মুক্তি পায় মোস্তফা সরয়ার ফারুকী পরিচালিত যৌথ প্রযোজনার এই চলচ্চিত্রটি। ১২ কোটি টাকা নির্মাণ ব্যায়ের এই চলচ্চিত্রটি শুরু থেকেই বিভিন্ন কারনে আলোচনা সমালোবনার কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়। যেমন হলিউড ও বলিউড স্টার ইরফান খানের বাংলাদেশে অভিষেক; এটি নন্দিত কথা সাহিত্যিক হুমায়ূন আহমেদ এর জীবন অবল্মনে চিত্রায়িত ভারতের আনন্দ বাজার পত্রিকার এমন দাবি; চলচ্চিত্রটি মুক্তিতে হুমায়ূন পত্নী শাওনের আপত্তি; অত:পর সেন্সরবোর্ড কর্তৃক প্রায় সাড়ে তিন মিনিট কর্তন সাথে বাহুবলী ফিল্ম এসোসিয়েশন থেকে বাহুবলীর তলোয়ার স্বীকৃতি পাওয়ার গুজব ইত্যাদি ইত্যাদি।

যাইহোক, প্রচন্ড মাত্রায় স্লো সিনেমাটির যতই ভিতরে ঢুকছিলাম ততই শেক্সপিয়রের হ্যামলেট নাটকটির কথা মনে পড়ছিলো। ফারুকী যেন হ্যামলেট এর ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছেন। গারট্রুড বা ক্লডিয়াস কে সেটা দর্শকদের বিচার্য। তবে আনন্দ বাজার পত্রিকা যখন ডুবকে হূমায়ুন আহমেদ এর জীবনী অবলম্বনে চিত্রিত বলে দাবি করে তখন হূমায়ুন পরিবারের শীলা আহমেদ ফারুকীর পক্ষে আর শাওন বিপক্ষে অবস্থান করেন। এতেই সিনেমার কাহিনী আচ করা যায় এবং কাহিনী শেষ পর্যন্ত সেদিকেই গড়ায়। কাহিনী বুঝা যাচ্ছিলো তাই সিনেমাটা বোরিং লাগছিলো। সাথে গল্প বলার স্টাইল দেখে মনে হচ্ছিল যেন অন্যের স্ক্রীপ্টে ফারুকীর নাম ব্যাবহার করা হয়েছে। কারন ফারুকীর স্ক্রীপ্ট আরো অনেক প্রানবন্ত হয়। এটাই বোধহয় ফারুকীর সবচেয়ে নিষ্প্রাণ স্ক্রীপ্ট।

Silence is the strongest language in film - এই বাক্যটা যেসব ফিল্ম স্টুডেন্টরা ভালো বুঝেন না তাদের জন্য ডুব মাস্ট রিড ফিল্ম। বিশেষ করে তিশার সাথে অনেকদিন পর ইরফান খানের নীরব ফোন আলাপ, ইরফান খানের সাথে তার ছোট ছেলের অনেকদিন পর দেখার অংশটা, ইরফান খানের মৃত্যুতে রোকেয়া প্রাচীর নির্লিপ্ততা, ইরফান খানের পার্নো মিত্রকে বিয়ে করার আগের বৃষ্টির দৃশ্য ইত্যাদি ইত্যাদি। তাই বলব ফিল্ম লেঙ্গুয়েজে নি:শব্দের শব্দকে প্রচন্ড নান্দনিক ভাবে স্যালুলয়েডে বন্দি করেছেন ফারুকী।

দুর্দান্ত ফ্রেমিং চলচ্চিত্রটায় অন্যরকম একটা মাত্রা দিয়েছে। যেমন শুরুর দিকের জানালার ফাক দিয়ে নদীর ফ্রেম, দ্বীতল অডিটোরিয়াম এর উপরের তলায় তিশা ও পার্নো মিত্রকে বসিয়ে পিছন থেকে নেয়া লং শটটার ফ্রেমিং, বিড়ালটার পা জড়িয়ে ধরার ফ্রেমিং, বৃষ্টির ফ্রেমিং, রিসোর্টাতে যাওয়ার সময় এরিয়াল ভিউতে নেয়া পাহাড়ের ফ্রেমিং- বলা চলে পুরো সিনেমাটাই একটা ফটোগ্রাফির ক্লাস ছিলো। তবে কিছু জায়গার গোঁজামিলও দেয়া হয়েছে। যেমন ইরফান খান মারা যাওয়ার পর তাকে শেষ বারের মত দেখার জন্য মানুষের যে ঢল নামে তার কোনো মাস্টার শট নেয়া হয়নি। অথচ এই জায়গাটায় কয়েকটা বার্ডস আই ভিউ শট খুব দরকার ছিলো। হয়ত পরিচালক এতটা ক্রাউড ম্যানেজ করতে পারবেন না তাই এড়িয়ে গেছেন। মিডিয়া কর্মীদের কিছু ক্লোজ শট আর জানাজার কিছু মিড লং শট দিয়ে ফ্রেম ভর্তি মানুষ দেখিয়ে ইরফান খান অনেক জনপ্রিয় একজন চলচ্চিত্রকার ছিলেন সেটা প্রতিষ্ঠা করার যে চেষ্টা হয়েছে তা অনেকটাই আলগা আলগা মনে হয়েছে।

এবার সিনেমার কাহিনী বিন্যাস, চরিত্রায়ন ও অভিনয় প্রসঙ্গে আসা যাক। কাহিনী নিষ্প্রাণ গতিতে শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত আগাচ্ছিল। সবাই তাদের নিজ নিজ চরিত্রে কাপিয়ে অভিনয় করেছেন শুধু রোকেয়া প্রাচীর বাবার চরিত্রে অভিনয় করা ব্যাক্তিটা ছাড়া। কিছু কিছু চরিত্র ও দৃশ্যের কোনা আগা-মাথা খুজে পাচ্ছিলাম না। যেমন হঠাৎ করে ইরফান খান কেন লাইভ প্রশ্ন উত্তর পর্বে বসলেন? গল্পে কোথা থেকে হঠাৎ এক শিক্ষা নবীশ চলচ্চিত্রকারের উদয় হলো যে কিনা ইরফান খানের তোপের মুখে পড়ে বিদায় নিলো! ইরফান খান জনপ্রিয় চলচ্চিত্রকার অথচ তাকে পুরো সিনেমা জুড়ে কোনো সিনেমার শুটিং বা তার ইউনিট নিয়ে কাজ করতে দেখা যায় নি তাই গল্পে ডিটেইলিং এর ঘাটতি ছিলো।

“To be or not to be : that is the question”- হ্যামলেট নাটকের অসম্ভব জনপ্রিয় একটা ডায়লগ এটি। জাভেদ হাসান কি সত্যিই জাভেদ হাসান নাকি জাভেদ হাসানের মোড়কে হুমায়ূন আহমেদ? ফারুকী যতই বলুক দর্শক কিন্তু তা বিশ্বাস করতে নারাজ। কারন ইরফান খান পর্দায় আসলেই দর্শক ফিসফিসিয়ে বলতে থাকে হুমায়ূন আহমেদ, তিশাকে শিলা আহমেদ, পার্নো মিত্রকে শাওন আর রোকেয়া প্রাচীকে গুলকেতিন। মধুমিতা সিনেমা হলের C22 সিটটা যেন টাইম মেশিন হয়ে ১৬০২ সালে ফিরে গেছে। আমি ক্লডিয়াসের নিরীহ প্রজা, ফারুকী যেন স্বয়ং হ্যামলেট, যে দাবি করছে যে তার রচিত নাটকের সবগুলো চরিত্র কাল্পনিক কিন্তু দর্শক মিটিমিটি হাসছে বাস্তব চরিত্রগুলোর কাল্পনিক এডাপটেশন দেখে। আর হ্যামলেট এর রচিত কাল্পনিক নাটক দেখে ক্লডিয়াস ও গারট্রুড এর যেমন জ্বালা পোড়া শুরু হয় ডুব দেখে কিছু মানুষের তেমনি জ্বলে।

“Frailty, thy name is woman” - সিনেমার ফিনিশিং দেখে হ্যামলেট এর এই ডায়লগটাই খুব বেশি মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছিলো। সিনেমা শুরু থেকে দুজন ভদ্র মহিলার দ্বন্দ দিয়ে এগিয়ে গিয়েছে চূড়ান্ত পরিণতির দিকে যেখানে দুজনেই দুজনের প্রতি নমনীয় হয় কিন্তু দ্বন্দের বিষয়বস্তুর মৃত্যুর পর।

“Listen to many, speak to a few”- ইরফান খান পুরু সিনেমা জুড়েই হ্যামলেট এর এই ডায়লগটাকে বেদ বাক্যের মত পালন করেছেন। আর মোস্তফা সারোয়ার ফারুকী মনে হয় হ্যামলেট এর এই ডায়লগটা “Brevity is the soul of wit ” টেবিলের উপর রেখেই স্ক্রীপ্টটা লিখেছেন। কারন গল্পে কোথাও কোন বাহুল্য ছিলো না। আর পুরু সিনেমা দেখে আমার অনুভূতি ব্যাখ্যা করতে গেলে হ্যামলেট এর আর একটা ডায়লগ লিখতে হবে - “There is nothing about good or bad, but thinking makes it so,” তাই এক কথায় বলতে চাই ডুব যেন ফারুকীর হ্যামলেট।

পরিশেষে, ডুব যদি নিছক জাবেদ হাসানের গল্পই হয়ে থাকে তাহলে আনন্দ বাজার পত্রিকার রিপোর্ট একটা বিজনেস স্ট্র‍্যাটেজি ছিলো যাতে সিনেমার প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান হয়ত প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ ভাবে জড়িত ছিলো। আর ডুব যদি সত্যিই হুমায়ূন আহমেদ এর জীবনী অবলম্বনে হয়ে থাকে তো ফারুকী অনেক বড় একটা সম্ভাবনার অপচয় করেছেন। সত্যটা যাইহোক, দর্শকদের দেখে মনে হচ্ছিলো তারা ডুব দেখতে যায় নি গিয়েছেন প্রয়াত নন্দিত নায়ক হুমায়ূন আহমেদকে দেখতে, তার কোন অজানা অধ্যায় এখানে উঠে এসেছে কিনা তা দেখতে কিংবা ইরফান খান কতটা হুমায়ূন আহমেদ হতে পেরেছেন, তিশা কতটা শিলা আর পার্নো মিত্র কতটা শাওন হতে পেরেছে তা মাপতে। গুলকেতিন এর কষ্ট রোকেয়া প্রাচী কতটা চিত্রিত করতে পেরেছেন তা বুঝতে। তাই ডুব সিনেমার হল ভর্তি মানুষ দেখে যদি কেউ মনে করেন বাংলাদেশে স্লো সিনেমার মার্কেট তৈরি হয়ে গেছে তাহলে ভুল করছেন। ডুব ব্যাবসা করছে বির্তক সৃষ্টি করে এই স্ট্র‍্যাটেজিটা ফারুকী প্রায় সব চলচ্চিত্রেই ব্যাবহার করেছেন যেমন ব্যাচেলর, থার্ড পারসন সিঙ্গুলার নাম্বার, মেড ইন বাংলাদেশ, টেলিভিশন ইত্যাদি ইত্যাদি।
সর্বশেষ এডিট : ৩১ শে অক্টোবর, ২০১৭ রাত ১০:০৪
২টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমি হাসান মাহবুবের তাতিন নই।

লিখেছেন ৎৎৎঘূৎৎ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩



ছোটবেলা পদার্থবিজ্ঞান বইয়ের ভেতরে করে রাত জেগে তিন গোয়েন্দা পড়তাম। মামনি ভাবতেন ছেলেটা আড়াইটা পর্যন্ত পড়ছে ইদানীং। এতো দিনে পড়ায় মনযোগ এসেছে তাহলে। যেদিন আমি তার থেকে টাকা নিয়ে একটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতীয় পণ্য বয়কটের কেন এই ডাক। একটি সমীক্ষা-অভিমত।।

লিখেছেন সাইয়িদ রফিকুল হক, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৩:১৫



ভারতীয় পণ্য বয়কটের কেন এই ডাক। একটি সমীক্ষা-অভিমত।।
সাইয়িদ রফিকুল হক

বিএনপি ২০২৪ খ্রিস্টাব্দে দেশে অনুষ্ঠিত “দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে”-এ অংশগ্রহণ করেনি। তারা এই নির্বাচনের বহু আগে থেকেই নির্বাচনে অংশগ্রহণ... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুক্তিযোদ্ধাদের বিবিধ গ্রুপে বিভক্ত করার বেকুবী প্রয়াস ( মুমিন, কমিন, জমিন )

লিখেছেন সোনাগাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৫:৩০



যাঁরা মুক্তিযদ্ধ করেননি, মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে লেখা তাঁদের পক্ষে মোটামুটি অসম্ভব কাজ। ১৯৭১ সালের মার্চে, কৃষকের যেই ছেলেটি কলেজ, ইউনিভার্সিতে পড়ছিলো, কিংবা চাষ নিয়ে ব্যস্ত ছিলো, সেই ছেলেটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। সাংঘাতিক উস্কানি মুলক আচরন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৪



কি সাঙ্ঘাতিক উস্কানিমুলক আচরন আমাদের রাষ্ট্রের প্রধানমন্ত্রীর । নাহ আমি তার এই আচরনে ক্ষুব্ধ । ...বাকিটুকু পড়ুন

একটি ছবি ব্লগ ও ছবির মতো সুন্দর চট্টগ্রাম।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৮:৩৮


এটি উন্নত বিশ্বের কোন দেশ বা কোন বিদেশী মেয়ের ছবি নয় - ছবিতে চট্টগ্রামের কাপ্তাই সংলগ্ন রাঙামাটির পাহাড়ি প্রকৃতির একটি ছবি।

ব্লগার চাঁদগাজী আমাকে মাঝে মাঝে বলেন চট্টগ্রাম ও... ...বাকিটুকু পড়ুন

×