একটা মানসিক হাসপাতাল। তিনজন বসে আছে নিশ্চুপ- অনিমেষ, অনিমেষের মা আর ডাক্তার। ডাক্তার খুব মনোযোগ দিয়ে দেখছে রেপোর্ট গুলো। অনিমেষের মায়ের মুখে চিন্তার ছাপ। অনিমেষ নির্লীপ্ত। নীরবতা ভাঙ্গে ডাক্তার।
না সবকিছু ঠিকি মনে হচ্ছে। তবু কোনো সমস্যা হলে আবার নিয়ে আসবেন। আর আনিমেষ সাহেব আপনার পুরু নাম লিখে এখানে একটা সিগ্নেচার করেন।
নাম? আচ্ছা দেন।
অনিমেষ আস্তে আস্তে নিজের নামটা লিখলো সে ফর্মে। অনিমেষ চৌধুরী রুবাইয়াত। আজকের তারিখটা যেন কত?
২ রা অক্টোবর।
অহ, আচ্ছা লিখছি-০২/০৮/২০১০
সালটা ঠিক করে লেখেন।
মানে?
মানে এটা ২০১০ না ২০১৪ এই যে ক্যালেন্ডার।
অনিমেষ অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে ক্যালেন্ডারের পাতার দিকে। সত্যি সময় আর নদীর স্রোত কত নিষ্ঠুর। কারোর জন্য অপেক্ষা করে না। আবার অনিমেষ আন মনে ভাবে শুধু সময় আর নদীর স্রোতকে দোষারোপ করে লাভ কি? কেউ কি অপেক্ষা করে? নিজের জীবন থেকে চারটে বছরের ছুটি পেয়েছিল অনিমেষ। তাতেই মনে হচ্ছে পৃথিবীতে তার প্রয়োজন ফুরিয়ে গেছে। সবাই তাকে বিয়োগ করে নিজের জীবনের জায়গাটা করে নিয়েছে নিজের মত করে। সত্যি পৃথিবীর সব মানুষই বাচতে চায়। নিজেকে বাচাতে হবে এটাই পৃথিবীর সবচেয়ে আদিম দর্শন। অনিমেষ সব কিছুই জানে কিন্তু মনকে মানাতে পারে না।
পৃথিবীতে এমন অনেক বাস্তবতা আছে যা মানুষ বুঝে কিন্তু সহ্য করতে পারে না। না সহ্য করতে পারে না বললে ভুল হবে। মানুষ সব কিছুই সহ্য করতে পারে কিন্তু মেনে নিতে পারে না।
কি রে বাড়ি যাবি না অনিমেষ?
হুম, বাড়ি?
হ্যা বাড়ি। যাবি না?
হুম যাবো।
সদ্য ভূমিষ্ঠ এক অবুঝ বালকের মত মায়ের পিছ পিছ হাটতে থাকে অনিমেষ। এ পৃথিবীতে যেন পুনরায় ফিরে এসেছে সে। পার্থক্য শুধু এতটুকুই যে তখন গায়ে কাপড় ছিলো না এখন আছে; তখন ছিলো এক শূন্য সত্বা আর এখন সদ্য জেগে উঠা এক মৃত সত্বা। (চলবে)
অস্তিত্বের অন্তরাল: ৩
সর্বশেষ এডিট : ০৯ ই ডিসেম্বর, ২০১৭ সন্ধ্যা ৭:৫৭