somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

সুপার হিরোঃ খান সাহেবের খোলস মুক্তি

২০ শে জুন, ২০১৮ দুপুর ১:৩৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



নিন্দুকেরা যত ট্রল করুক না কেন ঢাকাই চলচ্চিত্রে শাকিব খান মানেই অনেক বড় একটা বাজার, হল ভর্তি দর্শক আর প্রোডিউসারের মুখে হাসি এবং এই বাজারটাকে পুঁজি করে খান সাহেব নিজের স্থুল ব্রান্ডিং কম করেন নাই। যেমন “গড ইজ ওয়ান; লাইফ ইজ ওয়ান; নাম্বার ওয়ান শাকিব খান” আবার “হিরো দ‍্যা সুপার স্টার” কিংবা “কিং খান” ইত‍্যাদি ইত‍্যাদি। সুপার হিরো নামটা শুনে মনে হয়েছিল কিং খান এবার বুঝি সুপার ম‍্যান হয়ে মনের খায়েশ মেটাবেন অথবা গরীবের রাজা “রবীন হুড”। তবে ট্রেইলার দেখে খানিকটা ধাক্কা খেয়েছিলাম কিন্তু শাকিব খান তার স্টারডমে এতটা ছাড় দিয়ে শুধু চরিত্রের প্রয়োজনে একটা সাধারণ চরিত্র হয়ে উঠবেন এটি শুরুতে বিশ্বাস করতে পারিনি। সাধুবাদ, খান সাহেবের বোধোদয় হওয়ার জন্যে আর আর পরিচালক আশিকুর রহমানকে - খান সাহেবকে নিজের খোলস থেকে বের করে আনার জন‍্যে।

এবার কাহিনী প্রসঙ্গে আসা যাক। সুপার হিরো সিনেমার সবচেয়ে ভালো দিক ছিল গল্পের শক্ত গাঁথুনি। সাসপেন্স থ্রিলারধর্মী চলচ্চিত্রের সার্থকতা অনেকাংশে নির্ভর করে গতির পরিমিত ব‍্যাবহারের মাধ্যমে দর্শকদের চোখগুলো পর্দায় সদা জাগ্রত রাখা এবং এই মানদণ্ডে আশিকুর রহমান নিঃসন্দেহে মুন্সিয়ানা দেখিয়েছেন। গল্প বলার ধরনটাও ছিল তার নিজস্ব স্টাইলে যেমনটা বলেছেন “মুসাফির” এ। সব মিলিয়ে, কিছু ছোট খাট ত্রুটি ছাড়া সুপার হিরো একটি সার্থক বানিজ্যিক মিক্স।

কাহিনীর পাশাপাশি সুপার হিরোর আর একটি সফল জায়গা হচ্ছে চরিত্রায়ন। চরিত্রগুলো গিরগিটির মত রং বদলেছে় ক্ষণে ক্ষণে। গুরুত্বপূর্ণ চরিত্র গুলোর মধ‍্যে স্ট্রেইট চরিত্র ছিল শাকিব খানের ও টাইগার রবির চরিত্র। বাকী সবগুলো চরিত্রই ছিল দেখার মত। বাংলা চলচ্চিত্রের জন‍্য সবচেয়ে সম্ভাবনাময় চরিত্রটি ছিল বুবলির চরিত্র কারন এ‍্যাকশন ধর্মী চলচ্চিত্রগুলোতে নায়িকার চরিত্রটি অনেক বেশি টাইপ আর বোরিং হয়ে যাচ্ছিলো দিন কি দিন। গল্পকাররা ঠিক বুঝতে পারছিলেন না কোথায় ফিট করবেন নায়িকা চরিত্রটি। নবাব সিনেমায় শুভশ্রী, ঢাকা অ‍্যাটাকে মাহী, পাষাণে মীম একে একে সবাই পা দিয়েছেন এই সব হাস‍্যকর সাংবাদিক চরিত্রে। যেন এ‍্যাকশন সিনেমার নায়িকা মানেই সাংবাদিক হয়ে পুলিশ নায়কের সাথে প্রেম করতে হবে। নারী পার্শ্বচরিত্রে অভিনেত্রী সিন্ডি রোলিং এর চরিত্রটিও দেখার মত ছিল। তবে সবচেয়ে দৃষ্টিনন্দন চরিত্র ছিল তারিক আনাম খানের চরিত্রটি।

এবার অভিনয় প্রসঙ্গে আসা যাক। সুপার হিরো চলচ্চিত্রে বিভিন্ন চরিত্রে অভিনয় করেছেন শাকিব খান, শবনম বুবলি, তারিক আনাম খান, সাদেক বাচ্চু, টাইগার রবি, বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত মার্কিন অভিনেত্রী সিন্ডি রোলিং প্রমুখ। তবে অভিনয় প্রসঙ্গে বলতে গেলে বলতে হবে মূল চরিত্রগুলো যতটা কাঁপিয়ে অভিনয় করছে পার্শ্বচরিত্রগুলো ততটাই দূর্বল ছিল। সবচেয়ে দুঃখজনক ছিল সাদেক বাচ্চুর মত পাকা একজন অভিনেতার এমন আলগা অভিনয়। পজেটিভ কমেডি চরিত্রে নিজেকে কোন ভাবেই খাপ খাওয়াতে পারছিলেন না তিনি। অস্ট্রেলিয়ার পুলিশ অফিসার, অস্ট্রেলিয়ান এম্বাসীর বুবলির বস এরা সবাই দূর্বল অভিনয়ের দোষে দুষ্ট। টাইগার রবি বার বার অতি অভিনয় করেছেন। বুবলির অভিনয় একটু পেসিভ। আর একটু একটিভ অভিনয় করলে ভালো হবে বলে মনে হচ্ছে। শাকিব খান অভিনয়ে স্বতঃস্ফূর্ত ছিলেন তবে তার ফিগার চরিত্রের সাথে যাচ্ছিলো না। তার চরিত্রটায় একজন পেশিবহুল নায়কের বেশি প্রয়োজন ছিল। বিশেষ করে টাইগার রবির পেশিবহুল বাহুর সাথে খান সাহেবের মেদ যুক্ত শরীর যাচ্ছিলো না। তাছাড়া লাইফ জ‍্যাকেট ও হ‍্যালমেট পরিহিত শরীরে শাকিব খানকে পুরোপুরি ফিট মনে হয়নি। তবে সিন্ডি রোলিং ও তারিক আনাম খান তাদের চরিত্রে পুরোপুরি ফিট ছিলেন। তারিক আনাম খানের খল অভিনয় নতুন কিছু না। নব্বইয়ের দশকের জনপ্রিয় টিভি নাটক তথাপির “লাট ভাই” চরিত্রে অভিনয়ের পর বেশ কিছু সিনেমায় খল চরিত্রে অভিনয় করেছেন তিনি কিন্তু খুব একটা সুবিধা করতে পারেনি। তবে সুপার হিরোতে উনি নিজের জাত চিনিয়েছেন।

নির্মাণ সম্বন্ধে বলতে গেলে বলতে হবে স্বল্প বাজেটে কিভাবে ভালো সিনেমা বানানো যায় তার একটি দৃষ্টান্ত এটি। বিভিন্ন সূত্রে জানা যায় এই সিনেমার বাজেট নাকি ৩ থেকে ৫ কোটি টাকা কিন্তু এই গল্পে দশ কোটির কমে ভালো কিছু করা কঠিন যার ছাপ সিনেমার পড়তে পড়তে লুকিয়ে ছিল। কালার কারেকশন খুবই বাজে হয়েছে, ক্রোমার কাজ আলগা আলগা মনে হয়েছে, সিকোয়েন্সের কালার কন্টিনিউইটি ছিল না ইত্যাদি।

এখন সিনেমার কিছু গঠনমূলক সমালোচনায় আসা যাক। প্রথম যে জিনিসটায় ধাক্কা খেলাম সেটা হচ্ছে বাবার ছেলের সামনে বিয়ার খাওয়ার কৌতুক সিকুয়েন্সটা। এটা আমার দেশের সংস্কৃতি না কারন আমার দেশের কোন বাবা বোধহয় ছেলের সামনে বিয়ার খেয়ে মাতাল হয় না।

সিনেমায় প্রতিরক্ষা বাহিনীতে যারা ছিলেন তাদের অনেকেই বিশেষ করে শাকিব খান ক্লিন সেভ করেনি। তবে আমি যতদূর জানি বাংলাদেশের প্রতিরক্ষা বাহিনীর সবার ক্লিন সেভ করা বাধ্যতামূলক। এমনকি ঢাকা অ‍্যাটাক সিনেমায় আরেফিন শুভ, এ বি এম সুমন সহ সবাই ক্লিন সেভড ছিল। শাকিব খানের চুলের কাটও প্রতিরক্ষা বাহিনীর মত ছিল না।

এমনকি শাকিব খান এর ম‍্যাকাপে কিছু কিছু ক্ষেত্রে কন্টিনিউইটি ছিল না। বাংলাদেশ থেকে অস্ট্রেলিয়া যাওয়ার পর এক রাতে তার চুল দাড়ি বড় হয়ে উঠে। আবার অস্ট্রেলিয়া থেকে বাংলাদেশে আসার পর একদিনে তার চুল দাড়ি ছোট হয়ে যায়।

শাকিব খান অস্ট্রেলিয়ায় কি জন্য গেলো আর করলো কি! গেল ট্রেনিং করতে কিন্তু ট্রেনিং এর নাম গন্ধ নাই ফিরল বুবলির সাথে প্রেমের ফসল একটা ল‍্যাপটপ নিয়ে, হাস‍্যকর। বাংলাদেশের মিসাইল বিজ্ঞানী অস্ট্রেলিয়া গিয়েছেন আর তার নিরাপত্তার জন্য বাংলাদেশের শিক্ষানবিশ এক প্রতিরক্ষা কর্মকর্তাকে অনুরোধ করছেন বাংলাদেশের এম্বাসীর এক কর্মচারী। এরকম কাহিনী হলে হাসানোর জন‍্য কমেডি সিকুয়েন্স থাকা লাগে না।

একটা সিকুয়েন্সে দেখা যায় শাকিব খান বুবলিকে নিয়ে গাড়ি বদলে পালিয়ে যায়। ছাদ হীন খোলামেলা স্পোর্টস কার দিয়ে কেউ পালিয়ে যাবে এই আইডিয়াটা প্রচন্ড রকম হাস‍্যকর।

বুবলি যে হাতকড়া নিয়ে শাকিব খানের গাড়ি থেকে পালায় সিন্ডি। রোলিং তা এক হাতের আলতো ছোঁয়ায় খুলে ফেলে। বাংলাদেশ পুলিশের হাতকড়া কি এতটাই দূর্বল!


ছোটখাটো ভুল গুলোর দিকে নজর দিলে আর বাজেট একটু বাড়াতে পারলে সামনে হয়ত এই গুণী পরিচালক থেকে আরো ভালো কাজ পাবো এই প্রত‍্যাশায় আছি।
সর্বশেষ এডিট : ২০ শে জুন, ২০১৮ দুপুর ১:৩৬
৯টি মন্তব্য ৯টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানে মুক্তিযোদ্ধাদের মুমিনী চেহারা ও পোশাক দেখে শান্তি পেলাম

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৭ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৯:৫৮



স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানে স্টেজে উঠেছেন বত্রিশ মুক্তিযোদ্ধা তাঁদের চব্বিশ জনের দাঁড়ি, টুপি ও পাজামা-পাঞ্জাবী ছিলো। এমন দৃশ্য দেখে আত্মায় খুব শান্তি পেলাম। মনে হলো আমাদের মুক্তিযোদ্ধা আমাদের মুমিনদের... ...বাকিটুকু পড়ুন

দু'টো মানচিত্র এঁকে, দু'টো দেশের মাঝে বিঁধে আছে অনুভূতিগুলোর ব্যবচ্ছেদ

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ১২:৩৪


মিস ইউনিভার্স একটি আন্তর্জাতিক সুন্দরী প্রতিযোগিতার নাম। এই প্রতিযোগিতায় বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সুন্দরীরা অংশগ্রহণ করলেও কখনোই সৌদি কোন নারী অংশ গ্রহন করেন নি। তবে এবার রেকর্ড ভঙ্গ করলেন সৌদি... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের দুই টাকার জ্ঞানী বনাম তিনশো মিলিয়নের জ্ঞানী!

লিখেছেন সাহাদাত উদরাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ২:৫৯

বিশ্বের নামীদামী অমুসলিমদের মুসলিম হয়ে যাওয়াটা আমার কাছে তেমন কোন বিষয় মনে হত না বা বলা চলে এদের নিয়ে আমার কোন আগ্রহ ছিল না। কিন্তু আজ অষ্ট্রেলিয়ার বিখ্যাত ডিজাইনার মিঃ... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমি হাসান মাহবুবের তাতিন নই।

লিখেছেন ৎৎৎঘূৎৎ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩



ছোটবেলা পদার্থবিজ্ঞান বইয়ের ভেতরে করে রাত জেগে তিন গোয়েন্দা পড়তাম। মামনি ভাবতেন ছেলেটা আড়াইটা পর্যন্ত পড়ছে ইদানীং। এতো দিনে পড়ায় মনযোগ এসেছে তাহলে। যেদিন আমি তার থেকে টাকা নিয়ে একটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুক্তিযোদ্ধাদের বিবিধ গ্রুপে বিভক্ত করার বেকুবী প্রয়াস ( মুমিন, কমিন, জমিন )

লিখেছেন সোনাগাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৫:৩০



যাঁরা মুক্তিযদ্ধ করেননি, মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে লেখা তাঁদের পক্ষে মোটামুটি অসম্ভব কাজ। ১৯৭১ সালের মার্চে, কৃষকের যেই ছেলেটি কলেজ, ইউনিভার্সিতে পড়ছিলো, কিংবা চাষ নিয়ে ব্যস্ত ছিলো, সেই ছেলেটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×