বাংলাদেশের জাতীয় ডাটা সেন্টারে নাকি অনেক অনেক ভুয়া ভোটার আইডির ইনফরমেশন পাওয়া গিয়েছে,এদের প্রায় সবাই রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর। এই আইডি ব্যবহার করে পাসপোর্ট-এর মতো গুরুত্বপূর্ণ পেপারও বের করে নিয়ে যাচ্ছে ।মনে করা হচ্ছে ২০১৪ ও ২০১৫ সালে যে দুইটি ল্যাপটপ হারিয়ে গিয়েছিলো,, সেই দুটি ল্যাপটপ থেকেই এগুলা করা হয়েছে।কিন্তু কথা হলো,, কেমনে করলো এই কাজ?শুধু ল্যাপটপ দিয়ে কেমনে পসিবল?ল্যাপটপ না হয় হারিয়ে গিয়েছে,বাট একটা দেশের ন্যাশনাল ডাটা সেন্টার, সেটার সিকুরিটি এতোই দুর্বল যে খুব সহজেই ডাটা সেন্টারে একসেস করে ডাটা এন্ট্রি করলো!! ,,, এতো কেন দুর্বল হবে?? এর আগে এই সিকুরিটি দুর্বলতার জন্যে কত হাজার টাকা হ্যাক হলো,তাও শিক্ষা হলোনা?? আবার একটা দেশের ন্যাশনাল ডাটা সেন্টারে যে কেউ একসেস করে রোহিঙ্গাদের ডাটা এন্ট্রি করে ফেললো!!
আমি চীনের একটি ভার্সিটিতে পড়াশোনা করতেছি,, এই ভার্সিটির সিকুরিটি নিয়ে একটু বলি, তাহলে বুঝবেন।
যখন আমরা এখানে ভর্তি হই,তখন সব নরমালই ছিলো।প্রায় ১ বছর পর একদিন নোটিস আসলো আমরা আর যেখান সেখান থেকে আমাদের ভার্সিটির ওয়েবসাইট থেকে রেজাল্ট দেখতে পারবোনা,, কেন?? কারন অনেক ইন্টারন্যাশনাল স্টুডেন্ট তাদের দেশে বা যেখানে সেখানে যেয়ে তাদের আইডি দিয়ে লগইন করে,যেটা নাকি এদের সিকুরিটির জন্যে হুমকি হতে পারে।
-তাহলে কিভাবে একসেস করতে পারবো?
বলে দিলো ভার্সিটির লাইব্রেরির ওয়াইফাই বা ১১ নাম্বর নামের একটা বিল্ডিং আছে,সেটার ওয়াইফাই ব্যাবহার করে আমরা রেজাল্ট দেখতে পারবো,অর্থাৎ শুধু নির্দিষ্ট ইন্টারনেট দিয়ে দেখতে পারবো।তার মানে আপনি স্টুডেন্ট হলেও যেখান সেখান থেকে ভার্সিটি ওয়েবসাইটে ঢুকতে পারবেন না।
আর বাংলাদেশে কি হলো?একটা দেশের ন্যাশনাল ডাটা সেন্টারে কেউ একজন ঢুকে যা ইচ্ছা সেটাই করলো।
তারপর একদিন ভার্সিটি থেকে বলে দিলো, আমরা আর রাত ১১ টার পর ওয়াই-ফাই একসেস করতে পারবোনা,পরসোনাল রুমের ওয়াই-ফাই কিন্তু তবুও পারবোনা।
-কেন??নানা অজুহাত দেখালো।তার মেইন অজুহাত হলো সিকুরিটি। স্টিল আমরা রাত ১১টার পর ওয়াই-ফাই ইউজ করতে পারিনা।
তারকিছুদিন পর দেখি রুমের ওয়াইফাই কানেক্ট করতে পারছিনা।
কি হলো, কি হলো,,, অফিসে বললাম,, অফিস থেকে উত্তর দিলো ভার্সিটি ডাটা সেন্টারে যোগাযোগ করো,ওরা ঠিক করে দিবে।
গেলাম ভার্সিটি ডাটা সেন্টারে, ডাটা সেন্টার বিল্ডিংয়ের গেইটে গেলাম,, বললো ফোন রেখে ভেতরে ঢুকতে,,।
কারন আস্ক করলাম,বললো এটাই নিয়ম,কিন্তু আবার দেখলাম চাইনিজ স্টুডেন্টগুলা ফোন রাখছেনা।
পরে যেটা জানতে পারলাম যে ইন্টারন্যাশনাল স্টুডেন্ট ফোনে ভিপিএন ইউজ করে,তার জন্যে ফোন নিয়ে ঢুকতে মানা।
- ওকে, ভিতরে গেলাম।ডাটা সেন্টারের একটা কক্ষে,বললাম যে ওয়াই-ফাই কানেক্ট হচ্ছেনা।তখন সবকিছু জানতে পারলাম কারন টা,,
ওনারা বললো,, আপনার ফোন নম্বর(যেটা ওয়াইফাই-এ কানেক্ট),রোল নম্বর,পাসপোর্ট নম্বর,রুম নম্বর, এগুলা দিয়ে ডাটা সেন্টারে একাউন্ট খুলতে হবে,, ওরা একটা একাউন্ট খুলে দিবে, সেই একাউন্ট দিয়ে প্রতিদিন ভার্সিটি ডাটা সেন্টারের পেজে এবং সিম কোম্পানির পেজে লগইন করতে হবে,তাহলে ওয়াই-ফাই ব্যবহার করতে পারবো।কারন আস্ক করলাম,বললো সিকুরিটি সমস্যা যেনো না হয়,তার জন্যে এতো প্রোসেস।
এবং এখনো প্রতিদিন সকালে উঠে যদি লগইন করি ওদের পেজে,তাহলেই কেবল ওয়াইফাই ব্যাবহার করতে পারি।
একটা ভার্সিটির সিকুরিটি যদি এতো হার্ড হয়,তাহলে একটা দেশের ন্যাশনাল ডাটা সেন্টার সিকুরিটি এত্তো দুর্বল কেমনে হয়??
শুধু ধরা পাকরা করলে কি হবে?? নিজেদের সিকুরিটিও বাড়াতে হবে, না হলে হ্যাকিং-এর কবলে পড়লে তখন বুঝবেন।
চীনের সিকুরিটি সম্পর্কে অনেকেই হয়তো জানেন, তবে এদের ইন্টারনেট সিকুরিটি অনেক হার্ড । ইন্টারনেট বিশ্ব থেকে এরা আলাদা।যেটাকে চীনের ইন্টারনেট ফায়ারঅল বলে।আপনি ইচ্ছা করলেই এখানের সব কিছুতে একসেস করতে পারবেন না।
আপনি জানেন কিনা, চীনে কিন্তু গুগল এবং গুগলের সাথে রিলেটেড সব কিছু ব্যান্ড। আপনি এখানে গুগল,ফেসবুক,ইউটিউব, ইনস্টাগ্রাম,, এগুলা কিছুর ইউজ এলাও নাই,এবং ব্যবহারও করতে পারবেন না(আমরা ভিপিএন দিয়ে ইউজ করি)।
আমাদের দেশের যা হয়েছে,তা খুবই স্পর্শকাতর বিষয়। একটা দেশের ন্যাশনাল ডাটা সেন্টার সিকুরিটি এত্তো দুর্বল হওয়া উচিত না।আশা করি দেরি করে হলেও এখন অথরিটি এইসব ব্যাপারে নজর দিবে।
যেখানেই থাকি, দেশের ভালো চাই।সব দেশের আগে নিজের দেশ।এগুলা সমালোচনা না,এগুলা পর্যালোচনা। আর আপনি যাকে বেশি ভালোবাসবেন,তার এদিক সেদিক দেখলে একটু রাগ হবেই।
সর্বশেষ এডিট : ১৮ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৯ বিকাল ৪:৩৪