কয়েক মাস আগে আমাদের এলাকায় বিরাট বড় বাজেটে ওয়াজ মাহফিলের আয়োজন করা হয়েছিল। নামকরা কয়েকজন বক্তা আসবেন ঢাকাসহ বিভিন্ন জায়গা থেকে ।
নির্দিষ্ট দিনে বক্তাগন আসলেন হেলিকপ্টার দিয়ে এবং উনাদের সাথে আসলেন ঢালিউড খ্যাত খলনায়ক, ডিপজলও।
গুঞ্জন উঠলো, ওয়াজ-মাহফিলের মত পবিত্র জায়গায় সিনেমার ভিলেন কেন....?
পরে জানা গেল, ডিপজল বড় হুজুরদের আনার জন্য হেলিকপ্টার স্পন্সর করেছেন.....।
মুহুর্তেই কথাটি এক কান, দুই কান করে পুরো ওয়াজ-মাহফিলে ছড়িয়ে পড়লো।
কিছু মুসুল্লি ক্ষেপে গেলেন, মাহফিলে সিনেমার মানুষ কেন?
কিছু মুসুল্লি রেগে মাহফিল ছেড়ে চলে গেলেন.....!
ওয়াজ মাহফিল হলো তবে এতো বড় বাজেটে, এত বড় বড় বক্তা এনেও যে রকম জমজমাট হওয়ার কথা ছিলো সে রকম জমজমাট হয়নি। অনেক শ্রোতা কমে গেছে।
কারণ দোষ ছিল একটাই , ওয়াজ মাহফিলের বক্তাদের সিনেমার ভিলেন আনবে কেন....?
সিনেমার ভিলেন কি আমার আপনার মতো মানুষ না, তাদের কি আল্লাহর ভয় নেই, তাদের কি ওয়াজ শুনতে মন চায় না!
তাদের টাকা আছে, হেলিকপ্টার দিয়ে হুজুরদের আনলে, আমার আপনার কি..?
বলিউডের শাহরুখ, আমির তাদের সম্পদের পরিমাণ তারাই জানে না। তারা বিভিন্ন দাতব্য কাজে যেমন এতিমখানা, বৃদ্ধাশ্রম, হাসপাতালে টাকা খরচ করছে। মুসলমান তারকা হিন্দুকে দান করছেন, হিন্দু তারকা মুসলমানকে দান করছেন। কই তাদের নিয়ে তো তাদের দেশের সমালোচকরা বসে যায় না সমালোচনা করতে আর ট্রল বানাতে।
টাকা আছে দান করছে.....!
অনন্ত জলিল হজ্ব করতে যাবেন, শুরু হলো তাকে নিয়ে ট্রল, হজ্ব করে এসে পাগড়ী জোব্বা লাগালেন, শুরু হলো ট্রল।
শাবানা-শাবনূর বোরকা পরেন, এ নিয়ে কত হাসি তামশা......!
এমনকি কিছুদিন আগে বাসের চাপায় তিতুমির কলেজের ছাত্র রাজিব মারা যাওয়ার পর, অনন্ত জলিল রাজিবের দুই ভাইয়ের দায়িত্ব নিতে গেলে, আমরা তাকে উৎসাহ না দিয়ে শুরু করলাম ট্রল। ওদের যা সামর্থ্য তাতে এমন এক দুই জনের দায়িত্ব নেওয়া কোন ব্যপার না।
আমরা নিজেরাও করবো না, আবার সিনেমার নায়ক-নায়িকা কেউ করতে গেলে তাকে নিয়ে সামাজিক যোগাযোগে ট্রল বানাবো!
তারা তো টাকা চুরি করে আনছে না, তাদের পরিশ্রমের টাকা যদি তারা ভাল কাজে খরচ করতে চায় করুক না। আমাদের বিনোদন দেওয়ার জন্য তারা পরিশ্রম করে সিনেমা বানাচ্ছে।
কথা উঠে নাচ গানের টাকা, তাহলে আমরা তাদের নাচ গান দেখি কেন..?
আমরা তাদের নাচ গান দেখা বন্ধ করে দিলেই তো, তারা তাদের পেশা বদলে ফেলবে।
পরিচালকরা কোটি কোটি টাকা খরচ করে সিনেমা বানাবে না কারণ কে দেখবে, সিনেমা হল আছে কিন্তু দর্শক নাই, এক সময় সিনেমা হলও বন্ধ হয়ে যাবে..।
আমরাও তো কম পাপী না, অপেক্ষা করি কখন নতুন ছবি রিলিজ হবে। 'ধুম' দেখে অপেক্ষা করি কখন 'ধুম টু' বের হবে, 'ধুম টু' দেখে অপেক্ষা করি কখন 'থ্রি' বের হবে।
কখন হুমায়ূন আহমেদের দেবী রিলিজ হবে, কখন মনপুরা সিনেপ্লেক্সে দেখাবে.......!
ওদের বানানো ছবি দেখে আমরা খুব বিনোদন পাই। আর তারাই সমাজের জন্য ভাল কিছু করতে গেলে, তখন আমরা রব তুলি, "গেলো... গেলো... বলে..."!
ওদের প্রতি আমাদের খারাপ ধারণা, কারণ অনেক সময় সিনেমার নায়ক-নায়িকা চরিত্র ভেদে নিজেদের খারাপ ভাবে উপস্থাপন করে, তাই বলে তারা কি আমার আপনার মতো মানুষ না...?
ওরাও আমাদের মত মানুষ, ওরাও আল্লাহকে ভয় পায়, ওদের ও ইচ্ছা করে সমাজের জন্য ভাল কিছু করতে।
আসুন আমরা তাদের নিয়ে ট্রল না করে সমাজের জন্য ভাল কিছু করতে উৎসাহিত করি......।
সর্বশেষ এডিট : ১৪ ই জুলাই, ২০১৮ রাত ৯:২৪