আশরাফুল সাহেব একটা গার্মেন্টস ফেক্টরীতে এম.ডির পদে কর্মরত। মধ্যবয়ষ্ক ছিমছাম পরিপাটি সৌখিন একজন মানুষ।
খুব কাজ প্রিয়, সবার সাথে ভাল ব্যবহার করেন। তবে কাজে ফাঁকি দেওয়া, প্রতিষ্ঠানে কোন অনিয়ম তিনি কখনোই বরদাস্ত করেন না।
ইদানিং দেখছেন, লেবার ইউনিয়নের লিডার হেলাল খাঁন খুব কাজ ফাঁকি দিচ্ছে। দেরীতে আসে, বসে আড্ডা বাজি করে, কিছু বললে বলে, "বেতন বাড়ান"। অথচ কিছুদিন আগেও বেতন বাড়ানো হয়েছে।
আশরাফুল সাহেব তাকে বিদায় করে দেওয়ার কথা ভাবছেন, কিন্তু কর্মীদের কাছে হেলাল মিয়ার খুব ভাল পরিচিতি। তাই ভয় পান তাকে বিদায় করলে, সব কর্মী মিলে বিদ্রোহ না করে বসে।
আজ সকালেও হেলাল খাঁনের সাথে আশরাফুল সাহেবের ব্যাপক কথা কাটাকাটি হয়েছে।
ম্যানেজার মহিউদ্দিন আবার খুব মাইডিয়ার টাইপের লোক, সবার সাথে আন্তরিক।
এম.ডি সাহেবের সাথেও তার খুব খাতির। প্রতিদিন সকালে এসে সালাম জানিয়ে যাবে, এক সাথে নামাজ পড়বে। আশরাফুল সাহেবও ম্যানেজার মহিউদ্দিনকে খুব পছন্দ করেন।
দুপুর দুইটা বাজলে, পিয়ন শামসু মিয়া এম.ডি স্যারের জন্য চিনি ছাড়া এক কাপ কফি আর এক প্যাকেট সুগার ফ্রি বিস্কুট নিয়ে কেবিনে ঢুকে।
এই কফি আর বিস্কুট দিয়েই আশরাফুল সাহেব দুপুরের লাঞ্চ সারেন। তারপর রিভলভিং চেয়ারে হেলান দিয়ে, চোখবুঁজে কিছুক্ষণ রবীন্দ্রসংগীত শুনেন। প্রতিদিন এভাবেই রুটিনমাফিক চলে।
শামসু মিয়ার চিৎকারে সবাই এসে এম.ডি স্যারের কেবিনে জড়ো হলো। আশরাফুল সাহেবের নিথর দেহ মেঝেতে পড়ে আছে........
পুলিশ এসে লাশ ময়নাতদন্তের জন্য নিয়ে গেছে।
শহরের নামকরা গোয়েন্দা রাকিব আহমেদকে খবর দেওয়া হলো।
চোখে গোল্ডেন রিমের চশমা, জুলফিতে পাক ধরা, ফ্রেঞ্চকাট দাড়ি, খুব ব্যাক্তিত্ব সম্পন্ন চেহারার মানুষ। রাকিব আহমেদ ঘুরেফিরে এম.ডি আশরাফুল সাহেবের অফিস রুমটা দেখছেন, মনে মনে উনার রুচির প্রশংসা করছেন।
ছোট ছোট মাটির পটারিতে বিভিন্ন প্রজাতির ক্যাকটাস লাগানো, টেবিলে বাইরের দেশের বিভিন্ন শোপিস সাজানো। পায়ের নিচের সবুজ কার্পেটটা যেন সত্যিকারের ঘাস। জানালাগুলো চমৎকার নীল থাইগ্লাসের। বাইরের রৌদ্রের আলো রুমটাকে আকাশের মত নীল করে রেখেছে....!
মি. রাকিব একে একে সবাইকে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করলেন, "কে কোথায় ছিলো? কে কি করছিল? কে কি দেখেছে....?"এইসব।
ম্যানেজার মহিউদ্দিন বললো, "স্যার, আমি প্রতিদিনের মত পাশের ক্যান্টিনে লাঞ্চ করতে গিয়েছিলাম। হঠাৎ বসের রুমের দিকে চোখ পড়তেই দেখি, হলুদ শার্ট পড়া কেউ একজন স্যারের সাথে ধস্তাধস্তি করছে।
আমি দৌড়ে দোতলায় উঠতে উঠতে সব শেষ হয়ে গেলো......!"
সন্দেহের তীর গেলো লেবার ইউনিয়নের লিডার হেলাল খাঁনের দিকে, কারণ তার পরনে ছিল হলুদ শার্ট।
মি.রাকিব তীর্যকদৃষ্টিতে প্রশ্ন ছুড়লেন, "আপনি শিওর খুনির পরনে হলুদ শার্টই ছিলো?"
ম্যানেজার মহিউদ্দিন কনফিডেন্টের সাথে উত্তর দিলো, "স্যার আমি শিওর...।"
তৎক্ষনাৎ রাকিব আহমেদ আঙুল উঁচিয়ে বললেন, "ইন্সপেক্টর এরেষ্ট দ্যাট ব্লাডি ক্রিমিনাল।"
পুলিশ ইন্সপেক্টর, ম্যানেজার মহিউদ্দিন এর হাতে হাতকড়া পড়াতেই সে ভেবাচেকা খেয়ে বললো, "স্যার আমি তো হলুদ শার্ট পরিনি!!!"
মি.রাকিব হেসে বললেন, "আপনি মিথ্যা বলছেন মি.মহিউদ্দিন কারণ হলুদ শার্ট পরা কাউকে আপনি দেখেননি।
কিভাবে সম্ভব জানেন...?
আপনার বসের জানালার পুরু নীল কাঁচ এবং বাইরের রৌদ্রের আলো রুমে এসে রুম নীল হয়ে আছে। আর নীল আলোতে হলুদ কোনকিছু কখনোই হলুদ দেখায় না, বরং তা কালো দেখায়.....!"
কজ ইট'স অলসো আ পার্ট অফ আর ট্রেনিং দ্যাট, ওয়াট ইজ দ্যা ভেরিফিকেশন অফ কালার ডিফ্রেন্স ইন ডিফরেন্ট লাইটস।
মি.মহিউদ্দিন আপনার ট্রেপ ভাল ছিল বাট আনফরচুনেটলি ডিডেন্ট ওয়ার্ক!
আপনি বসকে শেষ করে সবকিছু নিজের হাতের মুঠোয় নিতে চেয়েছিলেন। আর দোষটা চাঁপাতে চেয়েছেন হেলাল খাঁনের উপরে......
আজ বসের সাথে হেলাল খাঁনের কথা কাটাকাটির সুযোগটা ভালই কাজে লাগিয়েছেন!
গুড ট্রায়....
ব্যাটার লাক নেক্সট টাইম......বাট, ইন দ্যা জেল।"
সর্বশেষ এডিট : ২৬ শে জুলাই, ২০১৮ রাত ৮:০১