somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

তৃণভোজী সিংহ

২৭ শে আগস্ট, ২০১৮ দুপুর ২:১১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


খুব সুন্দর একটা বন, সেই বনে বাস করে বাঘ, ভাল্লুক, হাতি, ঘোড়া আরও অনেক প্রাণী । বনের রাজা সিংহ, খুব ভাল রাজা। সবাই তাকে পছন্দ করে, তার একজন ভাল্লুক মন্ত্রী ও শিয়াল সেনাপতি আছে। ওরাও খুব ভাল, সব সময় রাজাকে সৎ পরামর্শ দেয়।
সিংহ রাজা প্রজার সুখ, দুঃখের খেয়াল রাখে, সিংহ মাংসাশী প্রাণী, কিন্তু এই সিংহ তৃণভোজী.....!

সিংহ বলে, "আমি নিজে সুস্বাদু খাবারের জন্য, কিভাবে আমার প্রজাদের ঘাড় মটকে ধরে ধরে খাবো??
তার বনে কঠুর নিষেধাজ্ঞা, " বনের কোন প্রাণী, কোন প্রাণীকে খেতে পারবে না। সবাই ঘাস, লতা পাতা খাবে। যে একথা মানবে না, তাকে মৃত্যুদন্ড অথবা যাবজ্জীবন কারাদন্ড দেওয়া হবে।"

রাজা পশুদের দিয়ে বনে পুলিশবাহিনী বানিয়েছে, পশুদের জেলও আছে.....!
পশুদের ডাক্তার, হাসপাতাল সবই আছে.....!
বনে একটা স্কুলও আছে, স্কুলের পন্ডিত মশাই পশুদের বাচ্চাদের পড়াশুনা করান, জ্ঞান দান করান, আদব কায়দা শিখান.....।
তবে পুলিশবাহিনী সারাদিন অবসর থাকে কারণ, কেউ রাজার কোন কথার বিরুদ্ধে যায় না। তাই কাউকে জেলে নিতে হয় না,
বনে কোনরকম চুরি, ছিনতাই, খুন, ধর্ষণ কিছুই হয় না।
ডাক্তার অবসর ঘুরাঘুরি করে কারণ, সবাই তৃণভোজী হওয়ায় অসুখ বিসুখও হয় না। সবাই ফ্রেশ লতা পাতা খায়, ফরমালিন দেওয়া মাছ ও ব্রয়লারের মুরগী খায় না। তরতাজা খাবার খেলে অসুখ বিসুখও হয় না....!
সব প্রাণী মিলে মিশে সুখে থাকে, ঘাস লতা-পাতা দিয়ে বিরানি, নুডুলস, স্যুপ কত কি বানিয়ে বানিয়ে খায়....!

সুখের কপালে আগুন লাগলো, বার্ধক্যজনিত কারণে বনের রাজা মারা গেলেন। বনের সব পশু-পাখি শোকে জর্জরিত হয়ে গেলো। সবার মুখে একই কথা "আহারে, কত ভাল রাজা ছিলো।"

পরদিন থেকে রাজার ছেলে সিংহ রাজকুমার, মাথায় বাবার মুকুট লাগিয়ে রাজা সেজে সিংহাসনে বসে গেলো। সে বেশি সুবিধার না, এতদিন বাবার ভয়ে ভাল সেজে ছিলো। বাবা মারা যেতেই তার অন্যরুপ দেখা দিলো, বনে হরিণ শাবক, খরগোশ শাবক সব নাই হতে শুরু হলো।
বনে হাহাকার......এখন কি হবে, রাজকুমারতো ডিসকভারি চ্যানেলের মত ঘাড় মটকে হরিণ, জেব্রা, খরগোশ সব খেয়ে ফেলছে।
সবাই মিলে পরামর্শ করছে , "এখন কি করা.....?"

বনের কিছু মুরব্বি গোছের পশু, মন্ত্রীর কাছে ফরিয়াদ নিয়ে গেলো। বুড়ো ভাল্লুক মন্ত্রী বললেন, "রাজকুমারতো আমার কথাও শুনবে না, শিক্ষিত ছেলে 'থুক্কু' পশু। বিলাত বন থেকে পড়াশুনা করে ডিগ্রি নিয়ে এসেছে, তাকে বুদ্ধি দিয়ে তোমাদের হারাতে হবে।
স্কুলের পন্ডিত মশাইকে বলে দেখো, কোন বুদ্ধি বের করতে পারে কি না...।
কাল সভা ডাকবো, তোমরা বনে ঘোষনা করে দাও।"
বানর বাহিনীকে দিয়ে পুরো বনে ঘোষনা দেওয়া হলো, কাল বিকাল চারটায় রাজসভায় সব পশুরা যেন উপস্থিত থাকে।
চারটা বাজার আগেই সব পশুরা এসে সভায় একত্রিত হতে থাকলো।
যাতে সভায় কোন গন্ডগোল না হয়, সে জন্য পুলিশ বাহিনী মোতায়েন করা হলো।

রাজার সিংহাসনে সিংহ রাজকুমার এসে বসলো, দু'পাশে ভাল্লুক মন্ত্রী ও শেয়াল সেনাপতি ।
সভা শুরু হলো, "রাজকুমার বললো কার কি বলার আছে শুনি.....?" আপনারা আমার ব্যপারে যা শুনছেন," সব গুজব....!"
সবাই একটু একটু ভয় পাচ্ছে , কখন কার ঘাড় মটকে ধরে। সাহস করে জিরাফ তার লম্বা গলা উচিয়ে বললো, "মন্ত্রী মহোদয়, আমাদের রাজা তো আমাদের মত ঘাস, লতা, পাতা খেতেন। কিন্তু রাজকুমারতো আমাদের বাচ্চাদের খেয়ে ফেলছে।"
রাজকুমার বললো, "আমার বাবা যা করেছেন, আমাকেও তাই করতে হবে নাকি..?
আমি আমার বাবার মত এত মহান রাজা না, আমরা মাংসাশী। ঘাস লতা পাতা আমাদের খাদ্য না....।
একথা শুনে সব পশুদের মধ্যে একটা গুঞ্জন উঠলো, "এই রাজা মানি না, মানবো না.....!"

এবার মন্ত্রী আস্তে আস্তে বললেন, "রাজকুমার, এভাবে বললে বনের পশুরা আপনাকে রাজা মানবে না!"
রাজকুমার ক্ষেপে বললো, রাজা হওয়ার যে যোগ্যতা লাগে সেই সব যোগ্যতাই তো আমার আছে,
আমি শক্তিশালী, আমি শিক্ষত, আমি সব সময় সত্য কথাও বলি।"

সভার মাঝ থেকে পশুদের স্কুলের শিয়াল পন্ডিত বললো, "মশাই অভয় দিলে আমি আপনাকে একটা প্রশ্ন করবো....?
আপনি বলছেন," আপনি সব সময় সত্যি কথা বলেন কিন্তু একটা কাজ আপনি প্রতিদিন করেন এবং এটা সত্যি কথা, তারপরও জিজ্ঞেস করলে জবাবে হ্যাঁ বলবেন না।
যদি আপনি জবাবে হ্যাঁ বলতে পারেন, তাহলে আমাদের ধরে ধরে রোজ খাবেন।
আর হ্যাঁ বলতে না পারলে আমাদের মতই ঘাস লতা পাতা খাবেন, নয়তো আমরা আপনাকে রাজা মানবো না। আপনার বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ঘোষনা করবো.....!"
রাজকুমার দাঁত কিড়মিড় করে বললো, "ঠিক আছে বলেন, আমিও শুনি কি এমন সত্যি কথা যে আমি 'হ্যাঁ' বলতে পারবো না।"

চারিদিকে পিনপতন নিস্তব্ধততা, শিয়াল পন্ডিত তার চশমাটা পড়ে নিয়ে বললেন," আচ্ছা মশাই, আপনি নাক ডেকে ঘুমাচ্ছেন আর তখন আপনাকে কেউ জিজ্ঞেস করলো, আপনি কি ঘুমাচ্ছেন....?
এই সত্যি কথার উত্তরে কি আপনি তখন হ্যাঁ বলতে পারবেন....!"

সিংহ রাজকুমার বোকা বনে গেলো, সে নিজেকে খুব বুদ্ধিমান ভাবতো। আজ শিয়াল পন্ডিতের কাছে বুদ্ধির খেলায় সে হেরে গেলো।
"ভাবছে আসলেই তো এই সত্যি কথার উত্তরে তো কেউ হ্যাঁ বলতে পারে না। "
কি আর করা বেচারা মাংসাশী রাজকুমারকে, তৃণভোজী রাজার ছেলে তৃণভোজী রাজাই হতে হলো....!

বনের মধ্যে আবার আগের মত শান্তি- শৃঙখলা ফিরে এলো।
বুদ্ধির খেলায় রাজকুমারকে হারিয়ে সব পশুরা মনের আনন্দে গাছের পাতার বিরানি রান্না করে সেলিব্রেট করলো এবং আগের মত সবাই মিলে মিশে বাস করতে লাগলো......
সর্বশেষ এডিট : ২৭ শে আগস্ট, ২০১৮ দুপুর ২:১৩
৫টি মন্তব্য ৫টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

পরিণতি - ৩য় পর্ব (একটি মনস্তাত্ত্বিক রহস্য উপন্যাস)

লিখেছেন সাখাওয়াত হোসেন বাবন, ২৭ শে মার্চ, ২০২৪ দুপুর ১২:২৮



( পরিণতি ৬১ পর্বে'র একটি মনস্তাত্ত্বিক রহস্য উপন্যাস ।)

তিন


আচানক ঘুম ভেঙ্গে গেলো ।

চোখ খুলে প্রথমে বুঝতে পারলাম না কোথায় আছি । আবছা আলোয় মশারির বাহিরে চারপাশটা অপরিচিত... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইফতার পার্টি মানে খাবারের বিপুল অপচয়

লিখেছেন রাজীব নুর, ২৭ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৩:৫৩



গতকাল সরকারি ছুটির দিন ছিলো।
সারাদিন রাস্তাঘাট মোটামুটি ফাকাই ছিলো। ভাবলাম, আজ আরাম করে মেট্রোরেলে যাতায়াত করা যাবে। হায় কপাল! মেট্রো স্টেশনে গিয়ে দেখি গজব ভীড়! এত ভিড়... ...বাকিটুকু পড়ুন

গণতন্ত্র আর বাক-স্বাধীনতার আলাপসালাপ

লিখেছেন অনিকেত বৈরাগী তূর্য্য , ২৭ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৪:২৩


একাত্তর সালে আওয়ামী লীগের লোকজন আর হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা ছিল পাকবাহিনীর প্রধান টার্গেট। যদিও সর্বস্তরের মানুষের ওপর নিপীড়ন অব্যাহত ছিল। গ্রামের পর গ্রাম জ্বালিয়ে দেওয়া হয়েছিল। মুক্তিযোদ্ধা আর তাদের পরিবারের... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানে মুক্তিযোদ্ধাদের মুমিনী চেহারা ও পোশাক দেখে শান্তি পেলাম

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৭ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৯:৫৮



স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানে স্টেজে উঠেছেন বত্রিশ মুক্তিযোদ্ধা তাঁদের চব্বিশ জনের দাঁড়ি, টুপি ও পাজামা-পাঞ্জাবী ছিলো। এমন দৃশ্য দেখে আত্মায় খুব শান্তি পেলাম। মনে হলো আমাদের মুক্তিযোদ্ধা আমাদের মুমিনদের... ...বাকিটুকু পড়ুন

দু'টো মানচিত্র এঁকে, দু'টো দেশের মাঝে বিঁধে আছে অনুভূতিগুলোর ব্যবচ্ছেদ

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ১২:৩৪


মিস ইউনিভার্স একটি আন্তর্জাতিক সুন্দরী প্রতিযোগিতার নাম। এই প্রতিযোগিতায় বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সুন্দরীরা অংশগ্রহণ করলেও কখনোই সৌদি কোন নারী অংশ গ্রহন করেন নি। তবে এবার রেকর্ড ভঙ্গ করলেন সৌদি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×