কেমন আছিস বাবা, এবার অনেকদিন হলো মাকে দেখতে আসছিস না।
সেই যে এসেছিলি কোরবানী ঈদের পরদিন, আমার জন্য বউমার হাতের কলিজা ভুনা, মাংসের তরকারি, আর পোলাও নিয়ে।
জানিস খোকা, আমি না এগুলো খেতে পারিনি। বার বার চোখের সামনে ভাসছিলো, আমার সংসার জীবনের কথা।
তোর বাবার কথা, তোর ছোটবেলার কথা, কোরবানী ঈদের কথা।
কলিজা ভুনা তোর খুব পছন্দ ছিলো, আমি রান্না করতাম, তুই বসে দেখতি আর অপেক্ষা করতি কখন রান্না শেষ হবে।
রান্না শেষ হলে টেবিলে খাবার বেড়ে দিতাম, সবার আগে তুই বসতি। তোর বাবা আমাকেও ডেকে নিতো, আমরা সবাই মিলে খেতে বসতাম।
তুই বায়না ধরতি, মা আমাকে খাইয়ে দিবে...!"
আমি তোকে লোকমার সাথে, মায়ের মমতা মেশানো পোলাও আর কলিজাভুনার মুখে তুলে দিতাম...।
আর আজ একা খেতে বসে খেতে পারি না, খেতে বসলে কি যেন গলায় এসে আটকে যায়,
"তোকে খাইয়ে দেওয়ার স্মৃতি চোখে ভাসে,
মা খাইয়ে দিবে কথাটা কানে বাজে...!"
মনে আছে খোকা, একবার তোর অসুস্থ নানুকে দেখতে যাচ্ছিলাম, তোকে তোর বাবার কাছে রেখে।
আমি যাওয়ার সময়, আমার আঁচল ধরে, " মা তুমি না থাকলে, আমার ভয় লাগে বলে তোর সে কি কান্না...!"
তোর কান্না সহ্য করতে না পেরে, আমি তোকে কোলে তুলে হাটা দিলাম বললাম," মা থাকতে কিসের ভয়...?"
খোকা আজ আমার একা থাকতে ভয় লাগে, "কিন্তু তোকে বলতে লজ্জা হয়।"
আর বলেই কি লাভ, তুই কি আর আমার মত বলবি, "চলে এসো মা, আমি থাকতে তোমার ভয় কিসের...!"
আমি মাঝে মাঝে পান খেতাম, তুই নতুন ফ্ল্যাটে উঠার পর একদিন তোকে পান আনতে বলেছিলাম।
তুই বললি," না মা, নতুন ডিস্টেম্পারে পানের দাগ লাগবে...!"
"বাবা তুই তোর দেয়ালে পানের দাগ লাগার কথা চিন্তা করলি?"
কলেজ থেকে এসে ভাত খেয়ে ভাল ভাবে হাতমুখ না ধুয়েই, মায়ের আঁচলে হাতমুখ মুছে ফেলেছিস।
তখন তো মা কখনো বলিনি, "আমার আঁচলে দাগ লাগবে। "
খোকা, "আমার একটা আবদার রাখবি...?"
তুই তোর ছেলেমেয়েকে বলে যাস, "আমার কবরের পাশে যেন তোকেও কবর দেয়, তোকে যেন আলাদা যায়গা কিনে কবর না দেয়...।
পৃথিবীতে তুই আমাকে তোর কাছ থেকে বিচ্ছিন্ন করে দিয়েছিস, মৃত্যুর পরে যেন আমরা বিচ্ছিন্ন না হই, তুই আমার বুকে থাকিস বাবা....!"
ইতি,
"বৃদ্ধাশ্রম থেকে তোর মা "
সর্বশেষ এডিট : ১৩ ই নভেম্বর, ২০১৮ দুপুর ১:৩১