somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আমাদের শিক্ষা ব্যাবস্হা এবং শিক্ষার্থীরা - দেশ আসলে কতটুকু পাচ্ছে?

২৮ শে এপ্রিল, ২০০৯ বিকাল ৩:৪৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আমাদের দেশের বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষাব্যাবস্হা নিয়ে কয়েকজনের সাথে কথা হচ্ছিলো। আমরা সাধারনত দোষগুলা শিক্ষকদের ঘাড়ে চাপায় দেই। কোন বিশ্ববিদ্যালয়ের একটা একটা ব্যাচের সবচেয়ে ভালো ছেলেরা টিচার হওয়ার সুযোগ পায়। শুনলে একটু অবাক লাগে, যখন অনেকে বলে এরাই আসলে পরে সবচেয়ে খারাপ, ধান্দাবাজ হয়ে যায়। একটা পাবলিক ইউনিভার্সিটির টিচার কত টাকা বেতন পায় এটা আর কেউ চিন্তা করেনা। তাঁর থেকে অপেক্ষাকৃত আরামে, কম পড়াশোনা করে একজন কোন কোম্পনীতে চাকরী করে বেশী বেতন পাবে, আর সে যদি অন্য ইউনিভার্সিটিতে বা কনসালটেন্সী করে স্বচ্ছল থাকতে চায় (অবশ্যই নিজের দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন করার পরে, যেটা অনেক শিক্ষকই ঠিকমত করেননা) তাহলে কি খুব বেশী দোষ দেয়া যায়? বাইরের বিশ্বে টিচারের চাকরী হচ্ছে লোভনীয় চাকরী, ওদেরকে অন্য ধান্ধা চিন্তা করতে হয়না, অতএব সরকারকেও শিক্ষার মান নিয়ে চিন্তা করতে হয়না। আমাদের দেশে হয়ে গেছে উল্টো। এরমধ্যে একজন বললেন সরকার ওদেরকে ভালো বেতন কিভাবে দিবে? পুরা ইউনিভার্সিটতো চলতেছে সাবসিডি পেয়ে।
ভালো। কিন্তু এই সাবসিডি পাচ্ছে কারা? যে ছেলেটা সিরিয়াসলী পড়াশোনা করে পরে টিচার বা বড় কিছু করার প্ল্যান করছে সেও যেমন সাবসিডি পাচ্ছে, তেমনি ঐ ছেলেটিও পাচ্ছে যে ভর্তি হওয়ার পরের ৫/৬ বছর বান্ধবীর চোখে চোখ রেখে সবুজ ঘাসে বসে কাটিয়ে দিয়েছে, পরীক্ষার টাইম ছাড়া কখনো ক্লাসে যাওয়ার প্রয়োজন বোধ করেনি। আবার সেই ছেলেও ফ্রি পড়াশোনা করছে যে পুরা ভার্সিটি লাইফ রাজনীতি করে, মাস্তানি করে কাটিয়েছে আবার সুযোগে পেলেই ২ টাকা বেতন বাড়লো কেন অথবা অমুক নেতা জেলে কেন এই ইস্যুতে পুড়িয়ে দিচ্ছে ইউনিভার্সিটির লাখ টাকার সম্পত্তি অথবা কারো শখের টাকায় কেনা গাড়ী।
তাহলে কি সাবসিডি বন্ধ করে দিতে হবে? মোটেও না। বন্ধ করতে হবে তাদের জন্য যাদের পিছনে অনর্থক খরচ হচ্ছে। এ ব্যাপরেও আমরা বাইরের উদাহরন নিতে পারি। সাবসিডি তাদেরকেই দেয়া হবে যারা সত্যিকার অর্থে তার মেধাকে কাজে লাগাচ্ছে। একেকটা ডিপার্টমেন্টের যাদের রেজাল্ট বেশ ভালো তাদের এমনভাবে কি স্কলারশিপ দেয়া যেতে পারে না যাতে হাতখরচের জন্য কষ্ট করে টিউশনিও তাদের করতে না হয়? যাদের রেজাল্ট আরেকটু কম ভালো তাদের ক্ষেত্রে সাবসিডীটাও হয়তো একটু কম হবে। একসাথে কয়েকবছর আগে ভর্তি পরীক্ষায় চান্স পেয়েছিলো দেখে সবাই সমান নলেজ আর যোগ্যতা নিয়ে বের হচ্ছে এটা আমি মানতে রাজি না। যারা নিজেকে তৈরী করছেনা তাদেরকে বোধহয় বোঝানো দরকার তাদের পিছনে এই গরীব দেশের কত টাকা নষ্ট হচ্ছে। বোঝানো দরকার কারন অধিকাংশ ছাত্র তাদের পিছনে যে দেশের অসংখ্য টাকা খরচ হচ্ছে এই সত্যটা বোঝেনা বা বুঝতে চায়না। এই ব্যাপারে আমার দুই বন্ধুর ঝগড়া মনে পড়ছে। দুইজনেই দেশের শীর্ষ দুই বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ছিলো। একজন দেশকে ধুয়ে গালি দিচ্ছিলো এই ছাতার দেশে থেকে কি হবে, দেশ কিছুই দিতে পারতেছেনা এইসব বলে। আরেকজন বললো, এই দেশে ছিলা বলেই তুমি এরকম এরকম ফ্রি ফ্রি বড় ডিগ্রী পাই গেলা। কিন্তু অন্যজন সেটাও মানতে রাজি না। তার ভাষায় যথেষ্ঠ(!!!) বেতন দিছে আর সে ভর্তি পরীক্ষায় চান্স পাইছিলো সো এটা প্রাপ্য। এখন দেশ তাকে ভালো চাকরী আর নগরিক সুযোগ সুবিধা দিতে পারতেছেনা সো এই দেশে থাকার কোন মানে হয়না। তার মানে, একজন একবার একটা ভর্তি পরীক্ষায় চান্স পাইছিলো এইজন্য দেশ তাকে ফ্রি পড়াশোনাও করাবে (পরের ৪/৫ বছরে সে কতটুকু যোগ্যতা অর্জন করলো সেটা ব্যাপারনা ) এবং তার ভবিষ্যতে মোটা বেতনের চাকরীর সুযোগ সুবিধাও এই গরীব দেশকে দিতে হবে। নাহলে সে বিদেশ চলে যাবে আরে সুযোগ খুজবে যাতে পুরো পরিবারকে নিয়ে যেতে পারে আর যাতে কখনো আর এই গরীব দেশে আসতে না হ্য়। দেশের জন্য দায়বদ্ধতা আসলে আমাদের কারো মধ্যেই নেই। আমরা সবচেয়ে বেশি ভালো পারি অন্যদেরকে দোষ দিতে। চাকরী নিয়ে প্রচুর আক্ষেপ, কিনতু কম বেতনের সরকারি চাকরী অথবা মফস্বল, গ্রামের কোন চাকরী করতে যেতে সবার তুমুল আপত্তি।আবার রিভার্সে দেখলে মজার একটা ঘটনা মনে পরছে, আমার এক বন্ধুর দু্ই রুমমেট বামপন্হী রাজনীতি করত। তারা দেশের শ্রেণীবৈষম্য, বিদেশী কোম্পানীর আগ্রাসন এমনকি ইংলিশ মিডিয়াম, প্রাইভেট ইউনিভার্সিটির বিরুদ্ধে প্রচুর কথা বলতো। কিছুদিন পরে একদিন এদের একজনকে দেখলাম কি একটা কারণে ডাকা হরতালের টাইমে রিকশাতে লাথি মারতেছে। যাইহোক, পরে যাকে হরতাল করতে দেখেছিলাম তার সাথে আবার দেখা হয়েছিলো আর অন্যজনের সাথে কিছুদিন আগে দেখা হল; দুইজনেই বিদেশী কোম্পানীতে চাকরী করে। আরেকজন রাজনীতিবিদরে চিনতাম যে কখনে ক্লাস করতোনা, দিনের বেলায় হলের দখল করা সিটে ঘুমায় থাকত। আর বিকেলের পরে গাজাঁ,জুয়ার আসরে বসতো। আর তার যাবতীয় আন্দোলন ছিলো প্রাইভেট ইউনিভার্সিটি দেশ শেষ করে দিচ্ছে এটা নিয়ে। এদের মতোই কারো কাছে কথা শুনে আমার এক প্রাইভেট ইউনিভার্সটির বন্ধু একবার বলেছিল, "বাপের জমানো টাকায় যত কষ্ট করে ভালোভাবে পড়ি না কেন আমরা নাকি দেশের ক্ষতি করতেছি। আর যারা দেশের মানুষের টাকায় পড়ে যা ইচ্ছা তা করতেছে তারা আসলে দেশ উড্ধার করতেছে।"
লেখাটা বড় হয়ে যাচ্ছে। একটা আলোচনার হাত ধরে আসলে লেখাটার সুচনা। আমাদের দেশে এখনো অনেক সোনার ছেলে তৈরী হচ্ছে, সেটা মানতেই হবে। তাদেরকে সঠিকভাবে মূল্যায়নের জন্যই আমাদের কিছু চিন্তভাবনা করা জরুরী হয়ে পড়েছে।

(উদাহরণের জন্য শুধু ছেলেদের কথা বলা হয়েছে। দয়া করে উভলিংগে পড়ে নিবেন।)
সর্বশেষ এডিট : ২৮ শে মে, ২০০৯ সকাল ১০:৫৭
৯টি মন্তব্য ৭টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

পরিণতি - ৩য় পর্ব (একটি মনস্তাত্ত্বিক রহস্য উপন্যাস)

লিখেছেন সাখাওয়াত হোসেন বাবন, ২৭ শে মার্চ, ২০২৪ দুপুর ১২:২৮



( পরিণতি ৬১ পর্বে'র একটি মনস্তাত্ত্বিক রহস্য উপন্যাস ।)

তিন


আচানক ঘুম ভেঙ্গে গেলো ।

চোখ খুলে প্রথমে বুঝতে পারলাম না কোথায় আছি । আবছা আলোয় মশারির বাহিরে চারপাশটা অপরিচিত... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইফতার পার্টি মানে খাবারের বিপুল অপচয়

লিখেছেন রাজীব নুর, ২৭ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৩:৫৩



গতকাল সরকারি ছুটির দিন ছিলো।
সারাদিন রাস্তাঘাট মোটামুটি ফাকাই ছিলো। ভাবলাম, আজ আরাম করে মেট্রোরেলে যাতায়াত করা যাবে। হায় কপাল! মেট্রো স্টেশনে গিয়ে দেখি গজব ভীড়! এত ভিড়... ...বাকিটুকু পড়ুন

গণতন্ত্র আর বাক-স্বাধীনতার আলাপসালাপ

লিখেছেন অনিকেত বৈরাগী তূর্য্য , ২৭ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৪:২৩


একাত্তর সালে আওয়ামী লীগের লোকজন আর হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা ছিল পাকবাহিনীর প্রধান টার্গেট। যদিও সর্বস্তরের মানুষের ওপর নিপীড়ন অব্যাহত ছিল। গ্রামের পর গ্রাম জ্বালিয়ে দেওয়া হয়েছিল। মুক্তিযোদ্ধা আর তাদের পরিবারের... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানে মুক্তিযোদ্ধাদের মুমিনী চেহারা ও পোশাক দেখে শান্তি পেলাম

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৭ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৯:৫৮



স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানে স্টেজে উঠেছেন বত্রিশ মুক্তিযোদ্ধা তাঁদের চব্বিশ জনের দাঁড়ি, টুপি ও পাজামা-পাঞ্জাবী ছিলো। এমন দৃশ্য দেখে আত্মায় খুব শান্তি পেলাম। মনে হলো আমাদের মুক্তিযোদ্ধা আমাদের মুমিনদের... ...বাকিটুকু পড়ুন

দু'টো মানচিত্র এঁকে, দু'টো দেশের মাঝে বিঁধে আছে অনুভূতিগুলোর ব্যবচ্ছেদ

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ১২:৩৪


মিস ইউনিভার্স একটি আন্তর্জাতিক সুন্দরী প্রতিযোগিতার নাম। এই প্রতিযোগিতায় বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সুন্দরীরা অংশগ্রহণ করলেও কখনোই সৌদি কোন নারী অংশ গ্রহন করেন নি। তবে এবার রেকর্ড ভঙ্গ করলেন সৌদি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×