somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আজ কি শবে মিরাজ?

২৫ শে এপ্রিল, ২০১৭ দুপুর ২:০৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


মিরাজ মুসলিম উম্মাহের জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ, সবচেয়ে প্রভাবশালী ঘটনা। মিরাজের সিম্বলিক গুরুত্বও অসীম।
রাসুলুল্লাহ সাঃ এর জীবনের সবচেয়ে কঠিন এবং মর্মান্তিক সময় হল নবুওয়াতের ১০ বছরের রমজান মাস থেকে। শারীরিক এবং মানসিক দুই ভাবেই তিনি (সাঃ) ছিলেন সহ্যের একদম শেষ সীমায়। এই বছরই তার জীবনের সবচেয়ে প্রিয় দুইজন মানুষ আবু তালিব এবং খাদিজা রাঃ মারা যান। তায়েফের মর্মান্তিক ঘটনা এই বছরেই ঘটে। এজন্য এই বছরকে বলা হয় “আমাল হুজুল” বা শোকের বছর। এরপর পরই রাসুলুল্লাহ সাঃ কে আল্লাহ সবচেয়ে বড় পুরস্কার দিয়ে সম্মানিত করেন। আল্লাহ, রাসুল্লাহ সাঃ মক্কা থেকে জেরুজালেম হয়ে সিদরাতুল মুনতাহা পর্যন্ত ভ্রমন করান। ইসলামে এই ঘটনাকে ইসরা এবং মিরাজ বলে অভিহিত করা হয়। ইসরা শব্দের অভিধানিক অর্থ “রাতের ভ্রমন” এবং মিরাজ শব্দের অভিধানিক অর্থ “উপরে পরিভ্রমণ করার পদ্ধতি” যেমন লিফট। ইসলামি পরিভাষায়, রাসুলুল্লাহ সাঃ এর মক্কা থেকে জেরুজালেম পর্যন্ত ভ্রমনকে বলা হয় ইসরা। ইসরা নিয়ে কুরআনে একটি সম্পূর্ণ সুরাই রয়েছে, ইসরা নামে।
“পরম পবিত্র ও মহিমাময় সত্তা তিনি, যিনি স্বীয় বান্দাকে রাত্রি বেলায় ভ্রমণ করিয়েছিলেন মসজিদে হারাম থেকে মসজিদে আকসা পর্যন্ত-যার চার দিকে আমি পর্যাপ্ত বরকত দান করেছি”।
[ইসরা ১৭:১]
এবং মিরাজ হল জেরুজালেম থেকে সিদরাতুল মুনতাহা পর্যন্ত পরিভ্রমণ।

এখন প্রশ্ন হল ইসরা এবং মিরাজ কবে হয়। কুরআনে একাধিক আয়াত রয়েছে মিরাজের ব্যাপারে, সিয়া সিত্তাহতে ৩০ টিরও বেশি হাদিস রয়েছে, এছাড়া হাদিসের অনান্য বইয়ে বহু হাদিস রয়েিছে মিরাজের ব্যাপারে। তবে কোনটিই কোন মিরাজ কোন বছর হয়েছে এ ব্যাপারে কোন তথ্য নেই। বর্ণনা এত বেশি যে ইমাম নববী, ইবনে আবি জমরান সহ অনেকে এই মত দিয়েছেন, “মিরাজ সম্ভবত দুই বার হয়েছে” [https://goo.gl/jEVsMY]

কোন বছর হয়েছে এ ব্যাপারে একাধিক মত রয়েছে। এবং সাহাবিদের থেকে এ ব্যাপারে কোন মত নেই। তাবেয়িরা পরবর্তীতে রাসুলুল্লাহ সাঃ এর জীবনী ক্রমধারা অনুযায়ি সাজাতে গিয়ে বিভিন্ন মত দিয়েছেন। এ ব্যাপারে ৪ টা মত উল্লেখ্যঃ
১। আল তাবারি- নবুওয়াতের ১০ম বছর।
২। আল কুরতুবি- নবুওয়াতের ৫ম বছর।
৩। আল্লামা আল মানসুরপুরি- নবুওয়াতের ১০ম বছরে ২৭ রজব।
৪। হিজরতের আগে। তবে এখানেও হিজরতের ঠিক কত মাস আগে তার টাইম লাইন নিয়ে মতভেদ আছে। ১২ মাস, ১৪ মাস এবং ১৬ মাস। এই ৩ টি মত রয়েছে।
আল্লামা সফিউর রহমান আল মোবারকপুরি আর বিখ্যাত আর রাহিকুল মাখতুম বইয়ের ১৭৮ পৃষ্ঠায় বলেন,
“প্রথম ৩ টি মত গ্রহনযোগ্য নয় কারন আয়িশা রাঃ এর একটি সহিহ হাদিস রয়েছে যে খাদিজা রাঃ নামাজ ফরজ হওয়ার পূর্বে ইন্তেকাল করেন। খাদিজা রাঃ ইন্তেকাল করেন নবুওয়তের ১০ম বছরে রমজান মাসে। নামাজ ফরজ হয় মিরাজের পরে”।
[Revised English Edition: 2002]
যদি রজবের ২৭ তারিখ মিরাজ হতো, তাহলে খাদিজা রাঃ এক মাসেরও বেশি সময় পেতেন নামাজ ফরজ হিসেবে। সূরা ইসরাতেও ইঙ্গিত রয়েছে মিরাজ হয় মক্কার জীবনের একদম শেষের দিকে।

বর্তমানে ইবনে ইসহাক, ইবনুল কাইয়্যাম সহ মেইনস্ট্রিম ইসলামি স্কলারদের মত মিরাজ একবারই হয়। সেটা হয় শোকের বছরের পর এবং হিজরতের কিছুদিন আগের এই মাঝামাঝি সময়ে।
কোন মাসে মিরাজ হয়?
এ ব্যাপারে কুরআনে কোন তথ্য নেই। রাসুলুল্লাহ সাঃ এ কিছু বলেন নাই। সাহাবিরা কিছু বর্ণনা করেন নি। তাবেয়িরা কোন মত বর্ণনা করেন নি। রাসুলুল্লাহ সাঃ এর ইন্তেকালের ৩০০ বছর পরে কিছু ইসলামি বিশেষজ্ঞ এ ব্যাপারে তাদের দৃষ্টিভঙ্গি তুলে ধরেন। কেউ বলেন রবিউল আউয়াল, কেউ রবিউস সানি, কেউ রমজান, কেউ শাওয়াল কেউ বা রজব। তৃতীয় শতাব্দীর লিটারেচারে বিভিন্ন বিশেষজ্ঞের এই পাঁচ মাসের মত পাওয়া যায়। অর্থাৎ আসলে আমরা জানি না কোন মাসে হয়েছে মিরাজ। [https://goo.gl/TI7vb8]
কত তারিখে মিরাজ হয়ঃ
যেখানে কোন মাসে মিরাজ হয়েছে এটাই জানি না। কোন তারিখে মিরাজ হয়েছে এটা জানার তো প্রশ্নই আসে না। রাসুলুল্লাহ সাঃ এর ইন্তেকালের ১০০০ বছর পরে প্রথম তারিখ মিরাজ কত তারিখে হয়েছে এ ব্যাপারে বিভিন্ন মত আসে।[https://goo.gl/TI7vb8]
২৭ রজবের মাহ্যত্বঃ
রজব মাস নিয়ে হিজরির দ্বিতীয়-তৃতীয় শতকে মুসলিম উম্মাহের মাঝে নানান কুসংস্কার এবং জাল হাদিস ছড়িয়ে পরে। রজব মাস হল সবচেয়ে অশুভ মাস এবং ২৭ রজব হল সবচেয়ে অশুভ দিন। এই অশুভ দিনে মঙ্গল আনার জন্য রোজা থাকতে হবে এবং রাতে নামাজ পড়তে হবে। রজব মাসের এইসব ঘটনা নিয়ে ইমাম ইবনে হাজার আসকারানির একটি বই আছে নাম, “তাবউমুল রাজাব” [‘তাবউমুল রাজাব’ অর্থ রজব মাসের ফজিলত বর্ণনা করা হাদিসের আজব কাহিনী প্রকাশ করা]
এই নামাজ এবং রোজাই হিজরির ১০ম শতাব্দীতে এসে মিরাজের নামাজ এবং রোজাতে কনভার্ট হয়ে যায়। [https://goo.gl/TI7vb8]

আরও বিস্তারিত পড়াশোনার জন্যঃ
১। সীরাতুন নবী (সাঃ)- ইবনে হিশাম
২। The Selected Nectar (Ar Raheequl Makhtum)- Safiur Rahman Al Mubarakpuri
৩। https://goo.gl/JWlpnP

সর্বশেষ এডিট : ২৫ শে এপ্রিল, ২০১৭ দুপুর ২:০৮
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বাংলাদেশের লোকসংস্কৃতিঃ ব্যাঙের বিয়েতে নামবে বৃষ্টি ...

লিখেছেন অপু তানভীর, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:০০



অনেক দিন আগে একটা গল্প পড়েছিলাম। গল্পটা ছিল অনেক এই রকম যে চারিদিকে প্রচন্ড গরম। বৃষ্টির নাম নিশানা নেই। ফসলের মাঠ পানি নেই খাল বিল শুকিয়ে যাচ্ছে। এমন... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাংলাদেশি ভাবনা ও একটা সত্য ঘটনা

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১০:১৭


আমার জীবনের একাংশ জুড়ে আছে; আমি চলচ্চিত্রাভিনেতা। বাংলাদেশেই প্রায় ৩০০-র মত ছবিতে অভিনয় করেছি। আমি খুব বেছে বেছে ভাল গল্পের ভাল ছবিতে কাজ করার চেষ্টা করতাম। বাংলাদেশের প্রায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাকি চাহিয়া লজ্জা দিবেন না ********************

লিখেছেন মোহাম্মদ সাজ্জাদ হোসেন, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১০:৩৫

যখন প্রথম পড়তে শিখেছি তখন যেখানেই কোন লেখা পেতাম পড়ার চেষ্টা করতাম। সেই সময় দোকানে কোন কিছু কিনতে গেলে সেই দোকানের লেখাগুলো মনোযোগ দিয়ে পড়তাম। সচরাচর দোকানে যে তিনটি বাক্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

=এই গরমে সবুজে রাখুন চোখ=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:২১

০১।



চোখ তোমার জ্বলে যায় রোদের আগুনে?
তুমি চোখ রাখো সবুজে এবেলা
আমায় নিয়ে ঘুরে আসো সবুজ অরণ্যে, সবুজ মাঠে;
না বলো না আজ, ফিরিয়ো না মুখ উল্টো।
====================================
এই গরমে একটু সবুজ ছবি দেয়ার চেষ্টা... ...বাকিটুকু পড়ুন

কুড়ি শব্দের গল্প

লিখেছেন করুণাধারা, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:১৭



জলে ভাসা পদ্ম আমি
কোরা বাংলায় ঘোষণা দিলাম, "বিদায় সামু" !
কিন্তু সামু সিগারেটের নেশার মতো, ছাড়া যায় না! আমি কি সত্যি যাবো? নো... নেভার!

সানমুন
চিলেকোঠার জানালায় পূর্ণিমার চাঁদ। ঘুমন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

×