গত কয়েকদিন ধরে আন্তর্জালে একটা প্রচার দেখছিলাম, রোহিঙ্গারা নিজেরাই নিজেদের ঘরে আগুন দিচ্ছে। ব্যাপারটি নিয়ে খটকা লেগেছিলো। ডেইলি মেইল, ডয়েচ ভেল এবং বিবিসির খবর দেখে বুঝলাম। আরাকানের হিন্দুরা টুপি-হিজাব পরে নিজরাই নিজেদের বাড়িঘরে আগুন দিচ্ছে। কিন্তু কেন!?
খুবই পুরানো কৌশল...
বছর খানিক আগে সিরিয়ার যুদ্ধ যখন চরমে। যুদ্ধ থেকে বাঁচতে সিরিয়ার সাধারণ মানুষ ছোট ছোট নৌকায় করে বিশাল সমুদ্রে নেমে পরে [মরুভূমির মানুষ সাতাঁর জানে না]। অনেকে ইউরোপে পৌছে। এ সময় প্রচুর নৌকা ডুবির ঘটনা ঘটে। সমুদ্রে ভেসে আসা সিরিয় শিশু আয়লানের ছোট্ট নিথর দেহ বিশ্ব মানবতাকে একটা ঝাঁকি দেয়। ইউরোপসহ সারা দুনিয়ার মানুষ তখন শরণার্থীদের পক্ষে চলে যায়, ফলে ইউরোপে বেশকিছু শরণার্থী আশ্রয় পায়। শরণার্থী শিবিরগুলোতে সাহায্য যাওয়ার পরিমাণ বেড়ে যায়।
ঠিক এরপরই একটি একদল সিরিয়দের নামে মিথ্যা কুৎসা রটনা শুরু করে। প্রচার শুরু করলো- তারা নাকি ধর্ষণ করে, জুয়া খেলে, নারী নির্যাতন করে, চুরি করে, খুন করে। নানান মিথ্যা অপবাদ। এদের সাথে যুক্ত হল ইসলামোফোবিক দলগুলো এবং তাদের মুসলিম জুজু কার্ড। ফলাফল, ধীরে ধীরে ইউরোপীয়রা শরানার্থী মুসলমানদের বিরুদ্ধে ক্ষেপে উঠলো। তাদের ক্ষোভ এতটাই বৃদ্ধি পেলো যে, রাস্তায় রাস্তায় তারা শরনার্থী পেটানো শুরু করলো। এমনকি নিরীহ শরনার্থী শিবিরে আগুন দিয়েছিলো ফরাসিরা [http://bit.ly/2weCjZ2]
মিয়ানমারের সেনাবাহিনী, সীমান্তরক্ষী বাহিনী, রাখাইন সম্প্রদায় এবং বৌদ্ধ যাজকরা ইতিহাসের নির্মমতম নির্যাতন করছে রোহিঙ্গাদের উপর। পুরুষ যুবকদের ধরে নিয়ে গুলি করছে, মহিলাদের রেপ করে গলা কেটে হত্যা করা হচ্ছে। আর শিশুদের নিক্ষেপ করা হচ্ছে আগুনে। বাংলাদেশে পালিয়ে আসবে সেটাও দুঃস্বপ্ন, সীমান্তে পোতাঁ আছে ল্যান্ড মাইন আর অকুল সমুদ্র। বন্যার পানির মত একের পর এক লাশ ভেসে আসছে টেকনাফের সৈকতে। আর অন্তর্জালে আরাকানে নির্যাতনের কিছু নমুনা, বীভৎস সব ছবি, এমনকি ফেসবুকও ছবিগুলো ঢেকে দিচ্ছে।
ফলাফল সমগ্র পৃথিবী এবং বাংলাদেশের প্রায় সব মানুষ রোহিঙ্গাদের পক্ষে। জনগনের চাপে সরকার সীমান্ত খুলে দেয় এবং তাদের মানবিক সাহায্য প্রদান করছে। শতশত সেচ্ছাসেবী দল ত্রান নিয়ে টেকনাফ যাচ্ছে।
ঠিক এই সময়ে মিয়ানমারের চাল এটা। একই সাথে আমাদের দেশেও একদল চেতনাবাদী দাঁড়িয়ে গেছে মগ দস্যুদের সাথে। তাদের শিখিয়ে দেওয়া কথা বলছে, রোহিঙ্গারা বদমাশ, পাজি এবং দুষ্ট। তারা নিজেরাই নিজেদের সন্তানকে হত্যা করে সাগরে ভাসিয়ে দিচ্ছে, নিজের ঘরে আগুন দিয়ে, ৩-৪ ধরে গভীর জঙ্গল দিয়ে হেটে বাংলাদেশে আসছে এখানে থাকার জন্য।
হায়রে চেতনা....
এদের উদ্দেশ্য পরিষ্কার।।
সর্বশেষ এডিট : ২৩ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৭ রাত ১:৪৯