somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

রিপ্লাই টু আরজ আলী মাতুব্বর, সত্যের সন্ধানে [দ্বিতীয় পর্ব]

০২ রা নভেম্বর, ২০১৭ রাত ১০:৪২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


ট্যাগ: I. সুলাইমান আ: এর আকাশ ভ্রমন। II. সূফীদের চোখ বুজে দুনিয়া দর্শন। III. চিকিৎসা নাকি ঝাড়ফুঁক??

"হযরত সোলায়মান নবী নাকি সিংহাসনলনে বসিয়া সপরিষদ শূন্যে ভ্রমন করিতেন।..অতীতে কোন কোন বোজর্গান হাঁটিয়াই নদী পার হইতে পারিতেন। যেহেতু তাহাদের বিশ্বাস ছিল যে, নদী পার করাইবেন আল্লাহতালা, নৌকা বা জলযানের প্রয়োজন নাই। আর বর্তমানে খোদার উপর বিশ্বাস নাই, নদী পার হইতে সাহায্য লইতে হয় নৌকার।"
[আরজ আলী মাতুব্বর রচনাসমগ্র-৫৬]

আরজ আলী এখানে ইসলামকে ব্যঙ্গ করেছেন এবং সেটা খুবই স্থুল ভাবে। আপনি যদি ইসলামকে না বোঝেন সেটা আপনার মূর্খতা, ইসলামের সমস্যা না। ইসলামে একটি বিষয় আছে যাকে বলে "মুজিজা" বাংলায় অলৌকিক। মুজিজা মানেই হল এমন কিছু যা স্বাভাবিক জ্ঞান বা নিয়ম দিয়ে ব্যাখ্যা করা যায় না। যখন বলেই দিয়েছে এটার কোন ব্যাখ্যা নেই, তখন আপনি এটার বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা খুঁজতে গিয়েছেন কেন?

তবে আপনি বিজ্ঞান দিয়েও এটা কে ভুল প্রমান করতে পারবেন না। ভুল প্রমান করতে আপনাকে সুলাইমান আঃ এর সময়ে যেতে হবে। বিজ্ঞান বলবে, এটা হতেও পারে আবার নাও হতে পারে। হয়তো এটা কাল্পনিক গল্প আবার হতে পারে উনি এমন কোন ম্যাকানিজম জানতেন যেটা আমরা জানি না। বিজ্ঞান কখনোই বলবে না এটা হয়নি, কারন বিজ্ঞান বাস্তব প্রমান ব্যতীত কোন সিদ্ধান্তে আসে না। জনাব আরজ আলী নিজেও মুজিজা নিয়ে দ্বিধা বিভক্ত ছিলেন। তিনি বিভিন্ন সময় বিভিন্ন ব্যাখ্যা দিয়েছেন। তিনি তার অন্য বই অনুমানের আধুনিক দেবতত্ত্ব অংশে মত দিয়েছেন, নবী-রাসূলরা ছিলেন উন্নত কোন ভিনগ্রহের মানুষ বা তাদের প্রতিনিধি। আর মুজিজাগুলো হল সেই সুসভ্য ভীনগ্রহী মানুষের উন্নত প্রযুক্তি।

মুসলিমরা বিশ্বাস করে সুলাইমান আঃ এর কাছে ম্যাকানিজম ছিল, সেটা হল আল্লাহ এর সাহায্য। এখন তাহলে প্রশ্ন চলে আসে, বিজ্ঞান কি সর্ব শক্তিমান আল্লাহ বা সৃষ্টিকর্তায় বিশ্বাস করে? এই প্রশ্নের উত্তর আসলে বিজ্ঞানের আওতার বাইরে। আমাদের সৃষ্টিকর্তা এত বেশি মহান যে তাকে পরীক্ষা করার সক্ষমতা বিজ্ঞানের এখনো তৈরি হয়নি। পৃথিবীর অনেক কিছুই আমরা জানি না। মৌসুমী বায়ু কেন আসে, বারমুডা ট্রায়াঙ্গলে কি আছে, কিভাবে পিরামিড বানানো হয়েছিলো। আর মহাবিশ্বের ০.১% সম্পর্কেও জানি না। মাত্র মঙ্গলে যেতে পেরেছি। এর বাইরে আছে তারা, ছায়াপথ, ব্লাকহোল। হাজার হাজার কোটি। বিজ্ঞান মহাবিশ্বের বিস্তার কতটুকু সে সম্পর্কে সিদ্ধান্তে আসতে পারে নি; জানা দূরে থাক, সেখানে এইসব কিছুর স্রস্টা? আসলেই সম্ভব না। তবে অধিকাংশ বিজ্ঞানীই ঈশ্বরে বিশ্বাস করেন।
ফ্রান্সিস বেকন এ প্রসঙ্গে চমৎকার একটি মন্তব্য করেছেন,
"বিজ্ঞানের অল্প জ্ঞান আপনাকে নাস্তিক বানাবে কিন্তু বিজ্ঞানের গভীর জ্ঞান আপনাকে ঈশ্বরে বিশ্বাসী করে তুলবে"।

পরের অংশঃ
"সুফীগন নাকি ধ্যানমগ্ন অবস্থায় পৃথিবীর কোথায় কি ঘটিতেছে, তাহা জানিতে ও দেখিতে পাইতেন। এখন কয়টি লোকে উহা বিশ্বাস করে? বর্তমানে বিশ্বাস জন্মিয়াছে টেলিগ্রাফ, টেলিফোন, রেডিও এবং টেলিভিশনে।"
[আরজ আলী মাতুব্বর রচনাসমগ্র-৫৬]

কেউ যদি বলে সে ধ্যানমগ্ন অবস্থায় পৃথিবীর কোথায় কি ঘটছে তা সে দেখতে পায়, তাহলে নিশ্চিত ভাবে সে একজন ভন্ড এবং তার কথায় যারা গুরুত্ব দেয় সে মূর্খ। বর্তমানে দেওয়ানবাগী, কুতুববাগী তেমন ভন্ড। এদের আছে শয়ে শয়ে মূর্খ অনুসারী। এজন্য যদি আপনি ইসলামে দায়ী করেন তাহলে আপনি ধূর্ত।

ইসলামের একজন অত্যান্ত সম্মানিত নবী হলেন ইয়াকুব আঃ। তিনি অাঃ, নিজে নবী। উনার পিতা ইসহাক আঃও নবী। উনার চাচা ইসমাইল আঃ একজন নবী। উনার দাদা ইব্রাহীম আঃ একজন নবী এবং উনার সন্তান ইউসুফ আঃও ছিলেন নবী। ইউসুফ আঃ এর ভাইয়েরা তাকে কূপের মধ্যে ফেলে দেয় এবং উদ্ধার না পর্যন্ত ইউসুফ আঃ সেই কূপের মধ্যে আটকে ছিলেন প্রায় ২ দিন। এই কূপ ইয়াকুব আঃ এর বাড়ি থেকে মাত্র কয়েক মাইল দূরে। ইয়াকুব আঃ ধ্যানে বসে সেটা দেখতে পেলেন না, জানালেনও না। সন্তানকে কে হারানোর শোকে কাঁদতে কাঁদতে তিনি অন্ধ হয়ে যান। এমন সম্মানিত নবী যেখানে কিছুই জানলেন না, সেখানে কোন জায়গার কোন ভন্ড কি বললো তা আপনি এতই গুরুত্ব দিলেন যে একটা বই-ই লিখে ফেললেন।

"শাহ ছাহেবদের 'কালাম'-এর তাবিজে কৃমি পড়ে না, কৃমি পরে স্যান্টেনাইন সেবনে। মানত শিন্নিতে জ্বর ফেরে না, জ্বর ফেরাইতে সেবন করিতে হয় কুইনাইন।"
[আরজ আলী মাতুব্বর রচনাসমগ্র-৫৬]

সেই একই সমস্যা। সীমাবদ্ধ জ্ঞান। আরজ আলী যদি একবারও একটু মনোযোগ দিয়ে মুহাম্মাদ সা: এর জীবনী পড়তেন তাহলে এই কথা লিখতেন না। যেকোন জীবনী, হোক সেটা আস্তিক বা নাস্তিকের লেখা। রাসুলুল্লাহ সা: নিজে জীবনে বেশ কয়েকবার অসুখে পড়েছেন। মদিনায় হিজরতের কিছুদিন পরেই আবু বকর রা:, বিলাল রা: সহ বেশ কয়েকজন সাহাবির প্রচণ্ড জ্বর হয়। জ্বরের প্রচন্ডতায় প্রলাপ করতে শুরু করেন। উনারা সবাই চিকিৎসা গ্রহন করেন। ইসলাম কবে বললো অসুখ হলে চিকিৎসা না নিয়ে ঝাড়ফুঁকে করতে?! ইসলাম চিকিৎসা সম্পর্কে কি বলে দেখুন,

"আবূ হুরাইরা (রাঃ) থেকে বর্ণিত রাসুলুল্লাহ সা: বলেছেন, আল্লাহ্‌ এমন কোন রোগ পাঠাননি যার আরোগ্যের ব্যবস্থা দেননি।"
[সহিহ বুখারী, হাদিস নং ৫৬৭৮]

"তোমরা চিকিৎসা ব্যবস্থা গ্রহণ করো; কেননা মহান আল্লাহ একমাত্র বার্ধক্য ছাড়া সকল রোগেরই ঔষধ সৃষ্টি করেছেন।"
[সুনানে আবু দাউদ, হাদিস নং ৩৮৫৫]

"সা’দ (রাঃ) বলেন, আমি অসুস্থ হলে রাসূলুল্লাহ সা: আমাকে দেখতে আসলেন এবং আমার বুকে তাঁর হাত রাখলেন। আমি আমার হৃদয়ে তাঁর হাতের শীতলতা অনুভব করলাম। অতঃপর তিনি বললেনঃ তুমি হৃদরোগী, তুমি সাকীফ গোত্রের হারিস ইবনু কালাদাহ্‌র নিকট যাও; কারণ সে এসব রোগের চিকিৎসা করে। সে যেন মাদীনাহ্‌র আজওয়া খেজুর হতে সাতটি খেজুর নিয়ে বীচিসহ চূর্ণ করে সেগুলো তোমার মুখে ঢেলে দেয়।"
[মিশকাত, হাদিস নং ৪২২৪]

ইসলাম শুধু আমাদের না, পশু-পাখির চিকিৎসা সম্পর্কেও গুরুত্ব দিয়েছে,
"আবূ সা‘ঈদ খুদরী (রাঃ) আবূ সা‘সা‘আহকে বললেন, তোমাকে দেখছি তুমি বকরীকে অত্যন্ত ভালবেসে এদেরকে সর্বদা লালন-পালন কর, তাই, তুমি এদের যত্ন কর এবং রোগ-ব্যাধিতে আক্রান্ত হলে চিকিৎসা কর। আমি রাসুলুল্লাহ সা:-কে বলতে শুনেছি, এমন এক সময় আসবে, যখন বকরীই হবে মুসলিমের উত্তম সম্পদ। তাকে নিয়ে পাহাড়ের চূড়ায় বৃষ্টি বর্ষণের স্থানে চলে যাবে এবং তাঁদের দীনকে ফিতনা থেকে রক্ষা করবে।"
[সহিহ বুখারী, হাদিস নং ৩৬০০]

ইসলামে সহিহ বুখারী সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ গ্রন্থের একটি। সহিহ বুখারীতে চিকিৎসা নিয়ে একটি আলাদা অধ্যায়ই আছে। ইসলামে চিকিৎসা শাস্ত্র অধ্যয়নের উপর গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। মুসলিমরাও এই শাস্ত্র অধ্যয়ন শুরু করে এবং বিপ্লব আনে। ইসলামের স্বর্ণ যুগে আধুনিক চিকিৎসা বিজ্ঞানের উদ্ভব হয় মুসলিমদের হাত ধরেই। আধুনিক চিকিৎসা বিজ্ঞান এবং শল্য [অপারেশন] চিকিৎসার জনক আবু আলী ইবনে সীনা একজন মুসলিম।

দ্বিতীয় পর্ব
#চলবে
সর্বশেষ এডিট : ০২ রা নভেম্বর, ২০১৭ রাত ১০:৪৩
১৩টি মন্তব্য ৬টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। মুক্তিযোদ্ধা

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:২১



মুক্তিযুদ্ধের সঠিক তালিকা প্রণয়ন ও ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা প্রসঙ্গে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক বলেছেন, ‘দেশের প্রতিটি উপজেলা পর্যায়ে মুক্তিযোদ্ধা যাচাই বাছাই কমিটি রয়েছে। তারা স্থানীয়ভাবে যাচাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতীয় রাজাকাররা বাংলাদেশর উৎসব গুলোকে সনাতানাইজেশনের চেষ্টা করছে কেন?

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:৪৯



সম্প্রতি প্রতিবছর ঈদ, ১লা বৈশাখ, স্বাধীনতা দিবস, বিজয় দিবস, শহীদ দিবস এলে জঙ্গি রাজাকাররা হাউকাউ করে কেন? শিরোনামে মোহাম্মদ গোফরানের একটি লেখা চোখে পড়েছে, যে পোস্টে তিনি... ...বাকিটুকু পড়ুন

চুরি করাটা প্রফেসরদেরই ভালো মানায়

লিখেছেন হাসান মাহবুব, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৫৩


অত্র অঞ্চলে প্রতিটা সিভিতে আপনারা একটা কথা লেখা দেখবেন, যে আবেদনকারী ব্যক্তির বিশেষ গুণ হলো “সততা ও কঠোর পরিশ্রম”। এর মানে তারা বুঝাতে চায় যে তারা টাকা পয়সা চুরি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঘুষের ধর্ম নাই

লিখেছেন প্রামানিক, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:৫৫


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

মুসলমানে শুকর খায় না
হিন্দু খায় না গাই
সবাই মিলেই সুদ, ঘুষ খায়
সেথায় বিভেদ নাই।

হিন্দু বলে জয় শ্র্রীরাম
মুসলিম আল্লাহ রসুল
হারাম খেয়েই ধর্ম করে
অন্যের ধরে ভুল।

পানি বললে জাত থাকে না
ঘুষ... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইরান-ইজরায়েল দ্বৈরথঃ পানি কতোদূর গড়াবে??

লিখেছেন ভুয়া মফিজ, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:২৬



সারা বিশ্বের খবরাখবর যারা রাখে, তাদের সবাই মোটামুটি জানে যে গত পহেলা এপ্রিল ইজরায়েল ইরানকে ''এপ্রিল ফুল'' দিবসের উপহার দেয়ার নিমিত্তে সিরিয়ায় অবস্থিত ইরানের কনস্যুলেট ভবনে বিমান হামলা চালায়।... ...বাকিটুকু পড়ুন

×