somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

রবীন্দ্রনাথঃ ধর্ম নিয়ে বিভ্রান্তি এবং আধুনিকতার ফ্যান্টাসি

০৬ ই মে, ২০১৮ রাত ১১:২৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

রবীন্দ্রনাথ বাংলা সাহিত্যের ইতিহাসের শ্রেষ্ঠ সাহিত্যিক। আর কয়েকদিন পর তার জয়ন্তী। মূলধারার সেবাদাস গণমাধ্যম তার জীবনের অনেক দিক আমাদের থেকে লুকিয়ে রাখে বা ধোঁয়াসা সৃষ্টি করে। তাই এই মাসের ইতিহাস পাঠ রবীন্দ্রনাথকে নিয়ে। আজ রবীন্দ্রনাথের ধর্ম এবং আধুনিকতা নিয়ে।

ধর্ম
রবীন্দ্রনাথের ধর্ম নিয়ে আমাদের সমাজে কিছু মিথ প্রচলিত আছে। একটা ধোঁয়াসা রয়েছে। এর কারন তার পিতা দেবেন্দ্রনাথ।
১৮২৮ সালের আগস্ট মাসে রামমোহন রায় একটা ধর্মমত প্রতিষ্ঠিা করেন। তার নাম দেন ব্রাহ্ম সভা [পরে ব্রাহ্ম সমাজ নাম ধারন করে]। ব্রাহ্ম ধর্ম নিরাকার ঈশ্বরে বিশ্বাসী, এতে নেই জাতভেদ বা মূর্তি পুজা। দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর ব্রাহ্ম ধর্ম গ্রহন করেন। শুধু তাই নয়, কিছুদিনের মধ্যে তিনি ব্রাহ্ম সমাজের প্রধান পুরুষে পরিণত হন এবং মহর্ষি উপাধি ধারন করেন। [1]
তবে ব্রাহ্ম সমাজের মহর্ষি হওয়া সত্ত্বেও দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর বাবার শ্রাদ্ধ হিন্দু পদ্ধতিতেই করেছেন। ব্রাহ্ম ধর্ম গ্রহন করলে পৈতা ত্যাগ করার কথা, অথচ রবীন্দ্রনাথকে অনুষ্ঠান করে পৈতা দেওয়া হয়েছিলো। [2]

ব্রাহ্ম সমাজে জাতিভেদ নিষিদ্ধ। কিন্তু রবীন্দ্রনাথের পৈতা পরার অনুষ্ঠানে রাজনারায়ণ বসু নামক এক ব্যক্তিকে শূদ্র বলে অপমানিত করে বের করে দেওয়া হয়। [3]

ঠাকুর পরিবারই হিন্দু মেলা এবং হিন্দু জাতীয়তাবাদ প্রতিষ্ঠার পথিকৃৎ। [4] এই হিন্দু মেলা নিয়ে রবীন্দ্রনাথ লিখলেন, ‘হিন্দু মেলার উপহার’ । [5]
এছাড়া ঠাকুর পরিবারে নিয়মিত দুর্গা পুজা হতো। ঠাকুর পরিবারের মোটামুটি সবাই বৈবাহিক সম্পর্ক করেন ব্রাহ্মণদের সাথেই [পুরো তালিকা বেশ খোঁজাখুঁজি করেও পেলাম না। কারো নিকট থাকলে দেবেন প্লিজ]।

অর্থাৎ ব্রাহ্ম ধর্ম ছিলো পোশাকি। রবী ঠাকুর ছিলেন বর্ণ হিন্দু।

ঠাকুর পরিবার কাজে ছিল একটা নেতৃত্বস্থানীয় ব্রাহ্মণ পরিবার। রবীন্দ্রনাথও ছিলেন তাই। তিনিও তার ছেলে-মেয়েদের ব্রাহ্মণদের সাথেই বিয়ে দিয়েছেন। তার প্রতিষ্ঠিত বিশ্ব ভারতীতে ব্রাহ্মণদ ছাত্রদের জন্য আলাদা ব্যবস্থা ছিল। তিনি প্রতিষ্ঠা করেন “শান্তিনিকেতন ব্রহ্মচর্যাশ্রম”।

এছাড়া হিন্দু দেবীদের বন্দনা করে তিনি লিখেছেন অসংখ্য কবিতা, গান ।

তিনি ছিলেন নিজ বর্ণের ব্রাহ্মণদের ভক্ত। তাদের প্রশংসা করে বলেছেন,

“সেই পূজ্য ব্রাহ্মণদের আমরা নমস্কার করি। কেবল মাথা নত ক'রে নমস্কার করা নয়--তাঁরা যে শিক্ষা দিয়েছেন তাই গ্রহণ করি, তাঁরা যে দৃষ্টান্ত দিয়েছেন তার অনুসরণ করি। তাঁদের মতো হবার চেষ্টা করাই হচ্ছে তাঁদের প্রতি ভক্তি করা”। [6]

রবীন্দ্রনাথ হিন্দু সমাজ তথা মানবতার ইতিহাসের বর্বরতম প্রথা সতীদাহের একনিষ্ঠ সমর্থক ছিলেন। ব্রিটিশরা সতীদাহ বন্ধে আইন পাশ করলে উগ্র ব্রাহ্মণ্যবাদী হিন্দুদের সাথে তিনিও প্রতিবাদে অংশ নেন। লেখেন,

“জ্বল জ্বল চিতা ! দ্বিগুন দ্বিগুন
পরান সপিবে বিধবা বালা
জ্বলুক জ্বলুক চিতার আগুন
জুড়াবে এখনই প্রাণের জ্বালা
শোনরে যবন, শোনরে তোরা
যে জ্বালা হৃদয়ে জ্বালালি সবে
স্বাক্ষী রলেন দেবতার তার
এর প্রতিফল ভুগিতে হবে”

মিডিয়ার ম্যাজিক এখানেই, সতীদাহ প্রথার সমর্থককে প্রগতিশীলতার মহর্ষি বানিয়ে ফেলেছে।

আধুনিকতার ফ্যান্টাসি
রবীন্দ্রনাথ পায়ের নক থেকে মাথার চুল পর্যন্ত একজন আধুনিক মানুষ ছিলেন। "রবীন্দ্রনাথ বাঙালি জাতিকে এগিয়ে দিয়ে গেলেন একশ বছর"। [৭]
তিনি যে কতটা আধুনিক তার একটা নমুনা পাওয়া যায় উনার প্রতিষ্ঠিত সুবিখ্যাত শান্তি নিকেতনের একজন ছাত্রের [গুরুজি সরাসরি ছাত্র] বর্ণনায়,
"... তখনকার শান্তিনিকেতন বলতে বোঝায় : একদিকে আমের বাগান - অন্য দিকে শালের বন, তার মাঝখানে বেশ খানিকটা ফাঁকা জায়গা। সেখানে ছিল লম্বা বারো-চোদ্দটা চালাঘর, সবই খড়ের ছাউনি। তারই মধ্যে কয়েকখানা কোঠাঘরও ছিল; সেখানে শিক্ষকরা থাকতেন সপরিবারে। একটা মাঝারী চালাঘরে আমরা থাকতাম কয়েকজন - সেইখানেই একটা তক্তপোষে আমার সিট হয়েছিল। সেখানে যারা ছিল, তারা সবাই অল্পবয়স্ক। সেজদা'র সিট হলো অন্য ঘরে। আমাদের ঘরে তত্ত্বাবধায়করূপে একজন শিক্ষকও থাকতেন।
ছোটবেলা থেকেই পালঙ্কে নরম বিছানায় শোওয়া অভ্যাস। আর এ রকম পরিবেশেও কখনও শুইনি - লম্বা করিডরের মতন ঘর - জানালার ফাঁক দিয়ে শীতের কনকনে হাওয়া ঢুকছে - শক্ত তক্তপোশ, সুতরাং প্রথমদিন খুবই অসুবিধা বোধ করেছিলাম। কিন্তু সমস্ত দিনের ক্লান্তির পর শোওয়া মাত্রই ঘুমিয়ে পড়লাম।
অঘোরে ঘুমাচ্ছি, হঠাৎ মনে হলো কে যেন আমায় ঠেলছে আর বলছে, "ওঠ, ওঠ, মাঠে যাবার ঘন্টা পড়ে গেছে।" প্রচন্ড শীতে কাঁপতে কাঁপতে কোন রকমে উঠে অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলাম, এত রাত্রে মাঠে কেন? ছেলেটি জবাব দিল, রাত কোথায় ! ওই তো ফরসা হয়ে এসেছে। এই সময়েই তো মাঠে যেতে হয় - এখানে তো পায়খানা নেই।
এতক্ষণে বুঝলাম মাঠে যাবার অর্থ।
ছোটবেলা থেকেই বাথরুমে যাওয়া অভ্যাস; মাঠে যেতে হবে শুনে আমার চক্ষু স্থির। কিন্তু নিরূপায়। অগত্যা অন্য ছেলেদের সঙ্গে আমাকে মাঠেই যেতে হলো॥"

এছাড়া তিনি মানসী কবিতায় বলেছেন পুরুষ নারীদের দ্বিতীয় ঈশ্বর। সোনার বাঁধন কবিতায় দেবির বন্দনা করেছেন যাকে সোনার শিকল দিয়ে বেঁধে রাখা হয়েছে।
এরপরেও তিনি নাকি আধুনিক মানুষ!!

তথ্যসূত্রঃ
1. https://goo.gl/pZEWTo
2. গোলাম আহমদ মর্তুজা, “এ এক অন্য ইতিহাস”
3. রাজনারায়ন বসু , “আত্মচরিত”, পৃ:১৯৯
4. https://goo.gl/I7ZdKF
5. https://goo.gl/4fKcjc
6. https://goo.gl/GnaZ0e
7. হুমায়ূন আহমেদ, “মধ্যাহ্ন”, পৃ: ২৭৭
8. মধু বসু, “ আমার জীবন” , বাক্-সাহিত্য (কলিকাতা), এপ্রিল, ১৯৬৭, পৃ: ১৫-১৬

'আধুনিক প্রচার মাধ্যমগুলো কিছু শুকর শাবককে মহামানব রুপে প্রতিষ্ঠিত করেছেন'
- হুমায়ূন আজাদ
সর্বশেষ এডিট : ০৬ ই মে, ২০১৮ রাত ১১:৩২
৫টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ধর্ম ও বিজ্ঞান

লিখেছেন এমএলজি, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:২৪

করোনার (COVID) শুরুর দিকে আমি দেশবাসীর কাছে উদাত্ত আহবান জানিয়ে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম, যা শেয়ার হয়েছিল প্রায় ৩ হাজারবার। জীবন বাঁচাতে মরিয়া পাঠকবৃন্দ আশা করেছিলেন এ পোস্ট শেয়ারে কেউ একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

তালগোল

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৩৫


তু‌মি যাও চ‌লে
আ‌মি যাই গ‌লে
চ‌লে যায় ঋতু, শীত গ্রীষ্ম বর্ষা
রাত ফু‌রা‌লেই দি‌নের আ‌লোয় ফর্সা
ঘু‌রেঘু‌রে ফি‌রে‌তো আ‌সে, আ‌সে‌তো ফি‌রে
তু‌মি চ‌লে যাও, তু‌মি চ‌লে যাও, আমা‌কে ঘি‌রে
জড়ায়ে মোহ বাতা‌সে ম‌দির ঘ্রাণ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

মা

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৩


মায়াবী রাতের চাঁদনী আলো
কিছুই যে আর লাগে না ভালো,
হারিয়ে গেছে মনের আলো
আধার ঘেরা এই মনটা কালো,
মা যেদিন তুই চলে গেলি , আমায় রেখে ওই অন্য পারে।

অন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

কপি করা পোস্ট নিজের নামে চালিয়েও অস্বীকার করলো ব্লগার গেছে দাদা।

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:১৮



একটা পোস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ আগে থেকেই ঘুরে বেড়াচ্ছে। পোস্টটিতে মদ্য পান নিয়ে কবি মির্জা গালিব, কবি আল্লামা ইকবাল, কবি আহমদ ফারাজ, কবি ওয়াসি এবং কবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতকে জানতে হবে কোথায় তার থামতে হবে

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৪৫


ইন্ডিয়াকে স্বপ্ন দেখানো ব্যাক্তিটি একজন মুসলমান এবং উদার চিন্তার ব্যাক্তি তিনি হলেন এপিজে আবুল কালাম। সেই স্বপ্নের উপর ভর করে দেশটি এত বেপরোয়া হবে কেউ চিন্তা করেনি। উনি দেখিয়েছেন ভারত... ...বাকিটুকু পড়ুন

×