কাজী নজরুল ইসলাম সম্ভবত ইতিহাসের সবচেয়ে সবচেয়ে দ্বিধাগ্রস্থ খ্যাপাটে প্রতিভাধর সাহিত্যিক। তিনি নিজের থিওলজি সম্পর্কে তিনি নিশ্চিত ছিলেন না। ব্যাপারগুলো মেলানো আসলেই মুসকিল যে ব্যক্তি বলেন,
"আমরা বলিবো সাম্য শান্তি এক আল্লাহ জিন্দাবাদ"
"মসজিদেরই পাশে আমার কবর দিও ভাই"
"দিকে দিকে জ্বালিয়া উঠেছে দীন ইসলামের লাল মশাল"।
সেই একই ব্যক্তি আবার কিভাবে বলেন,
"কালী নামে দেওরে বেড়া
ফসলে তছরুপ হবে না"।
"আমার কালো মেয়ের পায়ের তলায়
দেখে যা আলোর নাচন
মায়ের রূপ দেখে দেয় বুক পেতে শিব
যার হাতে মরণ বাঁচন"
"অবতার শ্রীরামচন্দ্র যে জানকীর পতি
তারো হ’ল বনবাস রাবণ-কর দুর্গতি"।
তবে দুইটি লেখাই অসাধারণ, এটা স্বীকার করতে হবে।
তিনি রাসুলুল্লাহ সাঃ এর বন্দনা করে লিখলেন অসাধারণ কিছু গান..
"তোরা দেখে যা আমিনা মায়ের কোলে
মধু পূর্ণিমারই সে তো চাঁদও দোলে"
"মুহাম্মাদের নাম জপেছিলি বুলবুলি তুই আগে..
''ত্রিভুবনের প্রিয় মুহাম্মাদ এলোরে দুনিয়ায়
আয় রে সাগর আকাশ বাতাস দেখবি যদি আয়''।
একটু পরেই ১৮০ ডিগ্রি ইউটার্ন। এবার হিন্দুদের মা,
"মাগো চিন্ময়ী রূপ ধরে আয়
মাগো চিন্ময়ী রূপ ধরে আয়
মৃন্ময়ী রূপ তোর পূজি শ্রীদুর্গা
তাই দুর্গতি ঘুচিল না হায়"।
"মহাকালের কোলে এসে
গৌরী হ’ল মহাকালী,
শ্মশান-চিতার ভস্ম মেখে
ম্লান হ’ল মার রূপের ডালি"।
এরপর করলেন ৩৬০ ডিগ্রি ওভার টার্ন,
" মূর্খের দল শোন, মানুষ এনেছে পুস্তক
পুস্তক আনেনি মানুষ কোন"
নজরুলের ব্যক্তি জীবনেও দ্বিধার ছাপ স্পর্ট, তিনি বিয়ে করেন একজন হিন্দু 'প্রমিলা দেবি'কে। নজরুল-প্রমিলা দম্পতির ছিল চার সন্তান। তাদের নাম যথাক্রমে কৃষ্ণ মুহাম্মদ, অরিন্দম খালেদ, কাজী সব্যসাচী এবং কাজী অনিরুদ।
তবে যতই দ্বিধাগ্রস্থ ব্যক্তি হোক, বাংলা সাহিত্যকে তিনি করেছেন সমৃদ্ধ। বাংলা সাহিত্যে রবীন্দ্রনাথের পরের অবস্থান নিঃসন্দেহে নজরুলের। আর জনপ্রিয়তার দিক দিয়ে তার অবস্থান নিঃসন্দেহে রবীন্দ্রনাথের সমান কিংবা বেশি।
বাংলার মুসলিম সম্প্রদায় নজরুলের নিকট বিশেষভাবে ঋনী। সাহিত্যে প্রচুর আরবি, ফারসি শব্দ ব্যবহার কারনে ব্রাহ্মাণ্যবাদী এবং ফোট উইলিয়াম কলেজেগং দের বাংলাকে সংস্কৃত বানানোর অসৎ পরিকল্পনা অনেকাংশে ব্যাহত হয়।
তবে নজরুল কোন ভাবেই সাম্প্রদায়িক ছিলেন না। তিনি মুসলিম, হিন্দু উভয় সম্প্রদায়ের জন্যই লিখেছেন। তার লেখা ইসলামি বাংলার ভাষার শ্রেষ্ঠ ইসলামি গান। এই মুহূর্তে আমি নজরুলের রাসুলুল্লাহ সাঃ এর জীবনী ভিত্তিক কাব্য মরু ভাস্কর পড়ছি। সত্যিই অনবদ্য! অন্যদিকে কালী, দুর্গাকে বন্দনা করে লেখা শ্যামা সংগীত এবং কৃীত্তনগুলোও সাহিত্যমানের বিচারে অসাধারন। কিছু এথিয়েস্টটিক লেখা থাকলেও, নজরুল হিন্দু-মুসলিমের ঐক্যের একটি প্রধান সূত্র।
অমিয় চক্রবর্তী দুই বাংলার ঐক্য নিয়ে কথা বলতে গিয়ে বলেছিলেন, "বাংলা ভাগ হয়েছে কিন্ত নজরুল তো ভাগ হয়নি"।
তাই শ্রেষ্ঠ সাহিত্যিক না হয়েও বাঙালীর জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম।
সর্বশেষ এডিট : ২৫ শে মে, ২০১৮ রাত ১০:০৫