somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পলাশী এনেছিল যারা

২৩ শে জুন, ২০১৮ বিকাল ৪:৩০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



আজ পলাশী দিবস।
আমাদের ইতিহাসের সবচেয়ে বড় পরাজয়ের দিন।
মানচিত্র, অর্থনীতি, ভাষা, সাহিত্য, শিক্ষাব্যবস্থা, ধর্ম, সম্প্রীতি সবগুলো ক্ষেত্রেই ভয়াবহ ক্ষত সৃষ্টি করে এই পরাজয়। সর্বোপরি একটা মানবিক বিপর্যয় ঘটে। যা আমরা এখনো বহন করে চলছি। ইতিহাসের অন্যতম নির্মমতম শাসন শুরু হয়েছিলো এর প্রতিক্রিয়ায়। তবে যারা পলাশী যুদ্ধের মূল কুশীলব ছিল, তাদেরকেও ইতিহাস ক্ষমা করেনি। ব্যাপারটি কি কাকতালীয়!? এর ব্যাখ্যা সামাজ বিজ্ঞানীদের আওতার বাইরে...

লর্ড-ক্লাইভ

পলাশীর যুদ্ধে ও যুদ্ধপরবর্তী তার নিষ্ঠুরতা বর্ণণার’ও অযোগ্য। যুদ্ধপরবর্তী সময়ে হত্যা,ধর্ষণ,সম্পদ-লুটতরাজসহ বিবিধ অপকর্মে লিপ্ত হয় এই ক্লাইভ ও তার হায়েনাবাহিনী। যুদ্ধপরবর্তী সময়ে হত্যা,ধর্ষণ,সম্পদ-লুটতরাজ,রাষ্ট্রীয় তহবিল তছরুপ,অস্বচ্ছ হিসাব প্রদানসহ বহু অভিযোগ উঠে। ব্রিটিশ হাউস-অব-কমন্স’এর সদস্যরাও তার অপকর্মের বিরুদ্ধে প্রতিবাদী হয়ে উঠেন। অব্যাহত প্রতিবাদের মুখে তার বিরুদ্ধে তদন্ত কমিটি গঠন করে হউস-অব-লর্ডস। এক পর্যায়ে ব্রিটিশ সরকার তার সকল সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করে। ফলে, শেষ জীবনে সর্বস্ব খুইয়ে নিঃস্ব হয়ে পড়েন ক্লাইভ এবং তার পরিবারের সদস্যরাও তাকে ত্যাগ করে চলে যায়। হতদরিদ্র অবস্থায় চরম হতাশাবোধ থেকে শেষ পর্যন্ত আত্মহত্যা করতে বাধ্য হন ক্লাইভ।

জগত শেঠ

পলাশীর যুদ্ধের অন্যতম প্রধান ঘৃণ্য ষড়যন্ত্রকারী হলো জগত শেঠ। কাশিমবাজার ষড়যন্ত্রের প্রধানতম নায়ক এই জগত শেঠ। তার পরিণতি ছিলো আরো ভয়ংকর। মীর কাসিমের নির্দেশে বিহারের “মুঙ্গের দুর্গ” থেকে বস্তাবন্দী করে তাকে নদীতে ফেলে হত্যা করা হয়।এক্ষেত্রেও পরিলক্ষিত হয় যে, এক ষড়যন্ত্রকারীর হাতে আরেক ষড়যন্ত্রকারীর হয় সলিল সমাধি।

উর্মিচাদঁ

কাশিমবাজার ষড়যন্ত্রের আরেক নায়ক, অর্থদাতা উমিচাঁদ। দেশের সাথে বিস্বাসঘাতকতা করে ইষ্ট-ইন্ডিয়া কোম্পানীর সাথে যোগ দিলেও মজার ব্যাপার হলো বিস্বাসভঙ্গের অপরাধে তাকেই সাজা দেয় ইষ্ট-ইন্ডিয়া কোম্পানী। উমিচাঁদের সকল সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করা হয়। ফলে মারাত্নক মানসিক আঘাত পায় উর্মিচাদঁ, স্মৃতিভ্রংশ ও উন্মাদ হয়ে রাস্তায় ঘুরতে ঘুরতে মৃত্যু হয়।

নন্দকুমার

নন্দকুমারকেও উমিচাঁদের পরিণতি বরণ করতে হয়।তহবিল তছরুপের অভিযোগে তাকে ফাঁসিকাষ্ঠে ঝুলানো হয়।

মীরজাফর

পলাশীর পরে মীর জাফর বাংলার নবাব হতে পারলেও তার এই সুখ বেশীদিন স্থায়ী হয়নি। অল্প কিছুদিনের মাঝেই তার ব্রিটিশ প্রভুরা তাকে আস্তাকুড়ে নিক্ষেপ করে,তাকে নবাব পদ থেকে সড়িয়ে দেওয়া হয়। শেষ জীবনে তাকেও অর্থকষ্টে দিনাতিপাত করতে হয়। এক পর্যায়ে কুষ্ঠ রোগে আক্রান্ত হয়ে দীর্ঘ রোগভোগের পর মারা যায় বেইমান মীর জাফর আলী খান। কথিত আছে,কুষ্ঠ রোগে আক্রান্ত হওয়ার পর তার গায়ের চামড়া পচে খসে পড়ে যায়। এই ছিলো বেইমান মীরজাফরের শেষ পরিণতি।

মীর কাসিম

মীর কাসিমের বোধদয় হয়েছিল পলাশীর পরে। সে ব্রিটিশদের সখ্য ত্যাগ করে। তবে ইতিহাস তাকে ক্ষমা করেনি। মীর কাসিমের সাথে ইষ্ট-ইন্ডিয়া কোম্পানীর যুদ্ধ হয় যা ইতিহাসে “বক্সারের যুদ্ধ” নামে পরিচিত। বক্সারের যুদ্ধে পরাজিত হয়ে দিল্লী পালিয়ে যান মীর কাসিম।দিল্লীরপথে-প্রান্তরে শতচ্ছিন্ন বস্ত্রে অবস্থানকালীন সময়ে এক পর্যায়ে দিল্লী জামে মসজিদের নিকট মৃত্যুবরণ করেন মীর কাসিম। শেষ জীবনে ভিখারী দশায় মীর কাসিমকে মৃত্যুবরণ করতে হয়।

ঘষেটি বেগম

পলাশীর যুদ্ধের পর মীরজাফর পুত্র মীরন উপলব্ধি করতে পারে তার পিতার নবাব হবার পথে সবচেয়ে বড় বাধা ঘষেটি বেগম। তাই মীরন চক্রান্ত করে ঢাকার অদুরবর্তী ধলেশ্বরী নদীতে নৌকা ডুবিয়ে ঘষেটি বেগমকে হত্যা করে।

মীরন

পলাশীর যুদ্ধের আরেক ঘৃণ্য ষড়যন্ত্রকারী হলো মীরন। তার নির্দেশেই মোহাম্মাদী বেগ নির্মমভাবে নবাব সিরাজউদ্দৌলাকে হত্যা করে। মিরনকে মেজর ওয়াটসন তাবুতে আগুন লাগিয়ে জীবন্ত দগ্ধ করে হত্যা করে প্রচার করে বাজ্রাঘাতে তবুতে আগুন লেগে যায়।

মুহম্মদী বেগ

তার কাছে সিরাজ প্রাণভিক্ষা চায়নি, শুধু দু রাকাত নামাজ পড়ার সুযোগ চেয়েছিলেন। মুহম্মদী বেগ তাকে সেই সুযোগ দেয়নি। তার মস্তিস্ক বিকৃতি ঘটে, এই অবস্থায় কুয়াতে ঝাপ দিয়ে মৃত্যুবরণ করে। অথচ আশ্চর্য সে সিরাজের পিতা ও মাতামহীর অন্নে প্রতিপালিত হয়েছিল।

ইয়ার লতিফ খান

হঠাৎ নিরুদ্দেশ হয়ে যায়। ধারণা করা হয় তাকে গুপ্তহত্যা করে লাশ গায়েব করে দেয়া হয়।

দানিশ শাহ

দানিশ সিরাজকে ধরিয়ে দিয়েছিলেন। বিষাক্ত সাপের ছোবলে তার মৃত্যু হয়।

রাজা রাজবল্লভ- পদ্মায় ডুবে মৃত্যু।
সর্বশেষ এডিট : ২৩ শে জুন, ২০১৮ বিকাল ৪:৩০
৭টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

মেঘ ভাসে - বৃষ্টি নামে

লিখেছেন লাইলী আরজুমান খানম লায়লা, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৩১

সেই ছোট বেলার কথা। চৈত্রের দাবানলে আমাদের বিরাট পুকুর প্রায় শুকিয়ে যায় যায় অবস্থা। আশেপাশের জমিজমা শুকিয়ে ফেটে চৌচির। গরমে আমাদের শীতল কুয়া হঠাৎই অশীতল হয়ে উঠলো। আম, জাম, কাঁঠাল,... ...বাকিটুকু পড়ুন

= নিরস জীবনের প্রতিচ্ছবি=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৪১



এখন সময় নেই আর ভালোবাসার
ব্যস্ততার ঘাড়ে পা ঝুলিয়ে নিথর বসেছি,
চাইলেও ফেরত আসা যাবে না এখানে
সময় অল্প, গুছাতে হবে জমে যাওয়া কাজ।

বাতাসে সময় কুঁড়িয়েছি মুঠো ভরে
অবসরের বুকে শুয়ে বসে... ...বাকিটুকু পড়ুন

Instrumentation & Control (INC) সাবজেক্ট বাংলাদেশে নেই

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৫৫




শিক্ষা ব্যবস্থার মান যে বাংলাদেশে এক্কেবারেই খারাপ তা বলার কোনো সুযোগ নেই। সারাদিন শিক্ষার মান নিয়ে চেঁচামেচি করলেও বাংলাদেশের শিক্ষার্থীরাই বিশ্বের অনেক উন্নত দেশে সার্ভিস দিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

জীবনের গল্প

লিখেছেন ঢাকার লোক, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:৩৫

মাত্র মাস দুই আগে আমার এক আত্মীয়ের সাথে দেখা আমার এক বোনের বাড়ি। তার স্ত্রী মারা গেছেন তার সপ্তাহ দুই আগে। মক্কায় উমরাহ করতে গিয়ে হঠাৎ অসুস্থ হয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

অভিমান

লিখেছেন জিনাত নাজিয়া, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১০:১২

" অভিমান "

তোমার ঠোঁটে বোল শিখেছি
তুমি আমার মা, কেমন করে
ভুলছ আমায় বলতে
পারিনা। এমন করে চলে
গেলে, ফিরে ও এলেনা। হয়তো
তোমার সুখেই কাটছে দিন,
আমায় ভাবছ না।

আমি এখন সাগর... ...বাকিটুকু পড়ুন

×