somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

জেনে রাখুন : মোটরযান আইনের টুকিটাকি

০৩ রা সেপ্টেম্বর, ২০১৪ রাত ১:৩৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


১৯৩৯ সালে ভারতীয় উপমহাদশেে প্রথম মোটরযান আইন করা হয়। অল্প কিছু আধুনিকায়ন ছাড়া আজও চলছে মান্ধাতার আমলের সেই মোটরযান আইন। মোটরযান আইনে গাড়ির চালকের যোগ্যতা, গাড়িতে কর্মরত শ্রমিকের যোগ্যতা, এমনকি গাড়ি রাস্তায় চলাচলের উপযুক্ততা নির্ধারণ করে দেওয়া হয়েছে কিন্তু এসব আইন মানা হয় না। যে কারণে দুর্ঘটনার সংখ্যা দিন দিন বেড়েই চলেছে। প্রায় শতাব্দীপ্রাচীন মোটরযান আইনের প্রয়োগ দেখারও যেন কেউ নেই।

চালকের যোগ্যতা: মোটরযান আইন, ১৯৩৯-এ বলা হয়েছে, কোনো ব্যক্তিকে সর্বসাধারণের ব্যবহার্য স্থানে গাড়ি চালাতে হলে তাঁর বয়স ১৮ বছর হতে হবে। আর পেশাদার চালক হিসেবে গাড়ি চালাতে হলে তাঁর বয়স ২০ বছর হতে হবে। চালকের লাইসেন্স ছাড়া গাড়ি চালানো যাবে না এবং লাইসেন্সে নির্দিষ্ট অধিকার না দেওয়া হলে বেতনভোগী কর্মচারী হিসেবে কোনো মোটরযান চালানো যাবে না। লাইসেন্স নেই এমন ব্যক্তি অথবা মেয়াদোত্তীর্ণ লাইসেন্সধারী ব্যক্তিকে বাস চালাতে দেওয়া যাবে না। লাইসেন্স ছাড়া গাড়ি চালালে চার মাস পর্যন্ত কারাদণ্ড বা ৫০০ টাকা জরিমানা বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হতে হবে চালককে।


গাড়ির শ্রমিক: বাস গাড়িতে চালকের পাশাপাশি কয়েকজন শ্রমিক থাকে। যাত্রীদের কাছ থেকে ভাড়া আদায়কারীকে আমরা কন্ডাক্টর বলি। গাড়ির কন্ডাক্টর হতে হলে ১৮ বছর এবং কন্ডাক্টরের লাইসেন্স থাকতে হবে। পঙ্গু বা রোগাক্রান্ত কেউ কন্ডাক্টর হিসেবে গাড়িতে কাজ করতে পারবে না।

নিবন্ধন অবশ্যই: মোটরযান আইন অনুযায়ী মোটরযান নিবন্ধন করা অবশ্যই প্রয়োজন। নিবন্ধিত না হয়ে থাকলে এবং নিবন্ধন চিহ্ন যথাযথভাবে গাড়িতে লাগানো না থাকলে ওই মোটরযানে যাত্রী বা মাল পরিবহন বা অপর কোনো স্থানে চালানো যাবে না। এ ক্ষেত্রে নিবন্ধন ছাড়া গাড়ি চলাচল নিষিদ্ধ করতে হবে।

নির্ধারিত গতি: সর্বোচ্চ গতিসীমার চেয়ে অধিক গতিতে গাড়ি চালানো যাবে না। অধিক গতিতে গাড়ি চালালে প্রথমবার অপরাধের জন্য সর্বোচ্চ এক মাস কারাদণ্ড কিংবা সর্বাধিক ৩০০ টাকা অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ডে দণ্ডনীয় হবেন এবং তৎপরবর্তী অনুরূপ অপরাধের জন্য সর্বোচ্চ তিন মাস কারাদণ্ড কিংবা সর্বাধিক পাঁচ হাজার টাকা জরিমানা অথবা উভয় দণ্ডে দণ্ডনীয় হবেন এবং অনধিক এক মাসের জন্য লাইসেন্স স্থগিত হবে। রাস্তার বিপজ্জনক অবস্থায় যেমন-ঢালু জায়গায় গাড়ি না থামাতে ড্রাইভারদের ওপর দায়িত্ব আরোপ করা হয়েছে। গাড়ির চালক বা কন্ডাক্টর চলন্ত গাড়িতে কিংবা বাম্পার বা ছাদে কিংবা ভেতর ব্যতীত অন্য কোনো স্থানে কোনো ব্যক্তিকে আরোহণ করতে দিতে পারবেন না এবং অনুমোদিত সংখ্যার চেয়ে বেশি যাত্রী নিতে পারবেন না। উক্ত বিধান লঙ্ঘনের ফলে প্রথমবারের জন্য সর্বোচ্চ তিন মাস কারাদণ্ড বা সর্বোচ্চ দুই হাজার টাকা জরিমানা বা উভয় দণ্ডে দণ্ডনীয় এবং পরবর্তী সময়ে একই অপরাধের জন্য সর্বাধিক ছয় মাস কারাদণ্ড অথবা সর্বাধিক পাঁচ হাজার টাকা জরিমানা কিংবা উভয় দণ্ডে দণ্ডনীয় হবেন।


বাম দিকে গাড়ি চলবে: গাড়ির চালক যতখানি সম্ভব রাস্তার বামদিকে নির্ধারিত লেনে গাড়ি চালাবেন এবং বিপরীত দিক থেকে আসা সব যানবাহনকে ডান দিক দিয়ে যেতে দেবেন। চালক যদি কোনো মিছিল কিংবা একদল সৈন্য বা ওই রাস্তায় কার্যরত পুলিশের সম্মুখীন হন কিংবা রাস্তা মেরামতে নিয়োজিত শ্রমিকদের পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় ঘণ্টায় ১৫ মাইলের বেশি গতিতে গাড়ি চালাবেন না।
চালক এমনভাবে গাড়ি চালাবেন, যাতে যাত্রীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত হয়। দুটি গাড়ি অতিক্রম করার সময় কোনো কারণ ছাড়া একটি অপরটির বডি স্পর্শ করলে সে ক্ষেত্রে অবহেলা স্পষ্ট। স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়, হাসপাতাল এলাকা দিয়ে গাড়ি যাওয়ার সময় চালককে সব দিকে নজর রাখতে হবে এবং নির্দিষ্ট গতিসীমার চেয়ে বেশি গতিসীমায় গাড়ি চালানো যাবে না। যেসব মোটরযান সর্বসাধারণের ব্যবহার্য স্থানে চালানো যাবে না, সেগুলো হচ্ছে-
১. নিবন্ধনপত্রে মালামাল বা যাত্রী বোঝাইবিহীন অবস্থায় যে ওজন নির্ধারিত হয়েছে তার চেয়ে অধিক ওজনসম্পন্ন গাড়ি।
২. নিবন্ধনপত্র অনুযায়ী যে ওজন নির্ধারিত হয়েছে তার চেয়ে অধিক ওজনসম্পন্ন গাড়ি।
৩. নিবন্ধনপত্রে এক্সেলের যে সর্বোচ্চ ওজন নির্ধারিত হয়েছে তার চেয়ে অধিক এক্সেল ওজনসম্পন্ন গাড়ি।
যত্রতত্র গাড়ি থামানো: যেখানে-সেখানে গাড়ি থামানো যাবে না বা যাত্রী ওঠানামা করানো যাবে না। নিষিদ্ধ এলাকায় ছাড়া গাড়ি দাঁড় করালে জরিমানা এবং নির্দিষ্ট স্থান ছাড়া অন্য স্থান থেকে যাত্রী ওঠালে জরিমানা দিতে হবে। নির্ধারিত ভাড়ার চেয়ে অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করলে ৫০ টাকা এবং সময়সীমা প্রদর্শন না করে গাড়ি চালালে ৩০ টাকা জরিমানা দিতে হবে। চালককে বাধ্যতামূলক ট্রাফিক সংকেত মেনে চলতে হবে। ট্রাফিক পুলিশ চাইলে গাড়ির কাগজপত্র দেখাতে চালক বাধ্য থাকবেন। রাস্তায় পথচারী পারাপারের জন্য নির্ধারিত সীমানার ওপর দিয়ে পথচারী পারাপারের সময় চালককে যথোপযুক্ত লাইন বরাবর অবশ্যই গাড়ি থামাতে হবে। গাড়ির চালককে গাড়ি ডান কিংবা বাম দিকে ফেরাতে বা থামাতে হলে সংশ্লিষ্ট গাড়ির সঙ্গে সংযুক্ত নির্ধারিত যান্ত্রিক বা বৈদ্যুতিক ডিভাইসের সাহায্যে সংকেত দিতে হবে। ডিভাইসগুলো ঠিকমতো কাজ না করলে হাত দিয়ে সংকেত দিতে হবে।

দুর্ঘটনায় চালকের কর্তব্য: মোটরযান আইনে দুর্ঘটনায় পড়ার পর চালকের দায়িত্ব ও কর্তব্য নির্ধারণ করে দেওয়া হয়েছে। যেমন-
১. গাড়ি দুর্ঘটনায় পড়লে ও কেউ আহত হলে ওই ব্যক্তির চিকিৎসা সুনিশ্চিত করার জন্য চালক যুক্তিসংগত সব ধরনের ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন। প্রয়োজনবোধে তাঁকে নিকটবর্তী হাসপাতালে নেওয়ার ব্যবস্থা করবেন।
২. পুলিশ অফিসারের দাবি অনুযায়ী তাঁকে যেকোনো তথ্য প্রদান করবেন কিংবা পুলিশ অফিসার উপস্থিত না থাকলে দুর্ঘটনা ঘটার ২৪ ঘণ্টার মধ্যে নিকটবর্তী থানায় গিয়ে ঘটনা ব্যক্ত করবেন।

মদ্যপ অবস্থায় গাড়ি চালানো যাবে না: মদ পান করা অবস্থায় গাড়ি চালানো যাবে না। এ অবস্থায় গাড়ি চালালে প্রথমবার অপরাধের জন্য সর্বোচ্চ তিন মাস কারাদণ্ড কিংবা সর্বোচ্চ এক হাজার টাকা জরিমানা কিংবা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হবেন এবং দ্বিতীয় ও পরবর্তী সময়ে অনুরূপ অপরাধ সংঘটনের জন্য সর্বোচ্চ দুই বছর কারাদণ্ড কিংবা এক হাজার টাকা জরিমানা কিংবা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হবেন। চালকের লাইসেন্স স্থগিত হবে।

আরো কিছু বিধিনিষেধ ও সাজা : গাড়ির নিবন্ধন, ফিটনেস অথবা রুট পারমিট ছাড়া গাড়ি ব্যবহার করলে প্রথমবার অপরাধের জন্য তিন মাস পর্যন্ত কারাদণ্ড অথবা দুই হাজার টাকা জরিমানা কিংবা উভয় দণ্ডে দণ্ডনীয় হবেন মালিক বা চালক। পরবর্তী সময়ে অনুরূপ অপরাধ করলে সর্বাধিক ছয় মাস কারাদণ্ড অথবা সর্বাধিক পাঁচ হাজার টাকা জরিমানা কিংবা উভয় দণ্ড দেওয়া যাবে। যেখানে ওভারটেকিং নিষিদ্ধ সেখানে ওভারটেক করলে চালককে ১০০ টাকা জরিমানা দিতে হবে।
৫টি মন্তব্য ৫টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমার প্রফেশনাল জীবনের ত্যাক্ত কথন :(

লিখেছেন সোহানী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সকাল ৯:৫৪



আমার প্রফেশনাল জীবন বরাবরেই ভয়াবহ চ্যালেন্জর ছিল। প্রায় প্রতিটা চাকরীতে আমি রীতিমত যুদ্ধ করে গেছি। আমার সেই প্রফেশনাল জীবন নিয়ে বেশ কিছু লিখাও লিখেছিলাম। অনেকদিন পর আবারো এমন কিছু নিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমি হাসান মাহবুবের তাতিন নই।

লিখেছেন ৎৎৎঘূৎৎ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩



ছোটবেলা পদার্থবিজ্ঞান বইয়ের ভেতরে করে রাত জেগে তিন গোয়েন্দা পড়তাম। মামনি ভাবতেন ছেলেটা আড়াইটা পর্যন্ত পড়ছে ইদানীং। এতো দিনে পড়ায় মনযোগ এসেছে তাহলে। যেদিন আমি তার থেকে টাকা নিয়ে একটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুক্তিযোদ্ধাদের বিবিধ গ্রুপে বিভক্ত করার বেকুবী প্রয়াস ( মুমিন, কমিন, জমিন )

লিখেছেন সোনাগাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৫:৩০



যাঁরা মুক্তিযদ্ধ করেননি, মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে লেখা তাঁদের পক্ষে মোটামুটি অসম্ভব কাজ। ১৯৭১ সালের মার্চে, কৃষকের যেই ছেলেটি কলেজ, ইউনিভার্সিতে পড়ছিলো, কিংবা চাষ নিয়ে ব্যস্ত ছিলো, সেই ছেলেটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। সাংঘাতিক উস্কানি মুলক আচরন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৪



কি সাঙ্ঘাতিক উস্কানিমুলক আচরন আমাদের রাষ্ট্রের প্রধানমন্ত্রীর । নাহ আমি তার এই আচরনে ক্ষুব্ধ । ...বাকিটুকু পড়ুন

একটি ছবি ব্লগ ও ছবির মতো সুন্দর চট্টগ্রাম।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৮:৩৮


এটি উন্নত বিশ্বের কোন দেশ বা কোন বিদেশী মেয়ের ছবি নয় - ছবিতে চট্টগ্রামের কাপ্তাই সংলগ্ন রাঙামাটির পাহাড়ি প্রকৃতির একটি ছবি।

ব্লগার চাঁদগাজী আমাকে মাঝে মাঝে বলেন চট্টগ্রাম ও... ...বাকিটুকু পড়ুন

×