somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

নেপালে নিমিষেই মৃত্যুর এভারেস্ট

২৬ শে এপ্রিল, ২০১৫ রাত ১০:৩৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
ভূমিকম্পে ছিল দশ হাজার পারমানবিক বোমার শক্তি









শনিবারের বিধ্বংসী ভূমিকম্পে বিধস্ত হিমালয়কন্যা নেপাল। রিখটার স্কেলে ওই ভূকম্পনের তীব্রতা ছিল ৭ দশমিক ৮। আর এর ফলেই মৃত্যুর মিছিল যেন ছুঁয়েছে এভারেস্ট।

ভূকম্পনের কেন্দ্র লামজুং ও পোখরা থেকে দেশটির রাজধানী কাঠমান্ডু। মাত্র দেড় মিনিটের তাণ্ডব। আর তাতেই দেশজুড়ে ধ্বংসের করাল ছায়া। আক্ষরিক অর্থে নেপালে মাটির সাথে মিশে গেছে গ্রামের পর গ্রাম। মৃতের সংখ্যা ইতিমধ্যেই ২২০০ ছাড়িয়েছে। প্রাণহানীর পাশাপাশি খোঁজ মিলছে না বহু মানুষের। সরকারী হিসেব অনুযায়ী নিঁখোজের সংখ্যা তিন হাজার। উদ্ধারকারীদের আশঙ্কা, এদের অধিকাংশই ধ্বংসস্তূপের নিচে জীবনের শেষ ঘুমে শুয়ে আছে।





গুরুতর জখম হয়েছেন চার হাজারেরও বেশি মানুষ। কাঠমান্ডুতে নিশ্চিহ্ন হয়ে গিয়েছে একাধিক ইউনেসকোর ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইট, বাড়ি, হোটেল।
কাল দুপুর পৌনে ১২টার দিকে ওই ভূমিকম্পের পর আরও প্রায় ২৪ দফা ভূকম্পন হয়েছে নেপালে। আজ রোববার দুপুরেও রিখটার স্কেলে ৬ দশমিক ৭ মাত্রার আরেকটি ভূমিকম্প হয়। রয়টার্সের খবর অনুযায়ী নেপালে এখনও ভূকম্পন পরবর্তী আফটার শক চলছে। এর ফলে বার বার কেঁপে উঠছে পুরো নেপাল।





টাইম অনলাইন ও ইণ্ডিয়ান এক্সপ্রেস ভূমিকম্প বিশেষজ্ঞের বরাতে জানিয়েছে, জাপানের হিরোশিমায় দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় যে পরমাণু বোমাটি বিস্ফোরিত হয়েছিল, তাতে ছিল প্রায় দশ হাজার টিএনটি (শক্তির একক) শক্তি। আর শনিবার রিখটার স্কেলে ৭.৮ মাত্রার নেপালের ভূমিকম্পে শক্তি বিচ্ছুরণের পরিমাণ দশ কোটি টনেরও বেশি টিএনটির শক্তি। ২০০৪ সালে সুনামি ও ৯.১ মাত্রার ভূমিকম্পটি প্রায় একই পরিমাণ শক্তির ছিল।



কোথায় এবং কেন এই প্রবল ভূমিকম্প?



নেপালে গতকাল শনিবারের প্রবল ভূমিকম্পের কেন্দ্র ছিল কাঠমান্ডুর ৭০ কিলোমিটার উত্তর-পশ্চিমে নির্জন পাহাড়ি এলাকা লামজুং । ওই এলাকাতেই বছরে পঁয়তাল্লিশ মিলিমিটার হারে, কাছাকাছি এগিয়ে আসছে ভূগর্ভস্থ ভারতীয় ও ইউরেশিয়া প্লেট। আর এই দুটি প্লেটের সংঘর্ষেই মাটির ১১ কিলোমিটার গভীরে বিধ্বংসী এই ভূমিকম্পের উৎপত্তি।



ভূমিকম্প বিশেষজ্ঞদের বরাতে টাইমস অব ইণ্ডিয়া জানায়, হিমালয় পর্বতমালা তৈরি হওয়ার সময় থেকেই ভারতীয় প্লেট এবং ইউরেশিয় প্লেটের মধ্যে কে কার নীচে যাবে এটা নিয়ে তুমুল প্রতিযোগিতা চলছে ।


বিশেষজ্ঞরা আরো জানান, নেপাল, চীন ও ভারতের সীমান্তে ইউরেশিয় প্লেটের নীচে ভারতীয় প্লেটটি পিছলে ঢুকে যায়। তখন এই দুই প্লেটের সংঘাতে কেঁপে ওঠে নেপালসহ বাংলাদেশ, ভারত ও চীন।

যুক্তরাষ্ট্রের ভূতাত্ত্বিক জরিপ সংস্থার (ইউএসজিএস) একটি প্রতিবেদন থেকে জানা গেছে, বিশেষজ্ঞরা আগে থেকেই জানতেন বিশ্বের অন্যতম ভূমিকম্পপ্রবণ ওই ওই এলাকায় ইউরেশিয় প্লেটের নীচে আস্তে আস্তে ঢুকে যাচ্ছে ভারতীয় প্লেট। এর ফলে করণীয় ঠিক করতে গত সপ্তাহেই বিশ্বের তাবৎ ভূমিকম্প ও উদ্ধার বিশেষজ্ঞরা কাঠমাণ্ডুতে বৈঠকও করেছিলেন।


শতকের ভয়াবহতম ভূমিকম্প



বিশেষজ্ঞরা জানাচ্ছেন ভূপৃষ্ঠের গভীরে ভারতীয় ও ইউরেশীয় এই দুই দুই প্লেটের সংঘাতে গত এক শতাব্দীতে ওই এলাকায় রিখটার স্কেলে ছয় বা তার বেশি তীব্রতার ভূমিকম্প হয়েছে মোট চারবার। আর এর সবগুলোই হয়েছে গতকালের ভূমিকম্পের উৎপত্তিস্থলের আড়াইশো কিলোমিটার এলাকার মধ্যে। তবে ওই ভূমিকম্পগুলোর পরিধি কখনোই এত বিস্তৃত ছিল না।




নেপালে সর্বশেষ ১৯৮৮ সালের আগস্ট মাসে বিপুল প্রাণঘাতী ভূমিকম্প হয়। রিখটার স্কেলে ওই ভূমিকম্পের তীব্রতা ছিল ছয় দশমিক নয়। এতে প্রাণহানি হয়েছিল পনেরোশ জনের। আর ওই দুটি প্লেটের সংযোগ এলাকায় সবচেয়ে বেশি তীব্রতার ভূমিকম্প হয়েছিল ১৯৩৪ সালে। রিখটার স্কেলে আট তীব্রতার ওই ভূমিকম্পে ভীষণভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল কাঠমান্ডু। ভূমিকম্পের ফলে নেপাল-বিহার সীমান্তে মৃত্যু হয়েছিল প্রায় এগারো হাজার মানুষের।

ধেয়ে আসতে পারে আরও ভূকম্পন

ইউএসজিএসের একটি গবেষণা প্রতিবেদন অনুযায়ী হিমালয় পর্বতমালা এবং সমুদ্রে বিভিন্ন প্লেটের মধ্যে প্রতিনিয়ত রেষারেষি চলছে। এর ফলে প্লেটের ফাটলের নিকতবর্তী যে কোনও স্থানে যে কোনও সময় ভূমিকম্প হতে পারে।


ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস গবেষকদের বরাতে জানিয়েছে, এই দুটি প্লেটের অন্তর্ভূক্ত এলাকায় আগামী দুই মাসে এর চেয়েও শক্তিশালী ভূমিকম্পের আশঙ্কা রয়েছে।

তবে টাইমস অব ইণ্ডিয়ার প্রতিবেদন অনুযায়ী, ভূমিকম্পের আশু পূর্বাভাস ব্যাতিক্রম কিছু ক্ষেত্রেই কেবল দেওয়া সম্ভব। পৃথিবীর অভ্যন্তরের এই প্লেটগুলোতে দীর্ঘস্থায়ী বিভিন্ন বিচ্যুতির খবর দেওয়া যায়। তবে কবে, কোথায়, কত মাত্রার ভূমিকম্প হবে, তা কেউ বলতে পারে না। কারণ এই চ্যুতিগুলো যেমন দীর্ঘস্থায়ী প্রক্রিয়ার মাধ্যমে ঘটে, আবার তেমনি ঘটতে পারে হঠাৎ করেই।





১টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমার প্রফেশনাল জীবনের ত্যাক্ত কথন :(

লিখেছেন সোহানী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সকাল ৯:৫৪



আমার প্রফেশনাল জীবন বরাবরেই ভয়াবহ চ্যালেন্জর ছিল। প্রায় প্রতিটা চাকরীতে আমি রীতিমত যুদ্ধ করে গেছি। আমার সেই প্রফেশনাল জীবন নিয়ে বেশ কিছু লিখাও লিখেছিলাম। অনেকদিন পর আবারো এমন কিছু নিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমি হাসান মাহবুবের তাতিন নই।

লিখেছেন ৎৎৎঘূৎৎ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩



ছোটবেলা পদার্থবিজ্ঞান বইয়ের ভেতরে করে রাত জেগে তিন গোয়েন্দা পড়তাম। মামনি ভাবতেন ছেলেটা আড়াইটা পর্যন্ত পড়ছে ইদানীং। এতো দিনে পড়ায় মনযোগ এসেছে তাহলে। যেদিন আমি তার থেকে টাকা নিয়ে একটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুক্তিযোদ্ধাদের বিবিধ গ্রুপে বিভক্ত করার বেকুবী প্রয়াস ( মুমিন, কমিন, জমিন )

লিখেছেন সোনাগাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৫:৩০



যাঁরা মুক্তিযদ্ধ করেননি, মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে লেখা তাঁদের পক্ষে মোটামুটি অসম্ভব কাজ। ১৯৭১ সালের মার্চে, কৃষকের যেই ছেলেটি কলেজ, ইউনিভার্সিতে পড়ছিলো, কিংবা চাষ নিয়ে ব্যস্ত ছিলো, সেই ছেলেটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। সাংঘাতিক উস্কানি মুলক আচরন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৪



কি সাঙ্ঘাতিক উস্কানিমুলক আচরন আমাদের রাষ্ট্রের প্রধানমন্ত্রীর । নাহ আমি তার এই আচরনে ক্ষুব্ধ । ...বাকিটুকু পড়ুন

একটি ছবি ব্লগ ও ছবির মতো সুন্দর চট্টগ্রাম।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৮:৩৮


এটি উন্নত বিশ্বের কোন দেশ বা কোন বিদেশী মেয়ের ছবি নয় - ছবিতে চট্টগ্রামের কাপ্তাই সংলগ্ন রাঙামাটির পাহাড়ি প্রকৃতির একটি ছবি।

ব্লগার চাঁদগাজী আমাকে মাঝে মাঝে বলেন চট্টগ্রাম ও... ...বাকিটুকু পড়ুন

×