২
আমাদের সো কলড ম্যারিড লাইফ যে বিয়ের মাস খানেকের ভেতরেই একটা শেপ নিয়ে নেয়, তা তো আগেই বলেছি। আসলে সিদ্ধান্ত যখন নিয়েই ফেলেছি যে সোহেল না ফেরা পর্যন্ত নীলার সাথে থাকছি, তখন ভেবে দেখলাম সময়টা হাসিমুখে কাটানোই বেটার। আর তাই ধীরে ধীরে ঠিক স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্ক না হলেও, পারস্পরিক বোঝাপড়ার একটা সম্পর্ক তৈরি হয়ে যায়।। অ্যান্ড ইট ওয়াজ নট ব্যাড। অ্যাটলিস্ট দুজন যতক্ষণ একসঙ্গে থাকি, সময়টা বিরক্তকর কাটে না।
বিয়ের কিছুদিনের ভেতরেই বাড়ীর কাছের একটা কিন্ডারগার্ডেনে টিচারের চাকরী যোগাড় করে ফেলে। ক্লাস টু’র ক্লাস টিচার। সো সকাল সকালই বেরোতে হয়। আমার বেরোনো একটু দেরীতে। সাড়ে ন’টা নাগাদ বেরোই। তাই ছুটির দিন ছাড়া একসাথ ব্রেকফাস্ট ইউজুয়ালি করা হয় না। যদিও বাসায় ফুল টাইম বুয়া আছে, তারপরও সকালে উঠে ব্রেফফাস্ট ও নিজেই রেডি করে। এরপরে আমি ঘুমাচ্ছি দেখলে, আমাকে না জাগিয়ে নীলা একা একা ব্রেকফাস্ট সারে। আমার নাস্তা টেবিলে তৈরি থাকে। ‘এই ওঠো, আর কত ঘুমাবে’ টাইপ কোন সিলি দাম্পত্য টাইপ ব্যাপার নাই। দুজনেই নিজের মত চলি। স্কুলের কাজ দু'টার ভেতরেই শেষ হয়ে যায়। আর স্কুল যেহেতু বাড়ীর কাছেই, তাই দুপুরে বাসায় ফিরে আসে। আর এরপর পুরোটা সময়ের জন্য ও টিপিক্যাল গৃহিনী।
আমার রুটিনের ঠিক নেই। দুপুরে কখনও ফিরি, কখনও ফিরি না। না ফিরলে অবশ্য জানিয়ে দিই। রাতেও ফেরার ঠিক নেই। রুগীর ওপর নির্ভর করে। তবে রাতের খাবারের জন্য ইউজুয়ালি ও ওয়েট করে। অ্যাট লিস্ট খুব বেশী দেরী না হলে। কাট অফ টাইম রাত এগারোটা। এর মধ্যে না ফিরলে ও ডিনার সেরে ফেলে।
তাই এমন ছাড়া ছাড়া টাইপ রিলেশানশীপের ভেতরে প্রেম কিভাবে আসল, আমি নিজেও বুঝে উঠতে পারছি না। শুধু তাই না, হাও কুড আই সে সামথিং লাইক দিস? কথাটা শুনে বেশ খানিকক্ষণ অবাক হয়ে আমার দিকে তাকিয়ে ছিল নীলা। এরপরে ওর অন্য হাতটা আমার হাতের ওপর রাখল। সেই হাত রাখায় কিছু একটা ছিল। সেটা কি, বলতে পারব না, তবে দ্রুতই নিজেকে সামলে নিলাম। বড় একটা নিশ্বাস টেনে একটা ভ্যাবাচ্যাকা টাইপ হাসি হেসে বললাম
— ডোন্ট ওরি। আই উইল হ্যান্ডল মাইসেলফ।
নীলা ধীরে ধীরে উঠে দাঁড়াল। চিন্তিত মনে ধীর পায়ে দরজা পর্যন্ত গেল। এবার আর না তাকিয়ে দরজা খুলে বেরিয়ে গেল।
এদিকে আরেকটা ঝামেলা হয়েছে। হাসপাতাল থেকে দিন পাঁচেক ছুটি নিয়েছিলাম। ছুটিটা আজকে থেকেই শুরু। সো চাইলে আরও কিছুক্ষণ ঘুমাতে পারি। বাট সকালে যা ঘটল, এরপরে আর ঘুম আসবে না। পত্রিকা পড়াটাও শিকায় উঠে বসে আছে। টিভি দেখতেও ভাল লাগছে না। ঘুরে ফিরে কেবল সকালের ঘটনাটা মনে পড়ছে আর নিজের ওপর বিরক্ত লাগছে। হাউ কুড আই ডু ইট?
বিগড়ানো মেজাজ নিয়েই ডাইনিং টেবিলে বসলাম। আমাদের সো কলড দাম্পত্য জীবনের প্রাত্যহিক রুটিন মোতাবেক ডাইনিং টেবিলে খাবার তৈরি ছিল। খেয়ে ফেললাম। সিদ্ধান্ত নিতে হবে।ছুটিটার কি করব। ছুটিটা কেন নিয়েছিলাম? সেটা নিয়েও এখন কনফিউজড ফিল করছি। কেন?
বেশ, খুলেই বলি। সেদিন এক টুরস ট্রাভেলস কোম্পানীর ফোন এসেছিল। অ্যাজ ইউজুয়াল, 'স্যার প্যাসিফিক ট্যুরস অ্যান্ড ট্র্যাভেলস থেকে আমি পুস্প বলছি। আমাদের একটা প্যাকেজ আছে, আপনার কি একটু সময় হবে?
এসব প্যাকেজের ডিটেলস সাধারনতঃ আমি শুনি না। সেদিন কি যে হল, রাজী হয়ে গেলাম। কক্সবাজারে চার রাত তিন দিনের ট্যুর প্যাকেজ। কেন কাজটা করলাম? নীলা নিয়ে ঘুরতে যাওয়ার শখ হয়েছিল? না নীলাকে সারপ্রাইজ দিতে চেয়েছিলাম? বিলিভ মি, আই রিয়েলি ডোন্ট নো।
তবে এটাও ঠিক, যে কারনেই করে থাকি, ব্যাপারটা নিয়ে এখন আমি বেশ লজ্জিতই ফিল করছি। এবং সম্ভবতঃ কিছুটা বিরক্তও। আচ্ছা, এই ঘুরতে যাওয়ার প্ল্যানে আমার এই রাজী হওয়াটা কি অ্যা সাইন অফ লাভ? উত্তরে ‘নো' বলতে পারতাম, কিন্তু বলছি না। কারণ, উত্তরটা রিয়েলি আই ডোন্ট নো।
ব্যাপারটা নীলার ভাল লাগবে কি না, ভাবিনি। কিংবা হয়তো ভেবেছি। অবচেতন মন হয়তো ভেবেছিল, নীলার ভাল লাগবে। নীলা যদিও ঠিক সেই অর্থে স্ত্রী না, তারপরও একসাথে থাকতে থাকতে হয়তো… আই অ্যাম নট সিওর। মে বি, ওর সাথে একসাথে ঘুরতে যেতে চেয়েছিলাম।
এনিওয়ে গতকাল আমাদের টিকিট দুটো নিয়ে সেই ট্যুর কোম্পানী থেকে একজন লোক এসেছিল। জানাল আগামীকাল, দ্যাট ইজ আজকে, রাত আটটা থেকে ট্যুর শুরু। আমার দ্বায়িত্ব শুধু সময়মত বাস স্টপে পৌঁছে যাওয়া। বাকী রেসপনসিবিলিটি ওদের। বাসে ওদের কোম্পানীর একজন থাকবে। বাকীটা সে বুঝিয়ে দেবে।
এই মুহুর্তে আমাকে দুটো সিদ্ধান্ত নিতে হবে। প্রথমটা হচ্ছে, কক্সবাজার যাব কি না।
গতকালের ঘটনার পরে, আই মিন সোহেলের ফিরে আসা সংক্রান্ত ফোনের পরে, একসাথে বাইরে কোথাও ঘুরতে যাওয়া তো আউট অফ কোয়েশ্চেন। সো, যদি যাই, একাই যাব, আর নয়তো ট্যুর ক্যান্সেল করব। আর যদি সেটা ক্যান্সেলই করি, দেন ছুটিটা নেয়ার কোন মানে হয় না। সো সেকেন্ড যে ডিসিশান নিতে হবে, ছুটি ক্যানসেল করব কি না।
আজকের সকালটা হাতে রেখেছিলাম। লাগেজ প্যাক আর কিছু কেনাকাটা থাকলে সেটা সেরে ফেলার জন্য। প্ল্যান ছিল গতকাল রাতে নীলাকে কথাটা জানাব। ব্যাপারটা নীলাকে আগে কেন বলিনি? হয়তো নীলাকে সারপ্রাইজ দিতে চেয়েছিলাম, কিংবা হয়তো আনইজি ফিল করছিলাম, কি ভাববে।
যাই হোক গতকাল সোহেলের ফোন সব কিছু ওলট পালট করে দিল। অনেস্টলি স্পীকিং, তথ্যটা শুনে আপসেট হয়েছিলাম। কিন্তু কেন? ও যে চলে যাবে, তা তো আর আমার অজানা ছিল না। আর আজকে সকালে যা করলাম, দ্যাট ওয়াজ রিয়েলি বিয়ান্ড মাই ইমাজিনেশান। হাউ কুড আই সে সামথিং লাইক দিস? বিলিভ মি, আমি এমন একটা কথা কেন বললাম সেটা এখনও বুঝে উঠতে পারছি না।
আচ্ছা, কথাটা কি সত্যি? আর সত্যি হয়ে থাকলে প্রেমে পড়লাম কখন?
লিভ ইট। এখন এসব নিয়ে ভাবতে ভাল লাগছে না। মাথা ঠান্ডা করার জন্য হলেও হাসপাতাললে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিলাম। ছুটির ব্যাপারটা নীলাকে জানানো না হলেও অফিস জানে। সো ফোন করে জানিয়ে দিলাম, আজকের ছুটিটা ক্যান্সেল। আমি এক্ষুনি অফিসে আসছি।
প্রথম কয়েকটা রুগী দেখার সময় কিছুটা আনমাইন্ডফুল ছিলাম। এরপরে কাজে ঢুকে গেলাম। দুপুরে বাসায় গেলাম না। হাসপাতালের ক্যান্টিন থেকেই খেয়ে নিলাম। এখানে আমাদের একটা রেস্টরুম আছে। ওখানে ঢুকলাম। ঘুমানোর চেস্টা করলাম। এক্ষেত্রে আমার একটা অব্যার্থ ওষুঢ আছে। টিভি। টিভি দেখতে বসলেই আমার ঘুম পায়। আজকেও ব্যাপারটার ব্যতিক্রম হল না।
ঘুমটা ভাঙ্গল মোবাইলের আওয়াজে। ট্যুর কোম্পানী থেকে ফোন এসেছে। রিসিভ করলাম। টিপিক্যাল ফাইনাল কল। আটটায় জার্নি শুরু। জানতে চাইল আমাকে পিক আপ করতে গাড়ী পাঠাবে কি না। বারণ করলাম। জানালাম আমি পৌঁছে যাব। ফোনটা রাখবার পরে আবিস্কার করলাম, যেতে ইচ্ছে করছে। সিদ্ধান্ত নিলাম যাব। একাই।
সমস্যা হচ্ছে, বাসায় গেলেই এখন নীলাকে ফেস করতে হবে। আর সেটা এখন একেবারেই ইচ্ছে করছে না। সো? বিকেলের সব অ্যাপয়েন্টমেন্ট ক্যানসেল করতে বলে বেরিয়ে পড়লাম। একটা স্যুটকেস আর কিছু পোশাক কিনলাম। এমন সময় ব্যাপারটা মনে পড়ল। টিকিট বাসায় রেখে এসেছি। শিট। হাতে যদিও এখনও কিছু সময় আছে, তারপরও বাসায় যেতে মন চাইছে না। ট্যুর কোম্পানীকে ফোন করলাম। টিকিট হারিয়ে ফেলেছি টাইপ একটা গল্প ফাঁদলাম। রিসেপশানিস্ট জানাল, সমস্যা নেই। ট্যুর কো-অর্ডিনেটারেরে কাছে একটা ডুপ্লিকেট কপি আছে। আমাকে শুধু সময়মত পৌঁছে যেতে হবে।
কেমন রিলিভড ফিল করলাম। কেমন যেন একটা রোমাঞ্চ টাইপ ফিলিং আসছে। সেই স্টুডেন্ট লাইফে গিয়েছিলাম। এরপরে আর যাওয়া হয়নি। ভালই লাগবে, আই থিঙ্ক। বাট দ্যা ইম্পরট্যান্ট থিং ইজ, সকালের ব্যাপারটা নিয়ে আর এম্ব্যারাস ফিল করছি না।
নীলাকে ফোন করতে হবে। আগামী পাঁচদিন যে থাকছি না, কথাটা জানাতে হবে। কি এক্সকিউজ দিব? সত্যিটা বলব? কি দরকার?
ট্যাক্সি নিলাম। ফোনটা করতে গিয়েও করতে পারছি না। আসলে এক্সকিউজ ঠিক করে উঠতে পারছি না। ফ্রেন্ডদের সাথে বাইরে যাচ্ছি বলা যায়। নীলাকে যতটা চিনেছি, আমি ডিটেলস বললে শুনবে, না বললে জানতে চাইবে না। কেবল 'ওকে' বলে মেনে নেবে।
এসব সাত পাঁচ ভাবতে ভাবতে একসময় দেখলাম বাস স্টপেজে পৌঁছে গেছি। সিদ্ধান্ত নিলাম রাত দশটার দিকে নীলাকে ফোন দিব।
আমার সবেধন নীলমনি লাগেজটা নিয়ে ধীরে ধীরে বাস কোম্পানীর ওয়েটিং রুমে প্রবেশ করলাম। অ্যান্ড দেয়ার ওয়েটেড দ্যা সারপ্রাইজ। নীলা।
চলবে
সর্বশেষ এডিট : ২৫ শে এপ্রিল, ২০১৮ রাত ১০:২১