somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

অতিথি (১৪ তম পর্ব)

১৭ ই মে, ২০১৮ সকাল ১১:১০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

১৪

কখন ঘুমিয়ে পড়েছিলাম সময়টা ঠিক বলতে পারব না। আই গেস ভোরের দিকে। যে টায়ার্ডনেস ফিল করছিলাম, নিউ ইয়র্ক ট্যুরের ব্যাপারটায় সব গায়েব হয়ে যায়। ভেবেছিলাম বাসায় পৌছেই বিছানায় উল্টে যাব, বাট তেমনটা হল না। ঘুমাতে গিয়ে টের পেলাম, ‘নিউ ইয়র্ক ট্যুরের’ খবরে ঘুমের বারোটা বেজে গেছে। প্রায় দুবছর পরে জীবনে আবার ফিরে আসল নীলা। ঠিক নীলা আসেনি, আসলে ফিরে এসেছে নীলার স্মৃতি। আসবার কারণ হচ্ছে নিউ ইয়র্ক। শেষ মেইল অনুযায়ী নীলা ওখানেই ছিল। এখন? নট সিওর।

নীলা সম্পর্কে যে তেমন কিছু জানি না, তার কারণ নীলার যেকোন ব্যাপার থেকে নিজেকে আমি সেদিনই গুটিয়ে নিয়েছিলাম। সেদিন মানে ঐদিন, যেদিন ও জানিয়েছিল ডিভি লটারীতে ওর নাম উঠেছে। এতো দেরীতে কেন? আই নো ইট সাউন্ডস ইডিওটিক, বাট আই থিঙ্ক ইটস ট্রু। সেদিনের আগে পর্যন্ত কেন যেন আমি ভেবেছিলাম, আই হ্যাভ চান্স। পেছনে তেমন কোন যুক্তি ছিল না, তারপরও কেন যেন মনে হত, শি উইল কাম ব্যাক। শেষ মুহুর্তে আর পারবে না আমাকে ছেড়ে যেত।
বিলিভ মি, যেদিন ও ডিভোর্সের কাগজটা এগিয়ে দিয়েছিল, আমি কষ্ট পেয়েছিলাম বাট স্টিল অপটিমিস্টিক ছিলাম। মনে হচ্ছিল দেখা যাবে কোর্টে জমা দেয়ার সময় ও কাগজটা ছিড়ে ফেলবে কিংবা বিয়ের রেজিস্ট্রারে সই করতে গিয়ে আমার কথা মনে পড়ে যাবে। চেয়ার ছেড়ে উঠে বলবে, ‘আমার পক্ষে সম্ভব না সোহেল।’
নীলার সেই ডিভি লটারির কথা শুনে… আই ক্যান্ট এক্সপ্লেইন হোয়ায়… বাট মনের কোনে যে আশার আলো এতো বিরুপ পরিস্থিতি মোকাবেলা করেও জেগেছিল, তা এক দমকায় নিভে গেল। ওর সেই বলার মধ্যে কিছু একটা ছিল আই গেস। আই আন্ডারস্টুড ইন্সট্যান্টলি। দ্যাট পার্ট অফ দ্যা স্টোরি ইজ ওভার।

এনিওয়ে, অ্যাজ অ্যা সান ইন ল, আই ডিড মাই জব। দিন পনের পরে নীলার বাবাকে ডিসচার্জ করা হল। না, ঐ হাসপাতাল থেকে না। ওখান থেকে পরেরদিনই নিয়ে আসি। নীলা আর ওর মার ইচ্ছার প্রতি সম্মান দেখিয়ে নিয়ে আসি আমি যে হাসপাতালে আছি, সেখানে।এখানে আসবার সুবিধাও ছিল। এটা কার্ডিয়াক হাসপাতাল। ঐ হাসপাতাল থেকে যেমনটা অ্যাডভাইস করা হয়েছিল, সে অনুযায়ী পরের দিন অ্যাঞ্জিওগ্রাম করা হয়। সেখানে দেখা গেল অবস্থা বিশেষ সুবিধার না। সবকিছু বিবেচনা করে বাইপাস অপারেশান করবার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।
নাহ, সিদ্ধান্তটা আমি নিইনি। আর বিয়ে আটকাবার জন্যও নেয়া হয়নি। ডিসিসানটা কার্ডিয়াক সার্জনই নেন। সুবিধা অসুবিধা সব কনসিডার করে, রীতিমত বোর্ড করে, সিদ্ধান্তটা নেয়া হয়। ইচ্ছে করেই আমি বোর্ডের মেম্বার থাকিনি।
যাই হোক, তেমন কোন সমস্যা হয়নি। অপারেশানটা ঠিকঠাকমতই হয় আর এরপরে উনি রিকভার করেন ভালভাবেই। এরপরে আসে বাড়ী ফেরার পালা। আমি অফার করেছিলাম, আগামী কিছুদিন আমার বাসায় থাকতে। উনি রাজী হলেন না। তবে, মাকে সাহায্য করবার জন্য নীলাও সাথে গেল। কটা দিন ওখানেই থাকে।
ও হ্যা, আরেকটা ব্যাপার। এসব অপারেশানের ধাক্কায় যে সিচুয়েশানটা আমি মনে প্রানে প্রত্যাশা করছিলাম, তাআ ঘটে। নীলার সাথে আমার ডিভোর্সটা হয়নি। সোহেলের সাথে বিয়েটাও স্থগিত হয়ে যায়। নীলার বাবা বাসায় ফিরে যাওয়ার দিন তিনেক পরে সোহেলও ফেরত যায়। অ্যান্ড দ্যাট টু ওয়াজ অ্যাজ সিঙ্গেল।
নীলা অবশ্যে মেয়ের দ্বায়িত্ব বেশ ভালভাবেই পালন করে। এই কটা দিন প্রায় পুরোটা সময়ই ও হাসপাতালে ছিল। আর আমি? আই থিঙ্ক আলাদা করে বলার দরকার নেই, তাই না? সেই ডিভি লটারীর ধাক্কায় আমার অবস্থা তখন লন্ডভন্ড। বাট ঐ ধাক্কাটা একটা কাজ করেছিল। ইয়েস, ইট মেড মি ডক্টর এগেইন। নীলার বাবার ব্যাপারে সব সিদ্ধান্তই আমি নিয়েছি চিকিৎসার এথিকস মেনে।
নীলা যখন ওর বাবার বাসা থেকে ফিরে এল, নিজেকে আমি ততোদিনে অনেকটাই সামলে নিয়েছি। সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছি, উইল নট ট্রাই ফর নীলা এনি মোর। টিপিক্যাল অভিমানী প্রেমিক আর কি। এখন আমি অনেকটাই স্বাভাবিক। স্বাভাবিক মিনস, আমাদের দাম্পত্য জীবন পার্ট ওয়ান ফিরে এসেছে আমাদের ভেতর। ঠিক পার্ট ওয়ান না, বলা যায় মডিফাইড পার্ট ওয়ান। অ্যা মোর স্ট্রিক্ট ওয়ান।
নীলার সাথে কথাবার্তা এবার অনেকটাই কমে যায়। নট অনলি দ্যাট পারত পক্ষে এক ঘরে থাকতামই না। ও বেডরুমে ঢুকলে কোন এক ছুতায় আমি ড্রয়িং রুমে গিয়ে বসে থাকতাম। কিছুদিনের ভেতরে দেখা গেল ব্যাপারটা আর ওয়ান সাইডেড না। নীলাও খুব প্রয়োজন না পরলে আমার সামনে আসত না। বুঝে গেলাম সম্পর্ক গুটিয়ে নেয়ার ব্যাপারটা বোথ সাইডেড। নীলাও বোধহয় চাইছে না সম্পর্কে যে সহজতা কক্সবাজার ট্যুরের সময় এসেছিল তা অক্ষুন্ন থাকুক। আমার ক্ষেত্রে ব্যাপারটা হয়তও হতাশা। বাট ওর ক্ষেত্রে কারণটা কি? ঠিক সিওর না। গেস করা যায় বাট…লিভ ইট। আসলে কারণটা আমার নিজেরও জানতে ইচ্ছে করছে না। ইন অ্যা নাট শেল, আওয়ার রিলেশানশিপ কেম টু অ্যা হল্ট।

অ্যান্ড দেন? দেন দ্যাট ডে কেম। নীলা একদিন জানাল সব কাগজপত্র রেডি। পুরো প্রসেসটা ও একাই হ্যান্ডেল করে। আমাকে তেমন কিছু জানায়নি। আমিও অবশ্য জানতে চাইনি। নাহ, ফর্মালিটির কারনেও কখনও জানতে চাইনি, ‘তোমার আমেরিকা যাওয়া কতদুর?’ ও বললে হয়তও শুনতাম, বাট… বলছে না যখন, আমি ধরে নিই, ও বলতে চায় না।
‘কাগজপত্র সব রেডি’ বলেই ও থেমে থাকে। ওর ফ্লাইট কবে কিংবা ঠিক কবে ও যেতে চায়, সে সম্পর্কে কিছু বলেনি। বাট, দ্যাট ইজ নীলা। পুরো কথা বলে না। ও প্রবাবলি চাইছে আমি বাকীটা জিজ্ঞেস করি। ‘কবে যাবে কিংবা কোন এয়ারলাইনসে’ টাইপ কিছু একটা জানতে চাওয়া যায়।
আবার হতে পারে আমার গেস করার জন্য বাকীটা বলল না। তবে একটা ব্যাপার বুঝে গেলাম, তথ্যটা দেয়ার মূল উদ্দেশ্য, যাওয়ার জন্য একটা ফরমাল অনুমুতি চাইছে।
আমাদের সম্পর্কের এখন যে দশা, তাতে ব্যাপারটা জরুরী না, তারপরও… আই থিঙ্ক শি ওয়ান্টেড টু রিমেইন গ্রামাটিক্যালি কারেক্ট। ওর বাবার চিকিৎসায় যেভাবে আমি যুক্ত থেকেছিলাম, সেকারনে কিছুটা কৃতজ্ঞতাও হয়তো কাজ করছিল ওর ভেতরে। তাই চলে যাওয়ার ব্যাপারটা জানিয়ে, অনুমুতি নিয়েই আমেরিকা যেতে চাইছিল।
সম্মতি সুচক একটা নড দিলাম। বললাম
— টিকিট হয়ে গেছে?
— হ্যা, এই শুক্রবার।
— ওকে। ড্রাইভারকে বলে রেখো, ড্রপ করে দেবে।
কথাটা ইচ্ছে করেই বললাম। ইনডাইরেক্টলি দুটো ব্যাপার বুঝিয়ে দেয়ার জন্যই কথাটা বললাম। প্রথমে বুঝিয়ে দেয়া হল, 'আমি যাচ্ছি না’ আর দ্বিতীয় যে কথাটা জানাতে চেয়েছিলাম, 'ওর চলে যাওয়ায় আমার কোন আপত্তি নাই'। বারণ আমি এমনিতেও করতাম না। সম্পর্ক আগের মত থাকলে হয়তো একবার রিকোয়েস্ট করতাম, ‘না গেলে হয় না?’
এরপরের কটা দিন পুরো বাসাটা থমথমে হয়ে থাকল। একবার ভেবেছিলাম বলেই ফেলি, 'এই কটা দিন না হয় তোমার বাবার ওখানেই থাক’। বলিনি। ভদ্রতায় বাধছিল। হাজার হলেও ও এ বাসার অতিথি। অসম্মান হয় এমন কোন কথা বলবার মত শিক্ষা আমি পাইনি।
শুক্রবার বিকেলের দিকে স্যুটকেস কিনে আনল। এর আগে কেন কেনেনি জানি না। হয়তও এক্সপেক্ট করছিল আমার কোন একটা স্যুটকেস নিয়ে যেতে বলব। ও চাইলে বিয়ের স্যুটকেসটাও নিতে পারত। হয়তো আমার স্মৃতি জাগাতে পারে এমন কিছুই ও সাথে নিতে চাইছে না। আমার দেয়া বা আমার পয়সায় কেনা কিছু নেবে না বলেই আমার মনে হয়েছিল। তাই নিজে থেকে তেমন কিছু অফার করিনি।
দেখতে দেখতে নটা বেজে গেল। ওর ফ্লাইট রাত বারোটায়। ড্রাইভারকে বলা ছিল। ও সময় মতই এসে গিয়েছিল। সেদিন আমার ছুটি। তাই বাসায়ই ছিলাম। চাইলে ওকে ড্রপ করতে যেতে পারতাম। অভিমান কাজ করছিল, বাট ও রিকোয়েস্ট করলে, হয়তো যেতাম। না, উদারতা দেখাতে না, ওর শেষ রিকোয়েস্টকে অনার করার জন্যই যেতাম। বাট শি ডিডন’ট।
সবকিছু গোছগাছ শেষ করে আমার সামনে এসে দাড়াল। আমি তখন ড্রয়িং রুমে টিভি দেখছিলাম। বেশ সুন্দর দেখাচ্ছিল ওকে। চোখের কোনে কিছুটা কস্ট হয়তো ছিল। হয়তো এতোদিনের একসাথে থাকা, একটা সফটনেস তো আসবেই।
— আমি তাহলে আসি।
স্মিত একটা হাসি দিলাম। বললাম
— বেস্ট অফ লাক।
মাথা ঝুকিয়ে আমার উইশটা গ্রহন করল। ট্রলি স্যুটকেসটা টেনে নিয়ে দরজা পর্যন্ত গেল। দরজা খুলে বেরিয়ে গেল। পেছন ফিরে তাকাবে এক্সপেক্ট করেছিলাম। করল না।

অ্যান্ড দেয়ার এন্ডস আওয়ার স্টোরি...অ্যটলিস্ট আই থট সো।

চলবে
সর্বশেষ এডিট : ১৭ ই মে, ২০১৮ সকাল ১১:১১
৫টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমি হাসান মাহবুবের তাতিন নই।

লিখেছেন ৎৎৎঘূৎৎ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩



ছোটবেলা পদার্থবিজ্ঞান বইয়ের ভেতরে করে রাত জেগে তিন গোয়েন্দা পড়তাম। মামনি ভাবতেন ছেলেটা আড়াইটা পর্যন্ত পড়ছে ইদানীং। এতো দিনে পড়ায় মনযোগ এসেছে তাহলে। যেদিন আমি তার থেকে টাকা নিয়ে একটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতীয় পণ্য বয়কটের কেন এই ডাক। একটি সমীক্ষা-অভিমত।।

লিখেছেন সাইয়িদ রফিকুল হক, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৩:১৫



ভারতীয় পণ্য বয়কটের কেন এই ডাক। একটি সমীক্ষা-অভিমত।।
সাইয়িদ রফিকুল হক

বিএনপি ২০২৪ খ্রিস্টাব্দে দেশে অনুষ্ঠিত “দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে”-এ অংশগ্রহণ করেনি। তারা এই নির্বাচনের বহু আগে থেকেই নির্বাচনে অংশগ্রহণ... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুক্তিযোদ্ধাদের বিবিধ গ্রুপে বিভক্ত করার বেকুবী প্রয়াস ( মুমিন, কমিন, জমিন )

লিখেছেন সোনাগাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৫:৩০



যাঁরা মুক্তিযদ্ধ করেননি, মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে লেখা তাঁদের পক্ষে মোটামুটি অসম্ভব কাজ। ১৯৭১ সালের মার্চে, কৃষকের যেই ছেলেটি কলেজ, ইউনিভার্সিতে পড়ছিলো, কিংবা চাষ নিয়ে ব্যস্ত ছিলো, সেই ছেলেটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। সাংঘাতিক উস্কানি মুলক আচরন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৪



কি সাঙ্ঘাতিক উস্কানিমুলক আচরন আমাদের রাষ্ট্রের প্রধানমন্ত্রীর । নাহ আমি তার এই আচরনে ক্ষুব্ধ । ...বাকিটুকু পড়ুন

একটি ছবি ব্লগ ও ছবির মতো সুন্দর চট্টগ্রাম।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৮:৩৮


এটি উন্নত বিশ্বের কোন দেশ বা কোন বিদেশী মেয়ের ছবি নয় - ছবিতে চট্টগ্রামের কাপ্তাই সংলগ্ন রাঙামাটির পাহাড়ি প্রকৃতির একটি ছবি।

ব্লগার চাঁদগাজী আমাকে মাঝে মাঝে বলেন চট্টগ্রাম ও... ...বাকিটুকু পড়ুন

×