somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

অতিথি (১৬ তম পর্ব)

২১ শে মে, ২০১৮ রাত ১:৫৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

১৬

মনটা বিষিয়ে আছে। এখন মনে হচ্ছে নীলার সাথে দেখাটা না হলেই ভাল হত। ইন মাই ওয়াইল্ডেস্ট ইমাজিনেশানেও আমি ভাবিনি ও এজন্য দেখা করতে আসবে। হাও ক্যান শি?
এনিওয়ে, নীলা খুব বেশিক্ষণ বসেনি। ওর মেইলটা পেয়ে বুক ধক করে উঠেছিল। হার্টবিট নরমালের শেষ প্রান্ত ছুঁই ছুঁই করছিল। ক্যাজুয়াল ড্রেস পড়ে ছিলাম। দ্রুত বাইরের পোষাক পরে তৈরি হয়ে নিলাম। এক ঝলক আয়নাতেও তাকিয়েছিলাম। অ্যান্ড দ্যা ফিলিং? অসাম। লিফটটা যদিও দারুণ দ্রুতগতির, তারপরও মনে হচ্ছিল, আজকে অনেক বেশি দেরী করছে। একসময় লিফট এল। উঠে ‘জি' টিপলাম। লিফটে আরেকজন ছিলেন। বুক এতো জোরে ধকধক করছিল যে মনে হচ্ছে ঐ লোকও শুনতে পাচ্ছে আমার হার্টবিট।
লবিতে পৌঁছে আবিষ্কার করলাম, আই অ্যাম স্টিল ইন লাভ উইথ দিস লেডি। তেমন প্রসাধন করেনি। খুব সাধারণ একটা শাড়ি পড়ে এসেছে। চুলটা খোলা। শান্তভাবে বসে আছে। গায়ে একটা শাল। দূর থেকে বুঝতে পারছি না, বাট মনে হচ্ছে আমার দেয়া শালটা। মহেশখালীতে যেটা ওকে গিফট করেছিলাম।
ধীরে ধীরে কাছে এগিয়ে গেলাম। ইয়েস, আমার দেয়া শালটাই ওটা। ওয়াও। শি ইজ লুকিং গর্জিয়াস। মাঝে মাঝে কনফিউজ ফিল করি, ওকে সাজলে সুন্দর দেখায়, না, না সাজলে। পরে এনিয়ে ভাবা যাবে। নিজের চেহারায় স্বাভাবিক একটা ভাব ফিরিয়ে আনবার চেষ্টা করতে করতে ধীরে ধীরে নীলার দিকে এগিয়ে গেলাম।— — কেমন আছ?
— এই, চলে যাচ্ছে।
— কনফারেন্স কেমন হল?
উত্তর দিতে যাচ্ছিলাম, এমন সময় ব্যাপারটা মনে আসল। হাও ডিড শি নো অ্যাবাউট মাই ভিজিট? নীলা মেডিকেল ব্যাকগ্রাউন্ডের না। আমি কার্ডিওলজিস্ট, এটা ওর জানা। গুগল করলে এটাও জানতে পারবে যে ফিলাডেলফিয়ায় অ্যামেরিকান সোসাইটি অফ কার্ডিওলজির অনুষ্ঠান হচ্ছে। বাট সেখানে আমি আসছি, এই তথ্য জানতে পারা ভেরি আনলাইকলি। অ্যান্ড মোস্ট ইম্পরট্যান্টলি, আমার নিউ ইয়র্কে আসবার খবর আর এই হোটেলে ওঠার ব্যাপার, এতোটা জানা ইম্পসিবল। দেয়ার মাস্ট বি সামওয়ান হু ইজ গিভিং হার এভ্রি ডিটেইলস।
কে দিচ্ছে, এই মুহুর্তে এই তথ্য আমার জন্য জরুরী না, জরুরী হচ্ছে ও কেন আমার সম্পর্কে সব তথ্য সংগ্রহ করছে। ইজ শি স্টিল ইন্টেরেস্টেড অ্যাবাউট মি? তাহলে ছেড়ে আসল কেন? রিয়েলি কনফিউজিং।
— এনিথিং রং?
নীলার প্রশ্ন। উত্তর দিতে দেরী হওয়ায় জানতে চাইল। স্মিত একটা হাসি দেয়ার চেস্টা করলাম। বললাম
— ঠিক রং না। বলতে পার ক্লিয়ার না।
— কি? তোমার সম্পর্কে জানতে পারলাম কিভাবে?
এই হচ্ছে নীলা। কিছুটা আমার চেহারা দেখে বুঝে ফেলে আর কিছুটা কমন সেন্স অ্যাপ্লাই করে। ওকে দেখে যে আমি খুশি হয়েছি, আই থিঙ্ক শি নোজ দ্যাট। তবে মনের কোনে যে জিজ্ঞাসাও উঁকিঝুকি দিচ্ছে, এব্যাপারটাও সম্ভবতঃ আমার চেহারায় স্পস্ট। এরপরে যখন কথার মাঝে হঠাৎ ভ্রু কুচকে থেমে গেলাম, তখন… এনিওয়ে ওর চারিত্রিক বৈশিষ্ট নিয়ে পরে ভাবা যাবে। ওর কথার উত্তর দেয়া দরকার। বললাম
— ইয়েস। কেউ কি আমার সম্পর্কে… আই মিন আর ইউ ইন কন্টাক্ট উইথ সামওয়ান ক্লোজ টু মি?
নীলা কিছুক্ষণ আমার দিকে তাকাল। এতোক্ষণ মুখ হাসিহাসি ছিল, সেটা থেমে গেল। কিছুটা গম্ভীর হয়ে উত্তর দিল
— না। তোমার সম্পর্কে জানতে তোমার কোন প্রিয়জনের হেল্প নিইনি।
কথাটায় কোথায় যেন একটা খোঁচা ছিল। প্রিয়জন বলতে কি মিন করতে চাইল? জেসমিন সম্পর্কে কি কিছু জানে? নট ইম্পসিবল। আমার সম্পর্কে যখন এতোকিছু জানে, তখন এটা জানাও নট আনলাইকলি। আই গেস, প্রিয়জন বলতে জেসমিনকেই বোঝাচ্ছে। দ্যাট মিনস, শি নোজ অ্যাবাউট হার।
— এনিওয়ে, ইউ মে নিড দিস।
একটা খাম আমার দিকে এগিয়ে দিল। নীলার দিকে তাকালাম। ওর চোখ স্থির। মুখটা গম্ভীর। আমার সিক্সথ সেন্স বলছে, সামথিং ইজ রং। বেশ অবাক হয়ে একবার নীলা একবার খামের দিকে তাকালাম। ‘এটা কি?’ প্রশ্নটা মুখ দিয়ে প্রায় বেরিয়ে আসছিল। নিজেকে সামলালাম। খামটা খুলে ভেতরে রাখা কাগজটা বের করলাম। এ কাগজ আমার চেনা। মনটা বিষিয়ে গেল। এজন্য তাহলে এসেছে? দরকার তো ছিল না। কারো হাতে কিংবা পোস্টে পাঠিয়ে দিলেই তো হত। আমি সিগনেচার করে দিতাম।
নিজেকে সামলাতে বেশ খানিকটা বেগ পেতে হল। নিজের অজান্তেই একটা দীর্ঘশ্বাস বেরিয়ে এল। বললাম
— আই সি।
এরপরে এদিক ওদিক তাকালাম। একটা শক্ত কিছু খুজছি যার ওপর রেখে সিগনেচারটা করতে পারি। লবিতে বেশ কিছু সোফা রাখা। একটু দুরে রিসেপশান ডেস্ক। ওখানে রেখে সিগনেচারটা করা যায়। উঠতে যাব এমন সময় নীলাই বলল
— আমি এখন উঠব।
নিজের অজান্তেই ভ্রু কুচকে গেল। উঠব মানে কি? তাগাদা দিচ্ছে? সিগনেচারটা এখনই করে দিতে হবে? কাগজটা দেখে যতটা কষ্ট পেয়েছিলাম, এই তাগাদা তার চেয়ে বেশি কষ্ট দিল। আমি তো বিলিনি, যে করব না। করতেই তো যাচ্ছি। এতোটুকু ধৈর্য নেই? নাকি বিশ্বাস নেই?
মন খারাপটা এবার আর লুকাবার চেষ্টা করলাম না। আসলে আমার তখন বিধ্বস্ত অবস্থা। সারাদিন যার জন্য অপেক্ষা করে ছিলাম, যার আসার খবরে হার্টবিট চরম সীমায় পৌঁছেছিল, তার কাছ থেকে এই আচরণ? আর এই কারণে ও এসেছে আমার কাছে?
— এক মিনিট, আমি সিগনেচার করে দিচ্ছি।
— ওটা আমার দরকার নেই, ওটা তোমার জন্য।
সবকিছু কেমন এলোমেলো লাগছে। নীলা কি বলছে? ডিভোর্সের কাগজটা আমার কেন লাগবে? নাহ, আর কিছু ভাবব না। যা মনে আসবে জিজ্ঞেস করে নেব। বললাম
— ব্যাপারটা একটু বুঝিয়ে বলা যায়?
নীলা স্মিত একটা হাসি দিল। আমার অবাক চেহারা দেখে হয়তো একটু মায়া লেগেছে। মুখের কঠিন ভাবটা কিছুটা কমে আসল। বলল
— এটাতে আমার সিগনেচার করা আছে। তোমারটা বাকী। ওটা করে একসময় কোর্টে জমা দিয়ে দিও।
এবার নিজেকে সামলাতে পারলাম না। বেশ শ্লেষের সাথেই বললাম
— দরকার তো তোমার, আমার দরকার কেন বলছো?
— আবার বিয়ে করতে চাইলে পাত্রী পক্ষে জানতে চাইবে, আগের বউকে ডিভোর্স করেছ কি না। তখন এটা কাজে লাগবে।
— বলতে চাইছ, এটা তোমার দরকার নেই?
নীলা কেমন অদ্ভুতভাবে আমার দিকে তাকাল। চোখের কোনে একটা কষ্ট আছে মনে হল। এরপরে মিষ্টি করে হেসে বলল
— তোমাকে যতটা চিনি, আমার বিয়ে ভাঙ্গবার চেস্টা তুমি কখনই করবে না। সো, ফর্মাল ডিভোর্স আমার জন্য খুব জরুরী না।
— একই কথা তো আমিও বলতে পারি।
— বলতে পার। বাট বাংলাদেশ আর এদেশের অবস্থা আলাদা।
— কি আলাদা?
— ওখানে পাত্রীপক্ষ চেক করে দেখবে, তোমার আগের বউ ফিরে আসবার সম্ভাবনা আছে কি না।
— তাই? আর এখানে সেটা দেখবে না?
— এদেশে একসাথে থাকার জন্য বিয়েটা জরুরী না।
আই সি। তারমানে ওরা লিভ ইন করছে? বুকটা ধক করে উঠল। কেন? আমি কি আশায় ছিলাম? হাও ফুল অ্যাম আই। হঠাৎ করে চুপ করে গেলাম। বুঝলাম এখন কথা বলতে চাইলেও মুখ দিয়ে কথা বেরোবে না। হয়তো গলা ভেঙ্গে যাবে। নিজেকে সামলে নেয়ার আপ্রাণ চেষ্টা করছিলাম এমন সময় পিঠে একটা হাতের স্পর্শ টের পেলাম। বুঝলাম নীলা হাত রেখেছে। এটা সান্তনার পরশ।
স্পর্শটা কাজে দিল। এবার নিজেকে সামলে নিলাম। সিদ্ধান্ত নিলাম, এব্যাপারে আর আলোচনা না। নীলার দিকে ঘুরে তাকালাম। নীলা উঠে দাঁড়িয়েছে। এবার যাবে। আমার দিকে তাকিয়ে স্মিত হাসি দিল
— আসি তাহলে?
ঠোঁটে হাসি টানবার ব্যার্থ চেষ্টা করে বললাম
— ওকে।
নীলা এগিয়ে গেল। আমিও ওর সাথে সাথে হোটেলের দরজা পর্যন্ত এগিয়ে গেলাম। ও দরজাআ দিয়ে বেরোবে এমন সময় প্রশ্নটা আবার মনে পড়ল। জানতে চাইলাম
— বাট, তুমি জানলে কি করে?
নীলার চোখে দুষ্টুমির হাসি ফিরে আসল। সামনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছিল। না থেমেই কেবল ঘাড় ঘুরিয়ে কথাটা বলল। অ্যান্ড ইন্সট্যান্টলি আই নিউ হাও শি নিউ এভ্রিথিং। ঠোঁটে দুস্টুমির হাসি ঝুলিয়ে নীলা শুধু বলল
— ইউ স্যুড চেঞ্জ দ্যা পাসওয়ার্ড অফ ইউর ইমেইল ইমিডিয়েটলি। অ্যান্ড ডোন্ট মেক ইট জেসমিন অলসো। ইট উইল বি অ্যানাদার ইজি গেস।

চলবে
সর্বশেষ এডিট : ২১ শে মে, ২০১৮ রাত ১:৫৫
৩টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

খুলনায় বসবাসরত কোন ব্লগার আছেন?

লিখেছেন ইফতেখার ভূইয়া, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:৩২

খুলনা প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় তথা কুয়েট-এ অধ্যয়নরত কিংবা ঐ এলাকায় বসবাসরত কোন ব্লগার কি সামুতে আছেন? একটি দরিদ্র পরিবারকে সহযোগীতার জন্য মূলত কিছু তথ্য প্রয়োজন।

পরিবারটির কর্তা ব্যক্তি পেশায় একজন ভ্যান চালক... ...বাকিটুকু পড়ুন

একমাত্র আল্লাহর ইবাদত হবে আল্লাহ, রাসূল (সা.) ও আমিরের ইতায়াতে ওলামা তরিকায়

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৬:১০



সূরাঃ ১ ফাতিহা, ৪ নং আয়াতের অনুবাদ-
৪। আমরা আপনার ইবাদত করি এবং আপনার কাছে সাহায্য চাই।

সূরাঃ ৪ নিসার ৫৯ নং আয়াতের অনুবাদ-
৫৯। হে মুমিনগণ! যদি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। মুক্তিযোদ্ধা

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:২১



মুক্তিযুদ্ধের সঠিক তালিকা প্রণয়ন ও ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা প্রসঙ্গে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক বলেছেন, ‘দেশের প্রতিটি উপজেলা পর্যায়ে মুক্তিযোদ্ধা যাচাই বাছাই কমিটি রয়েছে। তারা স্থানীয়ভাবে যাচাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতীয় রাজাকাররা বাংলাদেশর উৎসব গুলোকে সনাতানাইজেশনের চেষ্টা করছে কেন?

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:৪৯



সম্প্রতি প্রতিবছর ঈদ, ১লা বৈশাখ, স্বাধীনতা দিবস, বিজয় দিবস, শহীদ দিবস এলে জঙ্গি রাজাকাররা হাউকাউ করে কেন? শিরোনামে মোহাম্মদ গোফরানের একটি লেখা চোখে পড়েছে, যে পোস্টে তিনি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঘুষের ধর্ম নাই

লিখেছেন প্রামানিক, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:৫৫


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

মুসলমানে শুকর খায় না
হিন্দু খায় না গাই
সবাই মিলেই সুদ, ঘুষ খায়
সেথায় বিভেদ নাই।

হিন্দু বলে জয় শ্র্রীরাম
মুসলিম আল্লাহ রসুল
হারাম খেয়েই ধর্ম করে
অন্যের ধরে ভুল।

পানি বললে জাত থাকে না
ঘুষ... ...বাকিটুকু পড়ুন

×