somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সরস্বতী পূজা ২০১৪ (ছবি ব্লগ) ধর্মীয় আবহ ছাড়িয়ে সৃষ্টিশীলতা

০৮ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৪ রাত ১:১২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



হিন্দু ধর্মমতে সরস্বতী বিদ্যার দেবী। প্রতি বছর মাঘ মাসের শুক্লাপঞ্চমী তিথিতে জ্ঞানপিপাসু বিদ্যার্থীরা সরস্বতী দেবীর অর্চনা করে থাকে দেবীর পুণ্য দৃষ্টি লাভের প্রত্যাশায়।

আমাদের দেশে প্রায় সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানেই হিন্দু ধর্মাবলম্বী শিক্ষার্থী ও শিক্ষক মিলে এই পুজার আয়োজন করে থাকে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ও এই আয়োজনের ব্যতিক্রম নয় বরং এই প্রতিষ্ঠানটি ব্যতিক্রম এর আয়োজনের ধরণে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল হিন্দু ছাত্রদের আবাসস্থল হলো ঐতিহাসিক জগন্নাথ হল। আর এই হলে রয়েছে বিশাল এক খেলার মাঠ। এই খেলার মাঠেই আয়োজন করা হয় দেবীর বাণী অর্চনার।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রায় সকল বিভাগের শিক্ষার্থীরা আলাদা আলাদা ভাবে পুজার মণ্ডব তৈরি করে থাকে। এবার ৫৪ টি বিভাগ পুজার আয়োজন করেছিলো। একসাথে একই মাঠে এতগুলো পূজা আয়োজন করার মত বড় ঘটনা আর কোথাও ঘটে থাকে কিনা আমার জানা নেই।

ঢাকা শহরের কোন অনুষ্ঠানই এখন আর তার নিজস্ব গণ্ডির মাঝে সীমাবদ্ধ থাকেনা বরং তা হয়ে ওঠে সার্বজনীন। সব শ্রেণী পেশার এবং ধর্মের মানুষ সব ধরণের অনুষ্ঠানই উপভোগ করতে চায় শহরের কর্মব্যস্ত সময়ের ফাঁকে খানিকটা আনন্দ লাভের আশায়। আর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসের কোন অনুষ্ঠান হলেতো কোন কথাই নেই।

জগন্নাথ হলের এই সরস্বতী পুজার একটা বিশেষ দিক হলো বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগ তাদের পুজার যে মণ্ডবটা তৈরি করে তা তাদের অধ্যয়নরত বিভাগকে উপস্থাপন করে থাকে। আর এর মাধ্যমে ধর্মীয় আবহের পাশাপাশি সৃষ্টিশীলতার বিষয়টাও উপস্থাপিত হয়। এই জিনিসটা নিয়েই এই ছবি ব্লগটা তৈরি করেছি। আশা করি যারা আগে কখনও এমনটা দেখেননি তাদের ভালো লাগবে।

(১)চারুকলা অনুষদের শিক্ষার্থীরা প্রতিবারের মত এবারও জগন্নাথ হলের পুকুরে সবচেয়ে বড় প্রতিমাটি তৈরি করেছে। তাদের কাজে প্রতিবারই নতুনত্ব ও বৈচিত্র্য থাকে। এবার তারা প্রতিমা তৈরি করতে প্রধানত ব্যবহার করেছে ককশিট। চারুকলার এই প্রতিমা প্রতিবারের মত এবারও ছিল দর্শনার্থীদের আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দু।



(২) উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগ তৈরি করেছে সূর্যমুখী ফুল।



(৩) ফলিত পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থীরা বানিয়েছে রোবট বেষ্টিত দেবীর স্টেজ।



(৪) ইতিহাস বিভাগের শিক্ষার্থীরা তাদের স্টেজে তৈরি করেছে মিশরীয় ইতিহাসের দেবতা স্ফিংসের প্রতিকৃতি।



(৫) মৎস্যবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থীরা বানিয়েছে আস্ত এক সামুদ্রিক প্রাণী অক্টোপাস।



(৬) ভূতত্ত্ব বিভাগের শিক্ষার্থীরা বানিয়েছে মাটির অভ্যন্তরের দুটি প্লেটের অবস্থান প্রদর্শনকারী স্টেজ।



(৭) আন্তর্জাতিক ব্যবসা বিভাগের শিক্ষার্থীরা পৃথিবীর আদলে তাদের স্টেজ বানিয়েছে যা দিয়ে তারা ব্যবসার আন্তর্জাতিক বিস্তৃতিকে ফুটিয়ে তুলতে চেয়েছে।



(৮) আই আই টি বিভাগের শিক্ষার্থীরা তৈরি করেছে স্মার্ট ঘড়ি।



(৯) নৃবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থীরা মাটি মানুষ ও সংস্কৃতিকে ফুটিয়ে তুলতে চেয়েছে তাদের অসাধারণ চোখজুড়ানো স্টেজের মাধ্যমে।



(১০) অণুজীববিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থীরা বানিয়েছে ব্যাকটেরিয়ার বংশবৃদ্ধি করার বিশেষ পাত্রের আকৃতির স্টেজ।



(১১) থিয়েটার অ্যান্ড পারফরম্যান্স স্টাডিজ বিভাগের শিক্ষার্থীরা একটি থিয়েটারের মঞ্চ ফুটিয়ে তুলেছে তাদের স্টেজের মাধ্যমে।



(১২) পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থীরা বানিয়েছে আকাশ পর্যবেক্ষণ করার যন্ত্র টেলিস্কোপ।



(১৩) ফার্মেসী অনুষদের শিক্ষার্থীরা তৈরি করেছে পর্বতের উপরে আরোহী দেবী সংবলিত স্টেজ। পর্বতের গাছপালাকে তারা ঔষধ আহরণের একটা উৎস হিসেবে দেখিয়েছে।



(১৪) লেদার ইঞ্জিনিয়ার অ্যান্ড টেকনোলজি ইন্সিটিউটের শিক্ষার্থীরা বাঘের চামড়ার আদলে তাদের স্টেজ বানিয়েছে।



(১৫) গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষার্থীরা সাম্প্রতিক আলোচিত কিছু সংবাদকে তাদের স্টেজের মাধ্যমে ফুটিয়ে তুলেছে।



(১৬) আই ই আর বিভাগের শিক্ষার্থীরা তাদের স্টেজে ফুটিয়ে তুলেছে সাম্প্রতিক সময়ে নির্বাচনের কারণে বিদ্যালয়গুলোতে যে ভাঙচুর হয় সেই ঘটনাটি।



(১৭) ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগের শিক্ষার্থীরা তাদের স্টেজে সাম্প্রতিক সময়ে আমাদের দেশে যে সাম্প্রদায়িক হামলাগুলো হয়েছে এবং এখনও হচ্ছে তা তুলে ধরেছে। হিন্দু সম্প্রদায়ের উপাসনালয় ও প্রতিমা ভাংচুরের বিষয়টা এখানে উঠে এসেছে।



এছাড়াও আরও অনেক স্টেজ তৈরি করা হয়েছিল যেগুলো তাদের বিষয়ভিত্তিক না হলেও দেখতে মনমুগ্ধকর ছিল।

রাষ্ট্রবিজ্ঞান



পালি অ্যান্ড বুদ্ধিস্ট স্টাডিজ



ম্যানেজমেন্ট



মার্কেটিং



আই বি এ



ফিন্যান্স



লোকপ্রশাসন



সমাজবিজ্ঞান





হিসাববিজ্ঞান



ম্যানেজমেন্ট ইনফরমেশন সিস্টেম



গণিত



সবশেষে কম্পিউটার বিজ্ঞান বিভাগের স্টেজটা দেখে নেয়া যাক। কম্পিউটার বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থীরাও সাম্প্রদায়িক হামলার বিষয়টা তুলে ধরেছে তাদের স্টেজের মাধ্যমে।



তবে এখানে কম্পিউটার বিজ্ঞান বিভাগের কথা আলাদা করে না বললেই নয়। তাদের স্টেজটা খুবই সাদামাটা এবং সাধারণ করা হয়েছে এবং এতে দেখানো হয়েছে আমাদের দেশের সর্বশেষ সাম্প্রদায়িক হামলার ফলে বিধ্বস্ত একটি বাড়ির চিত্র। তবে এখানে স্টেজের চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় পাশের ব্যানারটা। ব্যানারে লিখা আছে যে কম্পিউটার বিজ্ঞান বিভাগ তাদের পূজা উপলক্ষে উত্তোলিত অর্থের অর্ধেক দিয়ে সাহায্য করেছে সাম্প্রতিক সময়ে সাম্প্রদায়িক হামলার ফলে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোকে। গত বছর অণুজীববিজ্ঞান বিভাগও তাদের পূজা শেষে বেঁচে যাওয়া অর্থ দান করেছিলো রানা প্লাজার দুর্ঘটনার শিকারদের সহযোগিতায়।

এই জিনিসটা থেকে আমাদের কিছু শিক্ষা নেয়ার আছে। আমাদের দেশে মানবিক বিপর্যয়ের ঘটনাগুলো ইদানিং খুব বেশিই হচ্ছে। আর প্রাকৃতিক এবং রাজনৈতিক ঘটনার পাশাপাশি সাম্প্রদায়িক বিষয়টাও এখন আবার মাথা চাড়া দিয়ে উঠেছে। আমরা যেন ক্রমশই মধ্যযুগের দিকে এগিয়ে যাচ্ছি। আর সাধারণ মানুষের দারিদ্র্যের বিষয়টাতো নতুন করে বলার কিছু নেই। এত কিছুর মধ্যেও কিন্তু আমাদের দেশে বহু অর্থ ব্যয় করে অনেক বড় বড় অনুষ্ঠান আয়োজন করার মত ঘটনা ঘটছে। আমরা কিন্তু একটু চেষ্টা করলেই এইসব অনুষ্ঠান আয়োজনের অর্থ থেকে খানিকটা বাঁচিয়ে সাহায্য করতে পারি সেসব মানুষকে যারা হয়তো শিকার হয়েছে সাম্প্রদায়িক হামলার, কিংবা হরতালের সময় পেট্রোল বোমার অথবা রানা প্লাজার মতো দুর্ঘটনার। দেশে অর্থবিত্তশালী মানুষের অভাব নেই। তারা চাইলেই হয়ত সাহায্য করতে পারে বিনা চিকিৎসায় ধুঁকতে থাকা কোন মানুষকে অথবা অর্থকষ্টে পড়ালেখা বন্ধ হয়ে যাওয়া কোন শিশুকে। দরকার শুধু একটুখানি চিন্তার পরিবর্তন, মনের মাঝে একটু সহানুভূতির জাগরণ।

সর্বশেষ এডিট : ১২ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৪ রাত ১০:১৯
১৫টি মন্তব্য ১০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানে মুক্তিযোদ্ধাদের মুমিনী চেহারা ও পোশাক দেখে শান্তি পেলাম

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৭ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৯:৫৮



স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানে স্টেজে উঠেছেন বত্রিশ মুক্তিযোদ্ধা তাঁদের চব্বিশ জনের দাঁড়ি, টুপি ও পাজামা-পাঞ্জাবী ছিলো। এমন দৃশ্য দেখে আত্মায় খুব শান্তি পেলাম। মনে হলো আমাদের মুক্তিযোদ্ধা আমাদের মুমিনদের... ...বাকিটুকু পড়ুন

দু'টো মানচিত্র এঁকে, দু'টো দেশের মাঝে বিঁধে আছে অনুভূতিগুলোর ব্যবচ্ছেদ

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ১২:৩৪


মিস ইউনিভার্স একটি আন্তর্জাতিক সুন্দরী প্রতিযোগিতার নাম। এই প্রতিযোগিতায় বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সুন্দরীরা অংশগ্রহণ করলেও কখনোই সৌদি কোন নারী অংশ গ্রহন করেন নি। তবে এবার রেকর্ড ভঙ্গ করলেন সৌদি... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের দুই টাকার জ্ঞানী বনাম তিনশো মিলিয়নের জ্ঞানী!

লিখেছেন সাহাদাত উদরাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ২:৫৯

বিশ্বের নামীদামী অমুসলিমদের মুসলিম হয়ে যাওয়াটা আমার কাছে তেমন কোন বিষয় মনে হত না বা বলা চলে এদের নিয়ে আমার কোন আগ্রহ ছিল না। কিন্তু আজ অষ্ট্রেলিয়ার বিখ্যাত ডিজাইনার মিঃ... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমি হাসান মাহবুবের তাতিন নই।

লিখেছেন ৎৎৎঘূৎৎ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩



ছোটবেলা পদার্থবিজ্ঞান বইয়ের ভেতরে করে রাত জেগে তিন গোয়েন্দা পড়তাম। মামনি ভাবতেন ছেলেটা আড়াইটা পর্যন্ত পড়ছে ইদানীং। এতো দিনে পড়ায় মনযোগ এসেছে তাহলে। যেদিন আমি তার থেকে টাকা নিয়ে একটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুক্তিযোদ্ধাদের বিবিধ গ্রুপে বিভক্ত করার বেকুবী প্রয়াস ( মুমিন, কমিন, জমিন )

লিখেছেন সোনাগাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৫:৩০



যাঁরা মুক্তিযদ্ধ করেননি, মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে লেখা তাঁদের পক্ষে মোটামুটি অসম্ভব কাজ। ১৯৭১ সালের মার্চে, কৃষকের যেই ছেলেটি কলেজ, ইউনিভার্সিতে পড়ছিলো, কিংবা চাষ নিয়ে ব্যস্ত ছিলো, সেই ছেলেটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×