শৈশবের একটা বড় অংশ আমি কাটিয়েছি আমার নানার ছত্রছায়ায়
আমার নানাজানের অর্থবিত্তর প্রাচুর্যতা তেমন ছিলো না, কিন্তু তিনি অনেক দিলদরিয়ার মানুষ ছিলেন। আমার মা ছিলো তার প্রথম সন্তান, একমাত্র কন্যা। আমার জন্মের পর আমার বাবা যখন চরম অর্থকষ্টে পড়েন আমি তখন আমার নানার বাড়িতে ছিলাম। আমার প্রতি ভালোবাসা দেখাতে আমার নানা কখনো কাপর্ণ্য করেননি।
আমি ছিলাম আমার নানার প্রথম নাতি।
আগেরদিনে আমার নানার বাড়িতে মহা ধুমধাম অবস্থা ছিলো।
বিশাল পরিমান মানুষদের খাবারের যোগান দিতে বড় বড় পাতিলে সারাদিনই প্রচুর রান্না হতো। প্রতিদিন শত শত কাপ চা জ্বাল দেয়া হত মেহমানদের জন্য। এক শীতের সন্ধ্যায় গরম চায়ের পাতিলে আমার পা পড়ে পুড়ে গেল। আমার পায়ে তখন মোজা-সু ছিলো। পুড়ে যাওয়া অংশে পানি ছোয়ানো একটা বাড়ন ছিলো। আমার পা সম্পূর্ণ সিদ্ধ হয়ে যায়।
আমার নানা বাড়ি ছিলেন না। বাড়ি ফিরে তিনি শুনতে পেরে হুলুস্থুল কান্ড বাধিয়ে ফেললেন।
তিনি হুকুম দিলেন আবার চা জ্বাল দেয়া হোক, গরম জ্বাল দেয়া চা তিনি তার স্ত্রী-কন্যার মাথার উপর ঢালবেন। তবেই তিনি ক্ষান্ত হবেন। আমার নানা তার স্ত্রী-কন্যার সাথে কেমন আচারন করেছেন আমি জানি না। অতঃপর আর কোন দিন তারা আমার প্রতি সামান্যতম অবহেলা করার অবকাশ পাননি।
আমার শৈশবে আমি নানার যে ভালোবাসা পেয়েছি তা আমি ভুলবো না।
নানার প্রতি আমার দায়িত্বর কোনটাই পালন করতে পারিনি। কারন পরম করুনাময় আমাকে সেই সুযোগটি দেননি। তার আগেই তিনি আমার নানাকে দুনিয়া থেকে তুলে নিয়েছেন। মৃত্যুর দুইদিন আগে জীবিত থাকতে নানার আত্মা আমার সাথে এসে কথা বলেছিলো। কিন্তু আমার মৃত নানার আত্মা কবর থেকে এসে আমার সাথে এসে কথা বলবে এমন অদ্ভুত ধারনার মানুষ আমি নই। আমি স্রষ্টার কাছে বিনীত প্রার্থনা করি -
হে পরম করুনাময়
যে মানুষটি আমাকে পরম মমতা দিয়ে বড় করেছে। আমাকে ভালোবেসেছিলো, তুমি সেই মানুষটিকে তোমার ভালোবাসার হাতে স্পর্শ করো। তাকে তোমার ভালোবাসার ছায়ায় আশ্রয় দান করো।
সর্বশেষ এডিট : ১২ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৫ রাত ৮:১১