আমার বাবা - পেশায় ছিলেন একজন হেড ক্লার্ক অথবা আরো সহজ ভাবে কেরানী । মা বলেন বাবা নাকি আমাকে আল্লাহর কাছ থেকে অনেক কান্নাকাটি করে ভিক্ষে করে এনেছেন ।
"বদরউদ্দীন সাহেব খুব ভালো ক্লাশ নেয়" --- এই সুনামটুকুর কারণে তিনি যখন যে স্কুলেই ছিলেন , তাঁকে নিয়মিত ২/৩ টা ক্লাশ নিতে হতো । অফিসিয়ালি এটা ঠিক কি বেঠিক ছিল জানিনা , তবে স্কুলের স্বার্থে কিংবা ছাত্রদের্ আবদারের কারণে এটা উনাকে করতে হতো । ফলে পরীক্ষার খাতা দেখার বিষয়টাও ছিল নিয়মিত । এস.এস.সি পরীক্ষার আগে তাই ছাত্ররা বাড়ি এসে ছালাম করা , ভালো রেজাল্ট হলে মিষ্টি নিয়ে আসা --- এগুলো ছিল আমার কাছে পরিচিত দৃশ্য ।
আমি তখন ক্লাশ থ্রি বা ফোর এ পড়ি । আফরোজা আপা সমাজ ক্লাশে
" পেশাজীবি " বোঝাতে এক এক করে জিজ্ঞেস করছেন কার বাবা কি করে । আমি বললাম " আমার বাবা শেরে বাংলা বয়েজ স্কুলের শিক্ষক "
" ইস্ তোর বাবা তো কেরানী " ----- পাশের বেঞ্চ থেকে সহপাঠি রনির প্রতিবাদ ।
** সেদিন আর কি কি কথোপকথন হয়েছিল ক্লাশে মনে নেই । বাড়ি এসে ভিষণ অভিমানে অপমানে বাবাকে প্রশ্ন করেছিলাম :
" তুমি নাকি কেরানী ? "
বাবা হেসে বললেন " হ্যা আমি কেরানী । কেন মা , কি হয়েছে ? "
তাহলে ছাত্ররা তোমাকে স্যার বলে কেন ? তুমি কেরানী কেন হলে ? তুমি কেন শিক্ষক হলে না , তাহলে তো রনি আমাকে ক্লাশে লজ্জা দিতে পারতো না ।
** বাবার সাথে সেদিন আর কি কি কথা হয়েছিল কিছুই মনে নেই । শুধু এখন বুকের ভিতরটা মোচর দিয়ে উঠে , সেদিন অবুঝ আমি বাবাকে কতটা কষ্ট দিয়েছি ।
বাবা দেখ - আমি একটুও লজ্জা পাচ্ছি না । তোমার মত সৎ , আদর্শবান কেরানীর মেয়ে হতে পেরে আমি গর্বিত ।
আমি ভিষণ গর্ব করে বলছি : আমার বাবা গভর্ণমেন্ট ল্যাবরেটরি হাই স্কুলের হেড ক্লার্ক ছিলেন ।