somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

গোয়েন্দা কাহিনী-‘জয় হলো শঙ্কর চৌধুরীর’

০৯ ই সেপ্টেম্বর, ২০১২ সকাল ১০:০৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

দরজা খুলেই অর্নববাবু তাড়াতাড়ি একটা সোফায় বসে হাঁপাতে লাগলেন। একটু মোটামোটা মানুষ। অল্পতেই কাহিল হয়ে যান। কিছুক্ষণ পর স্থির হয়ে তিনি বললেন, “মশাই, এমন একটা কাণ্ড যে ঘটবে তা আমি স্বপ্নেও ভাবিনি।” যাকে উদ্দেশ্য করে এ কথা বলা, সেই শঙ্কর চৌধুরী তখন জানালার কাছে দাঁড়িয়ে পত্রিকার পাতা ওল্টাচ্ছিলেন। পেশায় একজন ডিটেকটিভ এই শঙ্কর চৌধুরী। বহু বহস্যের কিনারা করেছেন তিনি। অর্নববাবুর কথা শুনে পত্রিকা বন্ধ করে তিনি জিঞ্জেস করলেন, “সুকুমার সেন কীভাবে খুন হলেন, অর্নববাবু?” তখন ‘আনন্দজগৎ’ পত্রিকার সম্পাদক অর্পব কুমার চক্রবর্তী বলতে শুরু করলেন।
“ভোরবেলা প্রতিদিন আমি সুকুমারবাবুর সাথে লেখালেখি নিয়ে আলাপ করতাম। আপনি তো অনারেবল এই লেখকের নামযশ শুনেছেন। আজও সকালে তার সাথে আমার আলোচনা করার কথা ছিল। সে মোতাবেক আমি ভোরবেলায় তার বাড়িতে আসলাম। তার ঘরের দরজা খোলা দেখে আমার সন্দেহ হল। কারণ, প্রয়োজন না হলে তিনি দরজা খুলেন না। তাড়াতাড়ি করে ঘরে ঢুকে দেখি, সব শেষ ! রক্তে বিছানা ভেসে যাচ্ছে আর সুকুমারবাবু গলাকাটা অবস্থায় সে রক্তের মধ্যে পড়ে আছেন।”
শঙ্কর চৌধুরী চুপচাপ শুনছিলেন। অর্নববাবুর কথা শেষ হলে তিনি বললেন, “কেসটা নেওয়া যায়। শোনার পর থেকেই আমি এ কেসের গভীরে ঢুকে যাচ্ছি? অর্নববাবু বললেন, “তাহলে চলুন। ঘটনাস্থলে যাওয়া যাক।”
শঙ্কর চৌধুরী ও অর্নববাবু ঘন্টাখানেক পরেই সুকুমার সেনের বাড়িতে প্রবেশ করলেন। ইন্সপেক্টর ত্রিদিবকুমার চট্টোপাধ্যায় এ কেসের তদন্ত করছেন। শঙ্কর চৌধুরীকে দেখে তিনি খুশি হলেন। শঙ্কর চৌধুরী ঘটনাস্থল পরিদর্শন করতে চাইলেন। ইন্সপেক্টর তাকে নিয়ে লেখকের ঘরে প্রবেশ করলেন। ঘরে তখন আলামত সংগ্রহের কাজ চলছে। শঙ্কর চৌধুরী ইন্সপেক্টরকে জিজ্ঞেস করলেন, “কী দিয়ে খুন করা হয়েছে লেখক কে?” ত্রিদিববাবু বললেন, “দেখে মনে হয়, বড় ছোরা দিয়ে কুন করা হয়েছে। কারণ, লাশের পাশে কিছু পাওয়া যায়নি। খুনী খুন করে ছোরা নিয়েই পালিয়ে গেছে।” শঙ্কর চৌধুরী ঘরে খোঁজা আরম্ভ করলেন। কিছুক্ষণ পরেই তিনি লেখকের জামার পকেট থেকে একটি রুমাল পেলেন যাতে রক্তের দাগ দেখা যাচ্ছিল। শঙ্কর চৌধুরী বললেন, “ছোরার রক্ত এ রুমালেই মোছা হয়েছে।” এছাড়া আর কিছু পাওয়া গেল না। শঙ্কর চৌধুরী বেরিয়ে আসলেন। ত্রিদিববাবুও তার পিছু পিছু আসলেন। শঙ্কর চৌধুরী ত্রিদিববাবুকে লেখকের ঘরের চাবি দিতে বললেন। তিনি একবার একা এসে তদন্ত চালাতে চান। এছাড়া ত্রিদিববাবুকে বাড়ি থেকে পাহারাও উঠিয়ে নিতে বললেন। ত্রিদিববাবু অবাক হলেন না। তিনি শঙ্করবাবুর কাজের ধারা জানেন। শঙ্কর চৌধুরী এবার ত্রিদিববাবুকে বাড়ির লোকজনদের ডাকতে বললেন।
বাড়িতে লোকজনদের মধ্যে আছে একজন ঝি, বাড়ি দেখাশোনা করার লোক ও একজন ভৃত্য। শঙ্কর চৌধুরী তিনজনকেই জেরা করলেন। সবাই বলল, “সুকুমারবাবু খুব ভোরে ঘুম থেকে উঠে হাঁটতে বের হন। তারপর বাড়িতে ফিরে তিনি নিজের ঘরে চলে আসেন। অর্নববাবু আসলে তার সাথে গল্প করেন। আমরা কখনোই সুকুমারবাবুর কোনো শত্র“ দেখিনি।” শঙ্কর চৌধুরী তাদের বক্তব্য থেকে নতুন কিছু জানতে পারলেন না। ত্রিদিববাবুকে বিদায় জানিয়ে তিনি বাড়িতে চলে আসলেন।
রাতে শঙ্কর চৌধুরী সুকুমারবাবুর বাড়িতে তদন্ত চালাতে আসলেন। তার এখানে আমার কথা ত্রিদিববাবু ছাড়া কেউ জানে না। সন্তর্পনে ঘরের তালা খুলে তিনি ভেতরে প্রবেশ করলেন। পুরো ঘরটা তিনি আবার পরীক্ষা করতে শুরু করলেন। তার কাছে সুকুমারবাবুর আলমারিটা অন্যরকম লাগল। তবে তা নিয়ে তিনি মাথা ঘামালেন না। এবার তিনি মেঝের কার্পেট উঠিয়ে দেখা মুরু করলেন। মেঝেতে তিনি ট্র্যাপডোর দেখতে ফেলেন। হাতল ধরে কিছুক্ষণ টানাটানির পর একটা গর্ত দেখা গেল। তবে ভালো করে দেখার আগেই তিনি লাঠির আঘাতে গর্তে পড়ে গেলেন।
গর্তের ভেতর বেশ কয়েক ঘন্টা পর শঙ্কর চৌধুরীর জ্ঞান ফিরল। তিনি মাথাটা পরিষ্কার করার চেষ্টা করলেন। তারপর চারিদিকে তাকিয়ে দেখতে লাগলেন। এককোণে রক্তমাখা ছোরা পাওয়া গেল। আর একটা কাগজ পাওয়া গেল। শঙ্কর চৌধুরী কাগজটা পড়া শুরু করতেই কয়েকজন লোকের গলার আওয়াজ পেলেন। তিনি ভাবলেন, ওদের হাতে কিছুতেই ধরা পড়া যাবে না। তাই পালাবার রাস্তা খুঁজতে শুরু করলেন। তিনি তার পছেনদিকে ছোট একটি দরজা দেখতে পেলেন। তেলের ড্রাম দ্বারা দরজাটি আড়াল করা ছিল। তিনি দরজা খুলে কালো পানি দেখতে পেলেন। কালবিলম্ব না করে তিনি পানিতে ঝাঁপিয়ে পড়ে সাঁতার কাটতে আরম্ভ করলেন।
কিছুক্ষণ সাঁতার কাটার পর তিনি তীরে পৌঁছলেন। কিন্তু বুঝতে পারলেন না তিনি কোথায় আছেন। অনুমান করলেন, সুকুমার বাবুর বাড়ি থেকে আধা কিলোমিটার দূরে রয়েছেন। অথচ সুড়ঙ্গ দিয়ে সুকুমার বাবুর ঘরে পৌঁছা কোন ব্যাপারই না। এই চিন্তা করতে করতে শঙ্করবাবু হাঁটতে লাগলেন। রাস্তায় অল্প পাওয়ারের বাল্ব জ্বলছিল। কোনো যানবাহন ছিল না। তবে আকাশ তখন ফর্সা হয়ে উঠেছে। শঙ্কর চৌধুরী সুকুমারবাবুর বাড়িতে যখন পৌঁছলেন তখন ঘড়িতে সকাল সাড়ে সাতটা বেজে গেছে।
সুকুমার বাবুর বাড়িতে তখন দলবলসহ ইন্সপেক্টর ত্রিদিবকুমার উপস্থিত। রাতে শঙ্কর চৌধুরীর কোন হদিস না পেয়ে তিনি এখানে এসেছেন। সমস্ত বাড়িতে তিনি শঙ্করবাবুকে খুঁজে বেরিয়েছেন। কিছুক্ষণ পর শঙ্করা চৌধুরীকে দেখা দেলে তার অপেক্ষার অবসান ঘটে। তিনি শঙ্করবাবুকে জড়িয়ে ঘরলেন আর রাতে কোথায় ছিলেন তা খুলে বলতে অনুরোধ করলেন। শঙ্কর চৌধুরী ত্রিদিববাবুকে নিয়ে সুকুমারবাবুর ঘরে প্রবেশ করলেন আর বাড়ির লোকজনকে ডাকতে বললেন। সবাই ঘরে প্রবেশ করলে শঙ্কর চৌধুরী ত্রিদিববাবুকে বললেন, “নিন ইন্সপেক্টর। এরাই আপনার লোক। এবার এদেরকে আসামী করে কেসটা সাজিয়ে ফেলুন।”
শঙ্কর চৌধুরীর এই কথায় বাড়ির দেকাশোনাকারী তাপস ও ভৃত্য শ্যামল নড়ে উঠল। তারা পালানোর চেষ্টা করল। কিন্তু কনস্টেবলরা দুইজনকে ধরে ফেলল। ত্রিদিববাবু তিনজনের হাতেই হাতকড়া পরিয়ে দিলেন। তারপর শঙ্কর চৌধুরী তার কাহিনী শুরু করলেন।
“গতকাল রাতেই আমি তদন্ত করতে সুকুমারবাবুর ঘরে আসি। ত্রিদিববাবু আমাকে তাঁর ঘরের চাবি দিয়েছিলেন। অত্যন্ত গোপনয়িতার সাথে আমি ঘরে প্রবেশ করি। আমি তখনও বুঝতে পারিনি শ্যামল ও তাপস অপরাধী। তবে পাহারা সরিয়ে দিয়ে আমি দেখতে চাইছিলাম খুনীরা আবার আসে কিনা। তারা আমার অনুমানকে সঠিক করে দিয়ে রাতে তাদের উদ্দেশ্য হাসিলের জন্য আসল। কিন্তু ঘরে আমাকে দেখে তারা ভীত হয়। তাই তারা আমার মাথায় আঘাত করে মেঝের ট্র্যাপডোর দিয়ে ফেলে দেয়। ঘর ঝাড়– দেওয়ার সময় ঝি এই ট্র্যাপডোর দেখতে পায় এবং তাদেরকে বলে। এই ট্র্যাপডোরের নিচে আসলে সুড়ঙ্গ। এই সুড়ঙ্গ দিয়ে আমি বের হয়ে বোটহাউসের পানিতে সাঁতার কেটে তীরে পৌঁছি। তারপর আমি এখানে।
এখন ত্রিদিববাবুকে দেখাচ্ছি, কীজন্য খুন হলেন লেখক? এই বলে শঙ্কর চৌধুরী আলমারির কাছে গেলেন। ত্রিদিববাবুর কাছে করাত চাইলেন। তারপর করাত দিয়ে আলমারির কিছু অংশ কেটে ফেললেন। এগুলো ছিল পরে লাগানো। কেটে ফেলার পরই একটি খাম বের হয়ে আসে আর খাম থেকে বের হয় বাড়ির দলিল। আসামী তিনজন এগুলো দেখে মাথা নিচু করে থাকে।
শঙ্কর চৌধুরী আবার বলতে লাগলেন, “সুকুমার সেনের ঘরের একটা চাবি ছিল তাপসের কাছে। তারা আগেই বাড়ির দলিল হস্তগত করার জন্য সুকুমার বাবুকে হত্যা করার প্ল্যান করে। সুকুমারবাবু কাজে গেলে তাপস প্রতিদিন সুকুমার বাবুর গরের তালা খুলে খোঁজাখুজি করত। তাদের উদ্দেশ্য ছিল, নিজেদের পরিচিত একজনকে সুকুমার সেনের ভাই হিসেবে দেখিয়ে বাড়ির দলিল নিজেদের কাছে রাখা। তারা দলিল খুঁজে পেয়ে ঐ লোকের কাছে দিয়ে দিত। পরে ঐ লোকের মাধ্যমে বাড়ি বিক্রি করে সব টাকা হাতিয়ে নিত। সুকুমারবাবুর কোন আতীয়স্বজন না থাকায় ঐ লোককে কেউ অবিশ্বাস করত না।
ত্রিদিববাবু, এই ট্র্যাপডোর দিয়ে নিচে নামলে সুকুমারবাবুর হত্যাকান্ডে ব্যবহৃত ছোরাটি পাওয়া যাবে। আর ওদের বিরুদ্ধে সবচেয়ে বড় প্রমাণ এই কাগজ। এতে তারা তিনজন টাকা সমানভাবে ভাগ করে নিতে অঙ্গীকারাবদ্ধ হয়েছে এবং স্বাক্ষর দিয়েছে।”
মন্ত্রমুগ্ধের মত ত্রিদিববাবু শঙ্কর চৌধুরীর কথা শুনছিলেন। কথা শেষ হতেই মঙ্করবাবুর পিঠ চাপড়ে দিয়ে বললেন, “দারুন কাজ দেখিয়েছ, ভায়া।”
৩টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

একটি ছবি ব্লগ ও ছবির মতো সুন্দর চট্টগ্রাম।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৮:৩৮


এটি উন্নত বিশ্বের কোন দেশ বা কোন বিদেশী মেয়ের ছবি নয় - ছবিতে চট্টগ্রামের কাপ্তাই সংলগ্ন রাঙামাটির পাহাড়ি প্রকৃতির একটি ছবি।

ব্লগার চাঁদগাজী আমাকে মাঝে মাঝে বলেন চট্টগ্রাম ও... ...বাকিটুকু পড়ুন

মেহেদী নামের এই ছেলেটিকে কি আমরা সহযোগীতা করতে পারি?

লিখেছেন ইফতেখার ভূইয়া, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ১০:০৪


আজ সন্ধ্যায় ইফতার শেষ করে অফিসের কাজ নিয়ে বসেছি। হঠাৎ করেই গিন্নি আমার রুমে এসে একটি ভিডিও দেখালো। খুলনার একটি পরিবার, ভ্যান চালক বাবা তার সন্তানের চিকিৎসা করাতে গিয়ে হিমশিম... ...বাকিটুকু পড়ুন

দ্য অরিজিনস অফ পলিটিক্যাল জোকস

লিখেছেন শেরজা তপন, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ১১:১৯


রাজনৈতিক আলোচনা - এমন কিছু যা অনেকেই আন্তরিকভাবে ঘৃণা করেন বা এবং কিছু মানুষ এই ব্যাপারে একেবারেই উদাসীন। ধর্ম, যৌন, পড়াশুনা, যুদ্ধ, রোগ বালাই, বাজার দর থেকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। ভালোবাসা নয় খাবার চাই ------

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৯ শে মার্চ, ২০২৪ দুপুর ১:০৬


ভালোবাসা নয় স্নেহ নয় আদর নয় একটু খাবার চাই । এত ক্ষুধা পেটে যে কাঁদতেও কষ্ট হচ্ছে , ইফতারিতে যে খাবার ফেলে দেবে তাই ই দাও , ওতেই হবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

জাতীয় ইউনিভার্সিটি শেষ করার পর, ৮০ ভাগই চাকুরী পায় না।

লিখেছেন সোনাগাজী, ২৯ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৪:৫৭



জাতীয় ইউনিভার্সিটি থেকে পড়ালেখা শেষ করে, ২/৩ বছর গড়াগড়ি দিয়ে শতকরা ২০/৩০ ভাগ চাকুরী পেয়ে থাকেন; এরা পরিচিত লোকদের মাধ্যমে কিংবা ঘুষ দিয়ে চাকুরী পেয়ে থাকেন। এই... ...বাকিটুকু পড়ুন

×