somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

একজন নীলমেঘ
মানুষ পাহাড় ডিঙায়, পর্বত ডিঙায়, আমি সময়কে ডিঙাতে পারি না। আমি এক জায়গায় জড় হয়ে বসে থাকা মানুষ, ঘূর্ণনশীল পৃথিবী ঘুরবে, আর আমি তার গতিতেই এগিয়ে যাবো। মানুষের ভালো ব্যবহারগুলো সব মরিচীকা, কোথাও সুখ নেই, চারিদিকে অহেতুক সৌন্দর্য।

লাইব্রেরি ম্যান কিরন ও কিছু অপ্রয়োজনীয় মানুষ!!!

২৬ শে মে, ২০১৭ সকাল ৭:৪৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আমাদের Light of Hope অফিসে কিছু পাগলটাইপ লোকজন কাজ করে। এরকম একজন হল কিরন। এরে কপাল ভালো হলে অফিসে পাওয়া যায়। যেদিন অফিসে পাই অবাক হয়ে বলি, আরে তুমি অফিসে? কি ব্যাপার? :)

কিরণের কাজ হচ্ছে সারা দেশ ঘুরে বেড়ানো। ও দেশের আজব সব নাম-না-জানা জায়গার স্কুল থেকে মাঝে মাঝে পোস্ট দেয় - আজকে এখানে একটা লাইব্রেরি করে ফেললাম।

আমরা সারা দেশে বিভিন্ন স্কুলে বাচ্চাদের উপযোগী করে লাইব্রেরি করি। শিশুরা তাদের শৈশব কাটাবে কোন গল্পের বইয়ের স্পর্শ ছাড়া - এই ব্যাপারটি আমাদের কাছে খুব পীড়াদায়ক। যেসব স্কুল আমাদের এই লাইব্রেরি সহায়তা নিতে ইচ্ছুক তারা যোগাযোগ করে। কথাবার্তা পাকা হবার পর কিরণ এক বস্তা গল্পের বই নিয়ে হাজির হয় সেই স্কুলে। মাত্রই চট্রগ্রামের কোথায় কোথায় জানি ৩ টা লাইব্রেরি করে ফিরল আজকে সকালে। আগামীকাল রাতে নাকি আবার যাচ্ছে জামাপুর, শেরপুর হয়ে ঠাকুরগাতে। ওইসব জায়গায় আরও ৬ টি লাইব্রেরি হবে।

এই মাসেই মনে হচ্ছে আমাদের ১০০ তম স্কুল লাইব্রেরি হয়ে যাচ্ছে, যার মধ্যে কিরণ নিজের হাতে মনে হয় করেছে ৫০ টির মত। আমি চিন্তা করছি সেঞ্চুরি হওয়ার পর ওকে 'লাইব্রেরি-ম্যান' পদকে ভূষিত করবো। নিজের হাতে এই বয়সেই ৫০ টি লাইব্রেরি করে ফেলেছে এরকম মানুষ বাংলাদেশে আর পাওয়া যাবে কিনা সন্দেহ।

কিরণের কথাটা বললাম অন্য একটা বিষয়ের সাথে যুক্ত করার জন্য। আজকাল আমি পত্রিকা (বিশেষ করে অনলাইন পত্রিকা) এড়িয়ে চলি। প্রতিদিন এতো এতো 'নেগেটিভ' নিউজ দেখে প্রায়ই দেশের অবস্থা সম্পর্কে অতিশয় জঘন্য একটা ধারণা তৈরি হয়, অল্প সময়ের জন্য হলেও হতাশা তৈরি হয় মনে। আর আমরাও মানুষ হিসাবে 'অতি উচ্চ পর্যায়ের' বলেই হয়তো সেসব খবর নিয়ে মাতামাতি করি, আরও বেশি বেশি শেয়ার করি, আরও বেশি বেশি আলোচনা সমালোচনা করি। আর এদিকে কিরণের মত কিছু ছেলেরা দেশের নানা প্রান্ত চষে বেড়ায় একটি সুন্দর ভবিষ্যতের স্বপ্ন বুকে নিয়ে। একটা দুইটা পোস্ট দিলেও আবার কেউ কেউ মন্তব্য করে, এতো দেখানোর কি আছে?

আমার অবাক লাগে। আমরা এমন একটি সমাজ হয়ে যাচ্ছি যেখানে ২০-২২ বছর বয়সী যুবক দুইপাশে দুই সুন্দরি বগলদাবা করে বাপের কেনা দামি গাড়ির সামনে দাঁড়িয়ে ফেসবুকে পোস্ট দিলে বাহবা পায়। আর ২০-২২ বছর বয়সী আর একটা ছেলে নৌকা-ট্রলার দিয়ে যেয়ে হাঁটু সমান কাদা ঠেলে যেই স্কুলের বাচ্চারা গল্পের বই কি জিনিস জীবনে চোখে দেখে নাই ওইসব স্কুলে লাইব্রেরি করার পরে শিশুদের হাসিমুখসহ একটা পোস্ট দিলে আঙুল ঠেলি আর বলি 'আরে বাবা এতো দেখানোর কি আছে? ভালো কাজ করছ ভালো... কিন্তু গোপনে'। যেন মহা অন্যায় কোন কাজ করছে।

অবশ্য কিরণের মত ছেলেরা সেসব থোড়াই কেয়ার করে। তারা চুপচাপ কাজ করে যায়। কিন্তু কিছু ছেলেমেয়ে আস্তে আস্তে ঝরে যায় - উৎসাহ, সহায়তা আর ছোট ছোট সাপোর্টের অভাবে। আর এরকম ফেসবুকে 'হাতি মারা' লোকদের 'চিপা কথার' জন্য। আর কিছু না পারি, অন্তত এরকম ছেলেমেয়েদের মরাল সাপোর্টতো আমরা দিতে পারি।

বন্ধু মোমেল কিছুদিন আগে একটি কথা বলেছে। আমাদের দেশের সবচেয়ে বড় সমস্যা হল - জনসংখ্যা সমস্যা। 'অপ্রয়োজনীয়' মানুষে নাকি দেশ ভরে যাচ্ছে। এরা দেশের সব সুবিধা নেয়, আর দেশ রসাতলে গেল বলে চিল্লায়। জীবনে নিজেরটা ছাড়া দেশের জন্য বা অন্য কোন মানুষের জন্য একটা সেকেন্ডও ব্যয় করে না। উল্টা উৎসাহী উদ্যমী তরুণতরুণীদের উদ্যমে 'ভাটা' এনে দেয়।

এই 'অপ্রয়োজনীয়' লোকদের 'প্রয়োজনীয়' করার মধ্যেই দেশের মঙ্গল নিহিত। কিভাবে করা যায় সেটা?


সর্বশেষ এডিট : ২৬ শে মে, ২০১৭ সকাল ৭:৫০
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

খুলনায় বসবাসরত কোন ব্লগার আছেন?

লিখেছেন ইফতেখার ভূইয়া, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:৩২

খুলনা প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় তথা কুয়েট-এ অধ্যয়নরত কিংবা ঐ এলাকায় বসবাসরত কোন ব্লগার কি সামুতে আছেন? একটি দরিদ্র পরিবারকে সহযোগীতার জন্য মূলত কিছু তথ্য প্রয়োজন।

পরিবারটির কর্তা ব্যক্তি পেশায় একজন ভ্যান চালক... ...বাকিটুকু পড়ুন

একমাত্র আল্লাহর ইবাদত হবে আল্লাহ, রাসূল (সা.) ও আমিরের ইতায়াতে ওলামা তরিকায়

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৬:১০



সূরাঃ ১ ফাতিহা, ৪ নং আয়াতের অনুবাদ-
৪। আমরা আপনার ইবাদত করি এবং আপনার কাছে সাহায্য চাই।

সূরাঃ ৪ নিসার ৫৯ নং আয়াতের অনুবাদ-
৫৯। হে মুমিনগণ! যদি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। মুক্তিযোদ্ধা

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:২১



মুক্তিযুদ্ধের সঠিক তালিকা প্রণয়ন ও ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা প্রসঙ্গে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক বলেছেন, ‘দেশের প্রতিটি উপজেলা পর্যায়ে মুক্তিযোদ্ধা যাচাই বাছাই কমিটি রয়েছে। তারা স্থানীয়ভাবে যাচাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতীয় রাজাকাররা বাংলাদেশর উৎসব গুলোকে সনাতানাইজেশনের চেষ্টা করছে কেন?

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:৪৯



সম্প্রতি প্রতিবছর ঈদ, ১লা বৈশাখ, স্বাধীনতা দিবস, বিজয় দিবস, শহীদ দিবস এলে জঙ্গি রাজাকাররা হাউকাউ করে কেন? শিরোনামে মোহাম্মদ গোফরানের একটি লেখা চোখে পড়েছে, যে পোস্টে তিনি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঘুষের ধর্ম নাই

লিখেছেন প্রামানিক, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:৫৫


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

মুসলমানে শুকর খায় না
হিন্দু খায় না গাই
সবাই মিলেই সুদ, ঘুষ খায়
সেথায় বিভেদ নাই।

হিন্দু বলে জয় শ্র্রীরাম
মুসলিম আল্লাহ রসুল
হারাম খেয়েই ধর্ম করে
অন্যের ধরে ভুল।

পানি বললে জাত থাকে না
ঘুষ... ...বাকিটুকু পড়ুন

×