একদিন বদরুলের হৃদয়ে ছিল ভালোবাসা আর হাতে ছিল ফুল। সেই ভালোবাসা ঘৃণায় পরিণত হয়েছিল বলেই বদরুল ফুল ছেড়ে চাপাতি হাতে নিতে পেরেছে।
এই যে বদরুলের রুপান্তর। প্রেমিক থেকে খুনী। তার সিংহভাগ দায়ভার আমাদের সমাজ, সামাজিক কাঠামো ও সংস্কৃতির। দায়ভার আছে খাদিজার লোভেরও।
প্রেম, স্মার্টফোনের কোন অ্যাপ্স না। মন চাইল ইন্সটল দিলাম, আবার ডিলেট করে দিলাম। অধিকাংশ মেয়েরা সমবয়সী বা অপেক্ষাকৃত দুর্বল ছেলেদের সাথে এই স্বার্থপর আচরণটাই করে। ফলে ক্ষতবিক্ষত, হতাশ জীবনে ছেলেরা হয়ে যায় প্রেমিক থেকে খুনী। প্রচুর ছেলে পড়াশোনা ছেড়ে রাজনীতিতে জড়ায় শুধু জীবনের প্রতি হতাশা থেকে। তারা লক্ষী ছেলে থেকে মায়া দয়াহীন ভয়ঙ্কর কোন দানবে পরিণত হয়। নিয়মিত নেশা করে, এসব করে অতীত বেদনা ভুলে থাকতে। এই যে জীবনের প্রতি বিষাদ, তার স্বীকারই হয় কোন না কোন মেয়ে।
একদলকে দেখা যাচ্ছে, বদরুলের রাজনৈতিক পরিচয়কে হাতিয়ার করে যাচ্ছেতাইভাবে আক্রমণ করছে। কিন্তু এটা করে আমরা আর একটা বদরুল তৈরির পথই সুগম করছি। এখানে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, বদরুলের সমস্যাটা যতটা না রাজনৈতিক, তারচেয়ে বেশি সামাজিক। তবে এটা সত্য রাজনৈতিক শক্তি না থাকলে বদরুল হয়তো এতটা নির্মম হত না। কিন্তু এখানেও শুভঙ্করের ফাঁকি বাঙালির!
কেউ এ প্রশ্ন তুলছে না, স্বাধীন একটি দেশে ছাত্র রাজনীতি থাকার কোন দরকার আছে কি না! দুনিয়ার কোথাও ছাত্র রাজনীতি নামক শব্দটি নেই। অথচ আমরা বারবার এ দানবের আক্রোশের শিকার হচ্ছি। ছাত্র নির্যাতন ছাড়া, ছাত্র রাজনীতির আর কী সুফল পাচ্ছে এ জাতি? কেন ছাত্র রাজনীতি নামক অভিশাপকে নিষিদ্ধ করা হচ্ছে না???
আজ বদরুলের শাস্তির জন্য সমস্বরে চিৎকার করছি আমরা। খাদিজা হয়ে গেছে সব হুজুগে বাঙালির বোন আর বদরুল নরপিশাচ। এই বাঙালির, বোনের জন্য দরদ দেখানোর আগে এটা বিবেচনায় আনা উচিৎ, এই খাদিজা একদিন বদরুলের প্রেমিকা ছিল। সুতরাং খাদিজার প্রতি তার দরদও আর সবার থেকে বেশি ছিল। সেই দরদ আর ভালোবাসার মানুষটাকেই বদরুল কুপিয়ে শেষ করে দিতে চেয়েছে। একই সাথে সে শেষ করে দিয়েছে নিজের জীবনকেও।
আমরা এখানে অনেকটা ঝোপ বুঝে কোপ মারার মতো করছি। কিন্তু কেউ সাহস করে বলছি না, কেন বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া একজন স্বপ্নবাজ তরুণ বদরুল হয়ে যায়, কেন বদরুলদের সংখ্যা এ সমাজে দিনদিন বাড়ছে। আমাদের সমাজ কাঠামোর সমস্যাটা কোথায়, কী করলে এ কাঠমোতে ভবিষ্যতের বদরুল তৈরি বন্ধ হবে!
কেউ খাদিজার কোন দোষ ছিল কি না তা একবারও বলছি না। আপনি যদি সুন্দর একটি সমজা চান, সুস্থভাবে বাঁচতে চান তাহলে এ প্রশ্ন করতে হবে। মেয়েদের বলতে হবে, তোমরা প্রেমের সম্পর্কে জড়ানোর আগে সাবধান হও। একবার জড়িয়ে পড়ে তা অস্বীকার করার যে বিপদ তার উদাহরণতো আমাদের সামনে আছে। এখানে ছেলে এবং মেয়ে উভয়কে নিয়েই কাজ করা জরুরি।
এই সমাজে অর্থনৈতিক বৈষম্য বা তথাকথিত এস্টাবলিস্টমেন্ট নামক বাহানার যে নির্মম স্বীকার ছেলেরা, তা দূর করতে উদ্যোগ নিতে হবে। আমরা যারা সমঅধিকারের কথা বলি তারা এ বেলা নিরব। আজও আমাদের সমাজে এটাই প্রতিষ্ঠিত সত্য, একটা ছেলেকে বিয়ে করতে হলে প্রতিষ্ঠিত হতে হবে। কিন্তু কেন একটা মেয়েকে বিয়ের জন্য প্রতিষ্ঠিত হতে হবে না, এ প্রশ্ন কেউ করে না! সংসার নামক বোঝা কেন শুধু ছেলেকেই বহন করতে হবে, এ প্রশ্ন কেন কেউ করছে না!
আমার কাছে,
বদরুলের শাস্তিটা খুব জরুরি। তারচেয়েও বেশি জরুরি বদরুলদের মানসিক বিকাশে উদ্যোগ গ্রহণ করা। নইলে ফি বছরই আমরা এমন বদরুলদের দেখা পাব। রক্তাত্ব হতে দেখব নতুন কোন খাদিজাকে।
যারা মানুষের মন নিয়ে কাজ করে সরকারের উচিৎ সেসব মনোবিশেষজ্ঞদের সাথে পরামর্শ করা। আমাদের তরুণ সমাজকে কীভাবে এসব বিপদজনক পথ থেকে ফিরিয়ে আনা যায় তা নিয়ে আলোচনা করে করনীয় ঠিক করা। একটি জাতীয় উদ্যোগই পারে এসব সমস্যা থেকে কিছুটা হলেও মুক্তি দিতে। সুন্দর একটি সমজা গঠন করতে।
বদরুলের উপযুক্ত শাস্তি দাবি করছি।
সর্বশেষ এডিট : ০৬ ই অক্টোবর, ২০১৬ সন্ধ্যা ৭:৩৮