somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

যেভাবে পাব্লিশ করবেন আপনার গবেষণা- থিসিস থেকে জার্নাল পেপার

০৯ ই জানুয়ারি, ২০১৭ রাত ২:৩৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

শুরুতেই বলে নেই, এই লেখাটি যারা গবেষণা জগতে নতুন, প্রথমবারের মত আপনার আর্টিকেল কোন জার্নালে প্রকাশ করতে চান, তাদের জন্য। আমাদের দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর অনেক আন্ডারগ্রাজুয়েট থিসিস আছে যা ভালো জার্নালে প্রকাশ করা সম্ভব। কিন্তু অনেক শিক্ষক এ ব্যাপারে উদাসীন, বিশ্ববিদ্যালয়গুলো ততোধিক। শুধুমাত্র পাস করার জন্য লেখা হলেও, অনেক থিসিসের গুনগত মান আন্তর্জার্তিক জার্নালে প্রকাশ করার মত। এগুলো পরবর্তীতে বিভিন্ন স্কলারশিপ পেতে ছাত্রদের যেমন সাহায্য করবে, তেমনি শিক্ষকদের বাইরের বিশ্ববিদ্যালয়ে রিসার্চ ফেলো/ পোস্ট ডক্টোরাল ফেলো হিসাবে মনোনায়ন পেতেও গুরুত্বপূর্ন ভূমিকা রাখে। বাইরের দুনিয়ায় ছাত্র-শিক্ষকদের উন্নতমানের পেপার লিখতে উৎসাহ দিতে আর্থিক পুরস্কার দিয়ে থাকে। কিন্তু আমাদের দেশে এখনো গবেষনা প্রকাশণাকে তেমনভাবে স্বীকৃতি দেয়া হয় না। মনে রাখতে হবে, রিসার্চ পাব্লিকেশন আমাদের দেশের ও ভার্সিটির নাম আন্তর্জাতিক অঙ্গনে নিয়ে যায়। এটি রিসার্চ কোলাবোরেশন ও আন্তর্জার্তিক গবেষণা অনুদান আনতেও বিশেষ ভুমিকা পালন করে।

১। কিভাবে আপনার থিসিসকে পেপারে রূপান্তর করবেন?
আন্ডারগ্রাজুয়েট ও পোস্ট-গ্রাজুয়েট শিক্ষার্থীদের থিসিস জমা দেবার পরে, সেটাকে পেপারে রূপ দেয়া খুবই সহজ একটি কাজ। পেপারের মূল গঠন থিসিসের চেয়ে অনেক কম হয়ে থাকে। ৬০০০শব্দে হয়ে যেতে পারে একটি পরিপূর্ন জার্নাল পেপার। থিসিস থেকে কাট ছাট করার এই প্রক্রিয়াটি করার জন্য দরকার হবে ২/৪ দিন সময়।
প্রথমে একটি আউটলাইন তৈয়ার করুন। যেমনঃ
১।টাইটেল ২।এবস্ট্রাক্ট ৩।কী-ওয়ার্ড ৪। ইন্ট্রোডাকশন ৪।বিষয় ভিত্তিক আলোচনা ১ ৫। বিষয় ভিত্তিক আলোচনা ২ ৬।রেজাল্ট ও ডিস্কাশন
৭।একনলেজমেন্ট ৮।কনক্লুশন ৯।রেফারেন্স
এরপর এই কাঠামোর ভেতরে লিখতে থাকেন।
১.ক। থিসিসের টাইটেল টিকে জার্নাল পেপারের টাইটেল হিসেবে চালিয়ে দিতে পারেন, অথবা কিছু স্পেসিফিক কি-ওয়ার্ড জুড়ে দিয়ে সুন্দর-সংক্ষিপ্ত কিন্তু বিশ্লেষনাত্মক একটি প্রাসঙ্গিক শিরোনাম দিতে পারেন। অথারলিস্টে শিক্ষার্থীর নাম, সুপারভাইজারের নাম ও অন্যান্য গুরুত্বপূর্ন অব্দান যারা রেখেছেন তাদের নাম থাকা উচিত। এফিলিয়েশনে ভার্সিটির নামের সাথে ঠিকানায় একটি ভাল ইমেইল এড্রেস দিন। পূর্ণ নাম যুক্ত ইমেল এড্রেস দেয়াই প্রচলিতরীতি।
১.খ। এবস্ট্রাক্টটি সংক্ষিপ্ত হতে হবে। সাধারনত ৫০০ বা তার কম শব্দের মদ্ধ্যেই পুরো লেখার সারমর্ম এই অংশে প্রকাশ করতে হয় , জার্নালের গাইড লাইন অনুযায়ী। অবশ্যই আপনার পেপারের গুরুত্ব বুঝিয়ে কিছু ভুমিকা দিতে হবে। এরপরে খুব সংক্ষেপে পেপারে মূল কি বিষয়ে আলোকপাত করা হয়েছে, কি কি মেথড ব্যবহার হয়েছে তার উল্লেখ থাকতে হবে। রেসাল্ট-ডিস্কাশন থেকে ধার করে কিছু রেজাল্টও এই অংশে যুক্ত করতে হবে।
১. গ। কী-ওয়ার্ডঃ ৫/৬ টি শব্দ নির্বাচনের মাধ্যমে আপনার লেখাটির মূল বিষয় ও সীমানা পরিস্কার করে ফেলতে হবে। কীওয়ার্ড হিসাবে বৈজ্ঞানিক টার্ম, প্যামিটারেরগুলোর নাম ব্যবহার করা যেতে পারে। টাইটেল থেকেও কিছু মূল শব্দ ধার করতে পারেন।
১.ঘ। থিসিসের ইন্ট্রোডাকশন থেকে নির্বাচিত অংশ নিয়ে জার্নাল পেপারের ইন্ট্রোডাকশন হিসেবে ব্যবহার করতে পারেন। ইন্ট্রোডাকশন সাম্প্রতিক রেফারেন্সযুক্ত করা উচিত, বিশেষ করে যেই জার্নালে পাঠাবেন- সেই জার্নালে প্রকাশিত কিছু পেপার অবশ্যই যুক্ত করুন। এই অংশে লেখার স্কোপ, তাতপর্য, গুরুত্ব, উদ্দেশ্য, আপনার পেপারের মূল আলোচ্য সমস্যার বর্নণা থাকতে হবে।
১. ঙ। বিষয় ভিত্তিক আলোচনাঃ এই অংশটি লিটারেচার রিভিউ থেকে নিতে পারেন। পেপারের রেজাল্টগুলোর প্যারামিটারগুলো বর্ননা করতে পারেন। যেসব ইকুপমেন্ট-যন্ত্রপাতি ব্যবহার করা হয়েছে তার পরিচিতি ও একুরেসী দিতে হবে। এই অংশে যে মেথডলজি এই পরীক্ষার ব্যবহার করা হয়েছে, সেটাও থাকতে হবে।
১.চ। রেজাল্ট ও ডিস্কাশনে গ্রাফ ও টেবিল থাবে। প্রতিটি টেবিল ও গ্রাফের/চার্টের বর্ননা পাশাপাশি থাকতে হবে। ডিস্কাশনে প্রাসঙ্গিক কিছু পেপারের রেজাল্টের সাথে তুলনা থাকতে পারে।
১.ছ।কনক্লুশনঃ রেজাল্টে প্রাপ্ত গুরুত্বপূর্ন তথ্য এইখানে পয়েন্ট আকারে লিখুন। থিসিসে অনেক বড় করে লিখা থাকলে, সেখান থেকে কেটে ছেটে সংক্ষেপে দিন। অবশ্যি কিছু নিউমারিক রেজাল্ট থাকতে হবে, শুধু তুলনামূলক আলোচনা থাকলে চলবে না।
১.জ। একনলেজমেন্টঃ আপনার ল্যাব এসিস্টেন্ট, সহকারী, পরামর্শদাতা, আর্থিক সাহায্যকারী প্রতিষ্ঠান, বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম এই অংশে উল্লেখ করুন।
১.ঝ। রেফারেন্সঃ রেফারেন্স লিখার অনেক পদ্ধতি আছে। আপনি যে জার্নালে পাঠাবেন, সেখানে কোন পদ্ধতিতে লিখতে বলছে সে অনুযায়ী সাজান। যেমনঃ হার্ভার্ড, নাম্বারিং সিস্টেম। রেফারেন্স সাজানোর অনেক সফটওয়ার আছে, যেমনঃ END NOTE(http://www.endnote.com/ ), ProCite (http://www.procite.com/ ) ইত্যাদি। ইউটিউব থেকে এগুলোর ব্যবহারবিধি সহজে শিখতে পারবেন।
২। কোথায় পাব্লিশ করবেন আপনার আর্টিকেল?
অনেক জার্নাল আছে, অনেক কনফারেন্স হচ্ছে প্রতি বছর আপনার বিষয়ে। কনফারেন্স পেপারের চেয়ে অনেক ক্ষেত্রেই জার্নাল পেপারের মূল্য বেশি। সঠিক জার্নাল নির্বাচন আপনার পেপারকে দ্রুত পাব্লিশ করতে সহায়তা করে। শুরুতেই আপনার বিষয়ে কোন জার্নালগুলো ভালো, তা বুঝার জন্য আপনি যেসব পেপার সাইট করেছেন পেপারে, সেগুলো কোন জার্নালে প্রকাশিত হয়েছে তা দেখে নিন। ১০-১৫টি জার্নালের একটি তালিকা তৈরী করুন। এবার একটি করে জার্নাল সার্চ করে তার ওয়েবসাইটে গিয়ে ভালো করে নিচের তথ্যগুলো টুকে নিন।
ক. স্কোপ
খ. ইস্যু/ইয়ার
গ. ইম্প্যাক্ট ফেক্টর
ঘ. এডিটরের নাম ও ইমেইল ঠিকানা
এবার স্কোপ পড়ে নিশ্চিত হোন, কোন কোন জার্নাল আপনার বিষয়ের পেপার প্রকাশ করে। ইস্যু সুংখা প্রতি বছরে ৪ এর বেশি হলে বুঝবেন জার্নালটির প্রচুর পেপার দরকার হয়। এরমানে এদের সম্পাদনা ব্যবস্থা বেশ দ্রুত, আপনার লেখাটি প্রকাশ হবে কিনা তা দ্রুত জানাবে। কিছু জার্নাল ১ বছর পর এক্সেপ্ট করে, কিছু জার্নাল ৩মাস এর মধ্যেও এক্সেপ্ট করে। ১০দিনেও অনেক পেপার এক্সেপ্ট হয়েছে দেখা যায়। তাই পেপার সাবমিট করে ধৈর্য্য নিয়ে অপেক্ষা করতে হবে। স্কোপ নিয়ে কোন সন্দেহ থাকলে জার্নালের এডিটর বরাবর ইমেইল করে নিশ্চিত হতে পারেন (আপনার পেপারের টাইটেল ও এবস্ট্রাক্ট দিতে হবে)।
এরপরে আসে ইম্প্যাক্ট ফেক্টর। এটা আসলে বুঝায়, জার্নাল্টির পেপারগুলো কত বেশি অন্য পেপার দ্বারা সাইটেড হয়। উচ্চ ইম্প্যাক্টের জার্নালে পাব্লিশ করা কঠিন, কারন সেখানে লেখা পাব্লিশ করার জন্য অনেক পেপার এডিটরের কাছে আসে। কারন উচ্চ ইম্প্যাক্ট যুক্ত জার্নালে পাব্লিশ করা যেমন সম্মানের তেমনি এতে অনেক সাইটেশন পাবার সম্ভাবনা থাকে। ইম্প্যাক্ট ফেক্টর ৫ মানে, জার্নাল্টির প্রতিটি পেপার গড়ে ৫টি করে সাটেশন পায় প্রতি বছর।
খেয়াল করে দেখবেন, অনেক জার্নালে পেপার পাব্লিশ করলে তারা লেখকের কাছ থেকে পাব্লিশ করার জন্য টাকা নিয়ে থাকে (৫০০-১০০০ডলার)। আবার অনেক জার্নালে ফ্রি পাব্লিশ করে। আপনার সংগতি বুঝে জার্নাল নির্ধারন করুন।
ISI ইন্ডেক্সড জার্নাল খুজতে পারেন । SCOPUS ইন্ডেক্সড জার্নাল খুজতে পারেন।
৩। কিভাবে পাঠাবেন আপনার পেপার?
অধিকাংশ জনপ্রিয় আন্তর্জাতিক জার্নালে পেপার পাঠানোর অনলাইন সিস্টেম আছে, যেখানে আপনাকে রেজিস্ট্রেশন করে পেপারটির ফাইল আপ্লোড করতে হবে। আবার অনেক জার্নালে সোজাসুজি ইমেইল করলেই হয়। আপ্লোড করার আগে খেয়াল করে জার্নালের ‘অথার গাইডলাইন’ পড়ে পেপারটির ফরম্যাট করুন।
পাঠিয়ে দেবার আগে একটি কভার লেটার লিখুন, যেখানে ফরমালি এডিটর সাহেবকে আপনার পেপারটি পাব্লিশ করার অনুরোধ জানিয়ে একটি চিঠি দিবেন। অবশ্যই আপনার পুরো নাম ও ইউনিভার্সিটির ডিপার্টমেন্টের ঠিকানা ব্যবহার করবেন চিঠির শেষে। লেখা শেষ হলে খুব সতর্ক হয়ে লেখার ফ্লো, বর্ননার খুত, গ্রামারের ভুল-চুকগুলো শুধরে নিন। এরপর সাবমিট করে অপেক্ষা করুন রিভিয়ারের কমেন্টের।

কার্টেসি: জায়েদ এম. এইচ, পিএইচডি শিক্ষার্থী, মোনাশ ইউনিভার্র্সিটি।
সর্বশেষ এডিট : ০৯ ই জানুয়ারি, ২০১৭ রাত ৩:১৮
১৪টি মন্তব্য ১৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ধর্ম ও বিজ্ঞান

লিখেছেন এমএলজি, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:২৪

করোনার (COVID) শুরুর দিকে আমি দেশবাসীর কাছে উদাত্ত আহবান জানিয়ে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম, যা শেয়ার হয়েছিল প্রায় ৩ হাজারবার। জীবন বাঁচাতে মরিয়া পাঠকবৃন্দ আশা করেছিলেন এ পোস্ট শেয়ারে কেউ একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

তালগোল

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৩৫


তু‌মি যাও চ‌লে
আ‌মি যাই গ‌লে
চ‌লে যায় ঋতু, শীত গ্রীষ্ম বর্ষা
রাত ফু‌রা‌লেই দি‌নের আ‌লোয় ফর্সা
ঘু‌রেঘু‌রে ফি‌রে‌তো আ‌সে, আ‌সে‌তো ফি‌রে
তু‌মি চ‌লে যাও, তু‌মি চ‌লে যাও, আমা‌কে ঘি‌রে
জড়ায়ে মোহ বাতা‌সে ম‌দির ঘ্রাণ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

মা

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৩


মায়াবী রাতের চাঁদনী আলো
কিছুই যে আর লাগে না ভালো,
হারিয়ে গেছে মনের আলো
আধার ঘেরা এই মনটা কালো,
মা যেদিন তুই চলে গেলি , আমায় রেখে ওই অন্য পারে।

অন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

কপি করা পোস্ট নিজের নামে চালিয়েও অস্বীকার করলো ব্লগার গেছে দাদা।

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:১৮



একটা পোস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ আগে থেকেই ঘুরে বেড়াচ্ছে। পোস্টটিতে মদ্য পান নিয়ে কবি মির্জা গালিব, কবি আল্লামা ইকবাল, কবি আহমদ ফারাজ, কবি ওয়াসি এবং কবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতকে জানতে হবে কোথায় তার থামতে হবে

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৪৫


ইন্ডিয়াকে স্বপ্ন দেখানো ব্যাক্তিটি একজন মুসলমান এবং উদার চিন্তার ব্যাক্তি তিনি হলেন এপিজে আবুল কালাম। সেই স্বপ্নের উপর ভর করে দেশটি এত বেপরোয়া হবে কেউ চিন্তা করেনি। উনি দেখিয়েছেন ভারত... ...বাকিটুকু পড়ুন

×