somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

সাগড়, পাহাড়, আকাশ আর সেই ছেলেটার গল্প…

১২ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৭ রাত ১২:৩৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
দেখতে দেখতে তুরস্কে আমার শিক্ষাজীবন শেষের দিকে যাচ্ছে।

এই সময়টাতে ভিনদেশ, ভিন্ন ভাষা আর সংস্কৃতিসহ নানা প্রতিকূলতার মধ্যেও অনেক কিছুই দেখা ও শেখা হয়েছে। তবে লেখা হয়নি কিছুই। সাগর আর পাহাড় দিয়ে ঘেরা আতাতুর্কের এ দেশ সত্যিই বড় রুপবতী। টানা ক’মাস কাজের পর হাপিয়ে উঠেছিলাম। মনপ্রাণ দিয়ে চাচ্ছিলাম একটা ব্রেক। ঠিক এ সময়ে সিনিয়র এক বন্ধুরও কোথাও থেকে ঘুরে আসার প্রস্তাব। নানা চিন্তা ভাবনার পর এই ফেব্রুয়ারির শুরুর দিকে গেলাম ইস্তাম্বুলের পাশের শহর ইজমিতে। ইজমিতের ইউভাজিক এলাকায় পাহাড়ের চূড়ায় বেশ ক’দিন ছিলাম আমরা। সবার সাথে শেয়ার করার জন্য বেশ ক’টা ছবি দিলাম। আমার ফোনটা (আইফোন) ছবি তোলার জন্য খারাপ না। কিন্তু সমস্যাটা হচ্ছে আমার হাত একদমই কাঁচা। কল করা, ধরা আর ফেসবুক ছাড়া ফোন জিনিসটা তেমন একটা ব্যবহার করি না। আসলে এনজয় করি না। যাইহোক, ফোনের ছবি দেখে জায়গাটা কতটা সুন্দর তা বোঝা যাবে বলে আমার মনে হয় না। আর আমি না ঘুরে সারাদিন রুমেই বসে ছিলাম, কেন বসেছিলাম তা নিচে বলা আছে।



আসল কথায় ফিরি।
পুরো তুরস্ক দেশটাই পাহাড়ের উপর দাঁড়িয়ে। এখানেও এর ব্যতিক্রম না। পাহাড়ের বাঁকানো পথ ধরে চলতে চলতে প্রায়ই মনে হয় এই বুঝি খাদে পড়ে গেলাম। বাস এই নিচে নামছেতো, এই উপরে উঠছে। যাইহোক, গন্তব্যে পৌছানোর পর জায়গাটা পছন্দ হয় আমার। জনমানবশূন্য এ এলাকা দেখেই বোঝা যায় এটা মূলত ট্যুরিস্ট জোন। শুরুতে ভেবেছিলাম পাহাড়ের ফাঁকে ফাঁকে ছোট যে রিসোর্টগুলো দেখা যায় সেগুলো বোধহয় সরকারি সম্পদ। পরে আমাদের কটেজের সিকিউরিটি গার্ড জানাল, এগুলো বড়লোকদের প্রাইভেট প্রমোদ হাউজ। বছরে ২/১ বার বউ বা গার্লফেন্ড নিয়ে তারা আসেন ছুটি কাটাতে। আর বাকি সময়টা খালি পড়ে থাকে।


সমতল ভূমি থেকে প্রায় এক হাজার মিটার উঁচুতে ছিল আমাদের কটেজ। চারপাশে পাহাড়, সে পাহাড় বরফে ঢাকা আর তার মাঝে কিছু বাড়ি আর কিছু ছোট ছোট ক্যাম্প। ক্যাম্পগুলো সাধারণত গ্রীষ্মকালে ব্যবহার করা হয়। সেখানে পৌছে দেখি মোবাইলের নেটওয়ার্ক, ইন্টারনেট কিছুই কাজ করে না। নেই পত্রিকা পড়া বা টিভি দেখার কোন ব্যবস্থা। ফলে পুরো দুনিয়া থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে গেলাম।


সেদিন পৌছাতে পৌছাতে বিকেল। শরীর খুব ক্লান্ত হলেও বের হলাম বিকেল আর তার আকাশ দেখতে। তবে প্রচণ্ড শীত হওয়ায় বেশিক্ষণ বাইরে টিকতে পারলাম না। সন্ধ্যার পরপরই রুমে গেলাম ঘুমোতে। কিন্তু একি, রুমের হিটার কাজ করে না! তাপমাত্রা মাইনাস ৩০-৪০ এর মধ্যে হবে ধারণা। হিটার ঠিক হবে না জেনে খুঁজে একটা স্লিপিং ব্যাগ বের করলাম। তুর্কিশদের মাপে বানানো স্লিপিং ব্যাগটা বেশ বড়। পাশে কেউ থাকলে দু’জনে একটার মধ্যে ঢোকা যেত। আপসোস সেই সোয়ার খোঁজ আজও পেলাম না।


নেটহীন, যোগাযোগহীন দিনগুলো কেটে গেল খুব দ্রুত। যোগাযোগ বিপ্লবের এই যুগে কিছুটা সময় পুরো দুনিয়া থেকে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন থাকার অনুভূতি অবশ্য বেশ ভালোই আমার। -৩৫ ডিগ্রীর মতো তাপমাত্রায় হিটারহীন রুমে কাঁপতে কাঁপতে ঘুমাতে গেলাম। সকালে ঘুম থেকে উঠে মনে হলো ইশ, আমার হাতখানি আর দু’হাত লম্বা হলেই আকাশ ছুঁয়া যেত। আমি শুভ্র কোন রাজপুত্র হলে মেঘের ভেলারা আমাকে কোলে নিয়ে পাহাড় থেকে পাহাড় চষে বেড়াত। কত কাছে আকাশ আর পাহাড়। দু’পাহাড়ের মাঝে যেন জালরাশির দল হাসছে। মাঝে মাঝে উড়ে যাচ্ছে পাখির দল।


যেদিন ফিরব সেদিন তুষাড় ঝড় হচ্ছে। রেইনকোট বা ছাতা কোনটাই নেইনি। সুতরাং বৃষ্টিতে ভিজতে হলো। ও, আসার আগে পরিচয় হলো এক ফিলিস্তিনী প্রফেসরের সাথে। দীর্ঘ বছর লন্ডনে কাটিয়ে এখন তিনি থিতু হয়েছেন তুরস্কে। ৩০ বছর আগে ইসরাঈলের নিষেধাজ্ঞার মুখে পড়ে দেশ ছাড়তে হয়েছিল বেচারাকে। এরপর একদিন একমাত্র ভাই মরার খবর পান, জানাজায় যেতে পারেননি। তারপর মারা যায় বাবা, তারপর মা। কারো মুখই দেখা হয়নি শেষবারের মতো। এখন তিনি নিজে বৃদ্ধ। জানেন না মৃত্যুর আগে আর কোনদিন নিজ ভূমে ফিরতে পারেন কি না। এ প্রফেসরের জীবন কাহিনী শুনতে শুনতে ভিজে আসে আমার চোখ। মনে পড়ে ৭১ এর কথা।
আহা! যারা আমাদের এনে দিয়েছিল এক টুকরো স্বাধীন ভূমি তাদের কাছে চিৎকার করে ঋণ স্বীকার করতে ইচ্ছে করে। শ্রদ্ধা আর কৃতজ্ঞতার ভারে নুয়ে আসে মাথা। সশ্রদ্ধ সালাম নাও হে বীরের দল। হৃদয়ের গহীনে জমে থাকা বিনম্র সালাম।


সর্বশেষ এডিট : ১২ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৭ রাত ১২:৩৮
৯টি মন্তব্য ৯টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

চুরি করাটা প্রফেসরদেরই ভালো মানায়

লিখেছেন হাসান মাহবুব, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৫৩


অত্র অঞ্চলে প্রতিটা সিভিতে আপনারা একটা কথা লেখা দেখবেন, যে আবেদনকারী ব্যক্তির বিশেষ গুণ হলো “সততা ও কঠোর পরিশ্রম”। এর মানে তারা বুঝাতে চায় যে তারা টাকা পয়সা চুরি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শিব নারায়ণ দাস নামটাতেই কি আমাদের অ্যালার্জি?

লিখেছেন ...নিপুণ কথন..., ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৫:৫৭


অভিমান কতোটা প্রকট হয় দেখেছিলাম শিবনারায়ণ দাসের কাছে গিয়ে।
.
গত বছরের জুন মাসের শুরুর দিকের কথা। এক সকালে হঠাৎ মনে হলো যদি জাতীয় পতাকার নকশাকার শিবনারায়ণ দাসের সঙ্গে দেখা করা সম্ভব... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঘুষের ধর্ম নাই

লিখেছেন প্রামানিক, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:৫৫


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

মুসলমানে শুকর খায় না
হিন্দু খায় না গাই
সবাই মিলেই সুদ, ঘুষ খায়
সেথায় বিভেদ নাই।

হিন্দু বলে জয় শ্র্রীরাম
মুসলিম আল্লাহ রসুল
হারাম খেয়েই ধর্ম করে
অন্যের ধরে ভুল।

পানি বললে জাত থাকে না
ঘুষ... ...বাকিটুকু পড়ুন

প্রতি মাসে সামু-ব্লগে ভিজিটর কত? মার্চ ২০২৪ Update

লিখেছেন জে.এস. সাব্বির, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:০৮

মার্চ ২০২৪ সালে আমাদের প্রিয় সামু ব্লগে ভিজিটর সংখ্যা কত ছিল? জানতে হলে চোখ রাখুন-

গত ৬ মাসের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ভিউ ছিল জানুয়ারি মাসে। ওই মাসে সর্বমোট ভিজিট ছিল ১৬... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইরান-ইজরায়েল দ্বৈরথঃ পানি কতোদূর গড়াবে??

লিখেছেন ভুয়া মফিজ, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:২৬



সারা বিশ্বের খবরাখবর যারা রাখে, তাদের সবাই মোটামুটি জানে যে গত পহেলা এপ্রিল ইজরায়েল ইরানকে ''এপ্রিল ফুল'' দিবসের উপহার দেয়ার নিমিত্তে সিরিয়ায় অবস্থিত ইরানের কনস্যুলেট ভবনে বিমান হামলা চালায়।... ...বাকিটুকু পড়ুন

×