somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

নারীর বুকের দুধ বিক্রি, আমি মানুষ ও তারা ধনীরা

০৫ ই এপ্রিল, ২০১৭ রাত ১০:৫২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
১. সংবাদিকতার ভাষায় কখনো কখনো নেগেটিভ শিরোনামের একটা পজিটিভ মানে থাকে (নেগেটিভ এক্সপ্রেশন মিনস সামথিং পিজিটিভ)।

এই খবরটার যেমন আমার কাছে। খবরের শিরোনাম হচ্ছে, 'নারীর বুকের দুধ রপ্তানী স্থগিত করেছে কম্বোডিয়া।' শিরোনাম থেকেই আমরা বুঝতে পারি কম্বোডিয়া নামক একটি দেশে নারীর দুধ বিক্রি হতো। সেই দুধ বিক্রি বন্ধ হয়ে যাওয়াটা এখন আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে খবর।

যার শেষ আছে তার একটা শুরুও আছে নিশ্চয়ই। সেই শুরুটা খবর হয়েছিল কি না বলতে পারব না। যদি না হয়ে থাকে, তাহলে ধরে নেব নারীর বুকের দুধ বিক্রি ঘটনা মিডিয়ার কাছে কোন খবরই ছিল না। তবে বিক্রি বন্ধ করে দেওয়ার ঘটনা খবর। এখানে এসে আমার হতভম্ব হওয়ার কারণটা হচ্ছে, নারীর বুকের দুধও যে কেনাবেচার বস্তুর হতে পারে এটা আমার কল্পনাতেও ছিল না। যাইহোক, এ পোস্টের বিষয়বস্তু মিডিয়া না। শুধু আক্ষরিকভাবে ঘটনাটা নিজের অনুভূতির মিশেলে জানানো। গত ২০ মার্চ ইয়াহুর ওয়েবসাইটে ফরাসি সংবাদ সংস্থা এএফপির করা ‘কম্বোডিয়া সাসপেন্ড হিউম্যান ব্রেস্ট মিল্ক এক্সপোর্টস টু ইউএস’ নিউজটি চোখে পড়ে। পরে অবশ্য অন্যান্য আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমগুলো দেখি ফলাও করে এ খবর প্রচার করেছে। খবর থেকে যা জানা যায়,

২. নারীর বুকের দুধ বিক্রি সাময়িকভাবে বন্ধ করে দিয়েছে কম্বোডিয়া! যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক কোম্পানি অ্যামব্রোসিয়া এ দুধ কিনে নিত দেশটি থেকে। যুক্তরাষ্ট্রের যেসব মায়েরা তাদের সন্তানদের নিজের বুকের দুধ খাওয়াতে চান না, বা পারেন না তারাই মূলত চড়া মূল্যে এ দুধের ক্রেতা। ১৪৭ মিলি লিটারের এক প্যাক দুধ, কোম্পানিটি ২০ ডলারে (বাংলাদেশি টাকার হিসেবে ১৬শরও বেশি) বিক্রি করে। কবে থেকে এভাবে দুধ বিকিকিনি চলছে স্টোরিতে তা উল্লেখ না থাকলেও এএফপির জানায়, তারা মানুষের দুধের এই কেনা-বেচা নিয়ে সরেজমিনে একটি প্রতিবেদন করেছিল বেশকিছুদিন আগে। সেখানে কয়েকজন গরীব মহিলার ভাষ্যে, কিভাবে দারিদ্রতার কারণে তারা এ ব্যবসার সাথে জড়িয়ে যাচ্ছে তুলে ধরা হয়। সংবাদসংস্থাটির এ প্রতিবেদনের পরই মূলত নড়েচড়ে বসে কম্বোডিয়ার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। গত ২০ মার্চ এয়ারপোর্টে দুধের একটি চালান আটকে দেয় দেশটির কাস্টমস বিভাগ এবং কোম্পানিটীকে স্বাস্থ্যমন্ত্রণালয়ের সাথে যোগাযোগ করতে বলে। তবে সরকারের এ সিদ্ধান্তে ক্ষুব্দ হয়েছেন অনেক কম্বোডিয়ান নারী, যারা দুধ বিক্রিকে আয়ের একটি ভালো উৎস বিবেচনা করছেন।
একই দিনে গার্ডিয়ানে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে বলা হয়, জাতিসংঘের শিশু তহবিল যুক্তরাষ্ট্রের এ কোম্পানির কড়া সমালোচনা করে বলেছে, এমনটা চলতে থাকলে গরীব মায়ের সন্তানেরা বুকের দুধ না পেয়ে আরও অপুষ্টিতে পড়তে পারে। ইউনিসেফও যুক্তরাষ্ট্রের এ কোম্পানিটীর নিন্দা করেছে। তবে কোম্পানির পক্ষ থেকে এ ব্যবসার পক্ষে সাফাই গাওয়া হয়েছে।



৩. এতদিন জানতাম, ছেলেরা কথার ছলে মজা নেয়। কিন্তু আসলেই যে দুনিয়াব্যাপী নারীর বুকের দুধের ব্যবসাও হয় সেটা জানা ছিল না। ‘দুধ মা’ শব্দটা আমার কাছে বেশ পরিচিত। বিশেষ করে একটি মুসলিম পরিবেশে বেড়ে উঠায় বহুবার শুনেছি ইসলাম ধর্মের সবশেষ নবী হযরত মুহাম্মদের দুধ মা ‘হালিমা ও তার মহানুভবতার’ কাহিনী। সব ধর্মেই বোধহয় মা’রা অপারগ হলে সন্তানকে টাকার বিনিময়ে অন্যকোন মায়ের কাছে রেখে লালন পালনের বিষয়টির বৈধতা দেওয়া আছে। আমাদের বাঙালি সমাজে এ ধারা কতটা প্রচলিত আমার জানা নেই। অধিকাংশ বাঙালি পরিবরাই অর্থনৈতিকভাবে অসচ্ছল হওয়ায় এ সংস্কৃতি আমাদের এখানে সেভাবে বেড়ে উঠেনি, আন্দাজ করি। তবে কোন এক মায়ের কাছে রেখে সন্তান মানুষ করা আর কোন মায়ের দুধ কিনে আনা বিষয় দুটি আমার কাছে একদমই আলাদা মনে হয়েছে। প্রথমটি গ্রহণযোগ্য হলেও দ্বিতীয়টি অমানবিক ঠেকছে। এখানে আসলে স্রেফ ব্যবসা বা লোভের কাছে মানবতা ঠকছে।

৪. খবরটা পড়ে হয়তো অনেকেই মজা নেওয়ার চেষ্টা করবেন। জীবনের চলতি পথে কতকিছু নিয়ে আমরা ছেলেরা দুষ্টামি করি। মেয়েরাও তাদের মতো করে আমাদের নিয়ে করে। শিরোনাম দেখে দুষ্টামির ছলেই ক্লিক করে ছিলাম খবরে। কিন্তু পড়তে গিয়ে কেমন যেন ধরে এসেছে গলা। আমেরিকার যেসব মায়েরা টাকা আছে বলে, নিজের ও সন্তানের ফিটনেস ঠিক রাখতে আরেকজন মায়ের বুক খালি করে, সাত সাগড় পাড়ি দিয়ে দুধ কিনে নিয়ে যাচ্ছে তাদের কি কখনো হৃদয় ক্ষরণ হয় এ দুধ খেতে বা খাওয়াতে গিয়ে! যেসব মা'রা বিক্রী করছেন তাদের অনুভূতি জানতে চাই না। কারণ দারিদ্র্যতা অনেক কিছুই কেড়ে নেয়। সবচেয়ে বেশি নেয় ভালোবাসা বা ভালোলাগার অনুভূতি। নি:শেষ করে দেয় বোধ ও বুদ্ধি।

অ্যামেরিকার ওই কোম্পানি বলেছে, এটা একটি লাভজনক ব্যবসা। যার মাধ্যমে দরিদ্র পরিবারগুলোই সবচেয়ে বেশি লাভবান হচ্ছে। এটা একটা ব্যবসা এই সত্যটা বোঝার পরও এ ব্যবসাটা মানতে পারলাম না বলে সরি। যদি আমার হাতে কোন জাদু থাকত, তাহলে আমি তা দিয়ে শুধু এ ব্যবসার ইতি টানতে চাইতাম। ধরণী, তুমি তোমার সন্তানদের প্রতি আর একটু দয়াবান হও। বর্ষার বারী দিয়ে ধূয়ে দাও সব পঙ্কীলতা।

সর্বশেষ এডিট : ০৫ ই এপ্রিল, ২০১৭ রাত ১১:২১
৫টি মন্তব্য ৫টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

একটি ছবি ব্লগ ও ছবির মতো সুন্দর চট্টগ্রাম।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৮:৩৮


এটি উন্নত বিশ্বের কোন দেশ বা কোন বিদেশী মেয়ের ছবি নয় - ছবিতে চট্টগ্রামের কাপ্তাই সংলগ্ন রাঙামাটির পাহাড়ি প্রকৃতির একটি ছবি।

ব্লগার চাঁদগাজী আমাকে মাঝে মাঝে বলেন চট্টগ্রাম ও... ...বাকিটুকু পড়ুন

মেহেদী নামের এই ছেলেটিকে কি আমরা সহযোগীতা করতে পারি?

লিখেছেন ইফতেখার ভূইয়া, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ১০:০৪


আজ সন্ধ্যায় ইফতার শেষ করে অফিসের কাজ নিয়ে বসেছি। হঠাৎ করেই গিন্নি আমার রুমে এসে একটি ভিডিও দেখালো। খুলনার একটি পরিবার, ভ্যান চালক বাবা তার সন্তানের চিকিৎসা করাতে গিয়ে হিমশিম... ...বাকিটুকু পড়ুন

দ্য অরিজিনস অফ পলিটিক্যাল জোকস

লিখেছেন শেরজা তপন, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ১১:১৯


রাজনৈতিক আলোচনা - এমন কিছু যা অনেকেই আন্তরিকভাবে ঘৃণা করেন বা এবং কিছু মানুষ এই ব্যাপারে একেবারেই উদাসীন। ধর্ম, যৌন, পড়াশুনা, যুদ্ধ, রোগ বালাই, বাজার দর থেকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। ভালোবাসা নয় খাবার চাই ------

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৯ শে মার্চ, ২০২৪ দুপুর ১:০৬


ভালোবাসা নয় স্নেহ নয় আদর নয় একটু খাবার চাই । এত ক্ষুধা পেটে যে কাঁদতেও কষ্ট হচ্ছে , ইফতারিতে যে খাবার ফেলে দেবে তাই ই দাও , ওতেই হবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

জাতীয় ইউনিভার্সিটি শেষ করার পর, ৮০ ভাগই চাকুরী পায় না।

লিখেছেন সোনাগাজী, ২৯ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৪:৫৭



জাতীয় ইউনিভার্সিটি থেকে পড়ালেখা শেষ করে, ২/৩ বছর গড়াগড়ি দিয়ে শতকরা ২০/৩০ ভাগ চাকুরী পেয়ে থাকেন; এরা পরিচিত লোকদের মাধ্যমে কিংবা ঘুষ দিয়ে চাকুরী পেয়ে থাকেন। এই... ...বাকিটুকু পড়ুন

×