somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

একটি মৃত্যু সমাচার!

৩০ শে এপ্রিল, ২০১৭ সন্ধ্যা ৭:২৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
ফারুক ভাই মরে গেছে।

এখন সাড়ে তিন হাত কবরে একা একা শুয়ে আছে মানুষ হাসানোর এক অসাধারণ ক্ষমতা নিয়ে জন্ম নেওয়া এই সিনিয়র সাংবাদিক। তার মৃত্যুতে রক্ত সম্পর্কের বাইরে কেউ হারালো বড় ভাই, কেউ প্রিয় কলিগ, কেউবা বন্ধু আর আমি হারালাম একটা শক্ত আশ্রয়, আমার বাউণ্ডুলে জীবনের নিরব ও সরব এক সমর্থককে। আহারে মানবজীবন।

আমাদের সম্পর্কটা ছিল নিরেট ভালোবাসার। দেশ ছাড়ার পর যে অল্প ক’জনের সাথে নিয়মিত বিরতিতে কথা হতো তাদের একজন ফারুক ভাই। বহুবার বলেছি, মানুষ হিসেবে ঢাকাইয়াদের খুব ভালো লাগে আমার। এই ভালো লাগাকে ভালোবাসার পর্যায়ে নিয়ে গিয়েছিলেন তিনি।


ছিলেন ততটাই নিরাপদ যতটা হলে নির্ভয়ে মনের কথা বলা যায়। আমাদের কথা হতো, সাংবাদিকতা, স্বদেশ থেকে বিদেশ হয়ে স্বজীবন নিয়ে। জীবনের আলোচনায় এসে আমি চুপ থাকতাম তিনি বলে যেতেন। শুনতে না চাইলেও শুনাতেন। আমাকে ঢাকার জামাই বানাবেন! তার এই সখের কথা দেশে থাকতেই বারবার করে বলেছেন। দেশ ছাড়ার পর প্রবাসী এক আঙ্কেল ছাড়া ভাই দ্বিতীয়জন, যিনি ‘দ্বিতীয় জীবন’ প্রসঙ্গে খুঁচাতেন। ক’দিন আগেও কথা হলো, বলল দেশে আসো। তোমাকে নিয়ে আমার চিন্তা আছে।


আর আমার সাংবাদিকতা? ইস্তাম্বুলে থাকাকালীন অন্তত একটা মিডিয়ার সাথে প্রফেশনালি কাজ করি এটা তিনি খুব করে চাইতেন। করব করব বলতাম কিন্তু করছি না। একদিন আরেক সিনিয়রকে দিয়েও ফোন দেওয়ালেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত প্রফেশনালী আমার কাজ শুরু করা হলো না। তিনি কষ্ট পেয়েছেন বুঝেছি, এর আগেও নানাভাবে কষ্ট দিয়েছি। শুক্রবার দুপুরে ভাবির হাতের রান্না খাব বলে তাকে অপেক্ষায় রেখেছি, যেতে পারিনি। কিন্তু এসবের কোনকিছুই তার স্নেহ থেকে আমাকে বঞ্চিত করেনি! ভালো মানুষ সবায়কেই ভালোবাসে। আমিও হয়তো সে কারণেই তার স্নেহ-ভালোবাসা পেতাম।

কত স্মৃতি ভাইয়ের সাথে আমার। কত পরিকল্পনা। তিনি ইস্তাম্বুলে ঘুরতে আসবেন। আমি দেশে আসলে একসাথে আবার ঢাকার রেস্টুরেন্টে ঘুরে ঘুরে খাব। পুরো দেশ চষে বেড়াব। তাকে আমি বলতাম, আপনি আমার ফ্রেন্ড, বড় ভাই না। তিনি হাসতেন। একটু থেমে আবার বলতাম আপনি বড়জোড় সিনিয়র ফ্রেন্ড। তিনি এবেলাও হাসতেন। তারপর বলতাম অ্যাক্সিলেন্ট সিনিয়র ফ্রেন্ড, এবার তিনি হুহু করে হাসতেন। আমিও হাসতাম। সে হাসি ছিল নির্মোহ, যে হাসির কাঁধে মাথা রেখে নিরাপদে পথ চলা যায়। এই মানুষটা আজ আর নেই। কীভাবে মেনে নেব এ সত্যটা আমি! আমার প্রিয় মানুষগুলোইবা কেন এত তাড়াতাড়ি চলে যাচ্ছে, এই প্রশ্নের উত্তর আমি কার কাছে খুঁজব?


খুব অতৃপ্তি নিয়ে যুগান্তর ছেড়ে যেতে হয়েছিল সাদা মনের এই মানুষটাকে। তবে বিশেষ প্রতিনিধি হিসেবে বাংলা ট্রিবিউনে সুখীই ছিলেন। তুরস্কের ব্যর্থ সেনা অভ্যুত্থানের দিন আমাকে কয়েকবার উষ্মা প্রকাশ করে বলেছেন, 'বড় পত্রিকার আবেগ না ছাড়লে পরে পস্তাবা। আমার জীবন থেকে শেখ।' আমি অনেক কিছুই পেয়েছি তার কাছ থেকে, শিখেছি, তিনি শিখিয়েছেন। কিন্তু আরও অনেক কিছু যে শেখার ছিল ভাই, অনেক কিছু জানা ও বোঝার ছিল। আমি হয়তো এই দেশে বহু জ্ঞানী মানুষের দেখা পাব। কিন্তু আপনার মতো আমাকে এতএত ভালোবাসে এমন মানুষ কই পাব? কে আমাকে বাইকের পেছনে করে ঘুরাতে ঘুরাতে হঠাৎ রাস্তার মাঝে নামিয়ে বলবে চলো খাই! আই লাভিউ সো মাচ ভাই। আপনাকে নিয়ে লিখতে গিয়ে কাঁদছি। এই কান্না হয়তো আপনার একলা ঘরের একা জীবনে কোন কাজে আসবে না, তবু নির্বাক অশ্রু ফোটাগুলো শ্রদ্ধার অঞ্জলী হিসেবে গ্রহণ করুন। আই উইল বি মিসিং ইউ ভাই। আই শ্যাল

খবরের লিংক- বাংলা ট্রিবিউনের সাংবাদিক ওমর ফারুক আর নেই
সর্বশেষ এডিট : ০১ লা মে, ২০১৭ রাত ১২:৪৫
১০টি মন্তব্য ৯টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমার কিছু ভুল!

লিখেছেন মোঃ খালিদ সাইফুল্লাহ্‌, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১:৪৮

১। ফ্লাস্কে চা থাকে। চা খেতে টেবিলে চলে গেলাম। কাপে দুধ-চিনি নিয়ে পাশে থাকা ফ্লাস্ক না নিয়ে জগ নিয়ে পানি ঢেলে দিলাম। ভাবছিলাম এখন কি করতে হবে? হুঁশ ফিরে এল।... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাংলাদেশের লোকসংস্কৃতিঃ ব্যাঙের বিয়েতে নামবে বৃষ্টি ...

লিখেছেন অপু তানভীর, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:০০



অনেক দিন আগে একটা গল্প পড়েছিলাম। গল্পটা ছিল অনেক এই রকম যে চারিদিকে প্রচন্ড গরম। বৃষ্টির নাম নিশানা নেই। ফসলের মাঠ পানি নেই খাল বিল শুকিয়ে যাচ্ছে। এমন... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাংলাদেশি ভাবনা ও একটা সত্য ঘটনা

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১০:১৭


আমার জীবনের একাংশ জুড়ে আছে; আমি চলচ্চিত্রাভিনেতা। বাংলাদেশেই প্রায় ৩০০-র মত ছবিতে অভিনয় করেছি। আমি খুব বেছে বেছে ভাল গল্পের ভাল ছবিতে কাজ করার চেষ্টা করতাম। বাংলাদেশের প্রায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাকি চাহিয়া লজ্জা দিবেন না ********************

লিখেছেন মোহাম্মদ সাজ্জাদ হোসেন, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১০:৩৫

যখন প্রথম পড়তে শিখেছি তখন যেখানেই কোন লেখা পেতাম পড়ার চেষ্টা করতাম। সেই সময় দোকানে কোন কিছু কিনতে গেলে সেই দোকানের লেখাগুলো মনোযোগ দিয়ে পড়তাম। সচরাচর দোকানে যে তিনটি বাক্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

কুড়ি শব্দের গল্প

লিখেছেন করুণাধারা, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:১৭



জলে ভাসা পদ্ম আমি
কোরা বাংলায় ঘোষণা দিলাম, "বিদায় সামু" !
কিন্তু সামু সিগারেটের নেশার মতো, ছাড়া যায় না! আমি কি সত্যি যাবো? নো... নেভার!

সানমুন
চিলেকোঠার জানালায় পূর্ণিমার চাঁদ। ঘুমন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

×