somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পাহাড় নিয়ে ৯/৬ কথন ও জিজ্ঞাসু মন

০৬ ই জুন, ২০১৭ রাত ১০:০৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
১. ভারতের অনলাইন

পত্রিকাগুলোর কমেন্টে, বিভিন্ন গ্রুপে জোরেসোরেই এ ধরনের একটা প্রচারণা চলছে, বাংলাদেশে চাকমা হিন্দুদের উপর মুসলমানদের আক্রমণ। খুন, ধর্ষণ, লুটতরাজ। হিন্দু জীবন বিপন্ন। চাকমারা ধর্ম বিবেচনায় কিসের অনুসারী! সরকার এবং এ গোষ্ঠী, উভয়েরই উচিৎ এদিকে নজর দেওয়া। (বাংলাদেশের কিছু গ্রুপ থেকেও)
২. টঙ্গীর ব্রয়লার কারখানায় গত বছর লাগা যে আগুনের ছবিকে চাকমা পল্লীর ছবি বলে ছেপে দিয়েছে বেশকিছু জাতীয় দৈনিক, তারা কি এ জন্য ক্ষমা চাইবে? একটা সম্মিলিত বিবৃতির মাধ্যমে দু:খ প্রকাশ করবে!
৩. বেশকিছু গণমাধ্যম পাহাড়ি/ক্ষুদ্র নৃতাত্ত্বিক গোষ্ঠী না লিখে পাহাড়িদের ‘আদিবাসী’ লিখে যাচ্ছে। পাহাড়ে যারা বসবাস করছে তাদের মধ্যে কার পরিচয় কী হবে এ নিয়ে তর্ক হতে পারে। তবে গণমাধ্যমের উচিৎ এক্ষেত্রে সতর্ক হওয়া। রাষ্ট্র ও তার সংবিধান যা বলছে এর বাইরে একজন ব্যক্তির যেভাবে বলতে পারার সুযোগ থাকে একটি সংবাদ মাধ্যম সেটা পারে না। বিশেষ করে তাদের নিউজের বেলায়। পত্রিকা বা টিভিওয়ালাদেরতো মতামত জানানোর জন্য নিজস্ব মতামত বিভাগ রয়েছে।
৪. যুবলীগের স্থানীয় এক নেতার খুন হওয়াকে কেন্দ্র করে এ সংঘাতের শুরু। একটি মৃত্যু প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করার একটা উপলক্ষও। ওখানকার বাঙালিরা সে সুযোগটাই নিয়েছে বলে ধারণা করি। সুযোগ পেলাম পাহাড়িদের মেরে দিলাম। দে মেরে।
ধরে নিলাম, যুবলীগ নেতা নয়ন, পাহাড়ি কোন গোষ্ঠীর হাতেই খুন হয়েছে। কিন্তু এতে কি সাধারণ পাহাড়িদের উপরে এ আগুন, অনাচারকে বৈধতা দেওয়া যায়? যে ক’শ ঘরবাড়ি পুরানো হলো, তার প্রায় সবই সাধারণ পাহাড়ির। ওদেরকে পুড়িয়ে কার উপরে কার শোধ নেওয়া হলো? যারা খুন করে, যারা পুড়ায় এদের অধিকাংশই রাজনৈতিক শক্তিতে বলিয়ান। প্রশাসন কি পারবে এদের আইনের আওতায় এনে শাস্তি নিশ্চিত করতে!
৫. প্রশাসনের অজানা থাকার কথা না, একটি খুনকে কেন্দ্র করে সংঘাত হতে পারে। তাহলে তারা কেন আগে থেক সতর্ক ব্যবস্থা নিয়ে রাখল না। প্রশাসনের এই ব্যর্থতার জবাবদিহী কে চাবে, কার কাছে আর কেইবা করবে? আগুণে যতগুলো পরিবারের ঘর পুড়ল, সম্পদ গেল, যারা বাড়ি ছেড়ে পালাল তাদের এই দুর্ভোগের দায়ভার কি আমরা যারা সমতলের বাসিন্দা তারাও এড়াতে পারি?
৬. আমি বুঝি না, কেন এত বছরে পাহাড়ের সমস্যার স্থায়ী একটা সমাধান হয় না। রাজনীতির স্বার্থে এ সমস্যটা জিইয়ে রাখা হলে এর ফল ভোগ করতে হবে একদিন! সরকার বা পাহাড়ি উভয়কেই দায়িত্বশীল হতে হবে। পাহাড়িদের মধ্যে ‘আমাদের ভূমি’ বলে যে অ্যারোগেন্সি এ অবস্থা থেকে সরে আসার বিকল্প নেই। কথায় কথায় ওখানকার বাঙালিদের স্যাটেলার বলার সুযোগ আছে বলেও আমার মনে হয় না। কোট্টিদের ছাড়া, বাকিরা কিন্তু রাজধানী ঢাকাতে স্যাটেলার। এছাড়া পাহাড়িরা ওখানকার আদি বাসিন্দা কি না এ প্রশ্নেরও একটা সমাধান হওয়া উচিৎ।
আর সরকারের উচিৎ এ ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীগুলোর উন্নয়নে স্বল্প ও দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা গ্রহণ করা। সুপেয় পানি, শিক্ষা, অন্ন, বাসস্থান বা স্বাধীনভাবে বাঁচার সুযোগ দেওয়া। ওদের বাড়ি-ঘর, জমি-জমা যেন দখল না হয় সে নিশ্চয়তা দেওয়া। জুম চাষের জন্য বিশেষ ঋণ বরাদ্ধ দেওয়া। ওদের সামগ্রিক উন্নয়নে দরকার হলে বিশেষ প্রকল্প ঘোষণা করা। আধুনিক সব স্কুল, কলেজ প্রতিষ্ঠা করে এ অঞ্চলের ছেলে-মেয়েদের শিক্ষা নিশ্চিৎ করা।
তাদের ভাষা ও সংস্কৃতি, দেশ হিসেবে বাংলাদেশের গৌরব বাড়ায়, বাংলাদেশকে মহিমান্বিত করে এ কথা আমাদের মনে রেখেই কাজ করতে হবে। সরকার চাইলে পাহাড়ি জনপদ হতে পারে বাংলাদেশের সাংস্কৃতিক রাজধানী।
৭. এখানে মিডিয়া এবং যারা মানবাধিকার ফেরী করে বেড়ান তারা দায়িত্বশীয় হলে জাতি বেঁচে যায়। তারা যদি যে কোন সংঘাতে উস্কানি দেওয়ার পাশাপাশি, পাহাড়িরে শিক্ষা, চিকিৎসা ইত্যাদি মৌলিক চাহিদা নিশ্চিত করতে কিছু ব্যবস্থা নেন তাহলে পাহাড়ি তথা মানুষ উপকৃত হয়। কিছু এনজিওকে পাহাড়িদের অধিকার নিয়ে মানবন্ধন আর ফটোসেশনে যতটা আগ্রহী দেখা যায় ওদের ভাগ্যের উন্নয়নে কাজ করতে ততটাই অনাগ্রহী মনে হয়। এটা কেন হয়? পাহাড়িরা শিক্ষিত হয়ে গেলে, সুনাগরিক হিসেবে গড়ে উঠলে ব্যবসা লাটে উঠবে বলে!
৮. দোষীদের বিচারের আওতায় আনার কোন বিকল্প নাই। নয়ন হত্যার সাথে যারা জড়িত তাদের ধরে শাস্তি দেন। নয়নের পরিবারকে ক্ষতিপূরণ দেন। এই হত্যাকে কেন্দ্র করে যারা পাহাড়িদের বাড়ি-ঘড় পুড়াল তাদের আইনের আওতায় আনতেই হবে। শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে শান্তি ও স্থিতিশীলতার জন্য, ন্যায় বিচারের জন্য, নাগরিক অধিকার রক্ষার জন্য। একটি জনপদের বৈচিত্র রক্ষা করতে পাহাড়ের সৌন্দর্য্য আমাদের রক্ষা করতে হবে। পাহাড়ে যেসব বাঙালি, পাহাড়ী সন্ত্রাসী সংগঠন রয়েছে ওদের আইনের আওতায় আনা যায় না আমি বিশ্বাস করি না। প্রশাসন চাইলে তা সময়ের ব্যাপার মাত্র। এ সংঘাত রুখতে না পারার ব্যর্থতার জন্য স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় না হোক, অন্তত স্থানীয় প্রশাসনের উচিৎ ক্ষমা চাওয়া। ক্ষমা চেয়ে, ভবিষ্যতে এমন ঘটনা আর ঘটবে না এ প্রতিশ্রুতি দেওয়া।

শেষ করি,
যেসব পরিবারের বাড়ি-ঘর পুড়ল সরকারি ব্যবস্থাপানায় তা পুননির্মান করা হোক, যারা আহত হয়েছে তাদের ফ্রি চিকিৎসা দেওয়া হোক। পাশাপাশি সকল ক্ষতিগ্রস্থ পরিবারকে এককালিন ক্ষতিপূরণও দেওয়া হোক। ভবিষ্যতে যেন এমন ঘটনা ঘটতে না পেরে প্রশাসন তা নিশ্তিত করুক।

একটি সমৃদ্ধ ও সব ধর্মের, সব গোষ্ঠীর সুখী বাংলাদেশ কামনায়।
লেখাটা যুগান্তরে পড়তে এখানে ক্লিক করুন,

সর্বশেষ এডিট : ০৯ ই জুন, ২০১৭ রাত ২:২৯
৩টি মন্তব্য ৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

খুলনায় বসবাসরত কোন ব্লগার আছেন?

লিখেছেন ইফতেখার ভূইয়া, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:৩২

খুলনা প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় তথা কুয়েট-এ অধ্যয়নরত কিংবা ঐ এলাকায় বসবাসরত কোন ব্লগার কি সামুতে আছেন? একটি দরিদ্র পরিবারকে সহযোগীতার জন্য মূলত কিছু তথ্য প্রয়োজন।

পরিবারটির কর্তা ব্যক্তি পেশায় একজন ভ্যান চালক... ...বাকিটুকু পড়ুন

একমাত্র আল্লাহর ইবাদত হবে আল্লাহ, রাসূল (সা.) ও আমিরের ইতায়াতে ওলামা তরিকায়

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৬:১০



সূরাঃ ১ ফাতিহা, ৪ নং আয়াতের অনুবাদ-
৪। আমরা আপনার ইবাদত করি এবং আপনার কাছে সাহায্য চাই।

সূরাঃ ৪ নিসার ৫৯ নং আয়াতের অনুবাদ-
৫৯। হে মুমিনগণ! যদি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। মুক্তিযোদ্ধা

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:২১



মুক্তিযুদ্ধের সঠিক তালিকা প্রণয়ন ও ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা প্রসঙ্গে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক বলেছেন, ‘দেশের প্রতিটি উপজেলা পর্যায়ে মুক্তিযোদ্ধা যাচাই বাছাই কমিটি রয়েছে। তারা স্থানীয়ভাবে যাচাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতীয় রাজাকাররা বাংলাদেশর উৎসব গুলোকে সনাতানাইজেশনের চেষ্টা করছে কেন?

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:৪৯



সম্প্রতি প্রতিবছর ঈদ, ১লা বৈশাখ, স্বাধীনতা দিবস, বিজয় দিবস, শহীদ দিবস এলে জঙ্গি রাজাকাররা হাউকাউ করে কেন? শিরোনামে মোহাম্মদ গোফরানের একটি লেখা চোখে পড়েছে, যে পোস্টে তিনি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঘুষের ধর্ম নাই

লিখেছেন প্রামানিক, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:৫৫


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

মুসলমানে শুকর খায় না
হিন্দু খায় না গাই
সবাই মিলেই সুদ, ঘুষ খায়
সেথায় বিভেদ নাই।

হিন্দু বলে জয় শ্র্রীরাম
মুসলিম আল্লাহ রসুল
হারাম খেয়েই ধর্ম করে
অন্যের ধরে ভুল।

পানি বললে জাত থাকে না
ঘুষ... ...বাকিটুকু পড়ুন

×