আমার বন্ধু হাদী কে দেখেছি দুপুরে সিঙ্গারা খেয়ে প্রায় অর্ধেক অনার্স লাইফ কাটিয়ে দিয়েছে। স্বাস্থ্য বলতে লিকলিকে শরীর আর ছয় ফিটের দেহখানায় কেজি পঞ্চাশেক হাড্ডি মাংসের মিশেল।
এখন ও ভালোই আছে ট্রাফিক পুলিশের সার্জেন্ট। বাম ছাত্র রাজনীতি করায় ওর সকালের নাস্তা দুপুরে গড়াতো আর দুইটা সিঙ্গারা মেরে দিয়ে পকেটের টাকাটাও বাচিয়ে নিতো। ডায়েটের কোন নাম গন্ধও ওর মাঝে ছিলোনা আর সার্জেন্টই বা হবে এইরকম চিন্তাও ছিলোনা তবে লিকলিকে শরীর খানা আমাদের মতো মুটকোদের জন্য হিংসারই বটে।
কখনো কখনো ভেবেছি একটা রিস্ক নিবোই নিবো
ডায়েট টা শুরু করবোই করবো।
এইতো সেদিন ভাবলাম শুরু করে দেয়, দুপুরে যেহেতু বাসায় বউ নেই হোটেলে খেতে হবে। ভাবলাম বাড়তি টাকাটাও বেচেঁ যাবে ডায়েট টাও শুরু হয়ে যাবে।
গেলাম কানু মামার হোটেলে।
হোটেলে ঢুকার পথেই গরম গরম পুড়ি রাখা দেখতে ভালোই লাগছিলো ভাবলাম একটা হাতে নিয়ে খেতে খেতে যায় আর বসে বসে আর একটা খেয়ে চলে আসবো।
প্রথম টা শুধু শুধু খেলাম পরের একটা একটু মাংসের জোল/ ছালুন দিয়ে মুখে দিতেই কেমন অমৃত অমৃত লাগলো তাই ভাবলাম ধুর প্রথম দিন এতো কম দিয়ে ডায়েট শুরু করা উচিত হবেনা বাসায় গেলে আবার ক্ষুধা লাগতে পারে তাই আরো দুইটা মেরে দিলাম নিমেষেই।
তারপর ভাবলাম উঠে যায় কিন্তু কানু মামা বললো এখন কম কম আসেন কি ব্যাপার ? বললাম ঐ যে বন্ধুরা খাওয়া কমিয়ে দিছে সাথে সাথে আমিও চেষ্টায় আছি আরকি।
কিন্তু মামা বললো আজ একটা স্পেশাল আইটেম আছে দুপুর টা এখানেই মেরে দেন, আমি বললাম দিলাম তো মামা দুইটার জায়গায় চারটে মেরে।
মামা বললো, এতো বড় দেহে এগুলান দিয়ে হয়না,
বসেনতো আমি দিচ্ছি। ভাবলাম থাক এতো করে যখন বলছে এক প্লেট মেরেই দেয়। না হয় রাতটাও চলে যাবে বাসাই যেহেতু বউ নেই। তবে এক প্লেটের বেশি না।
নো কম্প্রোমাইজ ডায়েটের ক্ষেত্রে।
মামা টাকি মাছের ভর্তা আর বেগুনের ভাজি নিয়ে আসছে, গরম ভাত ধোয়ার সাথে সাথে ঘ্রাণ উঠছে।
এইত্তেরি, মামা একটা লেবু দেও দেখি।
নিমিষেই প্লেট খালি। ভাবলাম উঠি, পাশ ফিরতেই দেখি মামা আরেক প্লেট ভাত আর দেশী মুরগার রান নিয়ে দাড়ানো।(মুরগা বললাম মামা বললো তাই)
উঠা যাবেনা মামার কড়া আদেশ খেতেই হবে আমি বললাম মামা সম্ভব না ডায়েটে আছি।
মামা বলে ডায়েট ফায়েট এগুলো এই বয়সে বাদ দেন কয়দিনের জীবন।
আমিও বলি কথা তো সত্যেই, না হয় কালকে থেকেই শুরু করবো ডায়েট।
মামা দেখি আরো এক প্লেট ভাত নিয়ে হাজির আমি বললাম মামা কি শুরু করলেন ? আর চলবোনা কোনভাবেই ফেরত নিয়া যান এইটা।
মামায় কিনা বলে, স্পেশাল আইটেম তো এখনো রয়েই গেছে, সমুদ্রের মাছ। আমি কইলাম আজ এগুলান কই থাইকা আনছেন?
মামা কয় একটা অনুষ্ঠানে দেওয়ার কথা ছিলো অনেক কষ্টে জোগাড় করা ওদের আয়োজন কমে যাওয়ায় বাড়তিটা আমার স্পেশাল কাষ্টমারদের জন্য। কোনমতে আরেক প্লেট খেয়ে পালিয়ে আসলাম বাসায়।
নাহ একটু বেশিই হয়ে গেছে পানিটাও খেয়ে আসতে পারলাম না ভালো ভাবে। ভাবলাম ফ্রিজ থেকে পানি খাই খেতে গিয়ে দেখলাম ফ্রিজে দই মিষ্টি রাখা তো কি আর করা একটু দই আর একটা মিষ্টি মেরে দিলাম হজমের গতি তরান্বিত হবে ভেবে।
খেয়ে একটু বিছানায় গা টা এলিয়ে দিলাম। ঘুম ভাঙ্গলো তখন বিকেল পাচঁটা তিরিশ বউ বাসায় এসে হাজির সাথে পুটলা পুঁটলি। বাপের বাড়ি থেকে আসার সময় যা থাকে আর কি।
ব্যাগ থেকে একটা একটা নামিয়ে রাখছে আর বলছে তোমার শাশুড়ি খুব কষ্ট করে তোমার প্রিয় মাংসের পিঠা বানিয়ে দিছে গরম গরম খাও নয়তো কোন স্বাদই পাবা না।
আমি বললাম হবে না আমার দ্বারা। সে বললো তা হবে কেন শাশুড়ি কষ্ট কইরা বানাইছেনা, এটা তো ভালো লাগবোই না। এটাতো আর বন্ধুর বাসায় বানানো না যে ভালো লাগবে আর খেয়ে এসে বাসায় বলবা অমৃত অমৃত।
আমি চিন্তা করলাম কি এমন হবে আজ আর ডায়েট না করলে বরং বউ রাগ করলে আবার খরচ বেড়ে যাবে।
সুতরাং চপাট চপাট করে আরো পাচঁটা পিঠা গলাধঃকরণ প্রিয় পিঠা বলে কথা।
মনে মনে ভাবলাম গুষ্টি কিলাই ডায়েটের।
খানিক পরেই দেখি বউ গরুর ভুড়ি ফ্রিজ থেকে নামিয়ে চুলোয় গরম দিচ্ছে আর বলছে রাতে চালের রুটি বানানো হবে।
আমি ভাবলাম ডায়েটের শ্রাদ্ধকার্য তাহলে রাতেই সেরে নেওয়া যাবে।
দুর শালার ডায়েট ....
কি ভাবছেন কেমনে কি ? আমি বলি রিস্ক একটা নিবোই নিবো ......
আবার বউ বাপের বাড়ি গেলেই শুরু করুম কানু মামার হোটেল থেকে শরীর টা তো বন্ধু হাদীর মতো হতেই হবে, কি বলেন ?
সর্বশেষ এডিট : ২১ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৭ সকাল ১০:৪১