somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

অতিতের স্মৃীতি

২৩ শে জানুয়ারি, ২০১৭ বিকাল ৩:৪৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

সকালে মায়ের ডাকাডাকিতে ঘুম ভাঙ্গে তূর্যের । ভার্সিতে যাওয়ার পর অভ্যাস হয়ে গেছে , সাড়ে আটটার আগে ঘুম না ভাঙ্গার । অনেক আড় মোড় ভেঙ্গে অবশেষে উঠে বসে । অনেক দিনের পুরানো ওর এই খাটটি । স্কুলজীবন, কলেজ জীবন সে এই খাটে শুয়েই কাটিয়েছে । আজ অনেকদিন পর আবার সেই পরিচিত খাটটিতে শুয়ে ঘুম যেন ছাড়ছেই না । অনেক দিনের পুরাতন বন্ধুটিকে আকড়ে ধরে রাখতে চাইছে । তবুও জোর করেই উঠে পড়ে তূর্য । দাঁত ব্রাশ করতে করতে রাস্তার দিকে এগিয়ে যায় । শীতের সকাল, পুব আকাশে রক্তিম সূর্যটা তাপ ছড়িয়ে দিচ্ছে , তবে এখনও চারিদিকে কুয়াশা মুড়ে আছে । রাস্তার পাশে খেজুর গাছ থেকে রস আহরণের জন্য ছোট কলস পাতা হয়েছে । একটা কাঠবিড়ালী এসে চুকচুক করে রস খাচ্ছে । কাঠবিড়ালীটির পিঠের উপর সাদা সাদা দাগ । তূর্যকে দেখেও সে ভয় পাচ্ছে না । আপন মনে রস খেয়েই চলেছে । কাঠবিড়ালী দেখে তূর্যের ছোট বেলার কথা মনে পড়ে যায় । রোজ রোজ দাদুর কাছে গল্প শুনতো । দাদু তূর্যকে মুখে মুখে রামায়ন, মহাভারত, রাজকুমার, রাজকুমারী, পাতালপুরের দৈত্যদের কাহিনী , ভূতের গল্প, আরো কত কি শোনাত, গল্প শুনতে শুনতে ঘুমিয়ে পড়ত তূর্য । রামায়নে আছে, রামচন্দ্র যখন সীতাকে উদ্ধার করার জন্য সেতু বন্ধন করেন , তখন নাকি এই কাঠবিড়ালীও রামচন্দ্রকে সাহায্য করেছিল । সে জন্য নাকি কখনও কাউকে ছোট মনে করতে নেই । দাদুর প্রায় প্রতিটি গল্পে কিছু শিক্ষণীয় বিষয় থাকত । তাই দাদুর দেয়া এই শিক্ষাটি আজও তূর্য ভোলে নি । তাই সেও কাউকে ছোট মনে করে না । পাশের গ্রামের ছাদেক আলী গাছী মানুষ । খেজুর গাছ কেটে রস আহরণে উস্তাদ ,গাছেও উঠতে পারে হনুমানের মত । আশেপাশের দুই তিন গ্রামের খেজুর গাছ থেকে রস আহরণের দায়িত্ব তাঁর একার । এই শীত মৌসুমে তার ইনকামও ভাল । ছাদেক আলী তূর্যকে দেখে বলল, “কেমন আছ বাজান ?” “জ্বি ভাল, আপনি কেমন আছেন চাচা ?” উত্তর দেয় তূর্য ।
ছদেক বলে, “ এই আল্লায় রাখছে ভাল , তা তোমার পড়ালেহা কেমন চলছে আব্বা ?” তূর্য সংক্ষেপে বলে, “চলছে ভালই” ।
ছাদেক আলী গাছে উঠতে উঠতে বলে, “তুমি নাকি কম্পিটার না কি যেন পড়তিছো, আমি বাপু অতশত বুঝি না ।
“জ্বি কম্পিউটার সাইন্সে পড়ছি, তা রস এখন কেমন হচ্ছে ?” প্রশ্ন করে তূর্য ।
“আর রস কই বাপজান ? মানুষেরও রস কস নেই, গাছেরও রস কস নেই, আগে দিনে দুইবার হাড়ি পাল্টানো লাগত আর এহন এক হাড়িও ভরে না ।” বলে গাছ থেকে নেমে আসে ছাদেক আলী । ছাদেক ব্যস্ত
মানুষ । তাড়াতাড়ি হাড়ি থেকে রস ঢেলে ছুটে যায় অন্য গাছে । রাস্তা দিয়ে ছোট ছোট ছেলেমেয়েরা প্রাইভেট পড়ে ফিরছে । এরা সবাই ক্লাস ওয়ান থেকে এইটে পড়ে । এক সময় এই রাস্তাটি কাঁচা ছিল । তূর্যরা পায়ে হেঁটে স্কুলে যেত । বর্ষায় এক হাটু কাদা হত রাস্তায় আর শীতের সময় ধুলা । ওদের পাড়ার একটা মেয়ে ছিল, নাম সুনিতা । তূর্য ছিল ক্লাসের সবচেয়ে ভাল ছাত্র আর সুনিতা ছিল ক্লাসের সবচেয়ে খারাপ ছাত্রী । তবুও কোন এক অজানা কারনে সুনিতাকেই তূর্যের সবচেয়ে বেশি ভাল লাগত । সে বার হল কি, রাস্তায় দৌড়াতে গিয়ে একটা ইটে লেগে তূর্যের পা কেটে রক্ত বের হচ্ছিল , কেউই খেয়াল করি নি । সবাই তূর্যকে ছেড়ে আগে চলে গেছে । তখন সুনিতা লক্ষ করেছিল তূর্য পেছনে, কাছে গিয়ে দেখে পা থেকে রক্ত ঝরছে । সঙ্গে সঙ্গে পাশ থেকে দূর্বা ঘাস মুখে নিয়ে পিসে ওর পায়ের রক্ত বন্ধ করে দিয়েছিল । সুনিতা পড়ালেখা ঠিকমত না করায় দুই বছরের জুনিয়র হয়ে যায় । তূর্য ভেবেছিল যে, একদিন সুনিতাকে ওর ভাল লাগার কথা বলবে , কিন্তু সে কথা আর বলা হয় নি । কারণ তার আগেই বিয়ে হয়ে যায় সুনিতার । আজ থেকে প্রায় পাঁচ বছর আগের ঘটনা । তখন তূর্য কলেজে পড়তো । সুনিতার একটা মেয়েও হয়েছে , খুব সুন্দর ফুটফুটে বাচ্ছা । সুনিতা এসেছে বাপের বাড়ি , তবে এবার এখনও দেখা হয় নি । হঠাৎই পেছন দিকে তাকিয়ে দেখে সুনিতার মেয়েটি ওর দিকেই আসছে । মেয়েটি মামা, মাম বলে কোলে উঠতে চাইছে । দেখে সুনিতাও পেছন পেছন আসছে আর মুচকি মুচকি হাসছে । সুনিতার মেয়েটিকে কোলে নিয়ে আদর করছিল আর মনের মধ্যে এক অদ্ভুত অনুভূতি খেলা করছিল তূর্যে । সে অনুভূতি কাউকে বোঝানো যায় না ।
সর্বশেষ এডিট : ২৪ শে জানুয়ারি, ২০১৭ সকাল ১১:১৪
১টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যা ও পদ্মশ্রী পুরস্কার

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৫৬



এ বছরের পদ্মশ্রী (ভারতের চতুর্থ সর্বোচ্চ অসামরিক সম্মাননা) পদকে ভূষিত করা হয়েছে, বাংলাদেশের রবীন্দ্র সংগীত এর কিংবদন্তি শিল্পী রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যাকে।

আমরা গর্বিত বন্যাকে নিয়ে । ...বাকিটুকু পড়ুন

কষ্ট থেকে আত্মরক্ষা করতে চাই

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৯



দেহটা মনের সাথে দৌড়ে পারে না
মন উড়ে চলে যায় বহু দূর স্থানে
ক্লান্ত দেহ পড়ে থাকে বিশ্রামে
একরাশ হতাশায় মন দেহে ফিরে।

সময়ের চাকা ঘুরতে থাকে অবিরত
কি অর্জন হলো হিসাব... ...বাকিটুকু পড়ুন

রম্য : মদ্যপান !

লিখেছেন গেছো দাদা, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৫৩

প্রখ্যাত শায়র মীর্জা গালিব একদিন তাঁর বোতল নিয়ে মসজিদে বসে মদ্যপান করছিলেন। বেশ মৌতাতে রয়েছেন তিনি। এদিকে মুসল্লিদের নজরে পড়েছে এই ঘটনা। তখন মুসল্লীরা রে রে করে এসে তাকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

= নিরস জীবনের প্রতিচ্ছবি=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৪১



এখন সময় নেই আর ভালোবাসার
ব্যস্ততার ঘাড়ে পা ঝুলিয়ে নিথর বসেছি,
চাইলেও ফেরত আসা যাবে না এখানে
সময় অল্প, গুছাতে হবে জমে যাওয়া কাজ।

বাতাসে সময় কুঁড়িয়েছি মুঠো ভরে
অবসরের বুকে শুয়ে বসে... ...বাকিটুকু পড়ুন

Instrumentation & Control (INC) সাবজেক্ট বাংলাদেশে নেই

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৫৫




শিক্ষা ব্যবস্থার মান যে বাংলাদেশে এক্কেবারেই খারাপ তা বলার কোনো সুযোগ নেই। সারাদিন শিক্ষার মান নিয়ে চেঁচামেচি করলেও বাংলাদেশের শিক্ষার্থীরাই বিশ্বের অনেক উন্নত দেশে সার্ভিস দিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×