ডাঃ গুলব উদ্দিনের অনেক সমস্যার মধে্য একটা হল খাবারের স্বাদ। তাকে যদি জিজ্ঞেস করেন করলার স্বাদ কেমন তিনি বলতে পারবেন না। কিংবা কেউ যদি জিজ্ঞেস করে তেতুল খেতে কেমন? উত্তর একই! বৃটিশ উচ্চারনে শুদ্ধ করে বলবেন সউরি। তার একটাই কারন, তিনি আলাদা কোন খাবার খান না। যাই সামনে থাকুক না কেন সব এক করে মাখিয়ে জগাখিচুড়ি টাইপ বানিয়ে খাবেন।
তবে দু একটা অখাদ্যের স্বাদ তার খুব ভাল করে জানা আছে। গুলবুদ্দিনের এই বিরল অভিজ্ঞতা অর্জন এক মজার কাহিনী!
রাত প্রায় ১০ টা। চেম্বার থেকে ফিরে বাসার সামনে গিয়ে শুনলেন পাশের বাসা থেকে হাউমাউ শব্দ আসছে। ভাবলেন অনাকাঙ্খিত কিছু ঘটেছে। বাসায় না ঢুকে পা বাড়ালেন পাশের বাসার দিকে। রাস্তায় আলো স্বল্পতার জন্য সবকিছু ভালোমত ঠাহর করতে পারছেন না। হঠাত কিসে যেন পা রাখলেন, সাথে সাথে পা পিছলে চিৎপটাং হয়ে গেলেন।
এখানেই শেষ হলে ভাল হত। কিন্তু বিধি বাম! মুখে কিছু একটা আঠার মত অনুভব করলেন (মনুষ্য বর্জ )। জিনিষটা একটু মিষ্টি। তবে খুব দূর্গন্ধযুক্ত। কেউ সম্ভত তার জরুরী কাজ সেরে শিল্পকর্ম প্রদর্শনীর জন্য রাস্তার পাশে রেখে গিয়েছিল। কিন্তু সেটা আর হল না। গুলবুদ্দিন বিনাশ করে দিয়েছেন।
আপাতত ঘরে গিয়ে গোসল করলেন। আজকের খবরটা একটু দেখার ইচ্ছে নিয়ে টিভি রুমে গিয়ে দেখেন নো এন্ট্রি! আগে থেকেই সেখানে বউ দুই মেয়ে আর শালী চারজনে মিলে রিজার্ভ করে রেখেছে। সিরিয়াল দেখছে। বড় মেয়ের বয়স ১২ ছোট মেয়ের বয়স ৭। আর শায়লা মানে গুলবুদ্দিনের শালী এবার এইচ,এস,সি দিয়ে এখানে এসে সিরিয়াল নিয়ে ব্যস্ত।
এখন উপায় দুইটা, হয় চুপি চুপি চলে যেতে হবে নয়তো তাদের সাথে সিরিয়াল উপভোগ করতে হবে।
অগত্যা তিনি বসেই পড়লেন। মনে মনে ভাবছেন, সিরিয়ালটা যে আবিষ্কার করেছে সম্ভবত তার বউ কারো সাথে পরকিয়ায় জড়িয়ে তাকে ছেড়ে গিয়েছিল। তাকে একবার হাতের কাছে পেলে দুইটা রাম থাপ্পড় দিয়ে বুঝিয়ে দিতেন সিরিয়াল তৈরী করা হল মানসিক রোগীদের কাজ।
গুলবুদ্দিন যে পিছনে বসে আছেন এটা কেউ বুঝতে পারেনি। পারার কথাও না। কারণ তিনি কখনও সিরিয়াল দেখেন না।
টিভিতে একটা বাসর রাতের দৃশ্য দেখাচ্ছে। দৃশ্যটা বেশ শালীন ভাবেই হচ্ছিল। কিন্তু হটাৎ নায়ক বাবাজি দিল লাইট বন্ধ করে । এমন সময় গুলবুদ্দিনের ছোট মেয়েটা বলে উঠল "আপু, নায়ক এখন করবে?" পিচ্চির কথা শুনে গুলব উদ্দিন তো হার্ট এটাক করার পর্যায়ে চলে গেছেন। অবাক হয়ে থাকিয়ে দেখলেন বাকী সবাই নির্বিকার!!
গুলব উদ্দিন আর রাতে কিছু খেতে পারলেন না। একে তো মুখ নাপাক। খাওয়া দূরে থাক কোন কিছু মুখের সামনে নিলেই বমি আসার জোগাড় তার উপর মেয়েটার কথা শুনে মেজাজ আরো বিগড়ে গেছে কিছুই খেতে ইচ্ছে হচ্ছে না। কি আর করা না খেয়েই শুয়ে পড়লেন।
চিতকার চেচামেচিতে সকালে ঘুম ভেঙে গেল। একটা মহিলা একাই যে দশজনের সমান চেচামেচি করতে পারে গুলবুদ্দিনের বউকে না দেখলে কেউ বুঝতে পারবে না। ঘুম জড়ানো কন্ঠে জিজ্ঞেস করলেন
-কি হয়েছে এত চেচামেচি করছ কেন?
-শায়লার কি যেন হয়েছে একটু দেখ।
-কি হয়েছে?
-টয়লেট হচ্ছে না। পিছন দিকে খুব জ্বালাপোড়া করছে।
-এখন কি করছে?
-বাতাস করছে।
-ভেরী গুড। বল মরিচ আরো বেশী করে খেতে। আর ঠান্ডা পানির টেপে পিছন দিকটা ফিট করে টেপ ছেড়ে দাও।
ছাত্র জীবনে ভাবতেন কর্ম জীবনে আরাম হবে। হল তার উল্টো। যন্ত্রনায় অতিষ্ট হয়ে মনকে সান্তনা দিতেন বিয়ে করলে হয়তো সুখী হবেন। কিন্তু বিয়ে করে এখন ভাবছেন ইচ্ছে করে নরক যন্ত্রনা বেছে নিয়েছেন।
(চলবে)