somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ভালবাসার কত রঙ!

২১ শে জুলাই, ২০১৭ বিকাল ৪:৩২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

লোকাল বাসে চড়া খুব বিরক্তিকর। মাঝে মাঝে বাধ্য হয়ে চড়তে হয়। গত কয়েকদিন আগে বাড়ি যাচ্ছি। লোকাল বাসে করে। পুরো বাস লোকে লোকারণ্য। সিটের অভাব নাই, কিন্তু খালি সিট খুজে পাচ্ছি না! অবশেষে একদম পেছনে পেলাম। পাশের সিটে দুইটা বাচ্চা। একটা ছেলে ৭/৮ বছরের আরেকটা মেয়ে ৫/৬ বছরের। ভাই বোন। পুরো সিট নিয়েই বসেছিল। আমাকে দেখে ডাক দিলো বসার জন্য। তারা একজন আরেকজনকে কোলে নিলো। বাচ্চা দুটো নিজেদের মধ্যে কী যেন গল্প করছে আর অট্রহাসি দিচ্ছে। দুই একবার নিষেধ করলাম। নিষেধ করার পর একটু থামে আবার শুরু করে।

কিছুক্ষণ পর অনেকটা অধৈর্য হয়ে গেলাম। জোরে একটা ধমক দিলাম। ভেউ করে কান্না শুরু করলো মেয়েটা। পরক্ষণেই খারাপ লাগলো। খুশি করার জন্য আলাপ জমানোর চেষ্টা করলাম। তারা এতিমখানায় থাকে। মা অসুস্থ, তাই বাড়িতে মা কে দেখতে গিয়েছিল। এখন আবার এতিমখানায় ফিরে যাচ্ছে। চিন্তা করলাম কত ছোট বাচ্চা এত দুরের পথ একা একা পাড়ি দিচ্ছে। তাদের বয়সে থাকতে আব্বা, আমাদেরকে একা একা দোকানেই যাওয়ার দিতেন না। আর তারা ৯৬/৯৭ কিলোমিটার যায়গা একা একা পাড়ি দিচ্ছে!

হঠাৎ মেয়েটা বমি করা শুরু করলো। ছেলেটা মেয়েটার পিঠ হাতাতে লাগলো। বমি করা শেষ হলে পরে বোতল থেকে হাতের তালুতে পানি ঢেলে মেয়েটার মুখ মুছে দিলো। তারপর পানি খাওয়ালো। পানি খাওয়ানোর সাথে সাথে মেয়েটার আবার বমি শুরু হলো। ছেলেটা আগের মত বোনের পিঠ চাপড়ে দিল। মুখ মুছে দিল। তারপর আবার পানি খাওয়াতে যাচ্ছিল। আমি বাধা দিলাম।
জিজ্ঞেস করলাম সকালে কী খেয়ে এসেছ? ভাই-বোন একজন আরেকজনের মুখ চাওয়াচাওয়ি করলো। তারপর ছেলেটা কাপা কাপা কন্ঠে বলল "ভাত খেয়ে এসেছি"। আমি বললাম "মিথ্যে বলছ কেন?" ছেলেটা মাথা নিচু করে থাকল। বললাম পানি খাওয়াবে না এখন। আবার বমি হবে। আগে দুজনে কিছু খাও।
বাস থেকে নেমে দুজনকে ব্রেড আর জেলী কিনে দিলাম। (গ্রামের বাজারে ভাত পাওয়া যায় না। আর আমার বাড়িও অনেক দূর।) আমার দেওয়া খাবার তারা নিতে চায় না। তাদের মা নিষেধ করেছেন। বললাম "খুব ভালো। অপরিচিত কারো দেওয়া কিছু খাওয়া ঠিক না।" পকেট থেকে একশত টাকার নোট একটা বের করে দিয়ে বললাম কিছু খেয়ে নিও। কিছুটা সংকোচ বোধ করেছিল নিতে। তবুও নিল। আমাকে বলল, "একমিনিট আম্মার সাথে কথা বলবো আপনার মোবাইলটা দিন"
মায়ের নাম্বারে কল দিলো। মা রিসিভ করতেই বলল, "আমরা পোঁছে গেছি। এ মাসে আমাদের হাত খরচের টাকা দেওয়া লাগবে না। এ-ক-শ-ও-ও-ও টাকা পেয়ে গেছি"
...
গরীবরাই পৃথীবির সবচেয়ে সুখী। জীবন শুরুর আগেই জীবনের মানে বুঝে যায়। বেচে থাকার যুদ্ধ শিখে যায়। দুঃখ এদের কাছে জীবন জয়ের খেলা। প্রতিদিন এরা এই খেলা খেলে। পরাজয় জেনেও বিজয়ীর মতো হাসে।
এরা খুব সহজেই কাদতে পারে। মায়া কান্না না, উপচে পড়া দুঃখের কান্না। যে কান্নার সাথে বের হয়ে যায় সব দুঃখ।
গরীবরা অল্পতেই খুশি হয়। খুব সহজেই হাসতে পারে। দাতের পাটী বের করে, খিলখিল শব্দ করে, নির্মল হাসি।
সর্বশেষ এডিট : ২১ শে জুলাই, ২০১৭ বিকাল ৪:৩২
৩টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমার প্রফেশনাল জীবনের ত্যাক্ত কথন :(

লিখেছেন সোহানী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সকাল ৯:৫৪



আমার প্রফেশনাল জীবন বরাবরেই ভয়াবহ চ্যালেন্জর ছিল। প্রায় প্রতিটা চাকরীতে আমি রীতিমত যুদ্ধ করে গেছি। আমার সেই প্রফেশনাল জীবন নিয়ে বেশ কিছু লিখাও লিখেছিলাম। অনেকদিন পর আবারো এমন কিছু নিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমি হাসান মাহবুবের তাতিন নই।

লিখেছেন ৎৎৎঘূৎৎ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩



ছোটবেলা পদার্থবিজ্ঞান বইয়ের ভেতরে করে রাত জেগে তিন গোয়েন্দা পড়তাম। মামনি ভাবতেন ছেলেটা আড়াইটা পর্যন্ত পড়ছে ইদানীং। এতো দিনে পড়ায় মনযোগ এসেছে তাহলে। যেদিন আমি তার থেকে টাকা নিয়ে একটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুক্তিযোদ্ধাদের বিবিধ গ্রুপে বিভক্ত করার বেকুবী প্রয়াস ( মুমিন, কমিন, জমিন )

লিখেছেন সোনাগাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৫:৩০



যাঁরা মুক্তিযদ্ধ করেননি, মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে লেখা তাঁদের পক্ষে মোটামুটি অসম্ভব কাজ। ১৯৭১ সালের মার্চে, কৃষকের যেই ছেলেটি কলেজ, ইউনিভার্সিতে পড়ছিলো, কিংবা চাষ নিয়ে ব্যস্ত ছিলো, সেই ছেলেটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। সাংঘাতিক উস্কানি মুলক আচরন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৪



কি সাঙ্ঘাতিক উস্কানিমুলক আচরন আমাদের রাষ্ট্রের প্রধানমন্ত্রীর । নাহ আমি তার এই আচরনে ক্ষুব্ধ । ...বাকিটুকু পড়ুন

একটি ছবি ব্লগ ও ছবির মতো সুন্দর চট্টগ্রাম।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৮:৩৮


এটি উন্নত বিশ্বের কোন দেশ বা কোন বিদেশী মেয়ের ছবি নয় - ছবিতে চট্টগ্রামের কাপ্তাই সংলগ্ন রাঙামাটির পাহাড়ি প্রকৃতির একটি ছবি।

ব্লগার চাঁদগাজী আমাকে মাঝে মাঝে বলেন চট্টগ্রাম ও... ...বাকিটুকু পড়ুন

×