somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

অসমাপ্ত চাওয়া

০৩ রা জানুয়ারি, ২০১৮ বিকাল ৪:১১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

বিকেলের আকাশটা ভিলেনের মত আচরণ করছে। একে তো কনকনে শীত তার উপরে ভীষণ রকমের কুয়াশা। পার্কের দিকে একটু আগেও লোকজন ঠাসা ছিল। কুয়াশাগুলো বৃষ্টি হয়ে ঝরছে বলে সবাই চলে যাচ্ছে। সামিয়াকে নিয়ে পার্কের এক কোনায় বসল রাজিব। হাতে একটা ঠোঙ্গাভর্তি বাদাম। সামিয়া ঠান্ডায় কাঁপছে।
"আমি এখানে বসতে পারব না। জ্বর আসতেছে।"
"তাহলে আমার বাসায় চল।" রাজিব হাত ধরে উঠাল।
"কুয়াশায় চুবে গেছ প্রায়। বাসায় গিয়ে চেঞ্জ করবে। আপাতত আমার জ্যাকেট নাও।"

রাজিবের বাসাটা শহরতলীর নির্জন এলাকায়। মানুষজনের আনাগোনা কম। ছোটখাটো দুইটা বেডরুম। একটা বারান্দা আর কিচেন। দুইজনের থাকার জন্য বেশ ভালই। তবে বাসায় রাজিব একাই থাকে। মা বাবা আর একটা ছোটবোন গ্রামের বাড়িতে থাকেন। বাবার ব্যবসা আছে। মধ্যবিত্ত হলেও স্বচ্ছল পরিবার।
রাজিব আর সামিয়া অন্ধকার ঠেলে,পাশাপাশি হাটছে। একজনের গায়ের গরম ভাবটা অন্য জন বুঝতে পারছে কিন্তু নিঃশব্দে হেঠে চলছে। হঠাৎ নিরবতা ভেঙ্গে সামিয়া বললো-
"সন্ধ্যা হয়ে গেছে। আজ আর বাসায় ফিরব না। রাতটা তোমার এখানেই কাটাব।"
"কিন্তু আন্টিকে কী বলবে?"
"সে তোমার ভাবতে হবে না। আম্মুকে আমি ফোন করে বলে দিচ্ছি বান্ধবীর বাসায় থাকব"
"আমাকে বান্ধবী বানিয়ে দেবে?"
"হিহিহি"

সামিয়ার সাথে রাজিবের রিলেশন প্রায় তিন বছর। শহরের নামকরা প্রাইভেট মেডিকেল কলেজে লেখাপড়া করে সামিয়া। স্বাভাবিক উচ্চতার হালকা পাতলা গঠন। দেখতে অতটা ফর্সা না হলেও সুন্দরী। রাজিব জুডিশিয়াল পরীক্ষা দেবে। নিয়মিত জিম করে। খোঁচা খোঁচা দাড়িতে ৫ ফিট ৯ ইঞ্চি মানুষটাকে বেশ হ্যান্ডসাম দেখায়। সামিয়া এই প্রথম তার সাথে রাত কাটাবে- এমন না। আগে আরো দু একবার রাত কাটিয়েছে তারা এক বিছানায়। জোছনা রাতে বারান্দায় বসে কফি খাওয়া, খুনসুটি, ঝগড়া ছোটখাটো মান অভিমান। সব মিলিয়ে বেশ আনন্দময় রিলেশন।

দেখতে দেখতে আরো এক বছর হয়ে গেল। রাজিব জুডিশিয়াল পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে প্র‍্যাক্টিস শুরু করেছে। ইনকাম এত আহামরি না হলেও বাবা মাকে কিছু দিয়ে বাদ বাকি টাকায় দুজনের সংসার স্বাচ্ছন্দে চলবে। এবার ঘটা করে সামিয়াকে নিজের বউ করতে পারবে।

রাজিব খেয়াল করলো, ইদানিং সামিয়া আগের মত নাই। উদাস হয়ে থাকে সারাক্ষণ। একদিন জানতে চাইল-
"কী হয়েছে?"
"কই কিছু না তো!"
"তুমি কয়েকদিন থেকে এমন মনমরা কেন?"
"রাজিব তোমার মাসে ইনকাম কত?"
আচমকা এমন প্রশ্নে তথমত খেল রাজিব। সামলে নিয়ে উত্তর দিল-
"কোন মাসে বিশ কোন মাসে আঠারো-উনিশ আবার কোন মাসে ত্রিশ হাজার। কিন্তু হঠাৎ এমন প্রশ্ন কেন?"
"বাবা মা আমার বিয়ে ঠিক করেছে। বর লন্ডনী মানে ইংল্যান্ডের সিটিজেন। বাবা মার সিদ্ধান্তের বাইরে যাওয়া আমার সম্ভব না।"
উত্তরটা শুনে উদাস ভঙ্গিতে রাজিব একটা কথাই বলল- "ও!"

এতদিনের চেনা মানুষটাকে রাজিবের কেমন যেন অচেনা লাগছে। দীর্ঘ চার বছরের স্মৃতিগুলো একসাথে হামলা করছে। বুকের ভিতরটা শুন্য মনে হচ্ছে। ভেতরের রক্তক্ষরণটা বুঝতে দিচ্ছে না সামিয়াকে।

আজ ও জোছনা হবে। চাঁদের অালোতে পুরা পৃথিবী ঝলমল করবে। কিন্তু কোন একজনের মনের ক্ষতটা বেড়েই যাবে। যা কারো পক্ষে উপলব্ধি করা সম্ভব না।
কফি হাতে একা একা বারান্দায় বসলে কি সেই চাঁদের অালোটা উপভোগ করা সম্ভব হবে?
৪টি মন্তব্য ৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কুড়ি শব্দের গল্প

লিখেছেন করুণাধারা, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:১৭



জলে ভাসা পদ্ম আমি
কোরা বাংলায় ঘোষণা দিলাম, "বিদায় সামু" !
কিন্তু সামু সিগারেটের নেশার মতো, ছাড়া যায় না! আমি কি সত্যি যাবো? নো... নেভার!

সানমুন
চিলেকোঠার জানালায় পূর্ণিমার চাঁদ। ঘুমন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

ধর্ম ও বিজ্ঞান

লিখেছেন এমএলজি, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:২৪

করোনার (COVID) শুরুর দিকে আমি দেশবাসীর কাছে উদাত্ত আহবান জানিয়ে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম, যা শেয়ার হয়েছিল প্রায় ৩ হাজারবার। জীবন বাঁচাতে মরিয়া পাঠকবৃন্দ আশা করেছিলেন এ পোস্ট শেয়ারে কেউ একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

তালগোল

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৩৫


তু‌মি যাও চ‌লে
আ‌মি যাই গ‌লে
চ‌লে যায় ঋতু, শীত গ্রীষ্ম বর্ষা
রাত ফু‌রা‌লেই দি‌নের আ‌লোয় ফর্সা
ঘু‌রেঘু‌রে ফি‌রে‌তো আ‌সে, আ‌সে‌তো ফি‌রে
তু‌মি চ‌লে যাও, তু‌মি চ‌লে যাও, আমা‌কে ঘি‌রে
জড়ায়ে মোহ বাতা‌সে ম‌দির ঘ্রাণ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

মা

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৩


মায়াবী রাতের চাঁদনী আলো
কিছুই যে আর লাগে না ভালো,
হারিয়ে গেছে মনের আলো
আধার ঘেরা এই মনটা কালো,
মা যেদিন তুই চলে গেলি , আমায় রেখে ওই অন্য পারে।

অন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

কপি করা পোস্ট নিজের নামে চালিয়েও অস্বীকার করলো ব্লগার গেছে দাদা।

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:১৮



একটা পোস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ আগে থেকেই ঘুরে বেড়াচ্ছে। পোস্টটিতে মদ্য পান নিয়ে কবি মির্জা গালিব, কবি আল্লামা ইকবাল, কবি আহমদ ফারাজ, কবি ওয়াসি এবং কবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×