আজ বাংলা ব্লগ দিবস। ব্লগ নিয়ে নানা বিতর্ক আছে, আছে অনেক ভালো যুক্তি। তবে এটা ঠিক যে, ওয়েব জগৎকে বাংলা ভাষার বর্ণমালায় সমৃদ্ধ করতে এই ব্লগের গুরুত্ব অস্বীকার করার উপায় নেই। তাই সবাইকে ব্লগ দিবসের শুভেচ্ছা রইল। একই সাথে ব্লগকে তথা ওয়েব জগৎকে শুদ্ধ বাংলা বানানে সমৃদ্ধ করার প্রত্যয় ব্যক্ত করছি। আশাকরি, এ বিষয়ে বিদগ্ধজনরাও এগিয়ে আসবেন।
বাংলা সাহিত্যের আধুনিক পর্ব শুরু হয় উনিশ শতকের সূচনালগ্নে। ১৮০০ খ্রিস্টাব্দে ফোর্ট উইলিয়াম কলেজ প্রতিষ্ঠার পর উইলিয়াম কেরির নেতৃত্বে বাংলা গদ্য সাহিত্য রচনায় গুরাত্বারোপ করা হয়। আর এর মধ্য দিয়েই মূলত বাংলা সাহিত্যের আধুনিক পর্বের সূচনা। এর আগে বাংলা বানানের নিয়ম বলতে কিছু ছিল না। কিন্তু গদ্য সাহিত্যের প্রয়োজনেই বানান রীতি তথা ভাষা রীতির চাহিদা অনুভব হতে থাকে।
তৎসম তথা সংস্কৃত শব্দের বানান নিয়ে সমস্যা ছিল না। সংস্কৃত ব্যাকরণ অনুসরণ করলেই চলত। কিন্তু অর্ধতৎসম, তদ্ভব, দেশি-বিদেশি শব্দ নিয়ে তৈরি হলো জটিলতা। কোনো নির্দিষ্ট নিয়ম না থাকায় যে যার মতো লিখতে থাকলেন। ফলে বিভিন্ন পণ্ডিত ব্যক্তির নামে বা তাঁদের উল্লেখযোগ্য রচনার নামে ভিন্ন ভিন্ন রীতিরও প্রচলন হয়ে গেল! যেমন- আলালী ভাষা, হুতোমী গদ্য রীতি, রবীন্দ্রনাথের গদ্য ইত্যাদি। অভিজ্ঞ ব্যক্তিদের সমস্যা না হলেও বাংলা বানান নিয়ে সাধারণ পাঠকরা দিশেহারা হয়ে পড়েন।
বিশ শতকের শুরুর দিকে মহামহোপাধ্যায় হরপ্রসাদ শাস্ত্রীর তত্ত্বাবধানে ড. সুনীতিকুমার চট্টোপাধ্যায় বিশ্বভারতীতে চলতি ভাষার বানানের নিয়ম নির্ধারণ করেন। কিন্তু ১৯৩৬ খ্রিস্টাব্দে কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয় বানানের নিয়ম প্রকাশ করার পর বিশ্বভারতীর নিয়মের সাথে কিছু দ্বন্দ্ব দেখা দেয়। কেউ কেউ বিরোধিতা করলেও রবীন্দ্রনাথ ও শরৎচন্দ্র-সহ অনেক লেখক কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের বানান রীতিকে সমর্থন করেন।
বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর ১৯৭৪ খ্রিস্টাব্দে শিক্ষা কমিশন ও ১৯৭৬ খ্রিস্টাব্দে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড সুনির্দিষ্ট বানান রীতির ওপর গুরুত্বারোপ করে। এর ধারাবাহিকতায় ১৯৮৪ খ্রিস্টাব্দে একটি কমিটি গঠিত হয়। তারা বানানের কিছু নিয়ম সুপারিশ করেন। কিন্তু তা বাতিল হয়ে যায়। জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড ১৯৮৮ খ্রিস্টাব্দে কর্মশালা করে এবং ড. আনিসুজ্জামানের নেতৃত্বে একটি বিশেষজ্ঞ কমিটির মাধ্যমে বাংলা বানানের নিয়মের একটি খসড়া চূড়ান্ত করে।
বিশ্বভারতী, কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয় এবং বাংলাদেশের জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের বানান রীতির মধ্যে কিছু সমস্যা ও বিভ্রান্তি দেখা দেয়। এসব বিভ্রান্তি দূর করার জন্য ড. আনিসুজ্জামানকে সভাপতি করে একটি বিশেষজ্ঞ কমিটি গঠন করে বাংলা একাডেমি। কমিটির লক্ষ্য ছিল, সবকিছুর সমন্বয় করে অভিন্ন বানানরীতি প্রচলন করা। কমিটির সে প্রয়াসই হলো প্রমিত বাংলা বানানের নিয়ম। প্রমিত বাংলা বানানের নিয়ম প্রথম প্রকাশিত হয় ১৯৯২ খ্রিস্টাব্দে।
প্রমিত বানানের নিয়মানুসারে জনাব জামিল চৌধুরী বাংলা বানান অভিধান প্রণয়ন করেন, যা বাংলা একাডেমি থেকে ১৯৯৪ খ্রিস্টাব্দে প্রকাশিত হয়। কিন্তু দেখা যায়, বাংলা একাডেমির প্রমিত বানানের নিয়মেও কিছু অসঙ্গতি রয়ে গেছে। এ ব্যাপারে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে, বাংলা একাডেমির বিশেষজ্ঞ কমিটি ২০০০ খ্রিস্টাব্দের ২৭ নভেম্বর অনুষ্ঠিত এক সভায় সেসব সমস্যার সমাধান করে প্রমিত নিয়মের কিছু সংশোধনী গ্রহণ করে। ২০০০ খ্রিস্টাব্দে সংশোধীত সংস্করণই এখন পর্যন্ত চলছে।
কিন্তু এই প্রমিতকরণ কী এখানেই শেষ?
উৎস
সর্বশেষ এডিট : ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০১৩ বিকাল ৪:৪৪