somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পার্বত্য চট্টগ্রাম : রাজাকার ও মুক্তিযুদ্ধ প্রসঙ্গ

২৯ শে মার্চ, ২০১৪ বিকাল ৩:৫০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


রাঙ্গামাটির নানিয়ারচরে লেকে পাড়ে শায়িত আছেন বীর শ্রেষ্ঠ মুন্সী আব্দুর রউফ

১৯৭০ সালের পাকিস্তানের সাধারণ নির্বাচনে রাঙ্গামাটি থেকে মানবেন্দ্র নারায়ণ লারমা এবং বান্দরবান থেকে এ এস প্রু চৌধুরী পূর্ব পাকিস্তান অ্যাসেম্বলিতে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচিত হন এবং তৎকালীন চাকমা রাজা ত্রিদিব রায় ন্যাশনাল অ্যাসেম্বলি ইলেকশনে পার্বত্য চট্টগ্রাম থেকে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচিত হন। কিন্তু ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে পার্বত্য চট্টগ্রাম থেকে নির্বাচিত এই তিন জনপ্রতিনিধির কেউই মুক্তিকামী জনগণের পাশে দাঁড়াননি। ত্রিদিব রায় দেশের মুক্তিকামী জনতার পাশে না দাঁড়িয়ে যোগ দেন পাকিস্তানি হানাদারদের সাথে। অন্যদিকে এ এস প্রু চৌধুরী যোগ দেন মালেক সরকারের মন্ত্রিসভায়। চাকমা রাজা হিসেবে ত্রিদিব রায় তার প্রভাবাধীন হেডম্যান-কারবারিদের ব্যবহার করে চাকমা যুবকদের দলে দলে রাজাকার বাহিনীতে ভর্তি করেন। তাদের ট্রেনিং এবং অস্ত্র দিয়ে লেলিয়ে দেন মুক্তিযোদ্ধা এবং স্বাধীনতাকামী জনতার বিরুদ্ধে। এ সময় ত্রিদিব রায় এবং তার রাজাকার বাহিনীর সহায়তায় মুক্তিযোদ্ধাদের বিরুদ্ধে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী একের পর এক হামলা পরিচালনা করে। এতে নির্মমভাবে শহীদ হন অনেক মুক্তিযোদ্ধা। কিন্তু মুক্তিযুদ্ধের শেষদিকে অবস্থা বেগতিক দেখে ত্রিদিব রায় ১৯৭১ সালের নভেম্বর মাসে পাকিস্তানি সৈন্যদের সহায়তায় মিয়ানমার হয়ে পাকিস্তানে পালিয়ে যান।
ত্রিদিব রায়ের নেতৃত্বে এবং পৃষ্ঠপোষকতায় গঠিত তৎকালীন রাজাকার বাহিনী এবং তাদের সহায়তায় মুক্তিযোদ্ধাদের বিরুদ্ধে একাধিক হামলা ও হত্যাকা- চালানো হয়েছিল। কিন্তু এ কারণে জীবনের শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত তিনি কোন প্রকার অনুতাপ স্বীকার করা তো দূরের কথা বরং মুক্তিযোদ্ধা এবং বাংলাদেশের স্বাধীনতাকে ব্যঙ্গ করে ২০০৩ সালে প্রকাশিত তার আত্মজীবনীমূলক গ্রন্থ ঞযব উবঢ়ধৎঃবফ গবষড়ফু-তে লিখেছেন, Increasing lawlessness and violence of the rebel Bengali forces promised no safety to anyone (Page-214) In Rangamati, from 26 March onward, Awami League cadres, in league with the rebel police and tha East Pakistan Rifles, began rounding up the Biharis (Page-216) . There was a constant supply of food and firearms in commandeered trucks to the Mukti Bahini, comprising rebel EBR (East Pakistan Regiment), EPR (East Pakistan Rifles), and the police. These elements were fighting the The Army at Chittagong and elsewhere. People were forced by Awami League cadres to pay money and rice under threat of violence. Many shopkeepers had closed shop and run away. ( Page- 217)..
একই বইয়ে ত্রিদিব রায় পাক হানাদারদের প্রশংসা করতে গিয়ে তিনি লিখেছেন, On the way back, at Ranirhat, 18 miles from Rangamati, a number of very frightened people asked us when the army was going to take over these areas. They said they were suffering at the hands of the Mukti Bahini. We told them that the army would be coming at any moment. That evening at dusk the army, in launches and speedboats made a sort of miniature Normandy landing (the Allied landing in France of 6 June 1944) at Rangamati and swiftly took command of the situation. (page-221).
ঢাকার তাম্রলিপি প্রকাশনা থেকে ফেব্রুয়ারি, ২০০৯-এ প্রকাশিত ডা. এমএ হাসানের বই ‘যুদ্ধাপরাধীর তালিকা ও বিচার প্রসঙ্গ’-তে রাজাকার হিসেবে ত্রিদিব রায়ের সিরিয়াল এবং তার পরিচয় হিসেবে উল্লেখ রয়েছে, 948. Mr. Raja Tridiv Roy, Father Late Raja Nalinakhya Roy, Village Rajbari Rangamati, Thana Kotowaly, Chittagong (page- 152).
বাংলাদেশ সরকারের তথ্য মন্ত্রণালয়ের অধীনে বের হওয়া হাসান হাফিজুর রহমান সম্পাদিত ‘বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের দলিলপত্র’ (সশস্ত্র সংগ্রাম-১) নবম খ-ের (জুন, ২০০৯) ৯৩ পৃষ্ঠায় মে. জে. মীর শওকত আলী (বীর উত্তম) লিখেছেন, ‘চাকমা উপজাতিদের হয়ত আমরা সাহায্য পেতাম। কিন্তু রাজা ত্রিদিব রায়ের বিরোধিতার জন্য তারা আমাদের বিপক্ষে চলে যায়।’ অন্যদিকে ১৯৭১ সালে পার্বত্য চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক (বর্তমান সরকারের প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা) এইচটি ইমাম তার বই ‘বাংলাদেশ সরকার-১৯৭১’-এর (মার্চ, ২০০৪) ২৬০ পৃষ্ঠায় লিখেছেন, ‘চাকমা রাজা ত্রিদিব রায় প্রথম থেকেই নির্লিপ্ত এবং গোপনে পাকিস্তানিদের সাথে যোগাযোগ রাখছেন।’
বাংলা একাডেমি থেকে প্রকাশিত লে. কর্নেল কাজী সাজ্জাদ আলী জহির (বীর প্রতীক)-এর বই ‘মুক্তিযোদ্ধা শহীদ ক্যাপ্টেন আফতাব কাদের বীর উত্তম’ (ডিসেম্বর, ২০০৮)-এর ৬৩ পৃষ্ঠায় লিখেছেন, ‘মার্চ মাসের প্রথম থেকেই রাজা ত্রিদিব রায় এবং মানবেন্দ্র নারায়ণ লারমা কোনো কারণে মুক্তিকামী বাঙালিদের কাছ থেকে দূরত্ব বজায় রেখে চলতেন।’ ১৯৭১ সালে ত্রিদিব রায়ের মানবতাবিরোধী যুদ্ধাপরাধ সম্পর্কে বলাকা প্রকাশনী থেকে ২০১১ সালের একুশে বই মেলায় প্রকাশিত ‘পার্বত্য চট্টগ্রামের ইতিহাস’-এর ৩৭৯-৩৮০ পৃষ্ঠায় গবেষক জামাল উদ্দিন লিখেছেন, ‘...অত্যন্ত দুঃখজনক হলেও সত্য যে, পাক দালাল খ্যাত চিহ্নিত এক উপজাতীয় নেতার (রাজা ত্রিদিব রায়) বিশ্বাসঘাতকতায় ওই দিনই পাকিস্তানি বর্বর বাহিনী রাঙ্গামাটিতে এসে চুপিসারে অবস্থান নেয়, যা মুক্তিযোদ্ধাদের জানা ছিল না। ভারত প্রত্যাগত মুক্তিযোদ্ধাদের একটি দল রাঙ্গামাটি জেলা প্রশাসকের বাংলোর কাছাকাছি পৌঁছার সাথে সাথে সেখানে ওঁৎ পেতে থাকা পাকিস্তানি সৈনিকেরা মুক্তিযোদ্ধাদের ধরে ফেলে। এ দলে ছিলেন বীর মুক্তিযোদ্ধা রাঙ্গামাটির আবদুল শুক্কুর, এসএম কামাল, শফিকুর রহমান, ইফতেখার, ইলিয়াস, অবদুল বারী, মো. মামুন ও আবুল কালাম আজাদ। ধৃত মুক্তিযোদ্ধাদের মধ্যে একমাত্র আবুল কালাম আজাদ ও ফুড ইন্সপেক্টর আবদুল বারী ছাড়া অন্যদের পাকবাহিনী নির্মমভাবে অত্যাচার চালিয়ে মানিকছড়িতে নিয়ে হত্যা করে।’ ত্রিদিব রায়দের সহায়তায় পাকিস্তানিরা পরবর্তীতে পর্যায়ক্রমে বীরশ্রেষ্ঠ ল্যান্স নায়েক মুন্সি আবদুর রবসহ আরো অনেক মুক্তিযোদ্ধাকেই হত্যা করেছে।
অঙ্কুর প্রকাশনী থেকে ২০০৬ সালে প্রকাশিত শরদিন্দু শেখর চাকমা তার ‘মুক্তিযুদ্ধে পার্বত্য চট্টগ্রাম’ শীর্ষক বইয়ের ৩০-৩১ পৃষ্ঠায় লিখেছেন, ‘আমি তাকে (রাজা ত্রিদিব রায়কে) বলি, আমার তো মনে হয় পূর্ব পাকিস্তান স্বাধীন হয়ে যাবে এবং তার পক্ষে স্রোতের বিপরীতে যাওয়া ঠিক হয়নি। রাজা ত্রিদিব কিছুক্ষণ চুপ করে থাকেন। তারপর বলেন, পূর্ব পাকিস্তান স্বাধীন হবে না, যদি ভারত পাকিস্তানকে যুদ্ধে পরাস্ত করতে না পারে। আর ভারত পাকিস্তানকে পরাস্ত করতে পারবে না, কারণ পাকিস্তানের সঙ্গে চীন এবং আমেরিকা রয়েছে। তারা কোনদিন পাকিস্তানকে ভারতের নিকট পরাজিত হতে দেবে না। রাজা ত্রিদিব রায়ের সঙ্গে কথা বলে বুঝেছি তিনি তখন পাকিস্তানিদের চেয়ে বেশি পাকিস্তানি হয়েছেন।’
রাজা ত্রিদিব রায় সম্পর্কিত বিভিন্ন দলিল ও গবেষণা পত্র থেকে জানা যায়, ১৯৭১ সালের নভেম্বরে ত্রিদিব রায় পাকিস্তানি সৈন্যদের সহায়তায় মিয়ানমার হয়ে পাকিস্তানে পালিয়ে যাওয়ার পর পাকিস্তান সরকার তাকে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার বিশেষ দূত হিসেবে ওই বছরই ব্যাংকক প্রেরণ করে। জাতিসংঘের ১৯৭২ সালে অনুষ্ঠিত জেনারেল অ্যাসেম্বলিতে বাংলাদেশের সদস্য পদ প্রদানের প্রসঙ্গ উত্থাপিত হওয়ার পর পাকিস্তান সরকারের বিরোধিতা করে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে লবিং করার জন্য ত্রিদিব রায়কে প্রধান করে এক প্রতিনিধি দল প্রেরণ করে। বিষয়টি অনুধাবন করে ত্রিদিব রায়কে নিবৃত করার জন্য বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে ত্রিদিব রায়ের মাতা বিনীতা রায়কে এক প্রতিনিধি দলের সঙ্গে জাতিসংঘে পাঠানো হয়। রাজমাতা বিনীতা রায়সহ বাংলাদেশের প্রতিনিধি দল ত্রিদিব রায়কে পাকিস্তানের পক্ষ নিয়ে বাংলাদেশের বিরোধিতা না করে তার মাতৃভূমিতে ফিরে আসার আহ্বান জানালেও তিনি তা প্রত্যাখ্যান করেন এবং জাতিসংঘে বাংলাদেশের সদস্য পদ লাভের বিরোধিতা অব্যাহত রাখেন। বৌদ্ধ ধর্মে বিশ্বাসী ত্রিদিব রায়ের লবিংয়ের কারণে চীন ভেটো প্রয়োগ করে, ফলে সেবার বাংলাদেশের সদস্য পদ লাভের আশা ধূলিসাৎ হয়ে যায়। পাকিস্তানের পক্ষে তার এই সফলতায় মুগ্ধ হয়ে তৎকালীন পাকিস্তান প্রেসিডেন্ট জুলফিকার আলী ভুট্টো এবং তার মন্ত্রিসভা জাতিসংঘ ফেরত ত্রিদিব রায়কে ‘জাতীয় বীর’ খেতাব দিয়ে লালগালিচা সংবর্ধনা প্রদান করে।
সোসাইটি ফর ন্যাশনাল রিসার্চ এন্ড প্রোগ্রেস (এসএনআরপি) কর্তৃক গত ১ নভেম্বর ২০১১ মেঘনা প্রিন্টার্স, ঢাকা থেকে ‘প্রেক্ষাপট : পার্বত্য চট্টগ্রাম এবং চাকমা সার্কেল চিফ ব্যারিস্টার দেবাশীষ রায়’ শীর্ষক প্রকাশিত এক গবেষণা পত্র থেকে জানা যায়, শুরু থেকে বিভিন্ন দেশে ছড়িয়ে থাকা চাকমা রাজপরিবারের সদস্যসহ বাংলাদেশ বিরোধী মনোভাব সম্পন্ন অন্যদের মধ্যে কখনো প্রত্যক্ষ কখনো পরোক্ষভাবে যোগাযোগ ও সমন্বয়কের ভূমিকাও রক্ষা করে গেছেন ত্রিদিব রায়। যার পুরস্কারস্বরূপ ত্রিদিব রায় পাকিস্তানে আজীবন মন্ত্রিত্বের পদমর্যদায় অধিষ্ঠিত ছিলেছেন। ১৯৭১ সালের ডিসেম্বরে ফেডারেল মন্ত্রী, ১৯৭৫ থেকে ১৯৮১ পর্যন্ত পর্যটন ও সংখ্যালঘু বিষয়ক কেন্দ্রীয় মন্ত্রী, ১৯৮১ থেকে ১৯৯৫ সাল পর্যন্ত দক্ষিণ আমেরিকার ৫টি দেশের রাষ্ট্রদূত করে আর্জেন্টিনায় প্রেরণ, ১৯৯৫ সালের মে মাস থেকে প্রতিমন্ত্রীর মর্যাদায় ‘অ্যাম্বাসেডর অ্যাট লার্জ’ হিসেবে নিয়োগ, ২ এপ্রিল ২০০৩ থেকে পাকিস্তানের দপ্তরবিহীন ফেডারেল মন্ত্রী হিসেবে নিয়োগ তারই উৎকৃষ্ট উদাহরণ।
২০১২ সালের ১৭ সেপ্টেম্বর করাচীতেই মৃত্যু হয় ত্রিদিব রায়ের। কিন্তু অবাক করার বিষয় হচ্ছে যে, এতকিছুর পরও মৃত্যুর আগে রাঙ্গামাটিতে সমাহিত হওয়ার ইচ্ছা ব্যক্ত করেছিলেন তিনি। আর রাজাকারবিরোধী এবং মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তি হিসেবে পরিচিত আওয়ামী লীগ সরকার সেই আমৃত্যু বাংলাদেশ বিরোধিতাকারী ত্রিদিব রায়ের মরদেহ দেশের আনার ব্যাপারে রাজকীয় আয়োজন প্রায় সম্পন্ন করে ফেলেছিলেন। অবশ্য শেষ পর্যন্ত কিছু প্রতিবাদী তরুণ এবং সচেতন মানুষের প্রতিরোধের মুখে সরকারের সে সিদ্ধান্ত আর বাস্তবায়ন হতে পারেনি।
অপরদিকে দেশ স্বাধীন হওয়ার পর চাকমা রাজা ত্রিদিব রায়ের রেখে যাওয়া রাজাকার বাহিনীর সদস্যদের সমন্বয়ে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বকে চ্যালেঞ্জ করে মানবেন্দ্র নারায়ণ লারমা (এমএন লারমা) গড়ে তোলেন পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি (জেএসএস) এবং এর সশস্ত্র শাখা শান্তিবাহিনী। যার রাজনৈতিক শাখার নাম। এ প্রসঙ্গে ১৩৯২ বাংলা সালে কলিকাতা, নাথ ব্রাদার্স থেকে প্রকাশিত ‘প্রসঙ্গ : পার্বত্য চট্টগ্রাম’ শীর্ষক গ্রন্থে সিদ্ধার্থ চাকমা লিখেছেন, ‘...উপজাতীয় রাজাকাররা এ সময় গভীর অরণ্যে পালিয়ে যায় এবং পরবর্তীতে তারা সশস্ত্র ও সংগঠিত হয়ে শান্তিবাহিনী নামে সংগঠন গড়ে তোলে (পৃ. ৪৬)।’ গত তিন যুগের বেশি সময় ধরে যাদের হাতে নিহত হয়েছে হাজার হাজার নিরীহ পাহাড়ি বাঙালি জনগণ এবং নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্য। এদেরই উত্তরসূরিদের হাতে এখনো অব্যাহতভাবে চাঁদাবাজি, অপহরণ এবং খুনের শিকার হচ্ছে পার্বত্য চট্টগ্রামের অসহায় মানুষগুলো।
শুধু তাই নয়, ১৯৯৭ সালের ২ ডিসেম্বর শান্তিবাহিনীর সাথে চুক্তি করে সরকার তাদের সব অরাধ ক্ষমা করে দিয়ে, উপরন্তু নানাভাবে শান্তিবাহিনীর সদস্য এবং তাদের কমান্ডারদের পুরস্কৃত করেছে। চুক্তি স্বাক্ষরের পর ১৯৯৮ সালের ৬ ডিসেম্বর আঞ্চলিক পরিষদ গঠন করে তার চেয়ারম্যান হিসেবে সাবেক শান্তিবাহিনী প্রধান সন্তু লারমাকে নিয়োগ করে তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকার। এর পরিপ্রেক্ষিতে ১৯৯৯ সালের ১২ মে থেকে ১৫ বছর ধরে প্রতিমন্ত্রীর পদমর্যাদায় আঞ্চলিক পরিষদের চেয়ারম্যান আছেন তিনি। চলতি বছরের অর্থাৎ ২০১৪ সালের ১০ মার্চ সরকারের মন্ত্রিসভায় পার্বত্য তিন জেলার অন্তর্বর্তীকালীন জেলা পরিষদ আইনের সংস্কার অনুমোদন করা হয়েছে। দৃশ্যত পার্বত্য জেলা পরিষদ আইনের এই সংস্কার করা হয়েছে জেলা পরিষদের আকার বড় করার জন্য। কিন্তু নির্বাচনের ব্যবস্থা না করে অন্তর্বর্তী জেলা পরিষদের ব্যবস্থাকে দীর্ঘায়িত করার পেছনে আরও একটি উদ্দেশ্য লুকায়িত আছে। আর সেটি হলো আঞ্চলিক পরিষদ চেয়ারম্যান হিসেবে আমৃত্যু সন্তু লারমার মেয়াদ নিশ্চিত করা। অথচ দেশের অখ-তা ও সার্বভৌমত্বের পক্ষে সন্তু লারমার কোন কেউ কখন দেখেনি। বরং তিনি আঞ্চলিক পরিষদের চেয়ারম্যান থেকেই দেশ, সরকার, সেনাবাহিনী এবং বাঙালিদের বিরুদ্ধে বিষোদগার করেই চলেছেন। এই অবস্থায় সন্তু লারমার আজীবন ক্ষমতায় থাকা দেশের অখ-তা রক্ষার পক্ষে কতটা সহায়ক তা ভেবে দেখার সময় এসেছে।
আর সারাদেশে রাজাকারবিরোধী মনোভাব এখন তুঙ্গে। যুদ্ধাপরাধীদের বিচারে সরকারও তাদের সর্বশক্তি নিয়োগ করেছে কিন্তু পার্বত্য চট্টগ্রামের কোনো রাজাকার এখনো বিচারের আওয়তায় আসেনি, এটিও বিবেচনা করা দরকার। তা না হলে মানবতাবিরোধী অপরাধ তথা যুদ্ধাপরাধ বিচারে সরকারের উদ্দেশ্য নিয়ে প্রশ্ন উঠবে স্বাভাবিকভাবেই।
৩টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

খুলনায় বসবাসরত কোন ব্লগার আছেন?

লিখেছেন ইফতেখার ভূইয়া, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:৩২

খুলনা প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় তথা কুয়েট-এ অধ্যয়নরত কিংবা ঐ এলাকায় বসবাসরত কোন ব্লগার কি সামুতে আছেন? একটি দরিদ্র পরিবারকে সহযোগীতার জন্য মূলত কিছু তথ্য প্রয়োজন।

পরিবারটির কর্তা ব্যক্তি পেশায় একজন ভ্যান চালক... ...বাকিটুকু পড়ুন

একমাত্র আল্লাহর ইবাদত হবে আল্লাহ, রাসূল (সা.) ও আমিরের ইতায়াতে ওলামা তরিকায়

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৬:১০



সূরাঃ ১ ফাতিহা, ৪ নং আয়াতের অনুবাদ-
৪। আমরা আপনার ইবাদত করি এবং আপনার কাছে সাহায্য চাই।

সূরাঃ ৪ নিসার ৫৯ নং আয়াতের অনুবাদ-
৫৯। হে মুমিনগণ! যদি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। মুক্তিযোদ্ধা

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:২১



মুক্তিযুদ্ধের সঠিক তালিকা প্রণয়ন ও ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা প্রসঙ্গে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক বলেছেন, ‘দেশের প্রতিটি উপজেলা পর্যায়ে মুক্তিযোদ্ধা যাচাই বাছাই কমিটি রয়েছে। তারা স্থানীয়ভাবে যাচাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতীয় রাজাকাররা বাংলাদেশর উৎসব গুলোকে সনাতানাইজেশনের চেষ্টা করছে কেন?

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:৪৯



সম্প্রতি প্রতিবছর ঈদ, ১লা বৈশাখ, স্বাধীনতা দিবস, বিজয় দিবস, শহীদ দিবস এলে জঙ্গি রাজাকাররা হাউকাউ করে কেন? শিরোনামে মোহাম্মদ গোফরানের একটি লেখা চোখে পড়েছে, যে পোস্টে তিনি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঘুষের ধর্ম নাই

লিখেছেন প্রামানিক, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:৫৫


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

মুসলমানে শুকর খায় না
হিন্দু খায় না গাই
সবাই মিলেই সুদ, ঘুষ খায়
সেথায় বিভেদ নাই।

হিন্দু বলে জয় শ্র্রীরাম
মুসলিম আল্লাহ রসুল
হারাম খেয়েই ধর্ম করে
অন্যের ধরে ভুল।

পানি বললে জাত থাকে না
ঘুষ... ...বাকিটুকু পড়ুন

×