somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

"কত অজানা রে" এসক্লুসিভ। আসুন চিনি তেমন কিছু প্রবাসী বাংলাদেশী বিজ্ঞানীরর নাম ও পরিচয় যারা পৃথিবীর বুকে বাংলাদেশের পতাকা সমুন্নত রাখছে।

২৫ শে মার্চ, ২০১৩ রাত ১০:১৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

অনেক রহস্য লিখেছি আজ রহস্য লিখবো না, আজ লিখবো কিছু বাংলাদেশীদের কথা। আপনার গর্ব হবে যে আপনি বাংলাদেশী। তাদের অনেকের কথাই হয়তো আপনি জানেন, অনেকের কথা আজই জানবেন জানবেন। জেনে, তাদের চিনে একটা সালাম দিবেন। তার আগে সালাম দিবেন নিজের দেশকে। মন থেকে বলবেন যে এই দেশ এমন মেধাবী সন্তান জন্ম দিয়ে যাচ্ছে যুগযুগ ধরে। প্রথমে চলেন বলি একজন তরুনের কথা।

জাওয়েদ করিম



পরিচয়:
জাওয়েদ করিমের জন্ম তৎকালীন পূর্ব জার্মানিতে ২৮শে অক্টোবর ১৯৭৯ সালে। তাঁর বাবা, নাইমুল করিম 3M কোম্পানিতে কর্মরত একজন বাংলাদেশী গবেষক। তার মা, ক্রিস্টিন করিম, ইউনিভার্সিটি অফ মিনেসোটাতে প্রাণ-রসায়নের একটি গবেষণা সহকারী অধ্যাপক। করিম জার্মানিতে বড় হয়েছেন। কিন্তু তাঁর পরিবার ১৯৯২ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে চলে যায়।

শিক্ষাজীবন :
করিম সেন্ট্রাল হাই স্কুল থেকে পাস করেন (সেইন্ট পল, মিনেসোটা), এবং ইউনিভার্সিটি অফ ইলিনয় অ্যাট আর্বানা শ্যাম্পেইনে ভর্তি হন। সেখান হতে তিনি ২০০৪ সালে কম্পিউটার বিজ্ঞানে স্নাতক ডিগ্রি লাভ করেন। জাওয়েদ স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে কম্পিউটার বিজ্ঞানে স্নাতকোত্তর পর্যায়ে পড়াশোনা করেছেন। সেখানে পড়া অবস্থায় করিম PayPal এ চাকুরি শুরু করেন।

PayPal-এ চাকুরি করার সময় তার সাথে পরিচয় হয় Chad Hurley ও Steve Chen এর সাথে। এই তিনজন পরে একটি ভিডিও শেয়ারিং ওয়েবসাইট চালু করেন। গুগোল যখন ঐ ওয়েবসাইটটি কিনে নেয় তখন জাওয়েদ করিমকে ৬৪ মিলিয়ন ডলারের ১,৩৭,৩৩৪ টি শেয়ার দেওয়া হয়। করিম পরবর্তিতে এই টাকা বিভিন্ন ভার্সিটির ছাএদের বিভিন্ন বিজনেস আইডিয়া লন্চ ও ডেভলপ করতে ব্যবহার করেন। আপনার কাছে কোন ইউনিক কোন বিজনেস আইডিয়া থাকলে তাঁর সাথে যোগাযোগ করতে পারেন।

জি, আমারদের জাওয়েদ করিমই জনপ্রিয় ভিডিও শেয়ারিং ওয়েবসাইট ইউটিউবের (YouTube) সহ-প্রতিষ্ঠাতা। ২০০৫ সালের ২৩শে এপ্রিল "Me at the zoo" নামের ভিডিওটি আপলোড করে করিম অফিসিয়ালি ইউটিউব আমাদের জন্য উন্মুক্ত করেন।

ফজলুর রহমান খান


পরিচয়:
ফজলুর রহমান খান ১৯২৯ সালের ৩রা এপ্রিল মাদারীপুর জেলার শিবচর উপজেলায় জন্মগ্রহণ করেন। তাকে বলা হয় "Einstein of structural engineering", "the Father of tubular designs for high-rises"।

শিক্ষাজীবন:
তিনি ১৯৪৪ সালে আরমানিটোলা স্কুল থেকে ম্যাট্রিক পাস করে কলকাতার শিবপুর বেঙ্গল ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজে (বর্তমানে বেঙ্গল ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড সায়েন্স ইউনিভার্সিটি, শিবপুর) ভর্তি হন। ফাইনাল পরীক্ষা চলাকালে পঞ্চাশের সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার কারণে তিনি ঢাকায় ফিরে এলে তৎকালীন আহসানউলাহ ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ,বর্তমানে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়(বুয়েট) থেকে বাকি পরীক্ষা সমাপ্ত করেন ৷ কলকাতার শিবপুর ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজে অনুষ্ঠিত পরীক্ষার এবং আহসানউলাহ ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজের পরীক্ষার উভয় ফলের ভিত্তিতে তাঁকে বিশেষ বিবেচনায় ব্যাচেলর অফ ইঞ্জিনিয়ারিং ডিগ্রি প্রদান করা হয় ৷ এ মূল্যায়নে তিনি প্রথম শ্রেণীতে প্রথম স্থান অধিকার করেন। জনাব এফ আর খান ১৯৫২ তে যুগপৎ সরকারী বৃত্তি ও ফুল ব্রাইট বৃত্তি নিয়ে পি এইচ ডি ডিগ্রি অর্জনের উদ্দেশ্যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে গমন করেন ৷ সেখানে ইউনিভার্সিটি অফ ইলিনয় অ্যাট আরবানা শ্যাম্পেইন থেকে স্ট্রাকচারাল ইঞ্জিনিয়ারিং এবং তত্ত্বীয় ও ফলিত মেকানিক্স-এ ডাবল "এমএস" করার পর ডক্টরেট ডিগ্রি লাভ করেন ৷

কর্মজীবন:
ব্যাচেলর ডিগ্রি অর্জনের পরপরই তিনি আহসানউলাহ ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজে অধ্যাপকের পদে নিযুক্তি লাভ করেন। ১৯৫৫ সালে তিনি শিকাগো শহরের স্কিডমোর, ওউইং ও মেরিল নামের প্রকৌশল প্রতিষ্ঠানে যোগ দেন। ডক্টরেট ডিগ্রি অর্জনের পর ১৯৫৬ সালে দেশে ফিরে আহসানউল্লাহ ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজে পূর্ব পদে যোগদান করেন। পরবর্তীতে আমেরিকার স্থাপত্য প্রতিষ্ঠান স্কিড মোর এর আমন্ত্রণে যুক্তরাষ্ট্র গিয়ে এ কোম্পানীর শিকাগো অফিসের পরিচালক হিসেবে যোগদান করেন ৷ পাশাপাশি তিনি আমেরিকার ইন্টারন্যাশনাল ইন্সটিটিউট অব টেকনোলজি এর স্থাপত্য বিভাগে অধ্যাপক পদে অধিষ্ঠিত হন । সেখানে পরে তিনি প্রফেসর এমিরিটাস হয়েছিলেন ।

সম্মাননা:
ডঃ এফ আর খান নর্থ ওয়েস্টার্ন বিশ্ববিদ্যালয়, লি হাই বিশ্ববিদ্যালয় ও সুইস ফেডারেল টেকনিক্যাল ইন্সটিটিউট থেকে সম্মানসূচক ডক্টরেট ডিগ্রি লাভ করেন ৷
১৯৯৯ সালে তাকে স্বাধীনতা দিবস পুরস্কার (মরণোত্তর) প্রদান করা হয়।

কৃতিত্ব:





শিকাগোর সিয়ার্স টাওয়ার তার অনন্য কীর্তি। তিনি ১৯৭২ সনে 'ইঞ্জিনিয়ারিং নিউজ রেকর্ড'-এ "ম্যান অব দি ইয়ার" বিবেচিত হন এবং পাঁচবার স্থাপত্য শিল্পে সবচেয়ে বেশী অবদানকারী ব্যক্তিত্ব হিসেবে অভিহিত হবার গৌরব লাভ করেন (৬৫,৬৮,৭০,৭১,৭৯ সালে)৷ ১৯৭৩ সালে যুক্তরাষ্ট্রের "ন্যাশনাল একাডেমি অফ ইঞ্জিনিয়ারিং" এর সদস্য নির্বাচিত হন। ১৯৭৪ সনে আমেরিকার 'নিউজ উইক' ম্যাগাজিন শিল্প ও স্থাপত্যের উপর প্রচ্ছদ কাহিনীতে তাঁকে মার্কিন স্থাপত্যের শীর্ষে অবস্থানকারী ব্যক্তি হিসেবে বর্ণনা করে ৷ স্থপতি ডঃ এফ, আর, খান আন্তর্জাতিক গগনচুম্বী ও নগরায়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ছিলেন ৷ তাঁর অন্যান্য অবদানের মধ্যে রয়েছে শিকাগোর জন হ্যানকক সেন্টার, জেদ্দা আন্তর্জাতিক বিমান বন্দরের, হজ্ব টার্মিনাল এবং মক্কা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থাপত্য মডেল অংকন ৷

১৯৯৮ সালে শিকাগো শহরের সিয়ার্স টাওয়ারের পাদদেশে অবস্থিত জ্যাকসন সড়ক পশ্চিম পার্শ্ব এবং ফ্রাঙ্কলিন সড়কের দক্ষিণ পার্শ্বের সংযোগস্থলটিকে নামকরণ করা হয় "ফজলুর আর. খান ওয়ে"।

গবেষণা:
এফ, আর, খান মুসলিম স্থাপত্য বিষয়ের উপর নানা ধরনের গবেষণা করেছেন ৷ ডঃ খান Tube in Tube নামে স্থাপত্য শিল্পের এক নতুন পদ্ধতি উদ্ভাবন করেছিলেন যার মাধ্যমে অতি উচ্চ (কমপক্ষে একশত তলা) ভবন স্বল্প খরচে নির্মাণ সম্ভব ৷ গগনচুম্বী ভবনের উপর সাত খন্ডে প্রকাশিত একটি পুস্তকের তিনি সম্পাদনা করেন ৷

অবদান:
সিয়ার্স টাওয়ার (Sears Tower) এর নকশা প্রনয়ন করেন।
জন হ্যানকক সেন্টার এর নকশা। (১০০ তলা)
জেদ্দা আন্তর্জাতিক বিমান বন্দর।
হজ্ব টার্মিনালের ছাদ কাঠামো। (৫০,০০০ বর্গফুট)
মক্কা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থাপত্য নকশা।



ডাকটিকিট:
১৯৯৯ সালে ফজলুর রহমান খানের স্মরণে বাংলাদেশ ডাক বিভাগ একটি ডাকটিকিট প্রকাশ করেছে। ৪ টাকা মূল্যমানের এই টিকিটটিতে রয়েছে ফজলুর রহমান খানের আবক্ষ চিত্র, আর পটভূমিতে রয়েছে সিয়ার্স টাওয়ারের ছবি।

স্বাধীনতা যুদ্ধকালীন ভূমিকা:
তিনি ১৯৭১ সনে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে প্রবাসে গৌরবোজ্জ্বল ভূমিকা পালন করেন ৷ বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার আন্দোলনে তাঁর অবদান স্মরণীয় হয়ে আছে।




মৃত্যু:
১৯৮২ সনের ২৬শে মার্চ জেদ্দায় তিনি মৃত্যুবরণ করেন ৷ মৃত্যুর পর তার দেহ আমেরিকায় নিয়ে যাওয়া হয় এবং শিকাগোতে তাকে সমাহিত করা হয়।

মাজহারুল ইসলাম



পরিচয়:
মাজহারুল ইসলাম (জন্ম:২৫ জুলাই, ১৯২৩ - মৃত্যু: ১৪ জুলাই, ২০১২) বাংলাদেশ তথা ভারতীয় উপমহাদেশের প্রথিতযশা স্থপতিদের মধ্যে অন্যতম। তিনি বাংলাদেশের স্থাপত্য পেশা চর্চার পথিকৃৎ। আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন এই স্থপতি বাংলাদেশ স্থপতি ইনস্টিটিউটের প্রথম সভাপতি ছিলেন। মহান স্বাধীনতা যুদ্ধে প্রত্যক্ষ অংশগ্রহণসহ নানা সময়ে বিভিন্ন প্রগতিশীল আন্দোলন ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডে সক্রিয় থেকেছেন তিনি।

শিক্ষা জীবন:
মুর্শিদাবাদ জেলার সুন্দরপুর গ্রামে নানার বাড়িতে ১৯২৩ খ্রীস্টাব্দের ২৫ ডিসেম্বর জন্মগ্রহণ করেন। সেই সময় তাঁর বাবা ওমদাতুল ইসলাম ছিলেন কৃষ্ণনগর কলেজের অংকের শিক্ষক। কৃষ্ণনগর কলেজ স্কুলে পঞ্চম শ্রেণী পর্যন্ত পড়ার পর পিতার বদলির সুবাদে রাজশাহীতে যান। রাজশাহী কলেজিয়েট স্কুল ও রাজশাহী কলেজ থেকে যথাক্রমে মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক পাস করার পর ঐ কলেজ থেকেই পদার্থবিজ্ঞানে অনার্সসহ স্নাতক পাস করেন। এরপর শিবপুর ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ থেকে প্রকৌশল বিদ্যা পড়া শেষ করেন ১৯৪৬ সালে। দেশ ভাগের পর ১৯৪৭ সালে সহকারী প্রকৌশলী হিসেবে সরকারি চাকরিতে যোগ দেন।

১৯৫০ সালে যুক্তরাষ্ট্র যান এবং অরিগন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্থাপত্যের পাঠ নিয়ে আড়াই বছর পর দেশে ফেরেন। দেশে ফিরে একনাগারে ছয় মাসের পরিশ্রমে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা ইনস্টিটিউট ও লাইব্রেরী ভবনের ডিজাইন করেন।

এরপর ১৯৫৬ তে বৃত্তি নিয়ে তিনি ট্রপিক্যাল আর্কিটেকচার পড়তে লন্ডনের এএ স্কুল অব আর্কিটেকচার-এ যান। ১৯৬০ এ যান ইয়েল ইউনিভার্সিটিতে পল রুডল্‌ফ-এর অধীনে মাস্টার্স করতে।

কর্ম জীবন:
১৯৬১ এর শেষের দিকে তিনি দেশে ফিরে আসেন। কর্মজীবন শুরু করেছিলেন পূর্ব পাকিস্তানের কনস্ট্রাকশন, বিল্ডিং অ্যান্ড ইরিগেশনে। মতের মিল না হওয়ায় ১৯৬৪ সালে সরকারি চাকরি ছেড়ে প্রকৌশলী শেখ মুহম্মদ শহীদুল্লাহর সঙ্গে ‘বাস্তুকলাবিদ’ নামে একটি স্থাপত্য উপদেষ্টা প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলেন। বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় এ স্থাপত্য অনুষদ চালু করার ক্ষেত্রে বিশেষ ভূমিকা রেখেছেন তিনি। এখানে খণ্ডকালীন শিক্ষকতাও করেছেন।

অবদান:
১৯৫৩-৫৪: ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা ইনস্টিটিউট, ঢাকা।
১৯৫৩-৫৪: ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের লাইব্রেরী ভবন।
১৯৬৩-৬৪: খিলগাঁও রেলওয়ে পুর্নবাসন প্রকল্প, ঢাকা।
১৯৬৩-৬৪: নতুন রাঙ্গামাটি শহর পরিকল্পনা, রাঙ্গামাটি।
১৯৬২: চতুর্থ শ্রেণীর কর্মচারীদের জন্য আবাসন প্রকল্প, আজিমপুর, ঢাকা।
১৯৬৩-৬৫: বিসিএসআইআর লাইব্রেরী ভবন, ঢাকা।
নিপা ভবন, ঢাকা।
১৯৬৫-৭১: কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশন মতিঝিল, ঢাকা।
১৯৬৫-৭১: জীবন বীমা ভবন, মতিঝিল, ঢাকা।
১৯৬৫-৭১: রাজশাহী, বগুড়া, পাবনা, সিলেট ও বরিশালের জন্য পাঁচটি পলিটেকনিক ইনিস্টিটিউট (বিদেশী স্থপতি স্ট্যানলি টাইগারম্যানকে সাথে নিয়ে)।
১৯৬৫-৭১: সড়ক গবেষণা পরীক্ষাগার, ঢাকা।
১৯৬৮-৭১: চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় মাস্টার প্লান ও বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্যান্য বেশকিছু গুরুত্বপূর্ণ ভবন।
১৯৬৮-৭১: রূপপুরে আনবিক শক্তি কমিশনের আবাসন প্রকল্প।
১৯৬৮-৭১: জাহাঙ্গীর নগর বিশ্ববিদ্যালয় মাস্টার প্লান ও বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্যান্য বেশকিছু গুরুত্বপূর্ণ ভবন।
১৯৮০-৮৪: জয়পুরহাট কয়লা ও সিমেন্ট প্রকল্প ।
১৯৮০-৮৪: জাতীয় গ্রন্থাগার ও জাতীয় আর্কাইভ ভবন, শেরে বাংলা নগর, ঢাকা।
১৯৮৭: বিশ্ব ব্যাংক অফিস ভবন, ঢাকা ।
১৯৯৫: ২০ তলা “গার্ডেন সিটি” প্রকল্প, ঢাকা।

সম্মাননা:
স্বাধীনতা দিবস পুরস্কার (১৯৯৯)
আমেরিকান ইনস্টিটিউট অব আর্কিটেক্ট এর জাতীয় সম্মেলনে সম্মানিত ফেলোশিপ অর্জন। (১৯৯৯)
আগা খান পুরস্কারের সম্মানিত বিচারকের দায়িত্ব পালন। (১৯৮০)
বাংলাদেশ স্থপতি ইনস্টিটিউট-এর প্রথম স্বর্ণ পদক অর্জন। (১৯৯৩)
ভারতের জে কে সিমেন্ট আয়োজিত স্থাপত্যশিল্পে শ্রেষ্ঠ অবদানের জন্য ‘গ্র্যান্ডমাস্টার অ্যাওয়ার্ড’।

মোহাম্মদ আতাউল করিম



পরিচয়:
মোহাম্মদ আতাউল করিম বাংলাদেশের মৌলভীবাজারের বড়লেখার মিশন হাউজে জন্মগ্রহণ করেন আতাউল করিম। বাবা মোহাম্মদ আবদুস শুকুর পেশায় ডাক্তার ছিলেন। বাংলাদেশী-মার্কিন পদার্থবিজ্ঞানী। যুক্তরাষ্ট্রের ভার্জিনিয়ার নরফোকে অবস্থিত ওল্ড ডোমিনিয়ন ইউনিভার্সিটির ভাইস প্রেসিডেন্ট (গবেষণা) হিসেবে কর্মরত এই বিজ্ঞানী ইলেক্টো-অপটিক্সের গবেষণায় অন্যতম পথিকৃত হিসেবে গণ্য।

শিক্ষাজীবন:
তাঁর শিক্ষাজীবন শুরু হয় বড়লেখার একটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে, অত:পর বড়লেখার বিখ্যাত পিসি হাই স্কুলে পড়ালেখা করেন। পরবর্তিতে ফৌজদারহাট ক্যাডেট কলেজ থেকে ১৯৬৯ খ্রিস্টাব্দে মাধ্যমিক পরীক্ষায় চট্টগ্রাম বোর্ডে প্রথম শ্রেণীতে ৪র্থ স্থান অধিকার করেন। ১৯৭২ খ্রিস্টাব্দে উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় সিলেট এমসি কলেজ থেকে প্রথম শ্রেণীতে প্রথম স্থান অধিকার করেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯৭৬ খ্রিস্টাব্দে পদার্থবিজ্ঞানে বি.এসসি. (অনার্স) ডিগ্রী লাভের পর উচ্চ শিক্ষা লাভের উদ্দেশ্যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে গমন করেন।[১] পদার্থবিজ্ঞানে মাস্টার অফ সায়েন্স, ইলেক্ট্রিকাল ইঞ্জিনিয়ারিং এ মাস্টার অফ সায়েন্স এবং পিএইচডি করেন ইউনিভার্সিটি অব আলাবামা থেকে, যথাক্রমে ১৯৭৮, ১৯৭৯ এবং ১৯৮১ খ্রিস্টাব্দে।

কর্মজীবন:
পড়ালেখা শেষ করে তিনি আরকানস বিশ্ববিদ্যালয়ে সহকারি অধ্যাপক হিসেবে যোগ দেন ১৯৮২ খ্রিস্টাব্দে। ১৯৮৩ খ্রিস্টাব্দে উইচিটা স্টেট ইউনিভার্সিটিত্র তড়িৎ প্রকৌশল বিভাগে সহকারি অধ্যাপক হিসেবে যোগ দেন এবং ১৯৮৬ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত সেখানে কর্মরত ছিলেন। ১৯৮৬ খ্রিস্টাব্দে তিনি ইউনিভার্সিটি অফ ডেইটনে সহকারি অধ্যাপক হিসেবে যোগ দেন। ১৯৮৮ সালে তিনি সহযোগী অধ্যাপক এবং ১৯৯৩ সালে অধ্যাপক পদে উন্নীত হন। ডেইটন বিশ্ববিদ্যালয়েই তিনি ইলেক্ট্রো-অপটিক্স প্রোগ্রামের পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন ১৯৯১ থেকে ১৯৯৮ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত।। ১৯৯৪ থেকে ১৯৯৮ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত তিনি সেখানে তড়িৎ ও কম্পিউটার প্রকৌশল বিভাগের চেয়ারম্যান ছিলেন। ১৯৮৮ খ্রিস্টাব্দে ওহিও'র রাইট প্যাটার্সন বিমান ঘাঁটিতে এভিওনিক্স পরিচালক হিসেবে যোগ দেন এবং ১৯৯০ খ্রিস্টাব্দে পর্যন্ত সেখানে কর্মরত ছিলেন। ১৯৯৮ খ্রিস্টাব্দে তিনি টেনেসী বিশ্ববিদ্যালয়ের তড়িৎ ও কম্পিউটার প্রকৌশল বিভাগে অধ্যাপক হিসেবে যোগ দেন এবং ২০০০ সাল পর্যন্ত কর্মরত ছিলেন। ২০০০ সালে তিনি সিটি ইউনিভার্সিটি অব নিউ ইয়র্কে তড়িৎ প্রকৌশল বিভাগে অধ্যাপক হিসেবে যোগ দেন। এই বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রকৌশলের ডীন হিসেবেও কর্মরত ছিলেন। ২০০৪ সালে তিনি নরফোকে অবস্থিত ওল্ড ডোমিনিয়ন ইউনিভার্সিটির তড়িৎ ও কম্পিউটার প্রকৌশল বিভাগে অধ্যাপক হিসেবে যোগ দেন এবং বর্তমানে তিনি এই বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস প্রেসিডেন্ট (গবেষণা) হিসেবে কর্মরত।

গবেষণা:
-বায়োফিজিক্স
-ননলিনিয়ার ইমেজ প্রসেসিং
-ইলেক্ট্রো অপটিকাল ডিসপ্লে'জ
-অপটিকাল কম্পিউটিং
-অপটিকাল ও হাইব্রিড ইলেক্ট্রো অপটিকাল সিস্টেমস ডিজাইন
-প্যাটার্ন রিকগনিশন
-ম্যাগলেভ ট্রেন

তার গবেষণার ব্যাপক অগ্রগতির কারণে অর্থ ব্যয় করছে যুক্তরাষ্ট্রের শিক্ষা বিভাগ, রাইট প্যাটার্সন ল্যাবরেটরি, অপটিক্যাল রিসার্চ অ্যাসোসিয়েটস, মার্কিন সেনাবাহিনী, ন্যাভাল রিসার্চ ল্যাবরেটরি প্রভৃতি প্রথম সারির সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো। তাঁর অধীনে ৫৭ জনেরও অধিক শিক্ষার্থী মাস্টার্স ও ডক্টরেট পর্যায়ে গবেষণা প্রতিবেদন রচনা করেছেন।

সদস্য:
-ইনস্টিটিউট অফ ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিক্স ইঞ্জিনিয়ার্স
-ইনস্টিটিউট অব ফিজিক্স, যুক্তরাজ্য
-অপটিকাল সোসাইটি অব আমেরিকা
-বাংলাদেশ বিজ্ঞান একাডেমী
-Virginia Research and Technology Advisory Commission (VRTAC),
-Southern Universities Research Association (SURA)

লেখালেখি:
করিম ছাত্র থাকাকালীন সময়ে লেখালেখি শুরু করেন। ১৯৭২-১৯৭৬ পর্যন্ত বিজ্ঞান সাময়িকী ও বাংলা একাডেমী বিজ্ঞান পত্রিকায় তার ত্রিশটিরও বেশি লেখা প্রকাশিত হয়। বিজ্ঞান সাময়িকীতে তার প্রকাশিত লেখাগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো বিবর্তন কাহিনী এবং সাম্প্রতিক। তিনি বাংলা একাডেমীতে একটি বইয়ের পান্ডুলিপিও জমা দিয়েছিলেন, কিন্তু বইটি প্রকাশিত হয়নি। উচ্চতর শিক্ষার জন্য তিনি যুক্তরাষ্ট্রে পাড়ি জমানোর সাথে বাংলায় তার লেখালেখিরও সমাপ্তি ঘটে।

প্রকাশনা:
তিনি ১৮টি বই রচনা করেছেন। এছাড়া আরো ৭টি বইয়ে তিনি ‘অধ্যায়’ লিখেছেন। তাঁর বৈজ্ঞানিক নিবন্ধের সংখ্যা ৩৭৫-এরও বেশি। তাঁর নিবন্ধগুলো পৃথিবীর খ্যাতনামা জার্নালসমূহে প্রকাশিত হয়েছে। তাঁর রচিত ও সম্পাদিত বইগুলো বিভিন্ন দেশে পাঠ্যপুস্তক হিসেবে পড়ানো হয়। তার বইগুলোর মধ্যে Digital Design: A Pragmatic Approach (1987), Electro-Optical Devices and Systems (1990), Optical Computing: An Introduction (1992), Electro-Optical Displays (1992), Continuous Signals and Systems with Matlab (2001, 2009), and Digital Design: Basic Concepts and Principles (2008) বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য।

পুরস্কার ও সম্মাননা:
মোহাম্মদ আতাউল করিম যেসকল পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন, তন্মধ্যে উল্লেখযোগ্য:

-এনসিআর স্টেকহোল্ডার অ্যাওয়ার্ড (১৯৮৯)
-নাসা টেক ব্রিফ অ্যাওয়ার্ড (১৯৯০)
-আউটস্ট্যান্ডিং সায়েন্টিস্ট অ্যাওয়ার্ড (১৯৯৪)
-আউটস্ট্যান্ডিং ইঞ্জিনিয়ারিং রিসার্চ অ্যাওয়ার্ড (১৯৯৮)

এছাড়াও তার সম্মানার্থে তার নাম অন্তর্ভুক্ত হয়েছে বিভিন্ন তালিকায়:

-২০০০ আউটস্ট্যান্ডিং সায়েন্টস্ট অফ দি টুয়েন্টিথ সেঞ্চুরী
-আমেরিকান ম্যান এ্যান্ড উইম্যানস ইন দি সায়েন্স

অবদান:
বাংলাদেশের জন্য তার সবচেয়ে বড় অবদান ইন্টারন্যাশনাল কনফারেন্স অন কম্পিউটার এন্ড ইনফরমেশন টেকনোলজি আয়োজন। এই সম্মেলনটি বর্তমানে বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় বৈজ্ঞানিক সম্মেলনে পরিণত হয়েছে। ড. করিম এই সম্মেলনের ইন্টারন্যাশনাল প্রোগ্রাম কমিটির চেয়ারম্যান। এই কমিটির ৮৫ সদস্য বিভিন্ন ক্ষেত্রের বিশেষজ্ঞ। সম্মেলনে প্রকাশিতব্য বৈগানিক নিবন্ধসমূহ কমিটির সদস্যবৃন্দ পর্যালোচনা করেন। এই সম্মেলনের ফলে বাংলাদেশের বিজ্ঞানী ও প্রকৌশলীরা তাদের কাজ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে তুলে ধরতে পারছেন।

পারিবারিক জীবন:
ড. করিম ১৯৭৭ সালে সহপাঠী সেতারাকে বিয়ে করেন। সেতারা একজন প্রাণ্রসায়নবিদ। তিনি এক পুত্র ও দুই কন্যার জনক।

প্রফুল্ল চন্দ্র রায়



পরিচয়:
প্রফুল্ল চন্দ্র রায় যিনি পি সি রায় নামেও পরিচিত(আগস্ট ২, ১৮৬১ - জুন ১৬, ১৯৪৪) একজন প্রখ্যাত বাঙালি রসায়নবিদ, বিজ্ঞানশিক্ষক, দার্শনিক, কবি। তিনি বেঙ্গল কেমিকালের প্রতিষ্ঠাতা এবং মার্কিউরাস নাইট্রাইট-এর আবিষ্কারক। দেশী শিল্পায়ন উদ্যোক্তা। তাঁর জন্ম অবিভক্ত বাংলার খুলনা জেলায় (বর্তমানে বাংলাদেশের অন্তর্গত)। তিনিজগদীশ চন্দ্র বসুর সহকর্মী ছিলেন। পি সি রায় বাংলাদেশের খুলনা জেলার পাইকগাছা উপজেলার রাডুলি গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তার মা'র ভূবনমোহিনী দেবী এবং পিতার নাম হরিশচন্দ্র রায় যিনি স্থানীয় একজন জমিদার ছিলেন। তার পরিবার ছিল বনিয়াদি। ছোটবেলা থেকেই প্রফুল্লচন্দ্র অত্যন্ত তুখোড় এবং প্রত্যুৎপন্নমতি ছিলেন।

তার পড়াশোনা শুরু হয় বাবার প্রতিষ্ঠিত এম ই স্কুলে। ১৮৭২ সালে তিনি কলকাতার হেয়ার স্কুলে ভর্তি হন, কিন্তু রক্ত আমাশা রোগের কারণে তার পড়ালেখায় ব্যাপক বিঘ্নের সৃষ্টি হয়। বাধ্য হয়ে তিনি নিজ গ্রামে ফিরে আসেন। গ্রামে থাকার এই সময়টা তার জীবনে উল্লেখযোগ্য পরিবর্তনে সাহায্য করেছে। বাবার গ্রন্থাগারে প্রচুর বই পান তিনি এবং বইপাঠ তার জ্ঞানমানসের বিকাশসাধনে প্রভূত সহযোগিতা করে।

শিক্ষাজীবন:
১৮৭৪ সালে প্রফুল্লচন্দ্র আবার কলকাতায় ফিরে যেয়ে অ্যালবার্ট স্কুলে ভর্তি হন। এই স্কুল থেকেই ১৮৭৮ সালে তিনি প্রবেশিকা পরীক্ষায় প্রথম বিভাগে উত্তীর্ণ হন। এরপর তিনি ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত মেট্রোপলিটন কলেজে (বর্তমান বিদ্যাসাগর কলেজ) ভর্তি হন। ১৮৮১ সালে সেখান থেকে এফ এ পরীক্ষায় দ্বিতীয় বিভাগে পাশ করে তিনি প্রেসিডেন্সী কলেজে বি এ ভর্তি হন। প্রেসিডেন্সী থেকে গিলক্রিস্ট বৃত্তি নিয়ে তিনি স্কটল্যান্ডের এডিনবার্গ বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করতে যান। এই বিশ্ববিদ্যালয় হতে তিনি বি এস সি পাশ করেন এবং ডি এস সি ডিগ্রী লাভের জন্য গবেষণা শুরু করেন। তার সেই গবেষণার বিষয় ছিল কপার ম্যাগনেসিয়াম শ্রেণীর সম্মিলিত সংযুক্তি পর্যবেক্ষণ (Conjugated Sulphates of Copper Magnesium Group: A Study of Isomorphous Mixtures and Molecular Combination)। দুই বছরের কঠোর সাধনায় তিনি এই গবেষণা সমাপ্ত করেন এবং পি এইচ ডি ও ডি এস সি ডিগ্রী লাভ করেন। এমনকি তার এই গবেষণাপত্রটি শ্রেষ্ঠ মনোনীত হওয়ায় তাকে হোপ প্রাইজে ভূষিত করা হয়। এডিনবার্গ বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নকালেই ১৮৮৫ সালে সিপাহী বিদ্রোহের আগে ও পরে (India Before and After the Sepoy Mutiny) এবং ভারতবিষয়ক বিভিন্ন নিবন্ধ লিখে ভারতবর্ষ এবং ইংল্যান্ডে ব্যাপক জনপ্রিয়তা লাভ করেন।

কর্মজীবন:
ইউরোপের বিভিন্ন দেশ ঘুরে ১৮৮৮ সালে আচার্য রায় স্বদেশে প্রত্যাবর্তন করেন। দেশে ফিরে প্রেসিডেন্সী কলেজের সহকারী অধ্যাপক হিসেবে যোগদানের মাধ্যমে তিনি কর্মজীবন শুরু করেন। প্রায় ২৪ বছর তিনি এই কলেজে অধ্যাপনা করেছিলেন। অধ্যাপনাকালে তার প্রিয় বিষয় রসায়ন নিয়ে তিনি নিত্য নতুন অনেক গবেষণাও চালিয়ে যান। তার উদ্যোগে তার নিজস্ব গবেষণাগার থেকেই বেঙ্গল কেমিক্যাল কারখানা সৃষ্টি হয় এবং পরবর্তীকালে ১৯০১ সালে তা কলকাতার মানিকতলায় ৪৫ একর জমিতে স্থানান্তরিত করা হয়। তখন এর নতুন নাম রাখা হয় বেঙ্গল কেমিক্যাল এন্ড ফার্মাসিউটিক্যাল ওয়ার্কস লিমিটেড।

অবদান:
-নিজের বাসভবনে দেশীয় ভেষজ নিয়ে গবেষণার মাধ্যমে তিনি তার গবেষণাকর্ম আরম্ভ করেন। তার এই গবেষণাস্থল থেকেই পরবর্তীকালে বেঙ্গল কেমিক্যাল কারখানার সৃষ্টি হয় যা ভারতবর্ষের শিলপায়নে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করে। তাই বলা যায় বিংশ শতাব্দীর গোড়ার দিকে ভারতীয় উপমহাদেশের শিল্পায়নে তার ভূমিকা অনস্বীকার্য।
-১৮৯৫ সালে তিনি মারকিউরাস নাইট্রাইট (HgNO2) আবিষ্কার করেন যা বিশ্বব্যাপী আলোড়নের সৃষ্টি করে। এটি তার অন্যতম প্রধান আবিষ্কার। তিনি তার সমগ্র জীবনে মোট ১২ টি যৌগিক লবন এবং ৫ টি থায়োএস্টার আবিষ্কার করেন।

সম্মাননা:
-সি আই ই: ১৯১১ সালে কলকাতা বিশ্ববাদ্যালয়ের সিন্ডিকেট হিসেবে তৃতীয়বারের মত তিনি ইংল্যান্ড যান এবং সেখান থেকেই সি আই ই লাভ করেন।
-সম্মানসূচক ডক্টরেট: ১৯১১ সালে ডারহাম বিশ্ববিদ্যালয় তাকে এই ডিগ্রী দেয়। এছাড়া ১৯৩৬ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এবং পরবর্তীকালে মহীশুর ও বেনারস বিশ্ববিদ্যালয় থেকেও তিনি ডক্টরেট পান।
-নাইট: ১৯১৯ সালে তিনি নাইট উপাধি লাভ করেন।

ব্যাক্তি হিসেবে আচার্য:
দেশপ্রেম
-আচার্য দেবের দেশপ্রেম তাকে ইউরোপে থেকে ফিরিয়ে এনেছিল। দেশে এসেও তিনি তার সেই স্বদেশপ্রীতির পরিচয় দিয়েছেন। তিনি ক্লাসে বাংলায় লেকচার দিতেন। বাংলা ভাষা তার অস্তিত্বের সাথে মিশে ছিল। তার বাচনভঙ্গী ছিল অসাধারণ যার দ্বারা তিনি ছাত্রদের মন জয় করে নিতেন খুব সহজেই। তিনি সকল ক্ষেত্রেই ছিলেন উদারপন্থী।

অসাম্প্রদায়িকতা
-কিছু সূত্র মতে, তিনি অসাম্প্রদায়িকই শুধু ছিলেননা বরং সাম্প্রদায়িক চিন্তাধারার মূলোৎপাটনের জন্যও চেষ্টা করেছেন সবসময়। ১৯০৫ সালে ড. কুদরত-এ-খুদাকে প্রেসিডেন্সী কলেজে থেকে রসায়নে প্রথম বিভাগ দেয়া হয়। অনেকের বিরোধিতা সত্ত্বেও প্রফুল্লচন্দ্র নিজের সিদ্ধান্ত মোতাবেক কুদরত-এ-খুদাকে প্রথম বিভাগ দেন। এরকম ব্যাপার শোনা যায় শেরে বাংলা এ. কে. ফজলুক হকের জীবনী থেকেও।

গ্রন্থাবলী
-India Before and After the Sepoy Mutiny (সিপাহী বিদ্রোহের আগে ও পরে)
-সরল প্রাণীবিজ্ঞান, বাঙ্গালী মস্তিষ্ক ও তার অপব্যবহার
-হিন্দু রসায়নী বিদ্যা
-মোট গবেষণাপত্রের সংখ্যা ১৪৫ টি

শাহ মোহাম্মদ ফারুক


পরিচয়:
শাহ মোহাম্মদ ফারুক ১৯৫৬ সালে যশোর জেলায় জন্মগ্রহণ করেন। শাহ মোহাম্মদ ফারুক একজন বাংলাদেশী বিজ্ঞানী এবং ভিব্রিও কলেরীর একজন অগ্রগণ্য গবেষক। বর্তমানে তিনি ইন্টারন্যাশনাল সেন্টার ফর ডাইরিয়াল ডিজিজ রিসার্চ, বাংলাদেশ এর মলিকুলার জেনেটিক্স ইউনিট এর প্রধান। তিনি খাদ্যবাহিত ও পানিবাহিত রোগসৃষ্টিকারী ব্যাক্টেরিয়া নিয়ে গবেষণা করেন। তিনি থার্ড ওয়ার্ল্ড অ্যাকাডেমী অব সায়েন্সেস এবং বাংলাদেশ অ্যাকাডেমী অব সায়েন্সেস এর একজন ফেলো।

শিক্ষাজীবন:
তিনি যশোর জিলা স্কুল ও ঝিনাইদহ ক্যাডেট কলেজে পড়াশোনা করেন। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এর প্রাণরসায়ন ও অণুপ্রাণবিজ্ঞান বিভাগ থেকে ১৯৭৮ সালে বিএসসি ও ১৯৭৯ সালে এমএসসি ডিগ্রি অর্জন করেন। তিনি ১৯৮৮ সালে যুক্তরাজ্যের রিডিং বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ডক্টরেট ডিগ্রি অর্জন করেন।

কর্মজীবন:
ড. ফারুক ১৯৮৪ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণরসায়ন ও অণুপ্রাণবিজ্ঞান বিভাগে প্রভাষক হিসেবে যোগদান করেন। ১৯৮৮ সালে তিনি সহকারী অধ্যাপক হিসেবে পদোন্নতি পান। ২০১০ সাল থেকে তিনি নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ে খন্ডকালীন শিক্ষক হিসেবে কাজ করেন।

পুরস্কার:
তিনি ২০০৫ সালে মেডিকেল সায়েন্সে থার্ড ওয়ার্ল্ড অ্যাকাডেমী অব সায়েন্সেস প্রাইজ ২০০৫ লাভ করেন।


(পোস্টটা আজব না হলেও "কত অজানা রে" সিরিজে পরে, কি বলেন?)
(গুগোলের শাশুরি উইকি থেকে মেরে দেওয়া)

সর্বশেষ এডিট : ২৫ শে মার্চ, ২০১৩ রাত ১১:০১
৮টি মন্তব্য ৭টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। কালবৈশাখী

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১৭ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:২৪



গত পরশু এমনটি ঘটেছিল , আজও ঘটলো । ৩৮ / ৩৯ সে, গরমে পুড়ে বিকেলে হটাৎ কালবৈশাখী রুদ্র বেশে হানা দিল । খুশি হলাম বেদম । রূপনগর... ...বাকিটুকু পড়ুন

একজন খাঁটি ব্যবসায়ী ও তার গ্রাহক ভিক্ষুকের গল্প!

লিখেছেন শেরজা তপন, ১৭ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:০৪


ভারতের রাজস্থানী ও মাড়ওয়ার সম্প্রদায়ের লোকজনকে মূলত মাড়ওয়ারি বলে আমরা জানি। এরা মূলত ভারতবর্ষের সবচাইতে সফল ব্যবসায়িক সম্প্রদায়- মাড়ওয়ারি ব্যবসায়ীরা ঐতিহাসিকভাবে অভ্যাসগতভাবে পরিযায়ী। বাংলাদেশ-ভারত নেপাল পাকিস্তান থেকে শুরু করে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইরান-ইজরায়েল যুদ্ধ

লিখেছেন মঞ্জুর চৌধুরী, ১৭ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:০৮

আমরা সবাই জানি, ইরানের সাথে ইজরায়েলের সম্পর্ক সাপে নেউলে বললেও কম বলা হবে। ইরান ইজরায়েলকে দুচোখে দেখতে পারেনা, এবং ওর ক্ষমতা থাকলে সে আজই এর অস্তিত্ব বিলীন করে দেয়।
ইজরায়েল ভাল... ...বাকিটুকু পড়ুন

নগ্ন রাজা কর্তৃক LGBTQ নামক লজ্জা নিবারনকারী গাছের পাতা আবিষ্কার

লিখেছেন মুহাম্মদ মামুনূর রশীদ, ১৭ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:৪০

LGBTQ কমিউনিটি নিয়ে বা এর নরমালাইজেশনের বিরুদ্ধে শোরগোল যারা তুলছেন, তারা যে হিপোক্রেট নন, তার কি নিশ্চয়তা? কয়েক দশক ধরে গোটা সমাজটাই তো অধঃপতনে। পরিস্থিতি এখন এরকম যে "সর্বাঙ্গে ব্যথা... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছিঁচকাঁদুনে ছেলে আর চোখ মোছানো মেয়ে...

লিখেছেন খায়রুল আহসান, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:০৯

ছিঁচকাঁদুনে ছেলে আর চোখ মোছানো মেয়ে,
পড়তো তারা প্লে গ্রুপে এক প্রিপারেটরি স্কুলে।
রোজ সকালে মা তাদের বিছানা থেকে তুলে,
টেনে টুনে রেডি করাতেন মহা হুলস্থূলে।

মেয়ের মুখে থাকতো হাসি, ছেলের চোখে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×