somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ঘুরে এলাম রুপালী ইলিশ এর শহর চাঁদপুর

২৫ শে আগস্ট, ২০১২ বিকাল ৪:০৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ঈদের আগেই সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম, ঈদের ছুটিতে বাড়ী যাবনা। তাই ভাবছিলাম ঈদের দীর্ঘ ছুটিতে কোথায় ঘুরে আসা যায়। প্রথমে পরিকল্পনা করলাম বান্দরবান যাব । কিন্তু সফরসঙ্গী না পাওয়াতে সে পরিকল্পনা বাদ দিলাম। পরবর্তীতে পরিকল্পনা করলাম লঞ্চ ভ্রমনের। সফরসঙ্গী হিসাবে আমার এক বড় ভাই'র কাছে আমার পরিকল্পনার কথা জানালাম। তিনিও রাজি হয়ে গেলেন। সিদ্ধান্ত হল ঈদের পরের দিন আমরা লঞ্চ এ করে চাঁদপুর যাব। সেই মোতাবেক ২২ আগষ্ট সকালে বেলা আমরা বাসা থেকে বের হলাম সদরঘাটেট উদ্দেশ্যে। সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনালে গিয়ে দেখি ঈদে ঘরমুখী মানুষের বাড়ি ফেরা যেনো এখনো শেষ হয়নি। প্রচন্ড ভীর টেলে এম.ভি বোগদাদীয়া-৫ লঞ্চ এ উঠলাম। অনেক কষ্ট করে প্রথম শ্রেনীর ৩ টি টিকেট ম্যানেজ করলাম ( আমরা সফর সঙ্গী ছিলাম মোট ৪ জন), পরে আরেকটি টিকেট নিলাম ডেক এর। লঞ্চ চাঁদপুরের উদ্দেশ্যে সদরঘাট থেকে যাত্রা করল দুপুর ১২টায়। সদরঘাটে সারি সারি লঞ্চ পিছনে রেখে আমাদের লঞ্চ ছুটে চলেছে চাঁদপুরের উদ্দেশ্যে। প্রথমে বুড়িগঙ্গার দু'পাড়ে নয়নাভিরাম দৃশ্য দেখতে দেখতে কখনো যে বুড়িগঙ্গা ছেড়ে মেঘনা নদীতে চলে এসেছি টেরই পাইনি। মেঘনা নদীতে লঞ্চ পৌছার সাথে সাথেই বর্ষায় ভরা যৌবনের মেঘনার ঢেউ যেনো আমাদের স্বাগত জানাচ্ছিল। উত্তাল ঢেউ এর বুক চিরে এম.ভি বোগদাদীয়া লঞ্চ ছুটে চলেছে তার আপন গন্তব্যে, যেনো একটুও থামার অবকাশ নেই। মেঘনা পদ্মা নদীর মোহনায় চাঁদপুর লঞ্চ ঘাট। বেলা সাড়ে তিনটায় লঞ্চ এসে পৌছল চাঁদপুর।
চাঁদপুর লঞ্চঘাট থেকে দুটি রিক্সা করে আমরা রওয়ানা দিলাম চৌধুরী ঘাটলা (ব্রীজ মোড়), সেখানে আগে থেকে আমাদের জন্য হোটেল বুকিং দেওয়া ছিল। হোটেলে পৌঁছার সাথে সাথেই শুরু হল অভিরাম বৃষ্টি। বৃষ্টি যেনো আর থামতে চাচ্ছেনা। পরিকল্পনা ছিল বিকেল বেলা একটু "টোডা" ঘুরে আসব। কিন্তু বৃষ্টির কারণে আর যাওয়া হলনা। সারা বিকেলই হোটেলে বসে থাকতে হল।
পরের দিন সকাল বেলা বের হলাম টোডা'র উদ্দেশ্যে। শহরের কালিবাড়ী মোড় থেকে প্রথমে গেলাম মাছ ঘাটে (যেখানে ইলিশ মাছ প্রক্রিয়াজাত করা হয় এবং জেলেরা নদীতে ইলিশ মাছ ধরার পর এখানেই নিয়ে আসে)। মাছঘাট পুরাতন রেল ষ্টেশনের ঠিক বিপরীত পাশেই। মাছ ঘাট থেকে হেটে হেটে গেলাম টোডা, খুব বেশী দুরে নয়। টোডা থেকে পদ্মা-মেঘনা নদীর মিলনস্থল খুবই কাছে থেকেই দেখা যায়। তাই এই জায়গা একটা বিনোদন কেন্দ্রে পরিনত হয়েছে। এখান থেকে ইঞ্জিন চালিত নৌকা করে পদ্মার চর ঘুরে আসা যায় জনপ্রতি ২০ টাকা। রিজার্ভ নৌকা ২০০-২৫০ টাকা। আমাদের ঢাকায় ফিরতে হবে বলে ইচ্ছা থাকা সত্বেও পদ্মার চরে যাওয়া হয়নি। টোডা থেকেই হস্তচালিত নৌকা ভাড়া করলাম ব্রীজ মোড় যাওয়ার জন্য। ডাকাতিয়া নদীর উপর ব্রীজ শহরের নতুন বাজার এবং পুরাতন বাজারকে সংযুক্ত করেছে। কথিত আছে শহরের পুরান বাজার এক সময় খুবই জমজমাট ছিল। বিশেষ করে পাট এবং লবন মিল ছিল এখানে। কলকাতা থেকে জাহাজ আসত এই বন্দরে পাট এবং লবন নেওয়ার জন্য। কালের সাঙ্গী হয়ে এখনও কিছু নমুনা রয়ে গেছে।
যাবার সময় হয়ে গেছে, হোটেল ছাড়তে হবে। রওনা দিলাম আবার লঞ্চঘাটের উদ্দেশ্যে। বেলা ২টায় ছাড়বে এমভি মেঘনা রানী। কিন্তু মেঘনা রানীর কোনো খোজ নেই। মেঘনা রানী ঘাটে আসল ঠিক ২ মিনিট আগে। এখন যাত্রী নামাবে না উঠাবে শুরু হয়ে গেল তাড়াহুড়া। আবারও ধাক্কা ধাক্কি করে লঞ্চে উঠো, সিট দখল কর। এ যাত্রায় ফেলাম প্রথম শ্রেনীর একটি টিকেট তাও আবার ১৪০ টাকার টিকেট ১৮০ টাকায়। সিট না ফেলে কোনো সমস্যা নেই। সাড়ে ৩ ঘন্টা ৪ ঘন্টার ভ্রমণ দাড়িয়ে দাড়িয়ে অনায়াসেই পার করা যায়। পদ্মা মেঘনার বুকে মাছ ধরার দৃশ্য দেখতে দেখতেই চলে আসা যায় ঢাকা কিংবা যাওয়া যায় চাঁদপুরে।
যেভাবে চাঁদপুর যাবেনঃ সদরঘাট থেকে সকাল থেকে রাত পর্যন্ত প্রতি ৩০ মিনিট পর লঞ্চ ছেড়ে যায় চাঁদপুরের উদ্দেশ্যে। ঠিক একই ভাবে চাঁদপুর থেকে লঞ্চ ছেড়ে আসে ঢাকার উদ্দেশ্যে।
ভাড়া ঃ ডেক-এ জনপ্রতি ১০০ টাকা, চেয়ার ১৪০ টাকা, কেবিন ৫০০-১৫০০টাকা।
খাবার দাবার ঃ ইচ্ছে করলে খাবার সাথেও নিতে পারেন। তা নাহলে লঞ্চ এর ভিতরেই পাওয়া চা নাস্তা পাওয়া যায়।
হোটেল ঃ চাঁদপুর শহরে থাকার মত বেশ কিছু হোটেল রয়েছে। তারমধ্যে হোটেল তাজমহল, হোটেল জোনাকী, হোটেল শ্যামলী, চৌধুরী ঘাটলা, ব্রীজ মোড়।
খাবার হোটেল ঃ শহরের কালিবাড়ী মোড়ে রয়েছে ঢাকা হোটেল, হোটেল হ্যাভেন ইত্যাদি।

সর্তকতা ঃ চাঁদপুর গেলে প্রয়োজন না হলে ভূলেও রিক্সা'র ধারে কাছে যাবেন না। কারণ চাঁদপুরেই বিশ্বের সবচেয়ে বেশী রিক্সা ভাড়া। (ঢাকায় যে ভাড়া ২০ টা সম দূরত্বে চাঁদপুরে রিক্সা ভাড়া হবে ৮০ টাকা)

ফটো এখানে আছে ঃ
১২টি মন্তব্য ৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

চুরি করাটা প্রফেসরদেরই ভালো মানায়

লিখেছেন হাসান মাহবুব, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৫৩


অত্র অঞ্চলে প্রতিটা সিভিতে আপনারা একটা কথা লেখা দেখবেন, যে আবেদনকারী ব্যক্তির বিশেষ গুণ হলো “সততা ও কঠোর পরিশ্রম”। এর মানে তারা বুঝাতে চায় যে তারা টাকা পয়সা চুরি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শিব নারায়ণ দাস নামটাতেই কি আমাদের অ্যালার্জি?

লিখেছেন ...নিপুণ কথন..., ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৫:৫৭


অভিমান কতোটা প্রকট হয় দেখেছিলাম শিবনারায়ণ দাসের কাছে গিয়ে।
.
গত বছরের জুন মাসের শুরুর দিকের কথা। এক সকালে হঠাৎ মনে হলো যদি জাতীয় পতাকার নকশাকার শিবনারায়ণ দাসের সঙ্গে দেখা করা সম্ভব... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঘুষের ধর্ম নাই

লিখেছেন প্রামানিক, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:৫৫


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

মুসলমানে শুকর খায় না
হিন্দু খায় না গাই
সবাই মিলেই সুদ, ঘুষ খায়
সেথায় বিভেদ নাই।

হিন্দু বলে জয় শ্র্রীরাম
মুসলিম আল্লাহ রসুল
হারাম খেয়েই ধর্ম করে
অন্যের ধরে ভুল।

পানি বললে জাত থাকে না
ঘুষ... ...বাকিটুকু পড়ুন

প্রতি মাসে সামু-ব্লগে ভিজিটর কত? মার্চ ২০২৪ Update

লিখেছেন জে.এস. সাব্বির, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:০৮

মার্চ ২০২৪ সালে আমাদের প্রিয় সামু ব্লগে ভিজিটর সংখ্যা কত ছিল? জানতে হলে চোখ রাখুন-

গত ৬ মাসের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ভিউ ছিল জানুয়ারি মাসে। ওই মাসে সর্বমোট ভিজিট ছিল ১৬... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইরান-ইজরায়েল দ্বৈরথঃ পানি কতোদূর গড়াবে??

লিখেছেন ভুয়া মফিজ, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:২৬



সারা বিশ্বের খবরাখবর যারা রাখে, তাদের সবাই মোটামুটি জানে যে গত পহেলা এপ্রিল ইজরায়েল ইরানকে ''এপ্রিল ফুল'' দিবসের উপহার দেয়ার নিমিত্তে সিরিয়ায় অবস্থিত ইরানের কনস্যুলেট ভবনে বিমান হামলা চালায়।... ...বাকিটুকু পড়ুন

×