somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

অপেক্ষার ফল সুমিষ্ট হয়

২৩ শে জানুয়ারি, ২০১৭ সকাল ১০:৫৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

সেদিন পার্কের ঘটনা। দূর থেকে লক্ষ্য করছিলাম পুরো ব্যাপারটা। প্রায় ষাটোর্ধ একজন বৃদ্ধা বসে অাছেন একটা বেঞ্চিতে। পাশে তার হাতব্যাগটি। চোখে চশমা পড়েছেন সোনালী ফ্রেমের মোটা কাঁচের চশমা। বিড়বিড়িয়ে কি যেন বলছিল তিনি। দূর থেকে বোঝার চেষ্টা করলাম কিন্তু নাহ! কিছুই বুঝতে পারছি না। এগিয়ে গেলাম বেঞ্চটার দিকে। একটু একটু শব্দ পাচ্ছি তখন। মনে হচ্ছে তিনি গান গাইছেন। হাঁটতে হাঁটতে তার কাছে পৌঁছে গেলাম খানিক বাদেই।

হ্যাঁ বৃদ্ধা গাইছেন। চোখ বুজে মনের খুব ভেতর থেকে গাইছেন। "যদিও তখন অাকাশ থাকবে বৈরী, কদমও গুচ্ছ হাতে নিয়ে অামি তৈরী। উতলা অাকাশ মেঘে মেঘে হবে কালো, ঝলকে ঝলকে নাচিছে বিজলী অালো, তুমি চলে এসো, তুমি এসো, এক বরষায়..."

মুহুর্তের জন্য গানের মধ্যে হারিয়ে ফেলেছি নিজেকে। হঠাৎ গান থেমে গেল। আমার ঘোর কেটে গেল পলকেই। তবে মনের মধ্যে গানের তীব্র আবেগটা অনুরণন করে যাচ্ছে। বৃদ্ধা তাকিয়ে অাছেন অামার দিকে। কিছুটা ইতস্ততঃ বোধ করছি অামি। আমাকে কাছে ডাকলো সে। আমি এদিক ওদিক তাকিয়ে বোঝার চেষ্টা করলাম। তারপর বৃদ্ধা ইশারায় অভয় দিলো, তার সামনে গিয়ে দাড়ালাম।

"কারো জন্য অপেক্ষা করছো?"
-বৃদ্ধা প্রশ্ন করলো। হ্যাঁ সূচক মাথা নাড়লাম। বৃদ্ধা বলতে শুরু করলো.....

জানো, আমার জন্য সেও অপেক্ষা করতো। তবে সবসময় যে সে আগে এসে অপেক্ষা করতো তা কিন্তু না। আমিও অনেকবার অাগে এসে অপেক্ষা করে থেকেছি। কি যে বিরক্ত লাগে একা দাঁড়িয়ে থাকতে। কিন্তু সব বিরক্তি উবে যেত নিমিষেই। ওর চোখজোড়াতে একটা অদ্ভুৎ টান ছিল। মায়ার টান, গভীর এক অাকর্ষন ছিল। আমি জানো তো, নিজেকে পৃথিবীর সবচেয়ে ভাগ্যবতী মেয়ে ভাবতাম। ও একটু ভীতু ছিল, আমিও। কিন্তু আমি ওর থেকে বেশী সাহসী। বিশ্বাস হচ্ছে না? হুম, না হওয়ারই কথা। কিন্তু ও মেনে নিতো সব। আচ্ছা তোমার কথা তো কিছু বললে না!! আর কতক্ষণ অপেক্ষা করবে???

আমি উত্তর দিতে যাবো, এমন সময় তিনি আবার বলা শুরু করলেন....

যেদিন প্রথম ওর হাত ধরেছি, আমি বুঝতে পেরেছিলাম। এ হাত ছাড়তে পারবো না অার। ওর হাতের স্পর্শটাও অদ্ভুৎ। চরম তাপদাহে শীতলতার ছোঁয়া সে হাতে, আবার তীব্র শীতে সে হাত উষ্ণতা ছড়াতো অামার মাঝে। আমরা যেদিন প্রথম একসাথে বৃষ্টিতে ভিজেছিলাম, সেদিন কি হয়েছে জানো? রোদ আর বৃষ্টি একই সাথে। অনেকটা অামরা দুজনের মতো। আমি রোদ হলে ও বৃষ্টি। আর অামি বৃষ্টি হলে ও রোদ। ওর রোদটাই বেশি বোধহয়। আমি রাগ করে থাকতে পারতাম না মোটেও, কিন্তু ও রাগ করা মানেই চুপচাপ। অসহ্য সে নীরবতা। নীরব থাকার মধ্যে যে এতো শক্তি ও না থাকলে বুঝতামই না। ওর কাছে অনেক কিছুই শিখেছি। কিন্তু অামার সাথে ও রাগ করে, এটা অামার একটুও ভালো লাগেনা। আরে রাগ করো, বারণ করলো কে!! কিন্তু অামার সাথেই কেন!? আবার বলি বেচারা, আর কার সাথেই বা রাগ করবে!! আমি তো সাহসী ছিলাম। কিন্তু তবুও কখনও সাহস হারিয়ে ফেললে ও একটা কথা বলতো অামাকে, "ভয় পেও না, অামি অাছি"
এটা শুনলে সব দুঃশ্চিন্তা দূর হয়ে যেতো। আর কিছুই তো চাইনা। শুধু প্রতিটা মুহুর্তে ও পাশে থাকবে, আগলে রাখবে। এটুকুর জন্যই তো বেঁচে থাকা। হঠাৎ বৃদ্ধার মোবাইলে ক্রিং ক্রিং শব্দ। হাতব্যাগ থেকে মোবাইল বের করে মোটা চশমার ফাঁক দিয়ে মোবাইলের দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থাকলেন। তারপর মৃদু হেসে আমার দিকে তাকিয়ে বললেন-
গাধাটা "স্যরি" লিখে মেসেজ দিয়েছে। আধঘন্টা লাগলো অাজকেও। দেখেছো কিরকম হার্টলেস? বুড়ো হয়েছে কিন্তু পার্ট কমেনি। আমি যাই, গিয়ে একটা কামড় দিতে হবে, শাস্তি। না জোরে কামড় দিবোনা তো, অাস্তে দিবো।

আমি ভ্রুঁ কুচকে তাকালাম তার দিকে। তা দেখে ওঠে যেতে যেতে বললেন-
"অপেক্ষা করো। অপেক্ষার ফল সুমিষ্ট হয়" :)
সর্বশেষ এডিট : ২৩ শে জানুয়ারি, ২০১৭ সকাল ১০:৫৭
৪টি মন্তব্য ৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

গণতন্ত্র আর বাক-স্বাধীনতার আলাপসালাপ

লিখেছেন অনিকেত বৈরাগী তূর্য্য , ২৭ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৪:২৩


একাত্তর সালে আওয়ামী লীগের লোকজন আর হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা ছিল পাকবাহিনীর প্রধান টার্গেট। যদিও সর্বস্তরের মানুষের ওপর নিপীড়ন অব্যাহত ছিল। গ্রামের পর গ্রাম জ্বালিয়ে দেওয়া হয়েছিল। মুক্তিযোদ্ধা আর তাদের পরিবারের... ...বাকিটুকু পড়ুন

কাফের কুফফারদের দেশে বাস করা হারাম।

লিখেছেন মঞ্জুর চৌধুরী, ২৭ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৯:১৩

ফেসবুকে বাঙালিদের মধ্যে ইদানিং নতুন এক ফতোয়া চালু হয়েছে, এবং তা হচ্ছে "দাওয়াতের নিয়্যত ছাড়া কাফের কুফফারদের দেশে বাস করা হারাম।"
সমস্যা হচ্ছে বাঙালি ফতোয়া শুনেই লাফাতে শুরু করে, এবং কোন... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানে মুক্তিযোদ্ধাদের মুমিনী চেহারা ও পোশাক দেখে শান্তি পেলাম

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৭ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৯:৫৮



স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানে স্টেজে উঠেছেন বত্রিশ মুক্তিযোদ্ধা তাঁদের চব্বিশ জনের দাঁড়ি, টুপি ও পাজামা-পাঞ্জাবী ছিলো। এমন দৃশ্য দেখে আত্মায় খুব শান্তি পেলাম। মনে হলো আমাদের মুক্তিযোদ্ধা আমাদের মুমিনদের... ...বাকিটুকু পড়ুন

দু'টো মানচিত্র এঁকে, দু'টো দেশের মাঝে বিঁধে আছে অনুভূতিগুলোর ব্যবচ্ছেদ

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ১২:৩৪


মিস ইউনিভার্স একটি আন্তর্জাতিক সুন্দরী প্রতিযোগিতার নাম। এই প্রতিযোগিতায় বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সুন্দরীরা অংশগ্রহণ করলেও কখনোই সৌদি কোন নারী অংশ গ্রহন করেন নি। তবে এবার রেকর্ড ভঙ্গ করলেন সৌদি... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের দুই টাকার জ্ঞানী বনাম তিনশো মিলিয়নের জ্ঞানী!

লিখেছেন সাহাদাত উদরাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ২:৫৯

বিশ্বের নামীদামী অমুসলিমদের মুসলিম হয়ে যাওয়াটা আমার কাছে তেমন কোন বিষয় মনে হত না বা বলা চলে এদের নিয়ে আমার কোন আগ্রহ ছিল না। কিন্তু আজ অষ্ট্রেলিয়ার বিখ্যাত ডিজাইনার মিঃ... ...বাকিটুকু পড়ুন

×