somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

লিচু কিনতে চৌকিট বাজারে

১২ ই জুন, ২০১৮ দুপুর ১:৫৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

চোকিট বাজার, কুয়ালালামপুর



যারা ছোটখাট কাজ করে তাদেরকে সাপ্তাহিক ছুটির দিনে প্রচন্ড ব্যস্ত থাকতে হয়। পুরো সপ্তাহের বাজার করা আরো নানান সাংসারিক কাজে সময় খুব দ্রুত ফুরিয়ে যায়। ফলে বিশ্রাম তো হয়ই না বরং রাজ্যের ক্লান্তি ভর করে বসে শরীরে। ঘুম আসে। অথচ ঘুমানোর সময় পাওয়া যায় ন।

গত কাল গিয়েছিলাম বাসার সব চেয়ে কাছের শপ Tesco Extra Ampang-এ। কেনাকাটা প্রায় মাঝপথে ।

হঠাৎ আমার কন্যা বলল- সে লিচি জুস নেবে। লিচি জুস শুনে চমকে উঠলাম।

আরে লিচুর সিজন তো শেষের দিকে। এখনো লিচু খাওয়া হয়নি। আর এখানে সব দোকানে লিচু পাওয়াও যায় না। রাতের বাজার (যা মালয় ভাষায় Pasar- মানে বাজার ; আর Malam মানে রাত) এ পাওয়া যেতে পারে। তবে সব রাতের বাজারে নয়। কোন ফাঁকা জায়গায় সন্ধ্যা থেকে রাত অবধি যে অস্থায়ী বাজার বসে তাই মালয়শিয়াতে পাসার মালাম নামে পরিচিত। আমার সহসাই মনে হলো চৌকিট বাজারে গেলে লিচু পাব। অন্য কোথাও পাবার সম্ভাবনা নেই।

আমার ছেলেটি ( ৮ বছর বয়স) স্কুলে শিখে এসেছে আনারসের মাথার অংশটি কেটে মাটিতে রোপন করলে গাছ বানানো সম্ভব। সে পরীক্ষাটি করে দেখতে চায়। Tesco –তে সেই রকম কোন আনারস পেলাম না। তাই ছেলেও বলল- বাবা, আমিও তোমার সাথে যাবো। আমার পাইন অ্যাপেল লাগবেই। কিন্তু সে আনারস খাবে না। কেবল মাথার গাছটি কেটে চারা বানাবে।

বাসায় বাজার সদাই রেখে ছুটলাম চৌকিট। তখন বেলা ১টা পার হয়ে গেছে। ফলের বাজারে অনেক মানুষ। প্রচুর ফল এসেছে। মালয়েশিয়াতে সারা বছরই কিছু ফল যেমন- আম, কাঁঠাল, রাম্বুটান, ড্রাগন ফ্রুট, ম্যাঙ্গোস্টিন ইত্যাদি বলতে গেলে সারা বছরই উৎপাদিত হয়। দামও গ্রহণযোগ্য। তবে এই মাসে প্রচুর ফল আসাতে বিশেষ করে আমের দাম কোন কোন পাসার মালামে আড়াই থেকে সাড়ে ৩ রিঙ্গিতেও পাওয়া যাচ্ছে।

প্রথম একটি দোকানে আনাসরস দেখে ছেলে খুশী হয়ে গেলে। বাবা, আনারস পাওয়া গেছে। এখনই নেব?
-এখনই নেবার দরকার নেই। আগে কয়েক দোকানে দেখে তারপর যেট সব চেয়ে ভালো মনে হবে সেটা নেব। তুমি কি আমার কথা বুঝতে পেরেছ?
-বুঝতে পেরেছি।
-গুড। তাহলে সামনে চল। সুন্দর দেখে আগে পছন্দ করতে হবে তারপর কেনা। কেনার পর আর বদলাতে পারবে না।

সামনে গিয়ে একটি দোকান পেলাম। দোকানীর সামনে প্রচুর লিচু। ছেলে এবারো খুশী হয়ে বলল- বাবা লিচু পেয়ে গেছি। এখান থেকেই্ কিনি।
ইতোমধ্যে কয়েক দোকানের লিচু আড়চোখে তাকিয়ে দেখে নিয়েছি। আর হ্যাঁ, এরা পণ্যের সামনে দাম লিখে রাখে যাতে বার বার কাউকে দাম জিজ্ঞেস করতে না হয়।

তারপরও বাংলাদেশী কায়দায় দাম জিজ্ঞেস করলাম। দোকানী বলল- ১২ রিঙ্গিত করে ১ কেজি। তুমি যদি ২ কেজি নাও তাহলে ১ রিঙ্গিত কম রাখতে পারি। তুমি ইচ্ছে করলে খেয়ে টেসট করে দেখতে পার।
-আমি রোজা রেখেছি। খেয়ে টেস্ট করতে পারবো না।

লিচুগুলো খুব সুন্দর বলে আমি নেব বলে মনে মনে ঠিক করে ফেললাম। দোকানী বলল- তুমি যদি আরো কম দামে নিতে চাও তাহলে আলগা লিচুগুলো নিতে পারো।

আলগা লিচু আমি নেব না। আলগা লিচু হচ্ছে- লিচু গুলো থোকা থেকে আলাদা করে রাখা সেগুলোর দাম ১০ রিঙ্গিত করে কিলো। কিন্তু ডালপাতাসহ লিচুর থোকা থেকে লিচু খেতে না পারলে বাচ্চারা কি মজা পাবে। তাই আমি ২ কিলোগ্রাম লিচু নিয়ে নিলাম। দাম নিল ২৩ রিঙ্গিত। দোকানী পলিথিন ব্যাগে ( এখানে বলে প্লাস্টিক ব্যাগ) ভরে দিল। এবার আমার পেয়ারা নেবার পালা।

মালয়েশিয়ার পেয়ারা খুবই অসাধারণ। আমার পরিচিত কয়েক জনের ভাষায় ডাসা বা টসটসে বা কচকচে পেয়ারা। খুবই ভালো লাগে খেতে। এখান থেকে চলে গেলে এখানকার পেয়ারাগুলো খুব মিস করবো। এদের পেয়ারগুলো খুবই মজাদার।

এক চায়নিজ মহিলার দোকানে দেখলাম সুন্দর সুন্দর পেয়ারা সাজানো। দেখে এতো ভালো লাগলো যে- সবগুলো কিনে ফেলতে ইচ্ছে করলো।
আমি বললাম- ম্যাম, পেয়ারা কত করে কিলো?
-প্রতি কিলো ৫ রিঙ্গিত।
আজ খুব কম দাম। অন্য দিন এই জিনিস ৬/৭ রিঙ্গিতের কমে পাওয়া যায় না। দোকানী বলল- তুমি বেছে নাও।
আমি ও আমার ছেলে পেয়ারা বাছতে লাগলাম। হাল্কা কোন দাগ পেলেই সেটা আর নিচ্ছি না। দোকানী নিজেও পেয়ারার পোশাক মানে পলিথিনের আবরণ খুলে আমাদের দেখাতে লাগলো। এভাবে খুব দ্রুতই তিন কেজি পেয়ারার কিনে ফেললাম।

-তুমি আমও নিতে পার। আজকের আমগুলো খুব মিষ্টি। তুমি কি টেস্ট করে দেখতে চাও?
-ম্যাম, আমি রোজা রেখেছি। টেস্ট করতে পারছি না। তোমার কথা মেনে নিলাম। আমও নেব।

পেয়ারা আর আম পলিথিনে ভরে দেবার পর দাম দিয়ে চললাম আনারসের দোকানে। দোকানী এক জন চায়নিজ ভদ্রলোক। আমার ছেলেকে বললাম- তুমি সব চেয়ে ভালো গাছ হবে যেই আনারসটায় সেটা বেছে নাও। সে বেছে নিল। আমার ছেলের হাতে ৪টি ১ রিঙ্গিতের নোট দিয়ে বললাম- উনাদে দাও। উনি ৫০ সেন্ট ফেরত দিবেন। ফেরত দেবার পর উনাকে ধন্যবাদ দিবে। বলবে- Thank you, Sir.
দোকানী বললেন- এটা কি তোমার ছেলে?
-হ্যাঁ।
-বয়স কত ওর?
-৮ বছর। তোমার এই আনারস দিয়ে সে একটা পরীক্ষা করবে । আনারসের চারা তৈরী করবে।
দোকানী শুনে বললো- এটা তো খুবই ভালো একটি ব্যাপার।

ফলের ব্যাগ নিয়ে এবার আমরা বাপ-বেটার বাসায় ফেরার পালা। শনিবার । কুয়ালালামপুরের রাস্তায় গাড়ীর সংখ্যা অনেক কম। ফাঁকা রাস্তা পেয়ে জোরে ছুটে চললাম। ড্যাশবোর্ডে তাকিয়ে গতিবেগ দেখলাম ৮০ কি মি/ঘন্টা পার হয়ে যাচ্ছে।


*আজকের মুদ্রা বিনিময় হারঃ ১ রিঙ্গিত = ২১.১৫ টাকা
সর্বশেষ এডিট : ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১২:২১
১৫টি মন্তব্য ১৫টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছিঁচকাঁদুনে ছেলে আর চোখ মোছানো মেয়ে...

লিখেছেন খায়রুল আহসান, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:০৯

ছিঁচকাঁদুনে ছেলে আর চোখ মোছানো মেয়ে,
পড়তো তারা প্লে গ্রুপে এক প্রিপারেটরি স্কুলে।
রোজ সকালে মা তাদের বিছানা থেকে তুলে,
টেনে টুনে রেডি করাতেন মহা হুলস্থূলে।

মেয়ের মুখে থাকতো হাসি, ছেলের চোখে... ...বাকিটুকু পড়ুন

অহমিকা পাগলা

লিখেছেন আলমগীর সরকার লিটন, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:১৪


এক আবেগ অনুভূতি আর
উপলব্ধির গন্ধ নিলো না
কি পাষাণ ধর্মলয় মানুষ;
আশপাশ কবর দেখে না
কি মাটির প্রণয় ভাবে না-
এই হলো বাস্তবতা আর
আবেগ, তাই না শুধু বাতাস
গায়ে লাগে না, মন জুড়ায় না;
বলো... ...বাকিটুকু পড়ুন

হার জিত চ্যাপ্টার ৩০

লিখেছেন স্প্যানকড, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩




তোমার হুটহাট
চলে আসার অপেক্ষায় থাকি
কি যে এক ছটফটানি
তোমার ফিরে আসা
যেন প্রিয় কারো সনে
কোথাও ঘুরতে যাবার মতো আনন্দ
বারবার ঘড়ি দেখা
বারবার অস্থির হতে হতে
ঘুম ছুটে... ...বাকিটুকু পড়ুন

জীবনাস্ত

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৪৪



ভোরবেলা তুমি নিশ্চুপ হয়ে গেলে একদম,
তোমার বাম হাত আমার গলায় পেঁচিয়ে নেই,
ভাবলাম,তুমি অতিনিদ্রায় আচ্ছন্ন ,
কিন্তু এমন তো কখনো হয়নি
তুমি বরফ জমা নিথর হয়ে আছ ,
আমি... ...বাকিটুকু পড়ুন

যে দেশে সকাল শুরু হয় দুর্ঘটনার খবর দেখে

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:১১

প্রতি মিনিটে দুর্ঘটনার খবর দেখে অভ্যস্ত। প্রতিনিয়ত বন্যা জলোচ্ছ্বাস আসে না, প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনার খবর আসে। আগে খুব ভোরে হকার এসে বাসায় পত্রিকা দিয়ে যেত। বর্তমানেও প্রচলিত আছে তবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×