যারা ছোটখাট কাজ করে তাদেরকে সাপ্তাহিক ছুটির দিনে প্রচন্ড ব্যস্ত থাকতে হয়। পুরো সপ্তাহের বাজার করা আরো নানান সাংসারিক কাজে সময় খুব দ্রুত ফুরিয়ে যায়। ফলে বিশ্রাম তো হয়ই না বরং রাজ্যের ক্লান্তি ভর করে বসে শরীরে। ঘুম আসে। অথচ ঘুমানোর সময় পাওয়া যায় ন।
গত কাল গিয়েছিলাম বাসার সব চেয়ে কাছের শপ Tesco Extra Ampang-এ। কেনাকাটা প্রায় মাঝপথে ।
হঠাৎ আমার কন্যা বলল- সে লিচি জুস নেবে। লিচি জুস শুনে চমকে উঠলাম।
আরে লিচুর সিজন তো শেষের দিকে। এখনো লিচু খাওয়া হয়নি। আর এখানে সব দোকানে লিচু পাওয়াও যায় না। রাতের বাজার (যা মালয় ভাষায় Pasar- মানে বাজার ; আর Malam মানে রাত) এ পাওয়া যেতে পারে। তবে সব রাতের বাজারে নয়। কোন ফাঁকা জায়গায় সন্ধ্যা থেকে রাত অবধি যে অস্থায়ী বাজার বসে তাই মালয়শিয়াতে পাসার মালাম নামে পরিচিত। আমার সহসাই মনে হলো চৌকিট বাজারে গেলে লিচু পাব। অন্য কোথাও পাবার সম্ভাবনা নেই।
আমার ছেলেটি ( ৮ বছর বয়স) স্কুলে শিখে এসেছে আনারসের মাথার অংশটি কেটে মাটিতে রোপন করলে গাছ বানানো সম্ভব। সে পরীক্ষাটি করে দেখতে চায়। Tesco –তে সেই রকম কোন আনারস পেলাম না। তাই ছেলেও বলল- বাবা, আমিও তোমার সাথে যাবো। আমার পাইন অ্যাপেল লাগবেই। কিন্তু সে আনারস খাবে না। কেবল মাথার গাছটি কেটে চারা বানাবে।
বাসায় বাজার সদাই রেখে ছুটলাম চৌকিট। তখন বেলা ১টা পার হয়ে গেছে। ফলের বাজারে অনেক মানুষ। প্রচুর ফল এসেছে। মালয়েশিয়াতে সারা বছরই কিছু ফল যেমন- আম, কাঁঠাল, রাম্বুটান, ড্রাগন ফ্রুট, ম্যাঙ্গোস্টিন ইত্যাদি বলতে গেলে সারা বছরই উৎপাদিত হয়। দামও গ্রহণযোগ্য। তবে এই মাসে প্রচুর ফল আসাতে বিশেষ করে আমের দাম কোন কোন পাসার মালামে আড়াই থেকে সাড়ে ৩ রিঙ্গিতেও পাওয়া যাচ্ছে।
প্রথম একটি দোকানে আনাসরস দেখে ছেলে খুশী হয়ে গেলে। বাবা, আনারস পাওয়া গেছে। এখনই নেব?
-এখনই নেবার দরকার নেই। আগে কয়েক দোকানে দেখে তারপর যেট সব চেয়ে ভালো মনে হবে সেটা নেব। তুমি কি আমার কথা বুঝতে পেরেছ?
-বুঝতে পেরেছি।
-গুড। তাহলে সামনে চল। সুন্দর দেখে আগে পছন্দ করতে হবে তারপর কেনা। কেনার পর আর বদলাতে পারবে না।
সামনে গিয়ে একটি দোকান পেলাম। দোকানীর সামনে প্রচুর লিচু। ছেলে এবারো খুশী হয়ে বলল- বাবা লিচু পেয়ে গেছি। এখান থেকেই্ কিনি।
ইতোমধ্যে কয়েক দোকানের লিচু আড়চোখে তাকিয়ে দেখে নিয়েছি। আর হ্যাঁ, এরা পণ্যের সামনে দাম লিখে রাখে যাতে বার বার কাউকে দাম জিজ্ঞেস করতে না হয়।
তারপরও বাংলাদেশী কায়দায় দাম জিজ্ঞেস করলাম। দোকানী বলল- ১২ রিঙ্গিত করে ১ কেজি। তুমি যদি ২ কেজি নাও তাহলে ১ রিঙ্গিত কম রাখতে পারি। তুমি ইচ্ছে করলে খেয়ে টেসট করে দেখতে পার।
-আমি রোজা রেখেছি। খেয়ে টেস্ট করতে পারবো না।
লিচুগুলো খুব সুন্দর বলে আমি নেব বলে মনে মনে ঠিক করে ফেললাম। দোকানী বলল- তুমি যদি আরো কম দামে নিতে চাও তাহলে আলগা লিচুগুলো নিতে পারো।
আলগা লিচু আমি নেব না। আলগা লিচু হচ্ছে- লিচু গুলো থোকা থেকে আলাদা করে রাখা সেগুলোর দাম ১০ রিঙ্গিত করে কিলো। কিন্তু ডালপাতাসহ লিচুর থোকা থেকে লিচু খেতে না পারলে বাচ্চারা কি মজা পাবে। তাই আমি ২ কিলোগ্রাম লিচু নিয়ে নিলাম। দাম নিল ২৩ রিঙ্গিত। দোকানী পলিথিন ব্যাগে ( এখানে বলে প্লাস্টিক ব্যাগ) ভরে দিল। এবার আমার পেয়ারা নেবার পালা।
মালয়েশিয়ার পেয়ারা খুবই অসাধারণ। আমার পরিচিত কয়েক জনের ভাষায় ডাসা বা টসটসে বা কচকচে পেয়ারা। খুবই ভালো লাগে খেতে। এখান থেকে চলে গেলে এখানকার পেয়ারাগুলো খুব মিস করবো। এদের পেয়ারগুলো খুবই মজাদার।
এক চায়নিজ মহিলার দোকানে দেখলাম সুন্দর সুন্দর পেয়ারা সাজানো। দেখে এতো ভালো লাগলো যে- সবগুলো কিনে ফেলতে ইচ্ছে করলো।
আমি বললাম- ম্যাম, পেয়ারা কত করে কিলো?
-প্রতি কিলো ৫ রিঙ্গিত।
আজ খুব কম দাম। অন্য দিন এই জিনিস ৬/৭ রিঙ্গিতের কমে পাওয়া যায় না। দোকানী বলল- তুমি বেছে নাও।
আমি ও আমার ছেলে পেয়ারা বাছতে লাগলাম। হাল্কা কোন দাগ পেলেই সেটা আর নিচ্ছি না। দোকানী নিজেও পেয়ারার পোশাক মানে পলিথিনের আবরণ খুলে আমাদের দেখাতে লাগলো। এভাবে খুব দ্রুতই তিন কেজি পেয়ারার কিনে ফেললাম।
-তুমি আমও নিতে পার। আজকের আমগুলো খুব মিষ্টি। তুমি কি টেস্ট করে দেখতে চাও?
-ম্যাম, আমি রোজা রেখেছি। টেস্ট করতে পারছি না। তোমার কথা মেনে নিলাম। আমও নেব।
পেয়ারা আর আম পলিথিনে ভরে দেবার পর দাম দিয়ে চললাম আনারসের দোকানে। দোকানী এক জন চায়নিজ ভদ্রলোক। আমার ছেলেকে বললাম- তুমি সব চেয়ে ভালো গাছ হবে যেই আনারসটায় সেটা বেছে নাও। সে বেছে নিল। আমার ছেলের হাতে ৪টি ১ রিঙ্গিতের নোট দিয়ে বললাম- উনাদে দাও। উনি ৫০ সেন্ট ফেরত দিবেন। ফেরত দেবার পর উনাকে ধন্যবাদ দিবে। বলবে- Thank you, Sir.
দোকানী বললেন- এটা কি তোমার ছেলে?
-হ্যাঁ।
-বয়স কত ওর?
-৮ বছর। তোমার এই আনারস দিয়ে সে একটা পরীক্ষা করবে । আনারসের চারা তৈরী করবে।
দোকানী শুনে বললো- এটা তো খুবই ভালো একটি ব্যাপার।
ফলের ব্যাগ নিয়ে এবার আমরা বাপ-বেটার বাসায় ফেরার পালা। শনিবার । কুয়ালালামপুরের রাস্তায় গাড়ীর সংখ্যা অনেক কম। ফাঁকা রাস্তা পেয়ে জোরে ছুটে চললাম। ড্যাশবোর্ডে তাকিয়ে গতিবেগ দেখলাম ৮০ কি মি/ঘন্টা পার হয়ে যাচ্ছে।
*আজকের মুদ্রা বিনিময় হারঃ ১ রিঙ্গিত = ২১.১৫ টাকা
সর্বশেষ এডিট : ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১২:২১