ফোবিয়া !!! একে বর্ণনা করতে গেলে কয়েক হাজার ফোবিয়া আমাদেরকে ঘিরে ধরবে।আমাদের চারপাশের সবকিছু নিয়েই আমাদের জীবন। মোটামোটি ছোট-খাটো কিছু না কিছু ভয় আমাদের জীবনের সবার-ই আছে।কিন্তু কিছু মানুষ সেই ছোট কিন্তু অদ্ভুদ ভয়টাকে এমনভাবে জীবনের সাথে জড়িয়ে ফেলেন যে আধুনিক জীবন যাপন তো দুরের কথা,জীবন টাকেই তারা অদ্ভুদ বানিয়ে ফেলেন। আমরা আজ জানবো অদ্ভুদ কিছু ফবিয়া সন্মন্ধে যা সচারাচর দেখা যায় না।
১। Agyrophobic -রাস্তা পারাপারের ভয়।
Agyrophobic-এটি একপ্রকার ফোবিয়া যখন আপনি কোন সড়ক, মহাসড়ক অথবা যেকোনো পারাপারের রাস্তায় চলতে ভয় করবেন।এটি এসেছে গ্রীক শব্দ gyrus থেকে যার অর্থ দাড়ায় চলমান যানবাহন বা রাস্তায় ভয় পেয়ে ঘুরাঘুরি করা। এটি হলে আর যাই হোক, আপনি আর শহরে বসবাস করতে পারবেন না।
এই ফোবিয়াকে আবার কয়েকভাগে ভাগ করা যায়।আপনি কি শুধু মহাসড়ক ভয় পান নাকি হেটে চলাচলের রাস্তায় ভয় পান নাকি নির্দিষ্ট কোন জায়গা কে ঘিরেই শুধু আপনার ভয় তা জানতে হবে।
এই ফোবিয়া আবার গাড়িতে চড়তে ভয় পাওয়ার থেকে আলাদা।
২। Mageirocophobia - রান্না করতে ভয় পাওয়া।
এই অদ্ভুদ ধরনের ভয়টির নাম এসেছে গ্রীক শব্দ mageirokos থেকে যার অর্থ হচ্ছে দক্ষ রাধুনি। এই রোগে ভোগা মানুষটি সাধারনত রান্না করতে ভয় পাই।এই কারনে এইসব রোগী যদি একা থাকে তাহলে উপোষ থাকে অথবা যেনতেন ভাবে অস্বাস্থ্যকর খাওয়া খেয়ে থাকে, যা তাদের শরীরের উপর অতিমাত্রায় বিরূপ প্রভাব ফেলে।এই ধরনের ভুক্তভোগী সাধারনত যারা খুব বেশি ভাল রান্না করতে পারে তাদের চরম ভক্ত হয়। তাদের দেখে সাধারনত একধরনের হীনমন্যতা তৈরি হয় যার কারনে অনেকেই এই রোগে ভোগেন বলে বিজ্ঞানিরা মনে করে।
কোন ব্লগার যদি এই ধরনের সমস্যায় ভুগছেন বলে মনে করেন তাহলে তাদেরকে ব্লগের বিভিন্ন শর্টকাট রেচিপি গুলো মনে রাখার অনুরোধ করলাম।
৩। Pediophobia - পুতুলকে ভয় পাওয়া।
Pediophobia-এর মানে হচ্ছে পুতুল কে ভয় পাওয়া।প্রথমেই ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি এই রোগে ভোগা ভুক্তভোগীদের কাছ থেকে। কারন আমার দেয়া ছবিটা তাদের ভয় অনেকাংশে বাড়িয়ে দিবে।
এই ধরনের রোগীরা শুধু ভয়ঙ্কর পুতুল নয় ,সব ধরনের পুতুলকেই ভয় করে।এর মধ্যে বিভিন্ন ধরনের রোবট, ইলেক্ট্রনিক্সও তাদের মধ্যে ভীতির সঞ্চার করে। তাদের মনে হতে থাকে যে এই বুঝি পুতুলটা এসে তাদের সাথে মানুষের মত কথা বলবে। অনেকে কথাও বলে থাকে। তবে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে পুতুলের সাথে পসেটিভ আচরনের চেয়ে নেগেটিভ আচরন বেশি হয় অর্থাৎ পুতুলকে ভয় পায়।
এই ধরনের রোগীরা সপিংমল, মেলা এই সব জায়গাই যেতে খুব ভয় করে।
এই রোগটি আবার pedophobia or pediaphobia অর্থাৎ শিশুদের কে ভয় পাওয়া রোগের সাথে মিলিয়ে ফেলবেন না।
৪। Eisoptrophobia - আয়নাকে ভয় পাওয়া।
Eisoptrophobia- এর অর্থ হচ্ছে আয়নাকে ভয় করা। সোজা কথায় বলতে গেলে এইসব রোগীরা আয়নার ভিতর দিয়ে অন্য এক জগতকে দেখতে ভয় পাই।এ ধরনের রোগীরা খুব বেশি দুশ্চিন্তাই ভোগে যদিও তারা জানে যে তাদের ভয়ের কোন অর্থই নেই।তারা অনেকসময় মনে করে আয়না ভেঙ্গে ফেললে এটা তাদের জন্য দুর্ভাগ্য বয়ে আনবে আবার আয়নার দিকে থাকালে তারা আয়নার ভিতর অন্য এক জগতের দেখা পাবে।
এই ফোবিয়াটি সন্মন্ধে লেখার সময় আমি নিজে খেয়াল করে দেখলাম যে, আমি রাতের বেলায় আয়না দেখতে ভয় পায়। ছোটবেলাই শুনেছিলাম, রাতের বেলা আয়না দেখলে নাকি ভয়ঙ্কর দুঃস্বপ্ন হানা দেয়। কি জানি, হয়ত ব্যাপারটাই মনে গেথে গেছে।
৫। Pentheraphobia - শাশুড়ি-কে ভয় পাওয়া।
এতক্ষন যত ফোবিয়া নিয়ে আলোচনা করেছি তার মধ্যে সবচেয়ে কমন হল এই শাশুড়িকে ভয় পাওয়া ফোবিয়াটি।আমি নিশ্চিত করে বলতে পারি বাংলাদেশের অধিকাংশ বিবাহিত বিশেষ করে মহিলা এই রোগে আক্রান্ত।এই বিষয়টি নিয়ে একদিকে যেমন বহু নাটক, সিরিয়াল তৈরি হচ্ছে অপরদিকে এই ব্যাপারটি সযতনে সবার মনে অজান্তে গেঁথে যাচ্ছে। যার পরিণাম দাঁড়াচ্ছে ডিভরস।
এর সাথে মিল আছে এরকম একটা ফোবিয়ার নাম হচ্ছে novercaphobia যার অর্থ হচ্ছে সৎ-মাকে ভয় করা যেটি আমরা Cinderella এর ক্ষেত্রে দেখতে পায়।
৬। Arachibutyrophobia - মুখের ভিতরের উপরিভাগে চীনাবাদাম লেগে যাওয়ার ভয়।
শুনতে আশ্চর্য লাগলেও এটা সত্যি যে এই ফোবিয়াটা হচ্ছে মুখের ভিতর উপরিভাগে চীনাবাদাম লেগে যাওয়ার ভয়ে দুশ্চিন্তা করা।
অবাক লাগছে? তাহলে এভাবে একবার চিন্তা করুন তো যে সকালে আপনার বাচ্চাকে প্রতিদিন দুধ খাওয়ালে একটা সময় ও দুধ খেতে চাইবে না। এরপরও যদি আপনি জোর করে প্রতিদিন দুধ খাওয়াতে চান তাহলে দুধ নিয়ে তার মনে যে ভীতির সঞ্চার হবে সেটা সেই অনেকটা চীনাবাদাম লেগে যাওয়ার ভয়ের মতো।
৭। Cathisophobia - কোথাও বসতে ভয় পাওয়া।
Cathisophobia মানে হচ্ছে বসার যম।অনেক ক্ষেত্রে হেমরয়েড এর কারনে এই সমস্যাটা হলেও বেশিরভাগ ক্ষেত্রে দেখা যায়, আগে তীক্ষ্ণ বা যন্ত্রণাদায়ক কোন কিছুতে বসে আঘাত পাওয়ার কারনে এই রোগের বীজ মনে গেঁথে যায়।অনেকসময় বাচ্চাদের ক্ষেত্রে স্কুলে বিশেষভাবে বসিয়ে কোন শাস্তির দেয়ার কারনে এই রোগ হতে পারে।
এই রোগের রোগীকে কোথাও বসতে বললে তাদের ঘাম ঝরা শুরু হয়ে যায়,শ্বাসকষ্ট হতে থাকে এবং দুশ্চিন্তায় পড়ে যায়।
এই রোগটা আবার সিনিওর বা প্রভাবশালী কারো সামনে বসার যে ভয় তার চেয়ে আলাদা।
ফোবিয়া যেরকম হোক , যতটুকু হোক এর সমাধান কিন্তু আপনার হাতে। বিন্দুমাত্র দুশ্চিন্তাগ্রস্ত না হয়ে নিজের মাঝেই খুজে বের করুন এর সমাধান।
আর হ্যাঁ, কার কি ধরনের ফোবিয়া আছে কমেন্ট করে জানাবেন।
ভালো থাকবেন।