somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আমার বাবার অপহরনকারীরা এবং তার উদ্ধার অভিযান.......(শেষ পর্ব)

০৯ ই আগস্ট, ২০১৮ বিকাল ৪:৪৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আগের তিন পর্ব পড়তে নিচের লিঙ্কে ক্লিক করুন।
আমার বাবার অপহরনকারীরা এবং তার উদ্ধার অভিযান....... (পর্ব-১)
আমার বাবার অপহরনকারীরা এবং তার উদ্ধার অভিযান....... (পর্ব-২)
আমার বাবার অপহরনকারীরা এবং তার উদ্ধার অভিযান....... (পর্ব-৩)

শেষ পর্ব।



এই ঘটনার পর অপহরণকারীদের মধ্যে একটা থমথমে ভাব বিরাজ করছিলো। তারা বারবার টাকার জন্য বাবাকে চাপ দিতে লাগলো।প্রথম দিকে যে লিডারটা বাবার সাথে কথা বলেছিল সে এসে বাবাকে অনুরোধ করছিলো যাতে ঘটনাটা তাড়াতাড়ি শেষ হয় প্রয়োজনে তারা টাকা কম নিতে ইচ্ছুক।
ওইদিন দুপুরে আমাদের বাসায় অপহরণকারীদের ফোন এলো।তারা বলল যে তারা আমাদের অবস্থা চিন্তা করে টাকা কম নিতে ইচ্ছুক এবং তাদেরকে ২ লক্ষ টাকা দিলেই তারা বাবাকে ছেড়ে দিবে।
আমরা ভিতরে ভিতরে টাকা যোগাড় করতে লাগলাম।
আমার এক ফুফা যার ঐ এলাকার আশেপাশে গাড়ির ব্যাবসা ছিল,উনি বাবার ঘটনার ব্যাপারে কিছু-ই জানতেন না।ওইদিন সকালে মাত্র শুনলেন এবং সাথে সাথে আমাদের বাসায় চলে এলেন। এসে প্রথমে কিছুটা রাগ দেখালেও সমস্ত ঘটনার বিস্তারিত শুনলেন।শুনে বললেন যে ঐ এলাকা তিনি ভালোভাবে চিনেন এবং ঐ এলাকার সব নেতার সাথে উনার যোগাযোগ আছে।উনি আমাদের অপেক্ষা করতে বলে উনার ঐ এলাকার এক বন্ধুকে নিয়ে চলে গেলেন।
এবার শুরু হল ফুফার কাহিনী।
ফুফা ঐ এলাকাই গিয়ে অনেকক্ষণ ঘোরাঘুরি করে মোটামুটি আন্দাজ করতে পারলেন যে কোন গ্রুপ এই কাজটা করতে পারে।ভিতরে ভিতরে ঐ গ্রুপের খোঁজ খবর নিলেন।ঐ গ্রুপের আস্তানা বা বাবাকে কোথায় রাখতে পারে সে সন্মন্ধে বিস্তারিত ধারণা নিলেন।তারপর ঐ গ্রুপের এক পরিচিত ছেলেকে ডেকে চা নাস্তা খাওয়ার ফাকে জিজ্ঞেস করল “ তোরা যে কাজটা করেছিস ওইটার খবর কি? মাল পানি কিছু এসেছে?” ছেলেটা জিজ্ঞেস করল কোন কাজ? ফুফা বললেন, আরে আমার সাথে অতো রাখ-ডাকের কিছু নাই। আমি সবই জানি।তোমার লিডার অমুক আমার বন্ধু। ঐ বলেছে এই কথা। ও কোথায়? আমি ওর সাথেই কথা বলতে এসেছি। কিন্তু ছেলেটা কোনোভাবেই স্বীকার করতে চাচ্ছে না। ফুফার সাথে ঐ এলাকার কিছু ছেলে থাকাতে তারাও ঐ ছেলেটাকে জোর করতে লাগলো।ফুফার লোকজন বলতে লাগলো ঐ কাজে তারাও জড়িত,তাদেরও ভাগ আছে।ফুফারা ভিকটিম(বাবা)কে নিরাপদ জায়গায় সরাতে এসেছে।জোরাজুরির এক পর্যায়ে ছেলেটি স্বীকার করলো যে,বাবাকে অমুক জায়গায় রাখা হয়েছে। তবে লিডারের অনুমতি ছাড়া দেখা করা যাবে না।ফুফারা ছেলেটাকে নিয়ে বাবাকে যে ঘরে রাখা হয়েছে সেখানে চলে এলো।ফুফারা জোর করে ঘরে ডুকতে চাচ্ছিল। কিন্তু ছেলেটা বলছিল যে ঘরের ছাবি লিডারের কাছে। ফুফারা উপায় না দেখে ছেলেটাকে বলল যে চাবিসহ লিডার কে ডেকে নিয়ে আসতে,ওরা অপেক্ষা করছে।আসলে ফুফাও চাচ্ছিল যে ওকে সরিয়ে দিতে আর বড় কোনও ঝামেলা না করে বাবাকে ওখান থেকে সরিয়ে নিতে। ছেলেটিও ফুফাদের জোরাজুরি আর স্থানীয় ছেলেগুলোর দাপটে কিছুটা নার্ভাস হয়ে গিয়েছিল। ছেলেটি চলে গেল লিডারকে ডাকতে।
এই সুযোগটি হাতছাড়া করলেন না আমার ফুফা। মুহূর্তেই ঘরটার চারপাশে দেখে নিলেন। উনার সঙ্গি আর উনি উঠে গেলেন টিনের চালে।পুরাতন টিন টান দিতেই কিছুটা অংশ উঠে গেল। দেখতে পেলেন যে ভিতরে বাবা বসে আছেন।ফুফাকে দেখেই তিনি ফুফার বাড়ানো হাত ধরে উঠার চেষ্টা করলেন।কিন্তু বয়সের কারনে পারছিলেন না।পরে ফুফার একজন সঙ্গি নিচে নেমে বাবাকে ধাক্কা দিয়ে তুলে দিলেন আর ফুফা বাবাকে নিয়ে নিচে নেমে আসলেন।খুব অল্প সময়ের মধ্যেই কাজগুলো সম্পন্ন হল। এবার তারা দ্রুত উল্টাদিকের কিছু বস্তি পার হয়ে চলে গেলেন।এই পাশে তিনি সেই আগের দিনের রাতের বেলার রেললাইনটি দেখতে পেলেন।রেললাইন পার হয়েই পেলেন একটা আধাপাকা রোড।এবং ভাগ্য ভালো যে পেয়ে গেলেন একটি ট্যাক্সিও।তারপর ট্যাক্সিতে চড়ে সোজা বাসায়।
ওইদিকে আমাদের বাসায় অস্থির একটা সময় কাটছে। মামারা সদলবলে কোথায় যেন গিয়েছেন। আমাদের সদর দরজা ছিল খোলা। মানুষজন আসছে আর যাচ্ছে। হটাৎ দেখলাম বাবা বাসায় ডুকছেন ফুফার সাথে। তখনকার অনুভুতি বলে বুঝানো যাবে না।
পরবর্তীতে ফুফার দোকানে অপহরণকারীরা সবাই মিলে আক্রমন করে এবং দোকানে ভাংচুর করে।তাদের দাবি ছিল, এই প্রজেক্টে তাদের বেশ কিছু টাকা ইনভেসট হয়ে গেছে। যে টাকাগুলো খরচ হয়েছে অন্তত তা যেন তাদের দেয়া হয়।বেশ কিছুদিন উনার ব্যাবসা বন্ধ রাখতে হয়েছিল।....... ( শেষ )

খুব সংক্ষেপে ঘটনাটি শেষ করার চেষ্টা করেছি। ভুল- ক্রুটি মার্জনীয়।
যে কোনও ধরনের জিজ্ঞাসা থাকলে অবশ্যয় কমেন্টে জানাবেন। উত্তর দেয়ার চেষ্টা করব।
সর্বশেষ এডিট : ০৯ ই আগস্ট, ২০১৮ বিকাল ৪:৪৯
৩টি মন্তব্য ৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আপনি কি বেদ, উপনিষদ, পুরাণ, ঋগ্বেদ এর তত্ত্ব বিশ্বাস করেন?

লিখেছেন শেরজা তপন, ২২ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:৫২


ব্লগে কেন বারবার কোরআন ও ইসলামকে টেনে আনা হয়? আর এই ধর্ম বিশ্বাসকে নিয়েই তর্ক বিতর্কে জড়িয়ে পড়ে সবাই? অন্য ধর্ম কেন ব্লগে তেমন আলোচনা হয় না? আমাদের ভারত... ...বাকিটুকু পড়ুন

দুলে উঠে

লিখেছেন সাইফুলসাইফসাই, ২২ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:৫৬

দুলে উঠে
সাইফুল ইসলাম সাঈফ

মন খুশিতে দুলে দুলে ‍উঠে
যখনই শুনতে পাই ঈদ শীঘ্রই
আসছে সুখকর করতে দিন, মুহূর্ত
তা প্রায় সবাকে করে আনন্দিত!
নতুন রঙিন পোশাক আনে কিনে
তখন ঐশী বাণী সবাই শুনে।
যদি কারো মনে... ...বাকিটুকু পড়ুন

তরে নিয়ে এ ভাবনা

লিখেছেন মৌন পাঠক, ২২ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১০:৩০

তরে নিয়ে এ ভাবনা,
এর শুরু ঠিক আজ না

সেই কৈশোরে পা দেয়ার দিন
যখন পুরো দুনিয়া রঙীন
দিকে দিকে ফোটে ফুল বসন্ত বিহীন
চেনা সব মানুষগুলো, হয়ে ওঠে অচিন
জীবনের আবর্তে, জীবন নবীন

তোকে দেখেছিলাম,... ...বাকিটুকু পড়ুন

আপনি কি পথখাবার খান? তাহলে এই লেখাটি আপনার জন্য

লিখেছেন মিশু মিলন, ২২ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১০:৩৪

আগে যখন মাঝে মাঝে বিকেল-সন্ধ্যায় বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা দিতাম, তখন খাবার নিয়ে আমার জন্য ওরা বেশ বিড়ম্বনায় পড়ত। আমি পথখাবার খাই না। ফলে সোরওয়ার্দী উদ্যানে আড্ডা দিতে দিতে ক্ষিধে পেলে... ...বাকিটুকু পড়ুন

কষ্ট থেকে আত্মরক্ষা করতে চাই

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৯



দেহটা মনের সাথে দৌড়ে পারে না
মন উড়ে চলে যায় বহু দূর স্থানে
ক্লান্ত দেহ পড়ে থাকে বিশ্রামে
একরাশ হতাশায় মন দেহে ফিরে।

সময়ের চাকা ঘুরতে থাকে অবিরত
কি অর্জন হলো হিসাব... ...বাকিটুকু পড়ুন

×