আগের তিন পর্ব পড়তে নিচের লিঙ্কে ক্লিক করুন।
আমার বাবার অপহরনকারীরা এবং তার উদ্ধার অভিযান....... (পর্ব-১)
আমার বাবার অপহরনকারীরা এবং তার উদ্ধার অভিযান....... (পর্ব-২)
আমার বাবার অপহরনকারীরা এবং তার উদ্ধার অভিযান....... (পর্ব-৩)
শেষ পর্ব।
এই ঘটনার পর অপহরণকারীদের মধ্যে একটা থমথমে ভাব বিরাজ করছিলো। তারা বারবার টাকার জন্য বাবাকে চাপ দিতে লাগলো।প্রথম দিকে যে লিডারটা বাবার সাথে কথা বলেছিল সে এসে বাবাকে অনুরোধ করছিলো যাতে ঘটনাটা তাড়াতাড়ি শেষ হয় প্রয়োজনে তারা টাকা কম নিতে ইচ্ছুক।
ওইদিন দুপুরে আমাদের বাসায় অপহরণকারীদের ফোন এলো।তারা বলল যে তারা আমাদের অবস্থা চিন্তা করে টাকা কম নিতে ইচ্ছুক এবং তাদেরকে ২ লক্ষ টাকা দিলেই তারা বাবাকে ছেড়ে দিবে।
আমরা ভিতরে ভিতরে টাকা যোগাড় করতে লাগলাম।
আমার এক ফুফা যার ঐ এলাকার আশেপাশে গাড়ির ব্যাবসা ছিল,উনি বাবার ঘটনার ব্যাপারে কিছু-ই জানতেন না।ওইদিন সকালে মাত্র শুনলেন এবং সাথে সাথে আমাদের বাসায় চলে এলেন। এসে প্রথমে কিছুটা রাগ দেখালেও সমস্ত ঘটনার বিস্তারিত শুনলেন।শুনে বললেন যে ঐ এলাকা তিনি ভালোভাবে চিনেন এবং ঐ এলাকার সব নেতার সাথে উনার যোগাযোগ আছে।উনি আমাদের অপেক্ষা করতে বলে উনার ঐ এলাকার এক বন্ধুকে নিয়ে চলে গেলেন।
এবার শুরু হল ফুফার কাহিনী।
ফুফা ঐ এলাকাই গিয়ে অনেকক্ষণ ঘোরাঘুরি করে মোটামুটি আন্দাজ করতে পারলেন যে কোন গ্রুপ এই কাজটা করতে পারে।ভিতরে ভিতরে ঐ গ্রুপের খোঁজ খবর নিলেন।ঐ গ্রুপের আস্তানা বা বাবাকে কোথায় রাখতে পারে সে সন্মন্ধে বিস্তারিত ধারণা নিলেন।তারপর ঐ গ্রুপের এক পরিচিত ছেলেকে ডেকে চা নাস্তা খাওয়ার ফাকে জিজ্ঞেস করল “ তোরা যে কাজটা করেছিস ওইটার খবর কি? মাল পানি কিছু এসেছে?” ছেলেটা জিজ্ঞেস করল কোন কাজ? ফুফা বললেন, আরে আমার সাথে অতো রাখ-ডাকের কিছু নাই। আমি সবই জানি।তোমার লিডার অমুক আমার বন্ধু। ঐ বলেছে এই কথা। ও কোথায়? আমি ওর সাথেই কথা বলতে এসেছি। কিন্তু ছেলেটা কোনোভাবেই স্বীকার করতে চাচ্ছে না। ফুফার সাথে ঐ এলাকার কিছু ছেলে থাকাতে তারাও ঐ ছেলেটাকে জোর করতে লাগলো।ফুফার লোকজন বলতে লাগলো ঐ কাজে তারাও জড়িত,তাদেরও ভাগ আছে।ফুফারা ভিকটিম(বাবা)কে নিরাপদ জায়গায় সরাতে এসেছে।জোরাজুরির এক পর্যায়ে ছেলেটি স্বীকার করলো যে,বাবাকে অমুক জায়গায় রাখা হয়েছে। তবে লিডারের অনুমতি ছাড়া দেখা করা যাবে না।ফুফারা ছেলেটাকে নিয়ে বাবাকে যে ঘরে রাখা হয়েছে সেখানে চলে এলো।ফুফারা জোর করে ঘরে ডুকতে চাচ্ছিল। কিন্তু ছেলেটা বলছিল যে ঘরের ছাবি লিডারের কাছে। ফুফারা উপায় না দেখে ছেলেটাকে বলল যে চাবিসহ লিডার কে ডেকে নিয়ে আসতে,ওরা অপেক্ষা করছে।আসলে ফুফাও চাচ্ছিল যে ওকে সরিয়ে দিতে আর বড় কোনও ঝামেলা না করে বাবাকে ওখান থেকে সরিয়ে নিতে। ছেলেটিও ফুফাদের জোরাজুরি আর স্থানীয় ছেলেগুলোর দাপটে কিছুটা নার্ভাস হয়ে গিয়েছিল। ছেলেটি চলে গেল লিডারকে ডাকতে।
এই সুযোগটি হাতছাড়া করলেন না আমার ফুফা। মুহূর্তেই ঘরটার চারপাশে দেখে নিলেন। উনার সঙ্গি আর উনি উঠে গেলেন টিনের চালে।পুরাতন টিন টান দিতেই কিছুটা অংশ উঠে গেল। দেখতে পেলেন যে ভিতরে বাবা বসে আছেন।ফুফাকে দেখেই তিনি ফুফার বাড়ানো হাত ধরে উঠার চেষ্টা করলেন।কিন্তু বয়সের কারনে পারছিলেন না।পরে ফুফার একজন সঙ্গি নিচে নেমে বাবাকে ধাক্কা দিয়ে তুলে দিলেন আর ফুফা বাবাকে নিয়ে নিচে নেমে আসলেন।খুব অল্প সময়ের মধ্যেই কাজগুলো সম্পন্ন হল। এবার তারা দ্রুত উল্টাদিকের কিছু বস্তি পার হয়ে চলে গেলেন।এই পাশে তিনি সেই আগের দিনের রাতের বেলার রেললাইনটি দেখতে পেলেন।রেললাইন পার হয়েই পেলেন একটা আধাপাকা রোড।এবং ভাগ্য ভালো যে পেয়ে গেলেন একটি ট্যাক্সিও।তারপর ট্যাক্সিতে চড়ে সোজা বাসায়।
ওইদিকে আমাদের বাসায় অস্থির একটা সময় কাটছে। মামারা সদলবলে কোথায় যেন গিয়েছেন। আমাদের সদর দরজা ছিল খোলা। মানুষজন আসছে আর যাচ্ছে। হটাৎ দেখলাম বাবা বাসায় ডুকছেন ফুফার সাথে। তখনকার অনুভুতি বলে বুঝানো যাবে না।
পরবর্তীতে ফুফার দোকানে অপহরণকারীরা সবাই মিলে আক্রমন করে এবং দোকানে ভাংচুর করে।তাদের দাবি ছিল, এই প্রজেক্টে তাদের বেশ কিছু টাকা ইনভেসট হয়ে গেছে। যে টাকাগুলো খরচ হয়েছে অন্তত তা যেন তাদের দেয়া হয়।বেশ কিছুদিন উনার ব্যাবসা বন্ধ রাখতে হয়েছিল।....... ( শেষ )
খুব সংক্ষেপে ঘটনাটি শেষ করার চেষ্টা করেছি। ভুল- ক্রুটি মার্জনীয়।
যে কোনও ধরনের জিজ্ঞাসা থাকলে অবশ্যয় কমেন্টে জানাবেন। উত্তর দেয়ার চেষ্টা করব।